প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে সিলেটে বিএনপির মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নতুন করে বিতর্ক ও বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে। সম্প্রতি দল তাকে প্রার্থী করেছে দাবি করে নগর ছেড়ে সিলেট-৪ (জৈন্তা, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ) আসনে গণসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। তবে তাকে ‘বহিরাগত’ দাবি করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ওই নির্বাচনী এলাকার অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকরা।
প্রার্থী দেয়া হয়েছে- প্রচারণা করে তিনি প্রতারণা করছেন; এমনটি হলে ঘোষণা আসতো
৩০ বছর ধরে আসনটিতে স্থানীয় রাজনীতিকরা বঞ্চিত
প্রবাসীর বিএনপি সমর্থকরাও চান স্থানীয় প্রার্থী
প্রায় প্রতিদিনই তার বিপক্ষে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ হচ্ছে। তারা বলছেন, এই আসনটিতে স্থানীয় রাজনীতিকরা প্রায় ৩০ বছর ধরে বঞ্চিত। এতদিন ‘বহিরাগতরা’ মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু এখন আর তারা আর মেনে নিতে ‘চাচ্ছেন না’।
এমনকি এ নিয়ে নাখোশ হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি সমর্থকরাও। গত রোববার যুক্তরাজ্যে এক সভায় তারা স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করার দাবি জানান। অক্সফোর্ড শহরে ‘সিলেট-৪ আসনে স্থানীয় প্রার্থী চাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রবাসীরা এই দাবি জানান।
আসনটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, দল আরিফুল হক চৌধুরীকে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তাদের অভিযোগ মনোনয়ন নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী ‘মিথ্যাচার’ শুরু করেছেন।
গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭ আসনে তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। পরে অবশ্য একটি আসনে প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়। সিলেটে ছয়টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট-৪ এবং সিলেট-৫ (কানাইঘাত-জকিগঞ্জ) এই দুই আসনে বিএনপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র হওয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-১ আসন (সিটি কর্পোরেশনে ও সদর উপজেলা) থেকে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। কিন্তু দল দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনী মাঠে থাকা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে প্রার্থী ঘোষণা করে।
এরপর ৪ নভেম্বর ঢাকায় চলে যান আরিফুল হক চৌধুরী। পরদিন গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসনের (খালেদা জিয়া) নির্দেশ আমি কখনোই অমান্য করিনি, করবোও না। চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বি। অতীতেও দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করেছি। সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি।’
তার এই বক্তব্যের পরই শুরু হয়েছে বিতর্ক ও বিক্ষোভ। তবে তার এমন প্রার্থীতার কথা শুনে দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রচারণা থেকে সরে যান।
তবে মাঠে রয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার দু’বারের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সামসুজ্জামান জামান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দীন ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম। তারা নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
এছাড়া স্থানীয় আব্দুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিনের সমর্থকরা প্রকাশ্যেই বিক্ষোভ করছেন। আরিফকে সিলেট-৪ আসনে ‘বহিরাগত’ দাবি করে এই আসনে ‘স্থানীয় প্রার্থীর’ দাবিতে মাঠেও নেমেছে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ। যারা হাকিম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক মিছিল ও মশাল মিছিল হয়েছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা ‘লোকাল চাই হাকিম ভাই’, ‘আর নয় বিদেশি, এবারে স্বদেশি’, ‘হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। গতকাল মঙ্গলবার জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দীন আহমদের সমর্থকরাও বিক্ষোভ করেন।
আরিফুলের প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী সংবাদকে বলেন, ‘প্রার্থী করা হলে দল থেকে ঘোষণা আসতো। আমি নিজেও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে আমি নির্বাচনী এলাকার সব মনোনয়ন প্রত্যাশীকে বলেছি, তাদের সমর্থকরা যাতে কারও নাম উল্লেখ করে প্রতিবাদ না জানান। আনুষ্ঠানিকভাবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই আমরা কাজ করবো।’
গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘কাগজ না পাওয়া পর্যন্ত তো মনে হয় না আরিফুল হক চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে আমাদের দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন বহিরাগত। যে কারণে এবার বহিরাগত বিষয়ে সাধারণ মানুষ নারাজ।’
আরিফুলের প্রার্থীতা ঘোষণাকে প্রতারণা বলছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সামসুজ্জামান জামান। তিনি বলেন, ‘আমিও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকেও বলেছেন এলাকায় কাজ করতে, আমিও করছি।
সংবাদ-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আরিফুল হক চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি অন্য একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘নির্দেশ পেয়েই সিলেট-৪ আসনে প্রচারণা শুরু করেছেন’ তিনি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে সিলেটে বিএনপির মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নতুন করে বিতর্ক ও বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে। সম্প্রতি দল তাকে প্রার্থী করেছে দাবি করে নগর ছেড়ে সিলেট-৪ (জৈন্তা, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ) আসনে গণসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। তবে তাকে ‘বহিরাগত’ দাবি করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ওই নির্বাচনী এলাকার অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকরা।
প্রার্থী দেয়া হয়েছে- প্রচারণা করে তিনি প্রতারণা করছেন; এমনটি হলে ঘোষণা আসতো
৩০ বছর ধরে আসনটিতে স্থানীয় রাজনীতিকরা বঞ্চিত
প্রবাসীর বিএনপি সমর্থকরাও চান স্থানীয় প্রার্থী
প্রায় প্রতিদিনই তার বিপক্ষে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ হচ্ছে। তারা বলছেন, এই আসনটিতে স্থানীয় রাজনীতিকরা প্রায় ৩০ বছর ধরে বঞ্চিত। এতদিন ‘বহিরাগতরা’ মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু এখন আর তারা আর মেনে নিতে ‘চাচ্ছেন না’।
এমনকি এ নিয়ে নাখোশ হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি সমর্থকরাও। গত রোববার যুক্তরাজ্যে এক সভায় তারা স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করার দাবি জানান। অক্সফোর্ড শহরে ‘সিলেট-৪ আসনে স্থানীয় প্রার্থী চাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রবাসীরা এই দাবি জানান।
আসনটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, দল আরিফুল হক চৌধুরীকে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তাদের অভিযোগ মনোনয়ন নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী ‘মিথ্যাচার’ শুরু করেছেন।
গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭ আসনে তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। পরে অবশ্য একটি আসনে প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়। সিলেটে ছয়টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট-৪ এবং সিলেট-৫ (কানাইঘাত-জকিগঞ্জ) এই দুই আসনে বিএনপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র হওয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-১ আসন (সিটি কর্পোরেশনে ও সদর উপজেলা) থেকে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। কিন্তু দল দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনী মাঠে থাকা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে প্রার্থী ঘোষণা করে।
এরপর ৪ নভেম্বর ঢাকায় চলে যান আরিফুল হক চৌধুরী। পরদিন গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসনের (খালেদা জিয়া) নির্দেশ আমি কখনোই অমান্য করিনি, করবোও না। চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বি। অতীতেও দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করেছি। সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি।’
তার এই বক্তব্যের পরই শুরু হয়েছে বিতর্ক ও বিক্ষোভ। তবে তার এমন প্রার্থীতার কথা শুনে দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রচারণা থেকে সরে যান।
তবে মাঠে রয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার দু’বারের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সামসুজ্জামান জামান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দীন ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম। তারা নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
এছাড়া স্থানীয় আব্দুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিনের সমর্থকরা প্রকাশ্যেই বিক্ষোভ করছেন। আরিফকে সিলেট-৪ আসনে ‘বহিরাগত’ দাবি করে এই আসনে ‘স্থানীয় প্রার্থীর’ দাবিতে মাঠেও নেমেছে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ। যারা হাকিম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক মিছিল ও মশাল মিছিল হয়েছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা ‘লোকাল চাই হাকিম ভাই’, ‘আর নয় বিদেশি, এবারে স্বদেশি’, ‘হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। গতকাল মঙ্গলবার জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দীন আহমদের সমর্থকরাও বিক্ষোভ করেন।
আরিফুলের প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী সংবাদকে বলেন, ‘প্রার্থী করা হলে দল থেকে ঘোষণা আসতো। আমি নিজেও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে আমি নির্বাচনী এলাকার সব মনোনয়ন প্রত্যাশীকে বলেছি, তাদের সমর্থকরা যাতে কারও নাম উল্লেখ করে প্রতিবাদ না জানান। আনুষ্ঠানিকভাবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই আমরা কাজ করবো।’
গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘কাগজ না পাওয়া পর্যন্ত তো মনে হয় না আরিফুল হক চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে আমাদের দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন বহিরাগত। যে কারণে এবার বহিরাগত বিষয়ে সাধারণ মানুষ নারাজ।’
আরিফুলের প্রার্থীতা ঘোষণাকে প্রতারণা বলছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সামসুজ্জামান জামান। তিনি বলেন, ‘আমিও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকেও বলেছেন এলাকায় কাজ করতে, আমিও করছি।
সংবাদ-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আরিফুল হক চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি অন্য একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘নির্দেশ পেয়েই সিলেট-৪ আসনে প্রচারণা শুরু করেছেন’ তিনি।