২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন উমর। রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহারের অভিযোগে তিনি তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিরও (এনসিপি) সমালোচনা করেছেন।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সংস্কার নয়, জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে শ্রমিক–কৃষকের গণ–অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক প্রস্তুতি নিন’ শিরোনামে এ সভার আয়োজন করা হয়।
বদরুদ্দিন উমর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী হয়েছে। এখন দক্ষিণপন্থীদের প্রভাব বেড়েছে। তাদের একটা উত্থান হয়েছে এখন। ছাত্রদের নেতৃত্বে যে পার্টি হয়েছে, সে পার্টির বক্তব্যে শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষ নিয়ে কোনো কথা নাই। তারা ভাবছে ধর্মকে ব্যবহার করবে। সে জন্য তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’
বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে বিএনপিকেই সবচেয়ে প্রগতিশীল মনে হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে বিএনপিকে সবচেয়ে প্রগতিশীল মনে হচ্ছে। তারাই কথাবার্তা বলছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছে সেটা যে একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সে রকম কিছু নয়। গণ–অভ্যুত্থান যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে একটা বিস্ফোরণের মতো ব্যাপার। একটা হলো দীর্ঘদিনের গণ–আন্দোলনের শীর্ষে গিয়ে একটা অভ্যুত্থান, আরেকটা হলো কোনো আন্দোলন করতে না পেরে দীর্ঘদিনের একটা ক্ষোভ ধামাচাপা থাকার ফলে একটা পরিস্থিতি। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধরনের অবস্থা তৈরি হয়েছিল।’
এই অভ্যুত্থান গণতান্ত্রিক কোনো কর্মসূচির অধীনে দীর্ঘ আন্দোলনের ফল নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদের বক্তব্যে শ্রমিক ও কৃষকের কোনো কথা নেই। এর কারণ এই যে আন্দোলন কোনো শ্রেণিকাঠামোর বিরুদ্ধে নয়। যে ব্যবসায়ী শ্রেণি এ দেশ শাসন করে আসছে ’৭২ সাল থেকে, তারা এখনো আছে।
এ গণ–অভ্যুত্থানকে শাসকশ্রেণির অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সরকারও শাসকশ্রেণির খেদমতগার হিসেবে থাকায় এখানে এক বছরে এমন কিছু ঘটেনি, যেটাকে বলা যেতে পারে আশাবাদী হওয়ার মতো ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার সংস্কার করে সবাই চিৎকার করছে। সংস্কার চাইতে পারে তারা, যারা ব্যবস্থাকে স্বীকার করে নিয়েছে। যারা সংস্কার চায়, তারা এ ব্যবস্থার উচ্ছেদ চায় না। বিদ্যমান যে ব্যবস্থাটা আছে, সেটা উচ্ছেদ করার আন্দোলন করতে হবে। যে শ্রেণিশাসন আছে, সেটার উচ্ছেদ চাইতে হবে। যে পরিস্থিতি রয়ে গেছে, সেটা চললে এ দেশের কোনো উন্নতি হবে না।’
একটা নির্বাচনের জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করে কী হবে? নির্বাচন করলে এ শাসনকাঠামোর মধ্যে থেকে একটা দল আসবে। গণ–অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, সে আশা অনুযায়ী কোনো পরিবর্তন হবে না।’
শ্রমিক–কৃষক ও মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রাম সফল করতে সংগঠন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘লেনিন বলেছিলেন, জনগণের সংগঠন ছাড়া কিছু নেই। যেমন সংগঠনের জনগণ ছাড়া কেউ থাকে না।’ তিনি বলেন, মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে সফল করতে হলে সংগঠন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, যিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, ‘দিল্লির মদদ পেয়ে বাংলাদেশকে ভারতের আশ্রিত দেশে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন ভারতে বসে নানা ধরনের চক্রান্ত করছে তারা। মুক্তিযুদ্ধকে ফ্যাসিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সংগঠক ভূলন ভৌমিক এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল।
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন উমর। রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহারের অভিযোগে তিনি তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিরও (এনসিপি) সমালোচনা করেছেন।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সংস্কার নয়, জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে শ্রমিক–কৃষকের গণ–অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক প্রস্তুতি নিন’ শিরোনামে এ সভার আয়োজন করা হয়।
বদরুদ্দিন উমর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী হয়েছে। এখন দক্ষিণপন্থীদের প্রভাব বেড়েছে। তাদের একটা উত্থান হয়েছে এখন। ছাত্রদের নেতৃত্বে যে পার্টি হয়েছে, সে পার্টির বক্তব্যে শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষ নিয়ে কোনো কথা নাই। তারা ভাবছে ধর্মকে ব্যবহার করবে। সে জন্য তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’
বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে বিএনপিকেই সবচেয়ে প্রগতিশীল মনে হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে বিএনপিকে সবচেয়ে প্রগতিশীল মনে হচ্ছে। তারাই কথাবার্তা বলছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছে সেটা যে একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সে রকম কিছু নয়। গণ–অভ্যুত্থান যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে একটা বিস্ফোরণের মতো ব্যাপার। একটা হলো দীর্ঘদিনের গণ–আন্দোলনের শীর্ষে গিয়ে একটা অভ্যুত্থান, আরেকটা হলো কোনো আন্দোলন করতে না পেরে দীর্ঘদিনের একটা ক্ষোভ ধামাচাপা থাকার ফলে একটা পরিস্থিতি। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধরনের অবস্থা তৈরি হয়েছিল।’
এই অভ্যুত্থান গণতান্ত্রিক কোনো কর্মসূচির অধীনে দীর্ঘ আন্দোলনের ফল নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদের বক্তব্যে শ্রমিক ও কৃষকের কোনো কথা নেই। এর কারণ এই যে আন্দোলন কোনো শ্রেণিকাঠামোর বিরুদ্ধে নয়। যে ব্যবসায়ী শ্রেণি এ দেশ শাসন করে আসছে ’৭২ সাল থেকে, তারা এখনো আছে।
এ গণ–অভ্যুত্থানকে শাসকশ্রেণির অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সরকারও শাসকশ্রেণির খেদমতগার হিসেবে থাকায় এখানে এক বছরে এমন কিছু ঘটেনি, যেটাকে বলা যেতে পারে আশাবাদী হওয়ার মতো ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার সংস্কার করে সবাই চিৎকার করছে। সংস্কার চাইতে পারে তারা, যারা ব্যবস্থাকে স্বীকার করে নিয়েছে। যারা সংস্কার চায়, তারা এ ব্যবস্থার উচ্ছেদ চায় না। বিদ্যমান যে ব্যবস্থাটা আছে, সেটা উচ্ছেদ করার আন্দোলন করতে হবে। যে শ্রেণিশাসন আছে, সেটার উচ্ছেদ চাইতে হবে। যে পরিস্থিতি রয়ে গেছে, সেটা চললে এ দেশের কোনো উন্নতি হবে না।’
একটা নির্বাচনের জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করে কী হবে? নির্বাচন করলে এ শাসনকাঠামোর মধ্যে থেকে একটা দল আসবে। গণ–অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, সে আশা অনুযায়ী কোনো পরিবর্তন হবে না।’
শ্রমিক–কৃষক ও মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রাম সফল করতে সংগঠন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘লেনিন বলেছিলেন, জনগণের সংগঠন ছাড়া কিছু নেই। যেমন সংগঠনের জনগণ ছাড়া কেউ থাকে না।’ তিনি বলেন, মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে সফল করতে হলে সংগঠন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, যিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, ‘দিল্লির মদদ পেয়ে বাংলাদেশকে ভারতের আশ্রিত দেশে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন ভারতে বসে নানা ধরনের চক্রান্ত করছে তারা। মুক্তিযুদ্ধকে ফ্যাসিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সংগঠক ভূলন ভৌমিক এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল।