alt

রাজনীতি

মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি নিয়াজুল আ.লীগের সভাপতি

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ : শনিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হয়েছেন নিয়াজুল ইসলাম খান। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি।

গত শুক্রবার বিকেলে নগরীর খানপুর এলাকায় বার একাডেমী স্কুল প্রাঙ্গণে ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন এক সময়ে যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নিয়াজুল ইসলাম খান। সম্মেলনে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

ওয়ার্ড সভাপতি মনোনীত হওয়া নিয়াজুল ইসলাম খান ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘাতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আলোচনায় আসেন। ওইদিন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে গিয়ে চাষাঢ়ায় গণপিটুনির শিকার হন তিনি।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, নিয়াজুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। একসময় যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নিয়াজুলের উত্থান হয় ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে শামীম ওসমানের বড়ভাই জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের হাত ধরে। ১৯৮৮ সালে জোড়া খুনের (কামাল ও কালাম) মামলায় অন্যতম আসামি নিয়াজুল। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে শামীম ওসমান প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হলে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পান নিয়াজুল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এলজিইডির ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। এছাড়া গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে নিয়াজুলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। নগরীর চাঁদমারীতে সেনাবাহিনীর জায়গার গড়ে ওঠা বস্তিও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

নগরীর এক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই সময় দোর্দন্ড প্রভাবশালী হিসেবে চারজন ক্যাডার আলোচিত ছিলেন। ওই সময় তাদের ‘খলিফা’ হিসেবে ডাকা হতো। তাদের মধ্যে অন্যতম খলিফা ছিলেন নিয়াজুল ইসলাম খান। অপর তিন খলিফার মধ্যে মাহাতাব উদ্দিন লাল ও গোলাম সারোয়ার অসুস্থতায় মারা গেছেন। আর নুরুল আমিন মাকসুদ নিহত হয় আততায়ীর গুলিতে।

‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়াজুলের বড় ভাই নজরুল ইসলাম সুইট র‌্যাবের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। ওই সরকারের আমলে একইভাবে তাদের আত্মীয় যুবদলের ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডও নিহত হন। ওই সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য চিহ্নিত সন্ত্রাসীরদের মতো নিয়াজুলও পালিয়ে যান ভারতে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে দেশে ফেরেন।’

তবে দীর্ঘদিন আলোচনার বাইরে থাকলেও ২০১৮ সালে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘাতে ফের আলোচনায় আসেন নিয়াজুল ইসলাম খান। ওইদিন হকার ও শামীম ওসমান সমর্থকদের হামলায় আহত হন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, আওয়ামী লীগ নেতা, সাংবাদিকসহ অনেকে। ঘটনার দিন পিস্তল উঁচিয়ে তেড়ে আসলে গণপিটুনির শিকার হন নিয়াজুল। পরে এ ঘটনায় সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী একটি মামলা করেন। আইভীকে হত্যাচেষ্টা ও প্রকাশ্যে গুলি চালানোর অভিযোগে করা ওই মামলার এক নম্বর আসামি নিয়াজুল ইসলাম খান। সিটি মেয়রের পক্ষে ওই মামলার বাদী হন নাসিকের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার।

দীর্ঘ ৫ বছর পর মামলাটির তদন্ত শেষে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই’র চার্জশিটে ১২ অভিযুক্তের মধ্যে প্রথম নামটি নিয়াজুল ইসলামের। অভিযোগপত্র থেকে অস্ত্র আইনের ধারা বাদ দিলেও ওইদিন নিয়াজুল ইসলাম প্রকাশ্যে পিস্তল প্রদর্শন করে উঁচিয়ে ধরেছেন সে প্রমাণ ঘটনার দিন ধারণ করা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে পিস্তলটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত থাকায় তাকে অস্ত্র আইনের ধারা থেকে বাদ দেয় বলে জানায় পিবিআই।

যদিও পিবিআই’র জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, ওই ঘটনার পর নিয়াজুলের ওই পিস্তলটির লাইসেন্স জেলা প্রশাসন বাতিল করে দেয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেত্রী ও টানা তিনবারের নির্বাচিত মেয়রের উপর হামলার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করায় চলছে সমালোচনা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিয়াজুল ইসলামকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করার বিষয়টি শুধু পার্টির লোকজন না সাধারণ পাবলিকও ভালো চোখে দেখছে না। নিয়াজুল ইসলাম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। সে যে মেয়র আইভীকে গুলি করার জন্য পিস্তল উঁচিয়ে তেড়ে এসেছে সেইটা সারা বিশ্ববাসী দেখছে। এমন একজন ব্যক্তিকে শামীম ওসমান নিজে ফোন দিয়ে ওয়ার্ডের সভাপতি বানাইছে। এইটা পার্টির জন্য নেক্কারজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা।’

মানবাধিকার কর্মী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘শামীম ওসমান যে তার সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করতে চায় তারই প্রমাণ হয়েছে নিয়াজুল ইসলামকে সরকারি দলের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি বানানোর মধ্য দিয়ে। যে লোক প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করলো সেই লোককে সরকারি দলের সভাপতি বানানোর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অশনিসংকেত দেওয়া হলো।’

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সভাপতি পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। ‘বিতর্কিত’ হলেও নিয়াজুল ইসলামের বিপরীতে কেউ না থাকায় সে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৮ আসন মনোনয়নপত্র বাতিল ৩ প্রার্থীর

ছবি

দেশে কেউ না খেয়ে দিন কাটায় না : ওবায়দুল কাদের

ছবি

সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের প্রতিবাদে জামালপুরে মেয়রের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরও মামলা হচ্ছে শুনেছি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

সাংবাদিক নয়, মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে : আইনমন্ত্রী

ছবি

বিএনপি নির্বাচনে না এলেও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই:কাদের

ছবি

একটা দুর্ঘটনা নিয়ে একটা মন্ত্রণালয়ের বিচার করা সঠিক নয়

ছবি

সরকারের ‘প্রশ্রয়ে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে : ফখরুল

ছবি

ফখরুলের মন্তব্য ‘শতাব্দীর সেরা কৌতুক’ : কাদের

ছবি

নিষেধাজ্ঞার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্রয় পেয়েছে র‌্যাব: ফখরুল

ছবি

যথাসময়ে নির্বাচন হবে, জাতীয় পার্টিও অংশ নেবে: রওশন এরশাদ

ছবি

ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধীনতা এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

খালেদার মুক্তির মেয়াদ বেড়েছে, শর্ত আগের দুটিই

ছবি

বিএনপি পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত: ওবায়দুল কাদের

ছবি

যারা দেশই চায়নি, তারাই এখন ক্ষমতায় যেতে মরিয়া : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো : শিক্ষামন্ত্রী

ছবি

আমাদের ভোটের অধিকার হারিয়ে গেছে : ফখরুল

ছবি

সংলাপের চিঠি পাঠানো সরকারের নতুন কৌশল : ফখরুল

ছবি

বিএনপি পাকিস্তানের দালাল পার্টি : কাদের

ছবি

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশ শেখ হাসিনার

ছবি

ফখরুল দেশের সব অপশক্তির মুখপাত্র: ওবায়দুল কাদের

নোয়াখালীতে কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

ছবি

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী নোমান

ছবি

জনগণকে চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে : মির্জা ফখরুল

ছবি

রমজানে বিএনপিকে কর্মসূচি দিতে বাধ্য করেছে সরকার: ফখরুল

ছবি

লন্ডনের ওহি মুখ বন্ধ করে মানতে বাধ্য হন ফখরুল সাহেবরা : কাদের

ছবি

বিএনপিকে আলোচনায় বসাতে ইসি’র আমন্ত্রণ

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার কখনো ফিরে আসবে না : তথ্যমন্ত্রী

ছবি

ছাত্রলীগে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে আমাদের লজ্জা লাগে : ওবায়দুল কাদের

ছবি

বিএনপির আন্দোলন চোরাবালিতে আটকে গেছে: ওবায়দুল কাদের

ছবি

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিলেন কাদের

ছবি

দেশে এসেছেন আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান

ছবি

আওয়ামী লীগ মানুষের মৌলিক মানবাধিকারকে তোয়াক্কা করে না: ফখরুল

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন একপেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট: তথ্যমন্ত্রী

ছবি

শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি

ছবি

বিএনপি এখন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করছে: কাদের

tab

রাজনীতি

মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি নিয়াজুল আ.লীগের সভাপতি

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

শনিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হয়েছেন নিয়াজুল ইসলাম খান। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি।

গত শুক্রবার বিকেলে নগরীর খানপুর এলাকায় বার একাডেমী স্কুল প্রাঙ্গণে ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন এক সময়ে যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নিয়াজুল ইসলাম খান। সম্মেলনে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

ওয়ার্ড সভাপতি মনোনীত হওয়া নিয়াজুল ইসলাম খান ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘাতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আলোচনায় আসেন। ওইদিন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে গিয়ে চাষাঢ়ায় গণপিটুনির শিকার হন তিনি।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, নিয়াজুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। একসময় যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নিয়াজুলের উত্থান হয় ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে শামীম ওসমানের বড়ভাই জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের হাত ধরে। ১৯৮৮ সালে জোড়া খুনের (কামাল ও কালাম) মামলায় অন্যতম আসামি নিয়াজুল। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে শামীম ওসমান প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হলে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পান নিয়াজুল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এলজিইডির ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। এছাড়া গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে নিয়াজুলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। নগরীর চাঁদমারীতে সেনাবাহিনীর জায়গার গড়ে ওঠা বস্তিও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

নগরীর এক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই সময় দোর্দন্ড প্রভাবশালী হিসেবে চারজন ক্যাডার আলোচিত ছিলেন। ওই সময় তাদের ‘খলিফা’ হিসেবে ডাকা হতো। তাদের মধ্যে অন্যতম খলিফা ছিলেন নিয়াজুল ইসলাম খান। অপর তিন খলিফার মধ্যে মাহাতাব উদ্দিন লাল ও গোলাম সারোয়ার অসুস্থতায় মারা গেছেন। আর নুরুল আমিন মাকসুদ নিহত হয় আততায়ীর গুলিতে।

‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়াজুলের বড় ভাই নজরুল ইসলাম সুইট র‌্যাবের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। ওই সরকারের আমলে একইভাবে তাদের আত্মীয় যুবদলের ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডও নিহত হন। ওই সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য চিহ্নিত সন্ত্রাসীরদের মতো নিয়াজুলও পালিয়ে যান ভারতে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে দেশে ফেরেন।’

তবে দীর্ঘদিন আলোচনার বাইরে থাকলেও ২০১৮ সালে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘাতে ফের আলোচনায় আসেন নিয়াজুল ইসলাম খান। ওইদিন হকার ও শামীম ওসমান সমর্থকদের হামলায় আহত হন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, আওয়ামী লীগ নেতা, সাংবাদিকসহ অনেকে। ঘটনার দিন পিস্তল উঁচিয়ে তেড়ে আসলে গণপিটুনির শিকার হন নিয়াজুল। পরে এ ঘটনায় সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী একটি মামলা করেন। আইভীকে হত্যাচেষ্টা ও প্রকাশ্যে গুলি চালানোর অভিযোগে করা ওই মামলার এক নম্বর আসামি নিয়াজুল ইসলাম খান। সিটি মেয়রের পক্ষে ওই মামলার বাদী হন নাসিকের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার।

দীর্ঘ ৫ বছর পর মামলাটির তদন্ত শেষে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই’র চার্জশিটে ১২ অভিযুক্তের মধ্যে প্রথম নামটি নিয়াজুল ইসলামের। অভিযোগপত্র থেকে অস্ত্র আইনের ধারা বাদ দিলেও ওইদিন নিয়াজুল ইসলাম প্রকাশ্যে পিস্তল প্রদর্শন করে উঁচিয়ে ধরেছেন সে প্রমাণ ঘটনার দিন ধারণ করা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে পিস্তলটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত থাকায় তাকে অস্ত্র আইনের ধারা থেকে বাদ দেয় বলে জানায় পিবিআই।

যদিও পিবিআই’র জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, ওই ঘটনার পর নিয়াজুলের ওই পিস্তলটির লাইসেন্স জেলা প্রশাসন বাতিল করে দেয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেত্রী ও টানা তিনবারের নির্বাচিত মেয়রের উপর হামলার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করায় চলছে সমালোচনা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিয়াজুল ইসলামকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করার বিষয়টি শুধু পার্টির লোকজন না সাধারণ পাবলিকও ভালো চোখে দেখছে না। নিয়াজুল ইসলাম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। সে যে মেয়র আইভীকে গুলি করার জন্য পিস্তল উঁচিয়ে তেড়ে এসেছে সেইটা সারা বিশ্ববাসী দেখছে। এমন একজন ব্যক্তিকে শামীম ওসমান নিজে ফোন দিয়ে ওয়ার্ডের সভাপতি বানাইছে। এইটা পার্টির জন্য নেক্কারজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা।’

মানবাধিকার কর্মী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘শামীম ওসমান যে তার সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করতে চায় তারই প্রমাণ হয়েছে নিয়াজুল ইসলামকে সরকারি দলের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি বানানোর মধ্য দিয়ে। যে লোক প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করলো সেই লোককে সরকারি দলের সভাপতি বানানোর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অশনিসংকেত দেওয়া হলো।’

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সভাপতি পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। ‘বিতর্কিত’ হলেও নিয়াজুল ইসলামের বিপরীতে কেউ না থাকায় সে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি হয়েছে।

back to top