রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে সুখবর মিলছে না। বায়ুদূষেণে শীর্ষে অবস্থান হচ্ছে বার বার। গতকাল শুক্রবার বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইকিউ এয়ার’ থেকে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল অনুযায়ী, চলতি মাসের ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত টানা চার দিনই ঢাকা ছিল এক নম্বরে।
বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে কতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তার কোন সরকারি পরিসংখ্যান নেই। নেই কোন আর্থিক ক্ষতির হিসাবও। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণে বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। বায়ুদূষণে যে ক্ষতি সেটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকার বাসিন্দাদের আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে দেশে করোনায় গত ২০ মাসে ২৮ হাজার মৃত্যু হয়েছে। এতেই বোঝা যায় জনস্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব কত ভয়াবহ।
দূষণ রোধে গত বছর ‘বায়ুদূষণ রোধ নির্দেশিকা’ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দেশিকাগুলো হলো- রাস্তা নির্মাণের সময় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, বিটুমিনের ওপর বালু না ছিটিয়ে মিনি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, রাস্তার পাশের মাটি কংক্রিট বা ঘাসে ঢেকে দেয়া, রাস্তা পরিষ্কারে ঝাড়ুর পরিবর্তে ভ্যাকুয়াম সুইপিং ট্রাক ব্যবহার, বড় সড়কে কমপক্ষে দু’বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু এসব শুধু কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে, কোনটির বাস্তবায়ন আর দেখা যায়নি। এখনও দেশের বাতাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক পিএম ২.৫-এর পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সুপারিশ করা পরিমাণের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। এমন অবস্থায় ভয়াবহ বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে!
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকার এমন দুরবস্থার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ই দায়ী। ঢাকা শহরের ক্ষমতার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এরপরও শিল্পায়ন, কংক্রিটের ভবন, আবাসন প্রকল্প হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। এমনটা হলে শুধু পানি ছিটিয়ে উষ্ণ আবহাওয়ায় ধুলা বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
মাহামারী করোনা হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাবে। সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই বায়ুদূষণ কবে থামবে, কীভাবে থামবে- সেটা কেউ বলতে পারে না। আমরা ঢাকার এমন দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা দেখতে চাই না যেখানে মানুষের প্রাণ ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণের শীর্ষে, বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকার অবস্থান তলানিতে। এমন ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ আমাদের দরকার নেই।
শনিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২২
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে সুখবর মিলছে না। বায়ুদূষেণে শীর্ষে অবস্থান হচ্ছে বার বার। গতকাল শুক্রবার বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইকিউ এয়ার’ থেকে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল অনুযায়ী, চলতি মাসের ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত টানা চার দিনই ঢাকা ছিল এক নম্বরে।
বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে কতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তার কোন সরকারি পরিসংখ্যান নেই। নেই কোন আর্থিক ক্ষতির হিসাবও। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণে বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। বায়ুদূষণে যে ক্ষতি সেটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকার বাসিন্দাদের আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে দেশে করোনায় গত ২০ মাসে ২৮ হাজার মৃত্যু হয়েছে। এতেই বোঝা যায় জনস্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব কত ভয়াবহ।
দূষণ রোধে গত বছর ‘বায়ুদূষণ রোধ নির্দেশিকা’ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দেশিকাগুলো হলো- রাস্তা নির্মাণের সময় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, বিটুমিনের ওপর বালু না ছিটিয়ে মিনি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, রাস্তার পাশের মাটি কংক্রিট বা ঘাসে ঢেকে দেয়া, রাস্তা পরিষ্কারে ঝাড়ুর পরিবর্তে ভ্যাকুয়াম সুইপিং ট্রাক ব্যবহার, বড় সড়কে কমপক্ষে দু’বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু এসব শুধু কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে, কোনটির বাস্তবায়ন আর দেখা যায়নি। এখনও দেশের বাতাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক পিএম ২.৫-এর পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সুপারিশ করা পরিমাণের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। এমন অবস্থায় ভয়াবহ বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে!
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকার এমন দুরবস্থার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ই দায়ী। ঢাকা শহরের ক্ষমতার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এরপরও শিল্পায়ন, কংক্রিটের ভবন, আবাসন প্রকল্প হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। এমনটা হলে শুধু পানি ছিটিয়ে উষ্ণ আবহাওয়ায় ধুলা বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
মাহামারী করোনা হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাবে। সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই বায়ুদূষণ কবে থামবে, কীভাবে থামবে- সেটা কেউ বলতে পারে না। আমরা ঢাকার এমন দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা দেখতে চাই না যেখানে মানুষের প্রাণ ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণের শীর্ষে, বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকার অবস্থান তলানিতে। এমন ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ আমাদের দরকার নেই।