alt

এবি পার্টি ছাড়লেন প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী, ফিরলেন জামায়াতে ইসলামীতে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) তার মূলনীতি থেকে সরে গেছে দাবি করে দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও উপদেষ্টা এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী পদত্যাগ করে ফিরেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে।

শনিবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে সহযোগী সদস্য পদে ফরম পূরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে ফেরেন অবসরপ্রাপ্ত এ সচিব। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ফেইসবুক পেইজ বাংলা পোস্টের লাইভে এসে এবি পার্টি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন সোলায়মান চৌধুরী।

তিনি বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার— এই তিন মূলনীতি নিয়ে ২০২০ সালের ২ মে এবি পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। এরপর নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করেও নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয়নি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর তার নামে এবি পার্টি নিবন্ধন পায়। গত ১১ জানুয়ারি দলটির প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। জেনারেল সেক্রেটারি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

এবি পার্টি ছাড়ার প্রকাশ্য ঘোষণায় সাবেক আমলা সোলায়মান চৌধুরী বলেন, “যে মহান ব্রত নিয়ে আমরা এবি পার্টি গঠন করেছি, তার কিছুই এখন হচ্ছে না। এবি পার্টি এখন ঢাকাকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। দেশের কোথাও জনসম্পৃক্ততা নাই। বরং দিন দিন এবি পার্টি বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ করে এবি পার্টি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

“অর্থাৎ এবি পার্টি যে মানুষের সেবা করবে, মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে, মানুষের সমস্যার সমাধান করবে- সেই থেকে এবি পার্টি অনেক দূরে সরে গেছে। এবং আমাকে কেবলমাত্র নামকাওয়াস্তেই উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। বাস্তবে উপদেশ চাইলে উপদেশ দেওয়া যায়, না চাইলে তো আর উপদেশ দেওয়া যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “অতএব আমি মনস্থির করেছি যে, এই পার্টি যে অঙ্গীকার করে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে আমার মাধ্যমে, তার ছিটেফোটাও এখন এই দলের মধ্যে নেই। তারা এই কাজের মধ্যে নেই। তারা এখন অন্য কাজে ব্যস্ত; এমন দলে থাকার চাইতে না থাকায় শ্রেয় বলে মনে করেছি এবং মনে করে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পদত্যাগও করেছি। আমি এবি পার্টির সকল পদ ত্যাগ করেছি মর্মে এবি পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমি এখন চিন্তা করছি নতুন কোন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আমার পুরনো দল জামায়াতে ইসলামীতে আবার ফিরে যাব।”

ফেইসবুক লাইভে সোলায়মান চৌধুরী বলেছিলেন, “এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর মুহতারাম, আমির ডক্টর শফিকুর রহমান সাহেবের সঙ্গে আমার প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তিনিই প্রাথমিকভাবে আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আমি উনার সামনে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা দিয়েছি যে, আমি আবার জামায়াতে ইসলামীতে দোগদান করব। এখন কেবল মাত্র লিখিত আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে।”

এর কয়েক ঘণ্টা বাদে ওই রাতেই তিনি ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “সদ্য এবি পার্টি ত্যাগ করেছি। আবার আল্লাহর নাম নিয়ে জামায়াতে এলাম। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করুন।” নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ফিরিস্তিও ওই পোস্টে তুলে ধরেন সোলায়মান চৌধুরী।

তিনি লেখেন, “আমি ১৯৬৪ সালের মাঝামাঝি নবম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগদান করি। এসএসসি পরীক্ষার পর সাথী হিসেবে শপথ গ্রহণ করি। চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে থাকাকালীন ১৯৬৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের রোকনিয়াতের শপথ গ্রহণ করি। কিছু দিন পর অভাব অনটনে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে এসে ১৯৬৮ সালে ভোলৈন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পাই। কিছু দিন পর লক্ষণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পাই।”

ছাত্র সংগঠন থেকে মূল দল জামায়াতে সম্পৃক্ততা হওয়ার তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে তিনি লেখেন, “উচ্চমাধ্যমিক প্রাইভেট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করাই। সংগঠনের সিদ্ধান্তে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, লালমাই চৌদ্দগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াতী কাজ শুরু করি। বাইশগাঁও গ্রাম নিবাসী শহীদ মাওলানা নুরুল হুদা সাহেবকে মুরুব্বি হিসেবে পাই। বাতাচো নিবাসী মাওলানা আহমদ উল্লাহ সাহেব মাঝে মাঝে কুমিল্লা থেকে এসে আমাদের কাজের খবর নিতেন। কিছু দিনের মধ্যেই বানঘরের মাওলানা আব্দুল গণি এবং অধ্যাপক সোলায়মান সাহেবকে পাই। ১৯৭০ সালের মধ্যে আমাদের জনশক্তি প্রায় ৪০ জনে উন্নীত হয় এই বিশাল এলাকাজুড়ে। শুরু হয় ইসলাম বিরোধী শক্তির সঙ্গে লড়াই।”

তার ভাষ্য, “তার অঙশ হিসেবে এই এলাকায় ইসলামী আন্দোলন চিরতরে খতম করে দেওয়ার জন্য ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে লক্ষণপুর বাজারে হিংস্র হায়েনার দল আমাদের উপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। আমরা অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে অনেকদিন চিকিৎসা গ্রহণ করি। আমাকে লক্ষণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে আমি চট্টগ্রাম চলে যাই। কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পাই। ১৯৭২ সালে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি। গোপনে চলতে থাকে ইসলামী আন্দোলনের কাজ। ১৯৭২ সালে আকবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার ভাই আবদুর রব সাহেব (পরবর্তী কুমিল্লা জেলা আমীর)কে শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করি।”

এরপর গোপনে সাংগঠনিক কাজ চালাতে থাকেন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “চলতে থাকে গোপনে ইসলামী আন্দোলন। ১৯৭৫ সালে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে বি এ পাশ করি। ছাত্র জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭৫ অক্টোবর মাসে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ এ যোগদান করি। ১৯৭৬ জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে রোকনিয়াতের শপথ গ্রহণ করি। ঐ বছর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতে থাকি এবং বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে সহকারী কমিশনার পদে যোগদান করি। ২০০৭ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসর নিয়ে পূণরায় জামায়াতে যোগদান করি। ২০১৯ সালে পদত্যাগ করে আমার বাংলাদেশ পার্টি গঠণ করি।”

ছবি

সিলেট-৪: ‘স্বঘোষিত’ প্রার্থী আরিফুলকে নিয়ে বিএনপিতে ‘বহিরাগত’ বিতর্ক, বিক্ষোভ

ছবি

গণভোট নয়, জনগণের সমস্যা সমাধানে নজর দিন: তারেক রহমান

ছবি

আওয়ামী লীগের কেউ যেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে না পারে: সিইসিকে গণঅধিকার পরিষদ

ছবি

বিএনপি নেতা আমীর খসরু: বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা যে কেউ করতে পারে

ছবি

চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্ন দেখছে: রিজভী

সুনামগঞ্জ-১ আসন: ‘প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী’ বলায় মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন বিএনপির প্রার্থী আনিসুল

ছবি

জুলাই সনদের বাইরে যে কোনো সিদ্ধান্তের দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে: বিএনপি

এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপ, দুইজন কারাগারে

ছবি

গণভোটের আগে কোনো নির্বাচন নয়, জামায়াত ও সঙ্গী-সাথীদের হুঁশিয়ারি

ছবি

অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে: হাসনাত

ছবি

ভোটকে এতো ভয় কেন... কারন অস্তিত্বই থাকবে না : মির্জা ফখরুল

ছবি

জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি: জুলাই সনদ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না

ছবি

‘সিটের বিনিময়ে স্বপ্ন বিক্রি’: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা

ছবি

এনসিপি কার্যালয়ের   ককটেল হামলার দুই আসামি কারাগারে

নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে: হাওলাদার

ছবি

একাত্তরের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায় একটি চক্র: মির্জা ফখরুল

ছবি

সংবিধানে গণভোট নেই বললে ২০২৬ সালেও নির্বাচন নেই : জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান

ছবি

"পোস্টাল ভোট বিডি" অ্যাপ উদ্বোধন ১৮ নভেম্বর :  নির্বাচন কমিশন

ছবি

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা, সাবেক দুই এমপিসহ আসামি ৮ শতাধিক

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপির চূড়ান্ত মনোনয়ন চান জোবায়ের

ছবি

বহিষ্কৃত ৪০ নেতার পদ ফিরিয়ে দিলো বিএনপি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ, বিনিয়োগ ও পারিবারিক সিদ্ধান্তও থমকে গেছে: আমীর খসরু

ছবি

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ: আমীর খসরু

ছবি

ঢাকা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা আসিফ মাহমুদের, বললেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ’

‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে থাকবে গণতন্ত্র মানবাধিকার ও ভোটাধিকার’

ছবি

‘আমেরিকা থেকে আসা শিক্ষিত লোকজন আমাদের ঘাড়ে গণভোট চাপাচ্ছে’ : মির্জা ফখরুল

ছবি

নিবন্ধন প্রশ্নে আমজনতার দলকে আইনসম্মত পথে আসার আহ্বান ইসি সচিবের

বিএনপির হাত ধরে বারবার গণতন্ত্র এসেছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

বিএনপি থেকে ৫ শতাংশ শিক্ষককে মনোনয়ন দেয়ার দাবি

ছবি

নিবন্ধনের দাবিতে ১০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনশনে আমজনতার সদস্য সচিব

ছবি

সংবিধানে গণভোটের কিছু নেই: আমীর খসরু

ছবি

আগেই গণভোট, নইলে কঠোর আন্দোলন: জামায়াতসহ ৮ দলের হুঁশিয়ারি

ছবি

কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান

ছবি

বিএনপি বলছে, প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে ‘আলোচনায় রাজি’, তবে ‘রাজনৈতিক দল দিয়ে আহ্বান কেন?’

tab

এবি পার্টি ছাড়লেন প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী, ফিরলেন জামায়াতে ইসলামীতে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) তার মূলনীতি থেকে সরে গেছে দাবি করে দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও উপদেষ্টা এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী পদত্যাগ করে ফিরেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে।

শনিবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে সহযোগী সদস্য পদে ফরম পূরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে ফেরেন অবসরপ্রাপ্ত এ সচিব। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ফেইসবুক পেইজ বাংলা পোস্টের লাইভে এসে এবি পার্টি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন সোলায়মান চৌধুরী।

তিনি বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার— এই তিন মূলনীতি নিয়ে ২০২০ সালের ২ মে এবি পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। এরপর নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করেও নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয়নি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর তার নামে এবি পার্টি নিবন্ধন পায়। গত ১১ জানুয়ারি দলটির প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। জেনারেল সেক্রেটারি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

এবি পার্টি ছাড়ার প্রকাশ্য ঘোষণায় সাবেক আমলা সোলায়মান চৌধুরী বলেন, “যে মহান ব্রত নিয়ে আমরা এবি পার্টি গঠন করেছি, তার কিছুই এখন হচ্ছে না। এবি পার্টি এখন ঢাকাকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। দেশের কোথাও জনসম্পৃক্ততা নাই। বরং দিন দিন এবি পার্টি বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ করে এবি পার্টি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

“অর্থাৎ এবি পার্টি যে মানুষের সেবা করবে, মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে, মানুষের সমস্যার সমাধান করবে- সেই থেকে এবি পার্টি অনেক দূরে সরে গেছে। এবং আমাকে কেবলমাত্র নামকাওয়াস্তেই উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। বাস্তবে উপদেশ চাইলে উপদেশ দেওয়া যায়, না চাইলে তো আর উপদেশ দেওয়া যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “অতএব আমি মনস্থির করেছি যে, এই পার্টি যে অঙ্গীকার করে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে আমার মাধ্যমে, তার ছিটেফোটাও এখন এই দলের মধ্যে নেই। তারা এই কাজের মধ্যে নেই। তারা এখন অন্য কাজে ব্যস্ত; এমন দলে থাকার চাইতে না থাকায় শ্রেয় বলে মনে করেছি এবং মনে করে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পদত্যাগও করেছি। আমি এবি পার্টির সকল পদ ত্যাগ করেছি মর্মে এবি পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমি এখন চিন্তা করছি নতুন কোন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আমার পুরনো দল জামায়াতে ইসলামীতে আবার ফিরে যাব।”

ফেইসবুক লাইভে সোলায়মান চৌধুরী বলেছিলেন, “এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর মুহতারাম, আমির ডক্টর শফিকুর রহমান সাহেবের সঙ্গে আমার প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তিনিই প্রাথমিকভাবে আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আমি উনার সামনে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা দিয়েছি যে, আমি আবার জামায়াতে ইসলামীতে দোগদান করব। এখন কেবল মাত্র লিখিত আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে।”

এর কয়েক ঘণ্টা বাদে ওই রাতেই তিনি ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “সদ্য এবি পার্টি ত্যাগ করেছি। আবার আল্লাহর নাম নিয়ে জামায়াতে এলাম। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করুন।” নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ফিরিস্তিও ওই পোস্টে তুলে ধরেন সোলায়মান চৌধুরী।

তিনি লেখেন, “আমি ১৯৬৪ সালের মাঝামাঝি নবম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগদান করি। এসএসসি পরীক্ষার পর সাথী হিসেবে শপথ গ্রহণ করি। চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে থাকাকালীন ১৯৬৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের রোকনিয়াতের শপথ গ্রহণ করি। কিছু দিন পর অভাব অনটনে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে এসে ১৯৬৮ সালে ভোলৈন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পাই। কিছু দিন পর লক্ষণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পাই।”

ছাত্র সংগঠন থেকে মূল দল জামায়াতে সম্পৃক্ততা হওয়ার তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে তিনি লেখেন, “উচ্চমাধ্যমিক প্রাইভেট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করাই। সংগঠনের সিদ্ধান্তে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, লালমাই চৌদ্দগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াতী কাজ শুরু করি। বাইশগাঁও গ্রাম নিবাসী শহীদ মাওলানা নুরুল হুদা সাহেবকে মুরুব্বি হিসেবে পাই। বাতাচো নিবাসী মাওলানা আহমদ উল্লাহ সাহেব মাঝে মাঝে কুমিল্লা থেকে এসে আমাদের কাজের খবর নিতেন। কিছু দিনের মধ্যেই বানঘরের মাওলানা আব্দুল গণি এবং অধ্যাপক সোলায়মান সাহেবকে পাই। ১৯৭০ সালের মধ্যে আমাদের জনশক্তি প্রায় ৪০ জনে উন্নীত হয় এই বিশাল এলাকাজুড়ে। শুরু হয় ইসলাম বিরোধী শক্তির সঙ্গে লড়াই।”

তার ভাষ্য, “তার অঙশ হিসেবে এই এলাকায় ইসলামী আন্দোলন চিরতরে খতম করে দেওয়ার জন্য ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে লক্ষণপুর বাজারে হিংস্র হায়েনার দল আমাদের উপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। আমরা অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে অনেকদিন চিকিৎসা গ্রহণ করি। আমাকে লক্ষণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে আমি চট্টগ্রাম চলে যাই। কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পাই। ১৯৭২ সালে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি। গোপনে চলতে থাকে ইসলামী আন্দোলনের কাজ। ১৯৭২ সালে আকবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার ভাই আবদুর রব সাহেব (পরবর্তী কুমিল্লা জেলা আমীর)কে শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করি।”

এরপর গোপনে সাংগঠনিক কাজ চালাতে থাকেন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “চলতে থাকে গোপনে ইসলামী আন্দোলন। ১৯৭৫ সালে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে বি এ পাশ করি। ছাত্র জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭৫ অক্টোবর মাসে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ এ যোগদান করি। ১৯৭৬ জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে রোকনিয়াতের শপথ গ্রহণ করি। ঐ বছর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতে থাকি এবং বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে সহকারী কমিশনার পদে যোগদান করি। ২০০৭ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসর নিয়ে পূণরায় জামায়াতে যোগদান করি। ২০১৯ সালে পদত্যাগ করে আমার বাংলাদেশ পার্টি গঠণ করি।”

back to top