অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই পৃথকভাবে গণভোট আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক আট দল। এই দুই ইস্যুতে চলমান মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজনের পরামর্শ দিয়ে এতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে সোমবার,(০৩ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আট দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম তাতে হঠাৎ করে একটি দল বিরোধিতা করছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট আগে আর পরে করে লাভ নেই। বরং গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নির্বাচনের দিন ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে কারও মনযোগ থাকবে না।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হবে নাকি আগেই হবে- এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ কয়েকটি দলের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতৈক্যে আসতে বলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে মতৈক্যে না আসতে পারলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘আমি সোমবার দলগুলোর মধ্যে একটি আলোচনার আহ্বান করেছিলাম। আজকে উপদেষ্টা পরিষদও সেই রকম একটি আহ্বান দলগুলোর কাছে জানিয়েছে। আমরাও দেখতে চাই মেইন স্টেক হোল্ডার দলগুলো এই আহ্বানে যেন সাড়া দেয়। তারাও যদি আমাদের মতো একইভাবে সাড়া দেয়, তাহলে একটা রাস্তা বেরিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ মনে করেছে যে তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, তারা আর কিছুই করবে না, দলগুলো মিলে করবে...তাহলে এখানে একটা রেফারির অভাব হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এখানে রেফারির ভূমিকা পালন করবেন আগের মতো, এটা আমরা আশা করি।’
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামি দল আগামী ৬ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেবে। সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
তিনি বলেন, আগামী ৬ নভেম্বর বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে গণমিছিল করা হবে। তবে সরকার দাবি মেনে না নিলে তারা ১১ নভেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন।
এই দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলেন এই পাঁচ দফার কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানানো হয়। অগ্রাধিকার দেয়া সেই তিন বিষয় হলো- অনতিবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন ও সংশোধিত আরপিও’র খসড়ায় আর কোনো পরিবর্তন না আনা।
আরপিও’তে নতুন করে কোনো পরিবর্তন মানা হবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ার করেন মামুনুল হক।
জামায়াতসহ এই ৮ দল সংশোধিত আরপিও’র পক্ষে অবস্থান নিলেও এর বিরোধিতা করছে বিএনপি। দলটির আপত্তি, জোটের ক্ষেত্রে এক দলের প্রতীক অন্য দলের ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান প্রমুখ।
এর আগে সকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন আট দলের শীর্ষ নেতারা। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই পৃথকভাবে গণভোট আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক আট দল। এই দুই ইস্যুতে চলমান মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজনের পরামর্শ দিয়ে এতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে সোমবার,(০৩ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আট দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম তাতে হঠাৎ করে একটি দল বিরোধিতা করছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট আগে আর পরে করে লাভ নেই। বরং গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নির্বাচনের দিন ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে কারও মনযোগ থাকবে না।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হবে নাকি আগেই হবে- এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ কয়েকটি দলের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতৈক্যে আসতে বলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে মতৈক্যে না আসতে পারলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘আমি সোমবার দলগুলোর মধ্যে একটি আলোচনার আহ্বান করেছিলাম। আজকে উপদেষ্টা পরিষদও সেই রকম একটি আহ্বান দলগুলোর কাছে জানিয়েছে। আমরাও দেখতে চাই মেইন স্টেক হোল্ডার দলগুলো এই আহ্বানে যেন সাড়া দেয়। তারাও যদি আমাদের মতো একইভাবে সাড়া দেয়, তাহলে একটা রাস্তা বেরিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ মনে করেছে যে তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, তারা আর কিছুই করবে না, দলগুলো মিলে করবে...তাহলে এখানে একটা রেফারির অভাব হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এখানে রেফারির ভূমিকা পালন করবেন আগের মতো, এটা আমরা আশা করি।’
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামি দল আগামী ৬ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেবে। সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
তিনি বলেন, আগামী ৬ নভেম্বর বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে গণমিছিল করা হবে। তবে সরকার দাবি মেনে না নিলে তারা ১১ নভেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন।
এই দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলেন এই পাঁচ দফার কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানানো হয়। অগ্রাধিকার দেয়া সেই তিন বিষয় হলো- অনতিবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন ও সংশোধিত আরপিও’র খসড়ায় আর কোনো পরিবর্তন না আনা।
আরপিও’তে নতুন করে কোনো পরিবর্তন মানা হবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ার করেন মামুনুল হক।
জামায়াতসহ এই ৮ দল সংশোধিত আরপিও’র পক্ষে অবস্থান নিলেও এর বিরোধিতা করছে বিএনপি। দলটির আপত্তি, জোটের ক্ষেত্রে এক দলের প্রতীক অন্য দলের ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান প্রমুখ।
এর আগে সকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন আট দলের শীর্ষ নেতারা। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও ডেভেলপমেন্ট পার্টি।