উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের কারণে দেশের সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর সড়ক ও আশপাশে কর্মরতদের শ্রবণ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সড়কে কর্মরত বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রতি চারজনে একজন (২৫ শতাংশ) কানে কম শোনেন। তাদের মধ্যে ৭ শতাংশ কানে এতটাই কম শোনেন যে তাদের শ্রবণসহায়ক যন্ত্রের সহায়তা নেয়া জরুরি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের (বিইউএইচএস) এক গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে। শব্দদূষণ এবং এ কারণে সড়কে কর্মরত ব্যক্তিদের শ্রবণ সমস্যা নিয়ে করা এ গবেষণাটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট-এ পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়কে কর্মরত ৬৪৭ জন পেশাজীবীর শ্রবণশক্তি পরিমাপ করে গবেষণাটি করা হয়।
গত মার্চে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ ঢাকায়। রাজশাহী রয়েছে এ তালিকার ৪ নম্বরে। শুধু সিটি করপোরেশন বা শহর এলাকায়ই নয়, সারা দেশেই শব্দদূষণ দিন দিন বাড়ছে। প্রায়ই দেখা যায় ফাঁকা রাস্তায় বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটছে গাড়ি ও বাইক। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে হর্ন বাজানো নিষেধ সেখানেও হর্ন বাজানো হচ্ছে। অনেক চালকের মনোভাব দেখে মনে হয়, শুধু হর্ন দিলেই সব সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু হয় উল্টোটা। সমাধানের বদলে আশপাশে থাকা মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের করা এক জরিপে জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যেই দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে শব্দদূষণের যে মাত্রা, সেটা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৩ সাল নাগাদ দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এর দ্বারা আক্রান্ত হবে।
শব্দদূষণের বহু উৎস রয়েছে। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা-এসব ক্ষেত্রে শব্দদূষণ হয় সবচেয়ে বেশি। আর শব্দদূষণের ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে, তা সঠিকভাবে মানা হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। ৮০-এর বেশি গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। অথচ বিইউএইচএস’র গবেষণায় দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কগুলোতে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবেল।
দেশব্যাপী শব্দদূষণ এক নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শব্দদূষণের কারণে ঢাকা শহরের মানুষের স্বাভাবিক আচরণ বদলে গেছে। তাদের মধ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা, অল্পতেই মেজাজ হারানো বা ক্ষেপে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণ ধীরে ধীরে মানুষের জীবনীশক্তি ক্ষয় করে। মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত তো হবেই, পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, কাজে মনোযোগী হতে না পারা, কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করাসহ হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে। দেখা দিতে পারে উদ্বেগজনিত সমস্যাও। দিনের পর দিন শব্দদূষণের শিকার হওয়া শিশুদের মনোযোগ দেয়া ও পড়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। অতিরিক্ত হর্নের কারণে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটতে পারে।
শব্দদূষণের এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্রাফিক পুলিশ, সিটি করপোরেশন। আইনগত দিক থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশের ক্ষমতা রয়েছে। সিটি করপোরেশনেরও আলাদা আইন রয়েছে। কিন্তু শব্দ দূষণ বন্ধে কখনোই কোন কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। আইনের কঠোর প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না।
যে কোন উপায়ে শব্দদূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। শব্দদূষণ কমানোর জন্য বিইউএইচএস’র গবেষণায় যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেসব সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের স্বার্থে শব্দদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২
উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের কারণে দেশের সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর সড়ক ও আশপাশে কর্মরতদের শ্রবণ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সড়কে কর্মরত বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রতি চারজনে একজন (২৫ শতাংশ) কানে কম শোনেন। তাদের মধ্যে ৭ শতাংশ কানে এতটাই কম শোনেন যে তাদের শ্রবণসহায়ক যন্ত্রের সহায়তা নেয়া জরুরি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের (বিইউএইচএস) এক গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে। শব্দদূষণ এবং এ কারণে সড়কে কর্মরত ব্যক্তিদের শ্রবণ সমস্যা নিয়ে করা এ গবেষণাটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট-এ পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়কে কর্মরত ৬৪৭ জন পেশাজীবীর শ্রবণশক্তি পরিমাপ করে গবেষণাটি করা হয়।
গত মার্চে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ ঢাকায়। রাজশাহী রয়েছে এ তালিকার ৪ নম্বরে। শুধু সিটি করপোরেশন বা শহর এলাকায়ই নয়, সারা দেশেই শব্দদূষণ দিন দিন বাড়ছে। প্রায়ই দেখা যায় ফাঁকা রাস্তায় বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটছে গাড়ি ও বাইক। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে হর্ন বাজানো নিষেধ সেখানেও হর্ন বাজানো হচ্ছে। অনেক চালকের মনোভাব দেখে মনে হয়, শুধু হর্ন দিলেই সব সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু হয় উল্টোটা। সমাধানের বদলে আশপাশে থাকা মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের করা এক জরিপে জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যেই দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে শব্দদূষণের যে মাত্রা, সেটা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৩ সাল নাগাদ দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এর দ্বারা আক্রান্ত হবে।
শব্দদূষণের বহু উৎস রয়েছে। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা-এসব ক্ষেত্রে শব্দদূষণ হয় সবচেয়ে বেশি। আর শব্দদূষণের ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে, তা সঠিকভাবে মানা হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। ৮০-এর বেশি গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। অথচ বিইউএইচএস’র গবেষণায় দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কগুলোতে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবেল।
দেশব্যাপী শব্দদূষণ এক নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শব্দদূষণের কারণে ঢাকা শহরের মানুষের স্বাভাবিক আচরণ বদলে গেছে। তাদের মধ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা, অল্পতেই মেজাজ হারানো বা ক্ষেপে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণ ধীরে ধীরে মানুষের জীবনীশক্তি ক্ষয় করে। মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত তো হবেই, পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, কাজে মনোযোগী হতে না পারা, কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করাসহ হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে। দেখা দিতে পারে উদ্বেগজনিত সমস্যাও। দিনের পর দিন শব্দদূষণের শিকার হওয়া শিশুদের মনোযোগ দেয়া ও পড়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। অতিরিক্ত হর্নের কারণে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটতে পারে।
শব্দদূষণের এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্রাফিক পুলিশ, সিটি করপোরেশন। আইনগত দিক থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশের ক্ষমতা রয়েছে। সিটি করপোরেশনেরও আলাদা আইন রয়েছে। কিন্তু শব্দ দূষণ বন্ধে কখনোই কোন কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। আইনের কঠোর প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না।
যে কোন উপায়ে শব্দদূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। শব্দদূষণ কমানোর জন্য বিইউএইচএস’র গবেষণায় যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেসব সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের স্বার্থে শব্দদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।