দেশে দ্রুত হারে বাড়ছে অস্ত্রোপচারে (সিজারিয়ান বা সি-সেকশন) শিশুর জন্ম। ২০০৪ সালে সি-সেকশনের হার ছিল প্রায় চার শতাংশ, যা ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। সে হিসেবে ১৪ বছরে সি-সেকশন বেড়েছে ৮ গুণেরও বেশি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ সি-সেকশনই হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়। হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে চার গুণ বেশি খরচ হচ্ছে সি-সেকশনে। সি-সেকশন নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। ‘বাংলাদেশে সি-সেকশনের ব্যাপক বৃদ্ধি : পরিবার পর্যায়ে বিশ্লেষণ (২০০৪-১৮)’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি গত বুধবার প্রকাশ করা হয়।
এটা চার বছর আগের জরিপের গবেষণার ফলাফল। এ হার এখন বেড়েছে, কি কমেছে, তা জানা যায় না। তবে অতীতের যে পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশে মোট শিশু জন্মের ১৫ শতাংশের বেশি সি-সেকশন হওয়া উচিত নয়। সেখানে আমাদের দেশে এ হার চার গুণ বেশি।
প্রশ্ন হলো, দেশে সি-সেকশনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তঃসত্ত্বা মা নিজে এবং তার পরিবার স্বাভাবিক প্রসবের দীর্ঘ ও কষ্টকর সময় পার করার ধৈর্য রাখেন না। এর বাইরে চিকিৎসকেরাও একজন অন্তঃসত্ত্বা রোগীর পেছনে এত সময় দিতে রাজি থাকেন না। তা ছাড়া স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সি-সেকশনে অর্থও বেশি পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের অতিরিক্ত অর্থ আয়ের ভিত্তি পাওয়া যায় বিডিএইচএস’র গবেষণা প্রতিবেদনেও। প্রতিবেদন অনুসারে, বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের ৫২ শতাংশই সি-সেকশন হচ্ছে, যেখানে সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে মাত্র ১১ শতাংশ।
শহরাঞ্চলের ৪৪ শতাংশ নারী সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে, অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে এ হার ২৯ শতাংশ। তবে গ্রামের নারীদের সি-সেকশনের দিকে ঝোঁকার হারও বেড়ে চলছে। এর প্রধান কারণ বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকের দালাল। এই দালালরা গর্ভবতী নারী ও তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে সিজার করতে উদ্বুদ্ধ করে। তা ছাড়া গ্রামে সামাজিক মর্যাদা থেকেও সি-সেকশন বেছে নেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
সিজারিয়ান অপারেশনের পরে একজন মায়ের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, সিজারিয়ান একটি অস্ত্রোপচার, তাই অস্ত্রোপচারকালীন অথবা এর পরে অনেক জটিলতা ঘটতে পারে। ইন্সিসনাল হার্নিয়া বা তলপেটের ব্যথা বা অন্যান্য জটিলতা হতে পারে। তা ছাড়া, একবার সিজারিয়ান অপারেশন হলে পরবর্তী স্বাভাবিক প্রসবেও এই দিকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই প্রথম থেকে উচিত অহেতুক সিজারিয়ান অপারেশনে না যাওয়া।
সি-সেকশন বেড়ে যাওয়া হার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। যেখানে প্রয়োজন সেখানে সি-সেকশন করলে সমস্যা নেই। কিন্তু নির্বিচারে যাতে সি-সেকশন করলে সেটা কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। কাজেই অন্তঃসত্ত্বা মাসহ তার স্বজনদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের মালিক এবং চিকিৎসকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত ধাইদের বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। প্রশিক্ষিত ধাইরা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ধরন দেখেই বুঝতে পারতেন, কাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। তাই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ ধাই গড়ে তুলতে হবে।
শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২
দেশে দ্রুত হারে বাড়ছে অস্ত্রোপচারে (সিজারিয়ান বা সি-সেকশন) শিশুর জন্ম। ২০০৪ সালে সি-সেকশনের হার ছিল প্রায় চার শতাংশ, যা ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। সে হিসেবে ১৪ বছরে সি-সেকশন বেড়েছে ৮ গুণেরও বেশি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ সি-সেকশনই হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়। হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে চার গুণ বেশি খরচ হচ্ছে সি-সেকশনে। সি-সেকশন নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। ‘বাংলাদেশে সি-সেকশনের ব্যাপক বৃদ্ধি : পরিবার পর্যায়ে বিশ্লেষণ (২০০৪-১৮)’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি গত বুধবার প্রকাশ করা হয়।
এটা চার বছর আগের জরিপের গবেষণার ফলাফল। এ হার এখন বেড়েছে, কি কমেছে, তা জানা যায় না। তবে অতীতের যে পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশে মোট শিশু জন্মের ১৫ শতাংশের বেশি সি-সেকশন হওয়া উচিত নয়। সেখানে আমাদের দেশে এ হার চার গুণ বেশি।
প্রশ্ন হলো, দেশে সি-সেকশনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তঃসত্ত্বা মা নিজে এবং তার পরিবার স্বাভাবিক প্রসবের দীর্ঘ ও কষ্টকর সময় পার করার ধৈর্য রাখেন না। এর বাইরে চিকিৎসকেরাও একজন অন্তঃসত্ত্বা রোগীর পেছনে এত সময় দিতে রাজি থাকেন না। তা ছাড়া স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সি-সেকশনে অর্থও বেশি পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের অতিরিক্ত অর্থ আয়ের ভিত্তি পাওয়া যায় বিডিএইচএস’র গবেষণা প্রতিবেদনেও। প্রতিবেদন অনুসারে, বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের ৫২ শতাংশই সি-সেকশন হচ্ছে, যেখানে সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে মাত্র ১১ শতাংশ।
শহরাঞ্চলের ৪৪ শতাংশ নারী সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে, অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে এ হার ২৯ শতাংশ। তবে গ্রামের নারীদের সি-সেকশনের দিকে ঝোঁকার হারও বেড়ে চলছে। এর প্রধান কারণ বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকের দালাল। এই দালালরা গর্ভবতী নারী ও তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে সিজার করতে উদ্বুদ্ধ করে। তা ছাড়া গ্রামে সামাজিক মর্যাদা থেকেও সি-সেকশন বেছে নেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
সিজারিয়ান অপারেশনের পরে একজন মায়ের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, সিজারিয়ান একটি অস্ত্রোপচার, তাই অস্ত্রোপচারকালীন অথবা এর পরে অনেক জটিলতা ঘটতে পারে। ইন্সিসনাল হার্নিয়া বা তলপেটের ব্যথা বা অন্যান্য জটিলতা হতে পারে। তা ছাড়া, একবার সিজারিয়ান অপারেশন হলে পরবর্তী স্বাভাবিক প্রসবেও এই দিকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই প্রথম থেকে উচিত অহেতুক সিজারিয়ান অপারেশনে না যাওয়া।
সি-সেকশন বেড়ে যাওয়া হার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। যেখানে প্রয়োজন সেখানে সি-সেকশন করলে সমস্যা নেই। কিন্তু নির্বিচারে যাতে সি-সেকশন করলে সেটা কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। কাজেই অন্তঃসত্ত্বা মাসহ তার স্বজনদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের মালিক এবং চিকিৎসকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত ধাইদের বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। প্রশিক্ষিত ধাইরা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ধরন দেখেই বুঝতে পারতেন, কাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। তাই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ ধাই গড়ে তুলতে হবে।