২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৪ কোটিরও বেশি পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বান করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পিপিআর বা সরকারি ক্রয় আইন অনুযায়ী কোন দরপত্রে প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশ কম বা বেশি হতে হয়। সেখানে প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ২৩-৩৫ শতাংশ কম দেখিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে কয়েকটি মুদ্রাকর প্রতিষ্ঠান।
সরকার সাধারণত বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডারের মতামত ও বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপার প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে। প্রশ্ন উঠেছে, বিভিন্ন মুদ্রাকর প্রতিষ্ঠান কেন প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে এত কম দামে বই ছাপার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে দরপত্রের মূল্য অস্বাভাবিক কম হলে ছাপা পুস্তকের মান যে খারাপ হবে- তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
কাগজ, বই ছাপার কালি, ইউভি লেমিনেটিং ও বাধাঁইয়ের গ্লুসহ এ সংক্রান্ত প্রায় সব উপকরণের দামই এখন চড়া। এ অবস্থায় মুদ্রাকররা ‘অস্বাভাবিক’ কম দামে কীভাবে নির্ধারিত মানের পাঠ্যপুস্তক ছাপাবে- সেটা একটা প্রশ্ন। শুধু একটি দুটি নয় একাধিক প্রতিষ্ঠানই এমন দর দিয়েছে। এত কম মূল্যে দর দেওয়ার কারণইবা কী। ছাপার কাজ পাওয়ার পর যেনতেন করে বই ছেপে মুনাফা করাই কি তাদের উদ্দেশ্য- এটা একটা প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ছাপার কাজ যাতে কোনভাবেই হাতছাড়া না হয় সেই ভাবনা থেকেই এমন দর দিয়ে থাকতে পারেন। কারণ অতীত দেখা গেছে, কেউ কেউ সর্বনিম্ন দর দিয়ে কাজ পেয়েছে। এই ধারণা বা আশঙ্কা থেকেই মুদ্রাকররা কম টাকার দরপত্র জমা দিতে পারে।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দেশের পুস্তক মুদ্রাকরদের সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দিতে দেখা যায়। এজন্য কখনো তারা বেশি দামে বই ছাপার জন্য দরপত্র জমা দিয়ে থাকে। যেমনটা দিয়েছিল গত বছর। সেবার প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি দরে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্র জমা দেয়া হয়। পরে অবশ্য পুনঃদরপত্রের মাধ্যেমে বই ছাপা হয়। আর এবার তো কম দরেই অংশ নিল তারা।
আবার বই ছাপার পর দেখা যায় নিম্নমানের কাগজ ও উপকরণ দিয়ে কোনরকম বই ছেপে সরকারের হাতে তুলে দেয়। বই ছাপা ও সরবরাহ করতে গিয়ে ন্যূনতম মানও রক্ষা করা হয় না। অনেক সময় ছাপা অস্পষ্ট থাকে, প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি কালি দেওয়া হয়, কাগজের মানও খারাপ হয়। এত সব ‘খারাপ’ নিয়ে যেসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়, তা পুরো বছর ব্যবহার করার মতো নয়।
বই ছাপা নিয়ে একটি নয়, একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অনেক সময় একটি সিন্ডিকেট আরেকটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ করে দরপত্র জমা দিয়ে থাকে। মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয় শিক্ষার্থীরা, আর প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করেও সরকারের দুর্নাম হয়, সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। এমন অবস্থা থেকে বের হওয়ার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক ছাপার মান নিয়ে কোন ধরনের আপোস করা যাবে না। সিন্ডিকেটের কারণে যাতে ছাপা বইয়েরে মান খারাপ না হয় সেটি নিশ্চিত করেতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এনসিটিবির নিজস্ব মুদ্রণ ব্যবস্থা না থাকায় মুদ্রণকারীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই তারা নানাভাবে চাপে ফেলে। কালো তালিকাভুক্ত করলেও নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে একই কাজ করে। অনেকে বলছেন, এখান থেকে বের হওয়ার মোক্ষম উপায় হতে পারে এনসিটিবির নিজস্ব উদ্যোগে মুদ্রণের ব্যবস্থা করা।
শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২
২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৪ কোটিরও বেশি পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বান করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পিপিআর বা সরকারি ক্রয় আইন অনুযায়ী কোন দরপত্রে প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশ কম বা বেশি হতে হয়। সেখানে প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ২৩-৩৫ শতাংশ কম দেখিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে কয়েকটি মুদ্রাকর প্রতিষ্ঠান।
সরকার সাধারণত বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডারের মতামত ও বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপার প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে। প্রশ্ন উঠেছে, বিভিন্ন মুদ্রাকর প্রতিষ্ঠান কেন প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে এত কম দামে বই ছাপার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে দরপত্রের মূল্য অস্বাভাবিক কম হলে ছাপা পুস্তকের মান যে খারাপ হবে- তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
কাগজ, বই ছাপার কালি, ইউভি লেমিনেটিং ও বাধাঁইয়ের গ্লুসহ এ সংক্রান্ত প্রায় সব উপকরণের দামই এখন চড়া। এ অবস্থায় মুদ্রাকররা ‘অস্বাভাবিক’ কম দামে কীভাবে নির্ধারিত মানের পাঠ্যপুস্তক ছাপাবে- সেটা একটা প্রশ্ন। শুধু একটি দুটি নয় একাধিক প্রতিষ্ঠানই এমন দর দিয়েছে। এত কম মূল্যে দর দেওয়ার কারণইবা কী। ছাপার কাজ পাওয়ার পর যেনতেন করে বই ছেপে মুনাফা করাই কি তাদের উদ্দেশ্য- এটা একটা প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ছাপার কাজ যাতে কোনভাবেই হাতছাড়া না হয় সেই ভাবনা থেকেই এমন দর দিয়ে থাকতে পারেন। কারণ অতীত দেখা গেছে, কেউ কেউ সর্বনিম্ন দর দিয়ে কাজ পেয়েছে। এই ধারণা বা আশঙ্কা থেকেই মুদ্রাকররা কম টাকার দরপত্র জমা দিতে পারে।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দেশের পুস্তক মুদ্রাকরদের সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দিতে দেখা যায়। এজন্য কখনো তারা বেশি দামে বই ছাপার জন্য দরপত্র জমা দিয়ে থাকে। যেমনটা দিয়েছিল গত বছর। সেবার প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি দরে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্র জমা দেয়া হয়। পরে অবশ্য পুনঃদরপত্রের মাধ্যেমে বই ছাপা হয়। আর এবার তো কম দরেই অংশ নিল তারা।
আবার বই ছাপার পর দেখা যায় নিম্নমানের কাগজ ও উপকরণ দিয়ে কোনরকম বই ছেপে সরকারের হাতে তুলে দেয়। বই ছাপা ও সরবরাহ করতে গিয়ে ন্যূনতম মানও রক্ষা করা হয় না। অনেক সময় ছাপা অস্পষ্ট থাকে, প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি কালি দেওয়া হয়, কাগজের মানও খারাপ হয়। এত সব ‘খারাপ’ নিয়ে যেসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়, তা পুরো বছর ব্যবহার করার মতো নয়।
বই ছাপা নিয়ে একটি নয়, একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অনেক সময় একটি সিন্ডিকেট আরেকটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ করে দরপত্র জমা দিয়ে থাকে। মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয় শিক্ষার্থীরা, আর প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করেও সরকারের দুর্নাম হয়, সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। এমন অবস্থা থেকে বের হওয়ার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক ছাপার মান নিয়ে কোন ধরনের আপোস করা যাবে না। সিন্ডিকেটের কারণে যাতে ছাপা বইয়েরে মান খারাপ না হয় সেটি নিশ্চিত করেতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এনসিটিবির নিজস্ব মুদ্রণ ব্যবস্থা না থাকায় মুদ্রণকারীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই তারা নানাভাবে চাপে ফেলে। কালো তালিকাভুক্ত করলেও নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে একই কাজ করে। অনেকে বলছেন, এখান থেকে বের হওয়ার মোক্ষম উপায় হতে পারে এনসিটিবির নিজস্ব উদ্যোগে মুদ্রণের ব্যবস্থা করা।