দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা অপ্রয়োজনীয় সংকট: মির্জা ফখরুল
বুধবার, রাজধানীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংবাদ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যখন জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে, তখন কিছু রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জনগণের আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। তিনি এই ‘দুর্বল’ সরকারকে কোনো হুমকি-ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানান।
বুধবার,(১২ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান দেশের অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার মতে, দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াতে হলে জনগণের সমর্থনে গঠিত একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬ শতাংশ, যা কোনো সরকারই অতিক্রম করতে পারেনি। বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশেরও কম।
তিনি গণভোটের অপ্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আলু চাষিদের যে পরিমাণ ভর্তুকি প্রয়োজন, সেই অর্থ দিয়ে গণভোট আয়োজনের চিন্তা করা হচ্ছে। অথচ গণভোটের চেয়ে আলু চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি প্রয়োজন। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে গণভোট আয়োজনের চেয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি করা বেশি জরুরি।’ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব বাস্তব সমস্যার কথা বলার মতো দেশে কেউ নেই বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
নারীর কর্মসংস্থান ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান জামায়াত আমিরের প্রস্তাবিত নারীর ৫ ঘণ্টা কাজ করার বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, পোশাক কারখানায় যদি নারীরা ৮ ঘণ্টার বদলে ৫ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে বাকি সময়ের মজুরি কে দেবে? কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলে, চাকরিদাতাদেরকে কৌশলে নারীদের চাকরি না দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা? তিনি মনে করেন, গণভোটের চেয়ে নারীদের মধ্যে চাকরি সংকুচিত হওয়ার যে আতঙ্ক, সেটি কাটানো বেশি প্রয়োজন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, কর্মহীন এসব মানুষগুলোর কাছে রাষ্ট্রের হাজার টাকা ব্যয় করে কথিত ‘গণভোটের’ চাইতে একটি চাকরি কি বেশি জরুরি নয়? বর্তমানে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে, উচ্চমাধ্যমিক এবং গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রতি ৫ জনের ১ জন বেকার।
শিক্ষা ব্যবস্থার বিপর্যয়ের দিক তুলে ধরে তারেক বলেন, ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল অনুযায়ী, পাশের হার ছিল সর্বনিম্ন এবং দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাশ করতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। এই ‘এআই’ যুগে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে ‘তথাকথিত গণভোট’ নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে গবেষণা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, নানান শর্ত জুড়ে দিয়ে কিছু দল, যারা রাজপথে তাদের সঙ্গী ছিল, তারা নির্বাচন নিয়ে জটিলতা তৈরি করছে। এতে একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ করা, অন্যদিকে পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারদের পুনর্বাসনের পথ সুগম হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে বর্তমানে পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার আশ্রয় নিয়েছে কিনা এ ব্যাপারে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, গণভোটের আড়ালে পতিত, পরাজিত, পলাতক অপশক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করবে, নাকি ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেবে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। তিনি রাজপথের সঙ্গীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না।’ সর্বশেষে তিনি বলেন, ‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়; নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা অপ্রয়োজনীয় সংকট। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ বাঁধাগ্রস্ত করে, জনগণের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করতেই সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা অপ্রয়োজনীয় সংকট: মির্জা ফখরুল
বুধবার, রাজধানীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংবাদ
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যখন জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে, তখন কিছু রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জনগণের আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। তিনি এই ‘দুর্বল’ সরকারকে কোনো হুমকি-ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানান।
বুধবার,(১২ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান দেশের অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার মতে, দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াতে হলে জনগণের সমর্থনে গঠিত একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬ শতাংশ, যা কোনো সরকারই অতিক্রম করতে পারেনি। বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশেরও কম।
তিনি গণভোটের অপ্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আলু চাষিদের যে পরিমাণ ভর্তুকি প্রয়োজন, সেই অর্থ দিয়ে গণভোট আয়োজনের চিন্তা করা হচ্ছে। অথচ গণভোটের চেয়ে আলু চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি প্রয়োজন। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে গণভোট আয়োজনের চেয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি করা বেশি জরুরি।’ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব বাস্তব সমস্যার কথা বলার মতো দেশে কেউ নেই বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
নারীর কর্মসংস্থান ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান জামায়াত আমিরের প্রস্তাবিত নারীর ৫ ঘণ্টা কাজ করার বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, পোশাক কারখানায় যদি নারীরা ৮ ঘণ্টার বদলে ৫ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে বাকি সময়ের মজুরি কে দেবে? কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলে, চাকরিদাতাদেরকে কৌশলে নারীদের চাকরি না দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা? তিনি মনে করেন, গণভোটের চেয়ে নারীদের মধ্যে চাকরি সংকুচিত হওয়ার যে আতঙ্ক, সেটি কাটানো বেশি প্রয়োজন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, কর্মহীন এসব মানুষগুলোর কাছে রাষ্ট্রের হাজার টাকা ব্যয় করে কথিত ‘গণভোটের’ চাইতে একটি চাকরি কি বেশি জরুরি নয়? বর্তমানে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে, উচ্চমাধ্যমিক এবং গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রতি ৫ জনের ১ জন বেকার।
শিক্ষা ব্যবস্থার বিপর্যয়ের দিক তুলে ধরে তারেক বলেন, ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল অনুযায়ী, পাশের হার ছিল সর্বনিম্ন এবং দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাশ করতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। এই ‘এআই’ যুগে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে ‘তথাকথিত গণভোট’ নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে গবেষণা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, নানান শর্ত জুড়ে দিয়ে কিছু দল, যারা রাজপথে তাদের সঙ্গী ছিল, তারা নির্বাচন নিয়ে জটিলতা তৈরি করছে। এতে একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ করা, অন্যদিকে পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারদের পুনর্বাসনের পথ সুগম হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে বর্তমানে পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার আশ্রয় নিয়েছে কিনা এ ব্যাপারে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, গণভোটের আড়ালে পতিত, পরাজিত, পলাতক অপশক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করবে, নাকি ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেবে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। তিনি রাজপথের সঙ্গীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না।’ সর্বশেষে তিনি বলেন, ‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়; নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা অপ্রয়োজনীয় সংকট। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ বাঁধাগ্রস্ত করে, জনগণের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করতেই সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।