alt

নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলাই’ কেন চায়, ব্যাখ্যা দিল এনসিপি

ধানের শীষও জাতীয় প্রতীক, কাঁঠাল জাতীয় ফল: নাহিদ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) না সত্ত্বেও দলীয় প্রতীক হিসেবে কেন ‘শাপলা’ চাওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যাটি শুক্রবার,(০৩ অক্টোবর ২০২৫) নিজেদের ফেইসবুক পেইজে শেয়ার করছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবসহ দলটির অনেক নেতাকর্মী।

ব্যাখ্যায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে এনসিপির নেতাদের সময়ে সময়ে বৈঠক ও যোগাযোগের সূত্র তুলে ধরা হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন।”

ব্যাখ্যায় বলা হয়, গত ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের আবেদন জানায়।

দেশের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ‘শাপলা’ এনসিপির সুপরিচিত প্রতীক হয়ে ওঠেছে দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, হঠাৎ করে গত ৯ জুলাই গণমাধ্যমের খবরে এনসিপি জানতে পারে যে, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীক হওয়ায় নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এটি বিধিমালার তফসিলভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় নির্বাচন কমিশন।”

গত ১৩ জুলাই এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করে। বৈঠকের আলোচনায় এবং পরে একটি লিখিত আবেদনে এনসিপি জানায়, ‘শাপলাকে জাতীয় প্রতীক উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত ব্যাখ্যা আইনানুগভাবে সঠিক নয় এবং এ বিষয়ে কমিশনের গৃহীত অবস্থানের আইনি ভিত্তি নেই।’

এনসিপির যুক্তি

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(৩), জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা ও প্রতীক আদেশ ১৯৭২-এর ধারা ৪, বাংলাদেশ জাতীয় প্রতীক বিধিমালা ১৯৭২-এর বিধি ৩ এবং অন্য আইন অনুসারে ‘শাপলা’ প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই।

১৯৭২ সালের আদেশের ৩য় তফসিল এবং ১৯৭২ সালের বিধিমালার পরিশিষ্ট ‘ক’ তে জাতীয় প্রতীকের নকশা অঙ্কিত আছে। নকশা অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে লালচে এবং হলুদ রঙের যুগল বৃত্তের ভেতরে লালচে এবং হলুদ রঙে অঙ্কিত পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল, দুপাশে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা, যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকার সন্নিবেশ ও সামষ্টিক রূপ।

অর্থাৎ জাতীয় প্রতীকের নকশা এবং রং ১৯৭২ সালের অর্ডারের ৩য় তফসিল ও বিধিমালার পরিশিষ্ট ‘ক’ দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তাছাড়া জাতীয় প্রতীকের শাপলাটি পানিতে ভাসমান, কিন্তু ‘ভাসমান শাপলা’ নামে কোনো প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার আয়োজন ছিল না।

শাপলা জাতীয় প্রতীকের চারটি স্বতন্ত্র উপাদানের একটি মাত্র উপাদান। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বিএনপিকে জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদানের একটি উপাদান ‘ধানের শীষ’ বরাদ্দ দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)কে আরেকটি উপাদান ‘তারা’ প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। সেহেতু নির্বাচন কমিশন ‘শাপলাকে’ প্রতীকের তালিকাভুক্ত করে রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে পারে।

নির্বাচন কমিশন জাতীয় ফল ‘কাঁঠালকে’ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে এবং তৃণমূল বিএনপি নামের আরেকটি দলকে ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। সুতরাং ‘শাপলা’ জাতীয় ফুল হলেও দলের প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আইনি বাধা নেই।

ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা এবং তারকা আলাদা আলাদা করে চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর এই চারের সমষ্টিই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক।

জাতীয় প্রতীকের উপাদানের মধ্যে দুটি উপাদান ইতোমধ্যে দুটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দকৃত। সর্বোপরি, ‘শাপলাকে’ প্রতীকের তালিকায় না রাখার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ভুল আইনি ভিত্তি ও বোঝাপড়ার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

গত ১৩ জুলাই আবেদনের অগ্রগতি জানতে চাইলেও কমিশন উক্ত কোনো ব্যাখ্যা ও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। ১৩ জুলাইয়ের বৈঠকের পরবর্তী কোনো বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শাপলা প্রতীক বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনি বাধার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

অর্থাৎ শাপলাকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত হয়নি। বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গত ৩ আগস্টের এক বৈঠকে ডিজিএফআইসহ কিছু সংস্থার লোগোতে শাপলা থাকার যুক্তিতে তা প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ না দেয়ার কথা বলেন।

ওই বৈঠকের বরাত দিয়ে নাহিদ ইসলাম লেখেন, পুলিশের লোগোর উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে ধানের শীষ প্রতীক থাকা, বাংলাদেশ

বিমানবাহিনীর লোগোর উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে ঈগল প্রতীক থাকা এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের লোগোর পুরোটা অংশ জুড়ে দাড়িপাল্লা প্রতীক থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন আগেই এসব প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছিল।

এনসিপির আহবায়ক আরও লেখেন, “বিএনপিকে প্রতীক হিসেবে ধানের শীষ, এবি পার্টিকে প্রতীক হিসেবে ঈগল এবং জামায়াতকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র ডিজিএফআইয়ের লোগোর সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য থাকার কারণ দেখিয়ে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেয়া বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের মনোভাব প্রকাশের ফলে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর কাছে নতি স্বীকার করছে কিনা এবং অন্য রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে এবং তাদের কারও কারও কথায় প্রভাবিত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন জনমনে তৈরি হয়।”

ছবি

৫ আগস্টের আগের স্বপ্ন ১৫ মাসেও পূরণ হয়নি: নুরুল হক

ছবি

যতই চালাকি হোক, আগে গণভোট, তারপর সংসদ নির্বাচন: তাহের

নতুন নামে ‘ফ্যাসিবাদ’ কায়েমের পাঁয়তারা চলছে: মুশতাক

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন আ’লীগের ‘ডোনার খ্যাত’ আনিসুল হক!

ছবি

রংপুরের দুই আসনে এনসিপি ও জামায়াতের মর্যাদার লড়াই

ছবি

জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট বলে কিছু থাকবে না: নাহিদ ইসলাম

ছবি

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘে মোমেনের চিঠি

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ ও গণভোট ইস্যুতে ফখরুলের কঠোর হুঁশিয়ারি

ছবি

শুক্রবার ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’

ছবি

জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যের আহ্বান বিএনপি নেতাদের

ছবি

আঙুল বাঁকা করার হুমকি জামায়াতের তাহেরের, কারণ ‘ঘি তাদের লাগবেই’

ছবি

গণতন্ত্রের পথ সরকারকেই সুগম করতে হবে, যশোরে মির্জা ফখরুল

ছবি

সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট দাবিতে প্রয়োজনে ‘আঙ্গুল বাঁকা’ করার হুঁশিয়ারি  : জামায়াত নেতৃত্ব

ছবি

৯ রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা , জাতীয় সনদ ও গণভোটে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ

ছবি

৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতিতে এনসিপি, জোট না হলে সরাসরি লড়াই

ছবি

পদ ছেড়ে ‘ভোট করবেন’ অ্যাটর্নি জেনারেল, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ‘আশাবাদী’

ছবি

বিএনপিতে যোগ দিলেন শহীদ মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ

মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

ছবি

জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা ও পৃথক দিনে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী

নীলফামারী ১ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

বরিশাল বিভাগে একমাত্র নারী প্রার্থী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো

ছবি

শেষ নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে আবেগঘন বার্তা দিলেন বিএনপি মহাসচিব

ছবি

প্রার্থী ঘোষণা: সিলেট বিএনপিতে অস্থিরতা

ছবি

চাঁদপুরে জাতীয় পার্টি ও জাতীয় জাসদ থেকে শতাধিক নেতাকর্মীর এনসিপিতে যোগদান

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর কোথাও আনন্দ, কোথাও বিক্ষোভ

ছবি

জামায়াত ‘যথাসময়ে’ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দেবে: শফিকুর রহমান

ছবি

জাতিসংঘকে নির্বাচনি সহায়তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ

ছবি

মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি

ছবি

দিনাজপুর-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন

ছবি

বরগুনার দু’টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নজরুল ও মনি

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

নাসিরনগর বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নান

ছবি

সিরাজগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় মনোনায়ন পেয়ে প্রচারণায় নেমেছে

ছবি

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী আপন দুই ভাইকে নিয়ে আলোচনার ঝড়

tab

নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলাই’ কেন চায়, ব্যাখ্যা দিল এনসিপি

ধানের শীষও জাতীয় প্রতীক, কাঁঠাল জাতীয় ফল: নাহিদ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) না সত্ত্বেও দলীয় প্রতীক হিসেবে কেন ‘শাপলা’ চাওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যাটি শুক্রবার,(০৩ অক্টোবর ২০২৫) নিজেদের ফেইসবুক পেইজে শেয়ার করছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবসহ দলটির অনেক নেতাকর্মী।

ব্যাখ্যায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে এনসিপির নেতাদের সময়ে সময়ে বৈঠক ও যোগাযোগের সূত্র তুলে ধরা হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন।”

ব্যাখ্যায় বলা হয়, গত ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের আবেদন জানায়।

দেশের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ‘শাপলা’ এনসিপির সুপরিচিত প্রতীক হয়ে ওঠেছে দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, হঠাৎ করে গত ৯ জুলাই গণমাধ্যমের খবরে এনসিপি জানতে পারে যে, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীক হওয়ায় নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এটি বিধিমালার তফসিলভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় নির্বাচন কমিশন।”

গত ১৩ জুলাই এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করে। বৈঠকের আলোচনায় এবং পরে একটি লিখিত আবেদনে এনসিপি জানায়, ‘শাপলাকে জাতীয় প্রতীক উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত ব্যাখ্যা আইনানুগভাবে সঠিক নয় এবং এ বিষয়ে কমিশনের গৃহীত অবস্থানের আইনি ভিত্তি নেই।’

এনসিপির যুক্তি

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(৩), জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা ও প্রতীক আদেশ ১৯৭২-এর ধারা ৪, বাংলাদেশ জাতীয় প্রতীক বিধিমালা ১৯৭২-এর বিধি ৩ এবং অন্য আইন অনুসারে ‘শাপলা’ প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই।

১৯৭২ সালের আদেশের ৩য় তফসিল এবং ১৯৭২ সালের বিধিমালার পরিশিষ্ট ‘ক’ তে জাতীয় প্রতীকের নকশা অঙ্কিত আছে। নকশা অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে লালচে এবং হলুদ রঙের যুগল বৃত্তের ভেতরে লালচে এবং হলুদ রঙে অঙ্কিত পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল, দুপাশে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা, যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকার সন্নিবেশ ও সামষ্টিক রূপ।

অর্থাৎ জাতীয় প্রতীকের নকশা এবং রং ১৯৭২ সালের অর্ডারের ৩য় তফসিল ও বিধিমালার পরিশিষ্ট ‘ক’ দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তাছাড়া জাতীয় প্রতীকের শাপলাটি পানিতে ভাসমান, কিন্তু ‘ভাসমান শাপলা’ নামে কোনো প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার আয়োজন ছিল না।

শাপলা জাতীয় প্রতীকের চারটি স্বতন্ত্র উপাদানের একটি মাত্র উপাদান। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বিএনপিকে জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদানের একটি উপাদান ‘ধানের শীষ’ বরাদ্দ দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)কে আরেকটি উপাদান ‘তারা’ প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। সেহেতু নির্বাচন কমিশন ‘শাপলাকে’ প্রতীকের তালিকাভুক্ত করে রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে পারে।

নির্বাচন কমিশন জাতীয় ফল ‘কাঁঠালকে’ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে এবং তৃণমূল বিএনপি নামের আরেকটি দলকে ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। সুতরাং ‘শাপলা’ জাতীয় ফুল হলেও দলের প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আইনি বাধা নেই।

ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা এবং তারকা আলাদা আলাদা করে চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর এই চারের সমষ্টিই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক।

জাতীয় প্রতীকের উপাদানের মধ্যে দুটি উপাদান ইতোমধ্যে দুটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দকৃত। সর্বোপরি, ‘শাপলাকে’ প্রতীকের তালিকায় না রাখার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ভুল আইনি ভিত্তি ও বোঝাপড়ার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

গত ১৩ জুলাই আবেদনের অগ্রগতি জানতে চাইলেও কমিশন উক্ত কোনো ব্যাখ্যা ও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। ১৩ জুলাইয়ের বৈঠকের পরবর্তী কোনো বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শাপলা প্রতীক বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনি বাধার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

অর্থাৎ শাপলাকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত হয়নি। বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গত ৩ আগস্টের এক বৈঠকে ডিজিএফআইসহ কিছু সংস্থার লোগোতে শাপলা থাকার যুক্তিতে তা প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ না দেয়ার কথা বলেন।

ওই বৈঠকের বরাত দিয়ে নাহিদ ইসলাম লেখেন, পুলিশের লোগোর উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে ধানের শীষ প্রতীক থাকা, বাংলাদেশ

বিমানবাহিনীর লোগোর উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে ঈগল প্রতীক থাকা এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের লোগোর পুরোটা অংশ জুড়ে দাড়িপাল্লা প্রতীক থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন আগেই এসব প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছিল।

এনসিপির আহবায়ক আরও লেখেন, “বিএনপিকে প্রতীক হিসেবে ধানের শীষ, এবি পার্টিকে প্রতীক হিসেবে ঈগল এবং জামায়াতকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র ডিজিএফআইয়ের লোগোর সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য থাকার কারণ দেখিয়ে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেয়া বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের মনোভাব প্রকাশের ফলে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর কাছে নতি স্বীকার করছে কিনা এবং অন্য রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে এবং তাদের কারও কারও কথায় প্রভাবিত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন জনমনে তৈরি হয়।”

back to top