যশোরের চৌগাছায় ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের তৎপরতায় দুটি বিয়ে বন্ধ করা গেলেও অন্য দুটি আগেই সম্পন্ন হয়েছে। বাল্যবিয়ের অপরাধে বর ও কনেপক্ষকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ও জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ নিয়ে আজ সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে বাল্যবিয়ের সমস্যা অনেক পুরনো। তবে এখন সমস্যাটি ঘনীভূত হচ্ছে, বাল্যবিয়ে বেড়েই চলছে। এর কিছু কিছু গণমাধ্যমে এলেও অনেক ঘটনাই অগোচরে থেকে যায়। করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে এ সংকট বাড়তে শুরু করলেও এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে করোনা মহামারীর আগে সরকারের নজরদারি যতটা জোরদার ছিল, এখন তেমনটা নেই। ফলে অসচেতন ও অসচ্ছল মা-বাবা মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন ও শিক্ষকদের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, তারা সেই ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলে আসছিলেন, বাল্যবিয়ের প্রবণতা বাড়বে। দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সীমাহীন অর্থনৈতিক সংকট, কিশোরীর নিরাপত্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে এ প্রবণতা বেড়েও গেছে। যার প্রমাণ একই উপজেলায় মাত্র ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি বাল্যবিয়ের আয়োজন। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে দেশের সামগ্রিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ মেয়ের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। শুধু তাই নয়, ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৫ বছরের আগেই।
দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর মূল কারণ বাল্যবিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরী মায়ের মৃত্যুঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক মায়ের তুলনায় অন্তত চারগুণ বেশি। কিশোরী মেয়ে মা হওয়ায় কীভাবে শিশুকে পরিচর্যা করবে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে না, তাই শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। তাছাড়া বাল্যবিয়ের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যু ও ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, নারীশিক্ষার হার হ্রাস, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর বয়সের আগে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছিলেন।
সাধারণত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। মহামারীর প্রভাবে তারা এমন এক অর্থনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে যে আইন দিয়েও বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না। তাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হবে। সেটা করা না গেলে মনে হয় না বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাবে।
বাল্যবিয়ে বন্ধ করা গেলে মাতৃমৃত্যু, অকালে শিশু মৃত্যু, শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার মতো বহু সমস্যার কাক্সিক্ষত সমাধান করা সম্ভব হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এটা আরও বাড়বে, একটা রুগ্ণ জাতি তৈরি হবে। সুস্থ সন্তান, সুখী পরিবার এবং সমৃদ্ধ জাতি গড়তে চাইলে অবশ্যই বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে। বিষয়টি সরকার গুরুত্বসহকারে দেখবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২
যশোরের চৌগাছায় ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের তৎপরতায় দুটি বিয়ে বন্ধ করা গেলেও অন্য দুটি আগেই সম্পন্ন হয়েছে। বাল্যবিয়ের অপরাধে বর ও কনেপক্ষকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ও জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ নিয়ে আজ সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে বাল্যবিয়ের সমস্যা অনেক পুরনো। তবে এখন সমস্যাটি ঘনীভূত হচ্ছে, বাল্যবিয়ে বেড়েই চলছে। এর কিছু কিছু গণমাধ্যমে এলেও অনেক ঘটনাই অগোচরে থেকে যায়। করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে এ সংকট বাড়তে শুরু করলেও এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে করোনা মহামারীর আগে সরকারের নজরদারি যতটা জোরদার ছিল, এখন তেমনটা নেই। ফলে অসচেতন ও অসচ্ছল মা-বাবা মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন ও শিক্ষকদের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, তারা সেই ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলে আসছিলেন, বাল্যবিয়ের প্রবণতা বাড়বে। দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সীমাহীন অর্থনৈতিক সংকট, কিশোরীর নিরাপত্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে এ প্রবণতা বেড়েও গেছে। যার প্রমাণ একই উপজেলায় মাত্র ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি বাল্যবিয়ের আয়োজন। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে দেশের সামগ্রিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ মেয়ের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। শুধু তাই নয়, ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৫ বছরের আগেই।
দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর মূল কারণ বাল্যবিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরী মায়ের মৃত্যুঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক মায়ের তুলনায় অন্তত চারগুণ বেশি। কিশোরী মেয়ে মা হওয়ায় কীভাবে শিশুকে পরিচর্যা করবে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে না, তাই শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। তাছাড়া বাল্যবিয়ের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যু ও ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, নারীশিক্ষার হার হ্রাস, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর বয়সের আগে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছিলেন।
সাধারণত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। মহামারীর প্রভাবে তারা এমন এক অর্থনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে যে আইন দিয়েও বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না। তাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হবে। সেটা করা না গেলে মনে হয় না বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাবে।
বাল্যবিয়ে বন্ধ করা গেলে মাতৃমৃত্যু, অকালে শিশু মৃত্যু, শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার মতো বহু সমস্যার কাক্সিক্ষত সমাধান করা সম্ভব হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এটা আরও বাড়বে, একটা রুগ্ণ জাতি তৈরি হবে। সুস্থ সন্তান, সুখী পরিবার এবং সমৃদ্ধ জাতি গড়তে চাইলে অবশ্যই বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে। বিষয়টি সরকার গুরুত্বসহকারে দেখবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।