বিএনপি এখনও অনড়, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিদিন জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নানা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬ শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলেও দলটি আদৌ সেখানে সমাবেশ করবে কি না তা নিয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে বিএনপির পরিককল্পনা রয়েছে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার। এদিকে পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপির সমবেশ ঠেকাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার পক্ষে নয়। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। দলটির কোন কোন নেতা এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তা নিয়ে অন্য নেতাদের চরম বিরোধিতা রয়েছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, বিএনপির অফিসের আশপাশে পুলিশ সর্তক অবস্থানে রয়েছে। আর এদিকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেকর্মীদেরও ব্যাপক আনাগোনা ও ভিড় রয়েছে। নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে সামনের রাস্তায় যানজট লেগে আছে। দেখা গেছে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ২ শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে সরকারবিরোধী সেøাগান দিচ্ছে। এ সময় সরকারের সমালোচনা করে নেতাকর্মীরা বক্তব্যও রাখছেন। পাশেই পুলিশের একটি প্লাটুন (২০ জন) সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির অফিসের আশপশে নেতাকর্মীদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতেও দেখা গেছে। রিকশা, সিএনজি জড়ো হয়ে থাকায় ওই সড়কে যানজটও ছিল।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ঢাকা মহানগর বিএনপিও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির অফিস কার্যালয় ও রাস্তায় নিয়মিত জড়ো হয়ে থাকছে। কিছুণ পর পর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল ও বক্তব্য রাখার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখরিত করে রাখা হচ্ছে। দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে এ কৌশল নেয়া হয়েছে আর এ চাঙ্গা ভাব ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত রাখতে চায় বিএনপি।
শনিবার হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানা ভবন উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপি যদি পুলিশের নিষেধ না মেনে ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়, তাহলে পুলিশ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঢাকা শহর সচল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা যা করার, তা-ই করবে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশ করে। বিএনপি বলেছে, তাদের অনেক মানুষ জড়ো হবে, সেজন্য তাদের সুবিধার্থেই ১০ ডিসেম্বর পুলিশ কমিশনার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন। এ জন্য ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখও পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি তা না মেনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যাবে বলে জানিয়েছে। তারা যদি পুলিশ কমিশনারের নিষেধ না মেনে এমনটি করে, তাহলে পুলিশ কমিশনারই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির চাল-ডাল মজুদের বিষয়টি আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চাল-ডাল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে নাকি বিএনপি সরকার পতনের ডাক দেবে। এখানে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। অন্যদিকে বিএনপি বন্দুকের নল ঠেকিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তারা এবারও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে নানা অপকৌশল করে যাচ্ছে। তারা চাল-ডাল মজুদ করে কী করে, বিষয়টি আওয়ামী লীগ দেখছে।’
বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করতে চায়। আর আওয়ামী লীগ, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বিএনপিকে সমাবেশ করার জন্য বলে আসছে। নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করার ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কৌশল কী হবে, এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। নয়াপল্টনে সমাবেশ ঠেকাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে শনিবার এক অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশে নাশকতাসহ সবকিছু বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কথা বলছে। অন্যদিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ নিয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমরা আশা করি যেখানে অনুমতি দেয়া হয়েছে সেখানেই তারা (বিএনপি) সমাবেশ করবে। এখনও সময় আছে, অপেক্ষা করি। একদিকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, অন্যদিকে বড় একটি সমাবেশ হতে যাচ্ছে ঢাকায়। সমাবেশের মধ্যে জঙ্গিরা কোনকিছু ঘটিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোন খবর আমরা এখনও পাইনি। তবে আমরা নাশকতাসহ সব বিষয় বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।
বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বারবার বলা হচ্ছে, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন করে থাকে আইনের ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট কাঠামোতে। কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, সে বিষয়ে আমরা ট্রেনিং নিয়ে থাকি। আইনের আলোকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের একদিন আগে ৯ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশে যারা অংশ নেবেন, তাদের একটি অংশ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেখে দেয়া হতে পারে। এর বাইরে প্রতিটি ওয়ার্ডেও তাদের অবস্থান থাকবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বিষয়ে প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগও প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে। আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না থাকলেও ১০ ডিসেম্বর তাদের একইভাবে রাজপথে থাকার নির্দেশনা আছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলী, আশুলিয়া এবং টঙ্গীতে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আগের দিন থেকে পাহারা বসাতে পারে। সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না সরাসরি এমন অবস্থান প্রকাশ করে সরকার সমালোচনার মুখে পড়তে রাজি নয়। আবার সফলভাবে বিপুল জমায়েত করে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করবে বিএনপি, সেই সুযোগও দেয়া হবে না। এখন পর্যন্ত এটাই কৌশল। এরপরও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিএনপির ভেতরে ভেতরে আলোচনা চলছে। বিএনপির কর্মকান্ড, তাদের প্রস্তুতি, লোক জমায়েতের পরিস্থিতি দেখে শেষ মুহূর্তে নতুন কৌশল বা পরিকল্পনাও নেয়া হতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা সেখানেই সমাবেশ করবে। বএনপি এখন পর্যন্ত ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায়। এক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘৯, ১০ তারিখ আসুক, তখন বোঝা যাবে।’
বিএনপি এখনও অনড়, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিদিন জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা
শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নানা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬ শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলেও দলটি আদৌ সেখানে সমাবেশ করবে কি না তা নিয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে বিএনপির পরিককল্পনা রয়েছে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার। এদিকে পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপির সমবেশ ঠেকাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার পক্ষে নয়। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। দলটির কোন কোন নেতা এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তা নিয়ে অন্য নেতাদের চরম বিরোধিতা রয়েছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, বিএনপির অফিসের আশপাশে পুলিশ সর্তক অবস্থানে রয়েছে। আর এদিকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেকর্মীদেরও ব্যাপক আনাগোনা ও ভিড় রয়েছে। নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে সামনের রাস্তায় যানজট লেগে আছে। দেখা গেছে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ২ শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে সরকারবিরোধী সেøাগান দিচ্ছে। এ সময় সরকারের সমালোচনা করে নেতাকর্মীরা বক্তব্যও রাখছেন। পাশেই পুলিশের একটি প্লাটুন (২০ জন) সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির অফিসের আশপশে নেতাকর্মীদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতেও দেখা গেছে। রিকশা, সিএনজি জড়ো হয়ে থাকায় ওই সড়কে যানজটও ছিল।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ঢাকা মহানগর বিএনপিও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির অফিস কার্যালয় ও রাস্তায় নিয়মিত জড়ো হয়ে থাকছে। কিছুণ পর পর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল ও বক্তব্য রাখার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখরিত করে রাখা হচ্ছে। দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে এ কৌশল নেয়া হয়েছে আর এ চাঙ্গা ভাব ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত রাখতে চায় বিএনপি।
শনিবার হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানা ভবন উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপি যদি পুলিশের নিষেধ না মেনে ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়, তাহলে পুলিশ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঢাকা শহর সচল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা যা করার, তা-ই করবে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশ করে। বিএনপি বলেছে, তাদের অনেক মানুষ জড়ো হবে, সেজন্য তাদের সুবিধার্থেই ১০ ডিসেম্বর পুলিশ কমিশনার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন। এ জন্য ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখও পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি তা না মেনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যাবে বলে জানিয়েছে। তারা যদি পুলিশ কমিশনারের নিষেধ না মেনে এমনটি করে, তাহলে পুলিশ কমিশনারই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির চাল-ডাল মজুদের বিষয়টি আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চাল-ডাল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে নাকি বিএনপি সরকার পতনের ডাক দেবে। এখানে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। অন্যদিকে বিএনপি বন্দুকের নল ঠেকিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তারা এবারও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে নানা অপকৌশল করে যাচ্ছে। তারা চাল-ডাল মজুদ করে কী করে, বিষয়টি আওয়ামী লীগ দেখছে।’
বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করতে চায়। আর আওয়ামী লীগ, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বিএনপিকে সমাবেশ করার জন্য বলে আসছে। নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করার ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কৌশল কী হবে, এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। নয়াপল্টনে সমাবেশ ঠেকাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে শনিবার এক অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশে নাশকতাসহ সবকিছু বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কথা বলছে। অন্যদিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ নিয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমরা আশা করি যেখানে অনুমতি দেয়া হয়েছে সেখানেই তারা (বিএনপি) সমাবেশ করবে। এখনও সময় আছে, অপেক্ষা করি। একদিকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, অন্যদিকে বড় একটি সমাবেশ হতে যাচ্ছে ঢাকায়। সমাবেশের মধ্যে জঙ্গিরা কোনকিছু ঘটিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোন খবর আমরা এখনও পাইনি। তবে আমরা নাশকতাসহ সব বিষয় বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।
বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বারবার বলা হচ্ছে, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন করে থাকে আইনের ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট কাঠামোতে। কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, সে বিষয়ে আমরা ট্রেনিং নিয়ে থাকি। আইনের আলোকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের একদিন আগে ৯ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশে যারা অংশ নেবেন, তাদের একটি অংশ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেখে দেয়া হতে পারে। এর বাইরে প্রতিটি ওয়ার্ডেও তাদের অবস্থান থাকবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বিষয়ে প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগও প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে। আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না থাকলেও ১০ ডিসেম্বর তাদের একইভাবে রাজপথে থাকার নির্দেশনা আছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলী, আশুলিয়া এবং টঙ্গীতে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আগের দিন থেকে পাহারা বসাতে পারে। সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না সরাসরি এমন অবস্থান প্রকাশ করে সরকার সমালোচনার মুখে পড়তে রাজি নয়। আবার সফলভাবে বিপুল জমায়েত করে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করবে বিএনপি, সেই সুযোগও দেয়া হবে না। এখন পর্যন্ত এটাই কৌশল। এরপরও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিএনপির ভেতরে ভেতরে আলোচনা চলছে। বিএনপির কর্মকান্ড, তাদের প্রস্তুতি, লোক জমায়েতের পরিস্থিতি দেখে শেষ মুহূর্তে নতুন কৌশল বা পরিকল্পনাও নেয়া হতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা সেখানেই সমাবেশ করবে। বএনপি এখন পর্যন্ত ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায়। এক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘৯, ১০ তারিখ আসুক, তখন বোঝা যাবে।’