মত-দ্বিমত ছিল। বিতর্ক ছিল। মতানৈক্য দূর করতে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে। অনেক বিষয়ে মতভেদ দূর হয়েছে, কিছু বিতর্ক মিটেছে। আবার অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েই গিয়েছে।
মতপার্থক্য নিয়েই, নোট অব ডিসেন্টসহ গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে ২৪টি রাজনৈতিক দল। বামপন্থী চারটি রাজনৈতিক দল ও অনিবন্ধিত দল এনসিপি স্বাক্ষর করেনি। যে ২৪টি স্বাক্ষর সনদে পড়েছে তার মধ্যে ১৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের। দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২।
স্বাক্ষরেও বিতর্কের অবসান হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর দশ দিন পর ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে সুপারিশ পেশ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব সুপারিশের মধ্য দিয়ে কমিশন কি বিতর্কের অবসান ঘটাতে পেরেছে নাকি আরও উসকে দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য কি কমিয়ে আনতে পেরেছে নাকি তা আরও তীব্র হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নে কমিশন কতটা ঐক্য গড়ে তুলতে পারল?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে।”
কেন তিনি এমন কথা বললেন? সালাহউদ্দিন আহমদের ভাষ্য, “যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেই স্বাক্ষরিত সনদবহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ, সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে। ... কমিশনের দেওয়া সুপারিশমালার সাথে নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখ নাই।”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “জনগণের সঙ্গে এটা (নোট অব ডিসেন্ট পুরোপুরি উপেক্ষা করা) একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা।”
জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারে যেসব সুপারিশ এসেছে তার বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি দিতে দুটি বিকল্প পদ্ধতির কথা বলেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, কোনো প্রস্তাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে কীভাবে? কেনইবা হবে?
গণভোটের দিনক্ষণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট হবে নাকি এর আগেই হবে সেই বিতর্ক রয়েই গেল। আর এতে জল আরও ঘোলা হওয়ার আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করা এবং সেটার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করা। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, সেটা তাদের কর্মপরিধির মধ্যে ছিল না। জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ জুলাইয়ের পর ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। দীর্ঘ আলোচনার পরও এ ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি কমিশন। কিন্তু তারপর কমিশন বুধবার বাস্তবায়নের উপায়সহ যে সুপারিশ দিলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে - এর উদ্দেশ্য কী?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশকে আরো অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে। দেশে এমনিতেই নানান অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটার একমাত্র পথ হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যা করেছে তাতে এমন প্রশ্ন উঠেছে যে, তারা দেশের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে চায় কিনা। কাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করা হচ্ছে?
আমরা মনে করি, দেশে সংসদ নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই। গণতন্ত্র চাইলে অবশ্যই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ শাসন হতে হবে। কোনো আইন প্রণয়ন বা সংস্কার করতে হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই হতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে না হেঁটে যদি গণভোটের আয়োজন করা হয় সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে? জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশের সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। তাদের মতামতকে জনমত ভাববার কোনো কারণ নেই।
দেশে অনেক সংস্কার জরুরি। তবে জোর করে সংস্কার হয় না। সংস্কার করতে গিয়ে চাতুরির আশ্রয় নেয়া ভালো নয়। জোরাজুরি বা ছলচাতুরির কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা টেকসই হবে না। সংস্কার একদিনে হয় না। এটা চলমান প্রক্রিয়া। কাজেই গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করাই হবে উত্তম পদক্ষেপ। নির্বাচনেই ঘটতে পারে উত্তরণ। এবং সেটা অতি অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
মত-দ্বিমত ছিল। বিতর্ক ছিল। মতানৈক্য দূর করতে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে। অনেক বিষয়ে মতভেদ দূর হয়েছে, কিছু বিতর্ক মিটেছে। আবার অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েই গিয়েছে।
মতপার্থক্য নিয়েই, নোট অব ডিসেন্টসহ গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে ২৪টি রাজনৈতিক দল। বামপন্থী চারটি রাজনৈতিক দল ও অনিবন্ধিত দল এনসিপি স্বাক্ষর করেনি। যে ২৪টি স্বাক্ষর সনদে পড়েছে তার মধ্যে ১৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের। দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২।
স্বাক্ষরেও বিতর্কের অবসান হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর দশ দিন পর ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে সুপারিশ পেশ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব সুপারিশের মধ্য দিয়ে কমিশন কি বিতর্কের অবসান ঘটাতে পেরেছে নাকি আরও উসকে দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য কি কমিয়ে আনতে পেরেছে নাকি তা আরও তীব্র হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নে কমিশন কতটা ঐক্য গড়ে তুলতে পারল?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে।”
কেন তিনি এমন কথা বললেন? সালাহউদ্দিন আহমদের ভাষ্য, “যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেই স্বাক্ষরিত সনদবহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ, সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে। ... কমিশনের দেওয়া সুপারিশমালার সাথে নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখ নাই।”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “জনগণের সঙ্গে এটা (নোট অব ডিসেন্ট পুরোপুরি উপেক্ষা করা) একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা।”
জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারে যেসব সুপারিশ এসেছে তার বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি দিতে দুটি বিকল্প পদ্ধতির কথা বলেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, কোনো প্রস্তাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে কীভাবে? কেনইবা হবে?
গণভোটের দিনক্ষণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট হবে নাকি এর আগেই হবে সেই বিতর্ক রয়েই গেল। আর এতে জল আরও ঘোলা হওয়ার আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করা এবং সেটার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করা। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, সেটা তাদের কর্মপরিধির মধ্যে ছিল না। জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ জুলাইয়ের পর ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। দীর্ঘ আলোচনার পরও এ ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি কমিশন। কিন্তু তারপর কমিশন বুধবার বাস্তবায়নের উপায়সহ যে সুপারিশ দিলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে - এর উদ্দেশ্য কী?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশকে আরো অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে। দেশে এমনিতেই নানান অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটার একমাত্র পথ হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যা করেছে তাতে এমন প্রশ্ন উঠেছে যে, তারা দেশের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে চায় কিনা। কাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করা হচ্ছে?
আমরা মনে করি, দেশে সংসদ নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই। গণতন্ত্র চাইলে অবশ্যই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ শাসন হতে হবে। কোনো আইন প্রণয়ন বা সংস্কার করতে হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই হতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে না হেঁটে যদি গণভোটের আয়োজন করা হয় সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে? জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশের সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। তাদের মতামতকে জনমত ভাববার কোনো কারণ নেই।
দেশে অনেক সংস্কার জরুরি। তবে জোর করে সংস্কার হয় না। সংস্কার করতে গিয়ে চাতুরির আশ্রয় নেয়া ভালো নয়। জোরাজুরি বা ছলচাতুরির কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা টেকসই হবে না। সংস্কার একদিনে হয় না। এটা চলমান প্রক্রিয়া। কাজেই গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করাই হবে উত্তম পদক্ষেপ। নির্বাচনেই ঘটতে পারে উত্তরণ। এবং সেটা অতি অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচন।