alt

রাজনীতি

আনুপাতিক ভোটের পক্ষে একমত হওয়ার আহ্বান ‘৬০ নাগরিকের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

আনুপাতিক ভোটের হিসাবে জাতীয় সংসদের ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৬০ নাগরিক।

আনুপাতিক ভোটের বিষয়টি জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

তাদের ভাষ্য, এই উচ্চকক্ষ সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের ভূমিকা পালন করতে পারবে।

সোমবার রাতে বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক যে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর প্রাক্কালে আমাদের রাষ্ট্র ও প্রজাতন্ত্রের সংস্কারের কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। ঐকমত্য কমিশনের তত্ত্বাবধানে, রাজনৈতিক দলসমূহ ইতোমধ্যেই সংবিধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে সম্মত হয়েছে, যদিও কিছু মতপার্থক্য এখনও রয়ে গেছে। সংসদের জন্য ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।

“আমরা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় সংলাপের এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ আগামী দিনে সংসদীয় পদ্ধতিকে আরও জবাবদিহিতামূলক করবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে ভূমিকা রাখবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উচ্চকক্ষের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও বিশেষজ্ঞ সদস্যদের দ্বারা গঠনমূলক আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশের জনগণ উপকৃত হবে।“

বিবৃতিতে বলা হয়, “উচ্চকক্ষ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি এবং এর কার্যপরিধি নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে। আমরা মনে করি, উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন যদি নিম্নকক্ষের আসন বণ্টনের পদ্ধতিতেই হয় (যেমন একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব), তাহলে দ্বিকক্ষ সংসদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো গুণগত পরিবর্তন আসবে না। যদি উচ্চকক্ষে সদস্যরা নিম্নকক্ষে সাধারণ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্বাচিত হন অর্থাৎ একটি আনুপাতিক ভোটের হারে গঠিত হয়, তাহলে নতুন এ উচ্চকক্ষ সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ এর ভূমিকা পালন করতে পারবে।

“ভবিষ্যৎ যেকোনো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল যদি নিম্নকক্ষে একচেটিয়া ও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পায়, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। এছাড়া কিছু ছোট দল, যারা সারা দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভোট পাওয়া সত্ত্বেও নিম্নকক্ষে কোনো আসন পাবে না, তাদেরও উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব থাকার সম্ভবনা তৈরি হবে। এসব কারণে ক্ষমতাসীনরা যদি জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে বিরোধীদলসমূহ তার কার্যকরী সংসদীয় প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা এটাও মনে করি যে, উচ্চকক্ষের কার্যক্ষমতা এমন পর্যায়ে সীমিত হওয়া উচিত, যাতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাত্যহিক নির্বাহী কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। বিশেষ করে, উচ্চকক্ষ যেন সংবিধান সংশোধন ও যুদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভেটো দিতে না পারে। আমরা মনে করি, এই উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষে উত্থাপিত বিভিন্ন বিল ও সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পর্যালোচনা, নিরীক্ষা ও তদারকিমূলক কিছু ক্ষমতা পেতে পারে।

“পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের গণতন্ত্র বারবার হুমকির মুখে পড়েছে ‘উইনার টেইকস অল’ রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে। যেখানে ক্ষমতাসীনরা কখনোই বিরোধীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি এবং বিরোধীরা প্রায়ই এমনভাবে বাধা (অনেক ক্ষেত্রেই ধংসাত্মক প্রতিরোধের মাধ্যমে) সৃষ্টি করে, যা জাতীয় স্বার্থকেও ঝুঁকিতে ফেলে। আমরা জোরালোভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, উপরে বর্ণিত আনুপাতিক ভোটের উচ্চকক্ষ ধারণাটি গ্রহণ করার ব্যাপারে আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন এবং এটি জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করুন।”

বিবৃতিতে সই দিয়েছে যারা

আইরিন খান (মানবাধিকার কর্মী), শহিদুল আলম (আলোকচিত্রী), আসিফ মোহাম্মদ শাহান (শিক্ষক ও রাজনৈতিক গবেষক), মানজুর আল মতিন (আইনজীবী), ফাহিম মাশরুর (উদ্যোক্তা ও সংগঠক), জ্যোতি রহমান (অর্থনীতিবিদ), জিয়া হাসান (অর্থনীতিবিদ), ফারাহ কবির (মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠক), ড. রুশাদ ফরীদি (শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), উমামা ফাতেমা (ছাত্রনেতৃত্ব), আশরাফ কায়সার (সাংবাদিক), ব্যারিস্টার মিতি ফারজানা (আইনজীবী), ড. অতনু রব্বানী (অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক), মাহরুখ মহিউদ্দীন (প্রকাশক), ড. ইমরান মতিন (উন্নয়ন গবেষক), ড. মির্জা হাসান (সমাজ বিশ্লেষক), ড. অনন্য রায়হান (অর্থনীতিবিদ ও নীতি গবেষক), জাফর সোবহান (সম্পাদক ও লেখক), সফিকুর রহমান (রাজনৈতিক বিশ্লেষক), রেজাউল করিম রনি (সম্পাদক, জবান), ড. রুমি আহমেদ (চিকিৎসক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক), আমিনুল ইসলাম ইমন (স্বপতি), শাহেদ ইকবাল (চিকিৎসক গবেষণাবিদ), এহতেশামুল হক (আইনজীবী), ব্যারিস্টার মুশতাক আহমেদ (আইনজীবী), সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন (লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক), সুবাইল বিন আলম (লেখক ও প্রকৌশলী), ইসলামুল হক (উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ), সেলিনা আজিজ (গবেষক ও শিক্ষক), সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া (শিক্ষাবিদ ও গবেষক), আসিফ বিন আলী (গবেষক), রন্টি চৌধুরী (রাজনৈতিক বিশ্লেষক), সাইফ শাহ মোহাম্মদ (আইনজীবী), মাসুদ রানা (আইনজীবী), নাজিফা জান্নাত (ছাত্র সংগঠক), সাদিক মাহবুব ইসলাম (সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট), আহমদ ইসলাম মুকসিত (আইটি উদ্যোক্তা), আবদুল্লাহ আল মামুন (প্রকৌশলী), কায়সার চৌধুরী (উদ্যোক্তা), মিল্লাত হোসেন (আইনবিদ ও লেখক), মোহাম্মদ মিয়া রাদ (বিনিয়োগ পরামশক), ক্যাপ্টেন এ কে এম মোতাহারুল ইসলাম (মেরিনার), রকিবুল হাসান (প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক), রুবায়েত সারওয়ার (উন্নয়ন গবেষক), নাঈম মোহায়মেন (চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধ্যাপক), প্রকাশ চৌধুরী (উদ্যোক্তা), গালিব ইবনে আনোয়ারুল আজীম (অর্থনীতিবিদ), দিদার ভূঁইয়া (উদ্যোক্তা), মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়াবিদ), মাহবুব সাদিক (উদ্যোক্তা), খালেদ শফিউল্লাহ (সংবিধান বিশেষজ্ঞ), তারিকুল ইসলাম অনিক (গবেষক, আইন ও সংবিধান), রনি মন্ডল (প্রকৌশলী), হাসান মাহমুদ (উদ্যোক্তা), সৈয়দ আমীন (উদ্দোক্তা), মাহমুদুল খান আপেল (প্রকৌশলী), সাইফুল ইসলাম সরকার প্রকৌশলী), তারেক হোসেন (উদ্যোক্তা)ও হুমায়ুন কবির (অর্থনীতি গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট)।

ছবি

সোনারগাঁয়ে এনসিপি’র নিরাপত্তার কারণে জনদূর্ভোগ, ওভারব্রিজ ব্যবহারে বাঁধা, মসজিদে সাঁটানো হয় নেতার ফেস্টুন

৩ আগস্টের মধ্যে ত্রুটি সংশোধনের নির্দেশ পেল জাতীয় নাগরিক পার্টি

ছবি

গণতন্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা চলছে, দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের তাগিদ ফখরুলের

ছবি

পিআর পদ্ধতি বিরোধীদের কক্সবাজারে ঠেকানোর হুঁশিয়ারি এনসিপির

ছবি

“নতুন বাংলাদেশ গড়তে স্বচ্ছ নির্বাচন দরকার” — সোহরাওয়ার্দীতে জামায়াতের সমাবেশে তাহের

ছবি

সোহরাওয়ার্দীতে জামায়াতের সমাবেশে সারজিস আলম: মুজিববাদীদের কোমর ভেঙে দিতে হবে

ছবি

প্রবাসীর প্রজেক্টে হামলা-লুটপাট, বিএনপি নেতা দুলালসহ ২৪ জনের নামে মামলা

ছবি

গোপালগঞ্জের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

ছবি

‘সুযোগ হারালে বাংলাদেশ বহু বছর পিছিয়ে পড়বে’

ছবি

সোহরাওয়ার্দীতে প্রথমবারের মতো জামায়াতের সমাবেশ

ছবি

জামায়াতের সমাবেশের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমুদ্র

ছবি

‘সংস্কার নয়, শাসকশ্রেণির উচ্ছেদ প্রয়োজন’—আলোচনা সভায় বদরুদ্দিন উমর

ছবি

‘ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেতে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে’—চট্টগ্রামে বক্তৃতা

ছবি

‘নারায়ণগঞ্জের মাফিয়া-পরিবারতন্ত্র ভাঙতে হবে’—পথসভায় এনসিপি

ছবি

বিএনপিকে নিশ্চিহ্নের পাঁয়তারা বন্ধের হুঁশিয়ারি আব্বাসের

ছবি

৩২ লাখ টাকায় চার জোড়া বিশেষ ট্রেন নিল জামায়াত, ‘নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি’ বলছে রেলওয়ে

ছবি

নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে প্রাণ গেল তিন শ্রমিকের

ছবি

চট্টগ্রামের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

ছবি

মুন্সীগঞ্জে এনসিপির পথসভায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা

ছবি

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া বিএনপির আর কোনো উদ্দেশ্য নেই: জাহিদ

ছবি

এরা ফাঁদ পাতছে, আমাদের উসকানি দিচ্ছে: মির্জা ফখরুল

ছবি

ধর্মের নামে আরেক ফ্যাসিস্ট কড়া নাড়লে জনগণ মেনে নেবে না: রিজভী

ছবি

গোপালগঞ্জের সহিংসতা নিয়ে সরকারের সমালোচনা, এনসিপির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন : খসরু

ছবি

নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বৈষম্যের অভিযোগ জেপিবির

ছবি

“মুজিববাদীদের গোপালগঞ্জে ঠাঁই হবে না” — হুঁশিয়ারি এনসিপি আহ্বায়কের

ছবি

গোপালগঞ্জের প্রতিটি ঘরে ঘরে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে: নাহিদ

ছবি

গোপালগঞ্জে যাওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত, এনসিপিকে প্রশ্ন ছাত্রদল নেতার

ছবি

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম, বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের ডাক

ছবি

সাঁজোয়া যানে করে গোপালগঞ্জ ছাড়লেন এনসিপি নেতারা, রাতে খুলনায় সংবাদ সম্মেলন

ছবি

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও সাঁড়াশি অভিযানের দাবি বৈষম্যবিরোধীদের, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ছবি

শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান, গোপালগঞ্জে রণক্ষেত্র

ছবি

সমাবেশ থেকে ফেরার পথে হামলায় আহত এনসিপি নেতারা পুলিশের নিরাপত্তায় আশ্রয়ে

ছবি

সারজিস আলমের আহ্বান: “গোপালগঞ্জে ছুটে আসুন, আজকেই শেষ দিন”

ছবি

‘অরাজকতা সৃষ্টির অপতৎপরতা চলছে’ — গোপালগঞ্জের ঘটনায় ফখরুলের প্রতিক্রিয়া

ছবি

আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার পর সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি ডেকেছে ছাত্র আন্দোলন

ছবি

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে আগুন, আহত ৩

tab

রাজনীতি

আনুপাতিক ভোটের পক্ষে একমত হওয়ার আহ্বান ‘৬০ নাগরিকের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

আনুপাতিক ভোটের হিসাবে জাতীয় সংসদের ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৬০ নাগরিক।

আনুপাতিক ভোটের বিষয়টি জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

তাদের ভাষ্য, এই উচ্চকক্ষ সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের ভূমিকা পালন করতে পারবে।

সোমবার রাতে বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক যে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর প্রাক্কালে আমাদের রাষ্ট্র ও প্রজাতন্ত্রের সংস্কারের কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। ঐকমত্য কমিশনের তত্ত্বাবধানে, রাজনৈতিক দলসমূহ ইতোমধ্যেই সংবিধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে সম্মত হয়েছে, যদিও কিছু মতপার্থক্য এখনও রয়ে গেছে। সংসদের জন্য ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।

“আমরা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় সংলাপের এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ আগামী দিনে সংসদীয় পদ্ধতিকে আরও জবাবদিহিতামূলক করবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে ভূমিকা রাখবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উচ্চকক্ষের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও বিশেষজ্ঞ সদস্যদের দ্বারা গঠনমূলক আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশের জনগণ উপকৃত হবে।“

বিবৃতিতে বলা হয়, “উচ্চকক্ষ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি এবং এর কার্যপরিধি নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে। আমরা মনে করি, উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন যদি নিম্নকক্ষের আসন বণ্টনের পদ্ধতিতেই হয় (যেমন একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব), তাহলে দ্বিকক্ষ সংসদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো গুণগত পরিবর্তন আসবে না। যদি উচ্চকক্ষে সদস্যরা নিম্নকক্ষে সাধারণ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্বাচিত হন অর্থাৎ একটি আনুপাতিক ভোটের হারে গঠিত হয়, তাহলে নতুন এ উচ্চকক্ষ সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ এর ভূমিকা পালন করতে পারবে।

“ভবিষ্যৎ যেকোনো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল যদি নিম্নকক্ষে একচেটিয়া ও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পায়, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। এছাড়া কিছু ছোট দল, যারা সারা দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভোট পাওয়া সত্ত্বেও নিম্নকক্ষে কোনো আসন পাবে না, তাদেরও উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব থাকার সম্ভবনা তৈরি হবে। এসব কারণে ক্ষমতাসীনরা যদি জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে বিরোধীদলসমূহ তার কার্যকরী সংসদীয় প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা এটাও মনে করি যে, উচ্চকক্ষের কার্যক্ষমতা এমন পর্যায়ে সীমিত হওয়া উচিত, যাতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাত্যহিক নির্বাহী কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। বিশেষ করে, উচ্চকক্ষ যেন সংবিধান সংশোধন ও যুদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভেটো দিতে না পারে। আমরা মনে করি, এই উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষে উত্থাপিত বিভিন্ন বিল ও সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পর্যালোচনা, নিরীক্ষা ও তদারকিমূলক কিছু ক্ষমতা পেতে পারে।

“পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের গণতন্ত্র বারবার হুমকির মুখে পড়েছে ‘উইনার টেইকস অল’ রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে। যেখানে ক্ষমতাসীনরা কখনোই বিরোধীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি এবং বিরোধীরা প্রায়ই এমনভাবে বাধা (অনেক ক্ষেত্রেই ধংসাত্মক প্রতিরোধের মাধ্যমে) সৃষ্টি করে, যা জাতীয় স্বার্থকেও ঝুঁকিতে ফেলে। আমরা জোরালোভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, উপরে বর্ণিত আনুপাতিক ভোটের উচ্চকক্ষ ধারণাটি গ্রহণ করার ব্যাপারে আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন এবং এটি জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করুন।”

বিবৃতিতে সই দিয়েছে যারা

আইরিন খান (মানবাধিকার কর্মী), শহিদুল আলম (আলোকচিত্রী), আসিফ মোহাম্মদ শাহান (শিক্ষক ও রাজনৈতিক গবেষক), মানজুর আল মতিন (আইনজীবী), ফাহিম মাশরুর (উদ্যোক্তা ও সংগঠক), জ্যোতি রহমান (অর্থনীতিবিদ), জিয়া হাসান (অর্থনীতিবিদ), ফারাহ কবির (মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠক), ড. রুশাদ ফরীদি (শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), উমামা ফাতেমা (ছাত্রনেতৃত্ব), আশরাফ কায়সার (সাংবাদিক), ব্যারিস্টার মিতি ফারজানা (আইনজীবী), ড. অতনু রব্বানী (অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক), মাহরুখ মহিউদ্দীন (প্রকাশক), ড. ইমরান মতিন (উন্নয়ন গবেষক), ড. মির্জা হাসান (সমাজ বিশ্লেষক), ড. অনন্য রায়হান (অর্থনীতিবিদ ও নীতি গবেষক), জাফর সোবহান (সম্পাদক ও লেখক), সফিকুর রহমান (রাজনৈতিক বিশ্লেষক), রেজাউল করিম রনি (সম্পাদক, জবান), ড. রুমি আহমেদ (চিকিৎসক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক), আমিনুল ইসলাম ইমন (স্বপতি), শাহেদ ইকবাল (চিকিৎসক গবেষণাবিদ), এহতেশামুল হক (আইনজীবী), ব্যারিস্টার মুশতাক আহমেদ (আইনজীবী), সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন (লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক), সুবাইল বিন আলম (লেখক ও প্রকৌশলী), ইসলামুল হক (উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ), সেলিনা আজিজ (গবেষক ও শিক্ষক), সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া (শিক্ষাবিদ ও গবেষক), আসিফ বিন আলী (গবেষক), রন্টি চৌধুরী (রাজনৈতিক বিশ্লেষক), সাইফ শাহ মোহাম্মদ (আইনজীবী), মাসুদ রানা (আইনজীবী), নাজিফা জান্নাত (ছাত্র সংগঠক), সাদিক মাহবুব ইসলাম (সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট), আহমদ ইসলাম মুকসিত (আইটি উদ্যোক্তা), আবদুল্লাহ আল মামুন (প্রকৌশলী), কায়সার চৌধুরী (উদ্যোক্তা), মিল্লাত হোসেন (আইনবিদ ও লেখক), মোহাম্মদ মিয়া রাদ (বিনিয়োগ পরামশক), ক্যাপ্টেন এ কে এম মোতাহারুল ইসলাম (মেরিনার), রকিবুল হাসান (প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক), রুবায়েত সারওয়ার (উন্নয়ন গবেষক), নাঈম মোহায়মেন (চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধ্যাপক), প্রকাশ চৌধুরী (উদ্যোক্তা), গালিব ইবনে আনোয়ারুল আজীম (অর্থনীতিবিদ), দিদার ভূঁইয়া (উদ্যোক্তা), মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়াবিদ), মাহবুব সাদিক (উদ্যোক্তা), খালেদ শফিউল্লাহ (সংবিধান বিশেষজ্ঞ), তারিকুল ইসলাম অনিক (গবেষক, আইন ও সংবিধান), রনি মন্ডল (প্রকৌশলী), হাসান মাহমুদ (উদ্যোক্তা), সৈয়দ আমীন (উদ্দোক্তা), মাহমুদুল খান আপেল (প্রকৌশলী), সাইফুল ইসলাম সরকার প্রকৌশলী), তারেক হোসেন (উদ্যোক্তা)ও হুমায়ুন কবির (অর্থনীতি গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট)।

back to top