ছাহেরা খাতুন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কালাদহ ইউনিয়নের হোরবাড়ি গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ নারী। তিনি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বা সুযোগ-সুবিধা পাননি এখনো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তার কপালে জোটেনি একটি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আমরা তালিকা পাঠিয়েছি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কিন্তু নতুন কার্ড হচ্ছে না। তবে মৃত ব্যক্তির কার্ড প্রতিস্থাপন করে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়ার চেষ্টা করব।
দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় পুরুষদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬৫ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর বয়সীরা বয়স্ক ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত হন। এর বাইরে ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলা ভাতা’ বা ‘বিধবা ভাতা’ও চালু রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা ও পরের বছর থেকে বিধবা ভাতা কর্মসূচি চালু হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ছাহেরা খাতুনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে তার বয়স্ক ভাতা পাওয়া কথা আরও দেড় যুগ আগে থেকেই। পাওয়ার কথা বিধবা ভাতাও। কিন্তু এত দিনে তিনি কোনটিই পাননি।
ফুলবাড়িয়ার ছাহেরা খাতুন একটা উদাহরণমাত্র। দেশে তার মতো এমন অনেক ছাহেরা খাতুন রয়েছেন, যারা বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা পাওয়ার উপযোগী। কিন্তু পাচ্ছেন না। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা বৃদ্ধ, বিধবা, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষকে সহায়তা করার জন্য সরকার মাসিক ভাতা চালু করেছিল। শুরু থেকে সব মহলেই তা প্রশংসিত হয়। কিন্তু সরকারি আরও অনেক কর্মসূচির মতো এ ক্ষেত্রেও তালিকায় নয়-ছয় বন্ধ করা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, ভাতা পাওয়ার যোগ্য অনেক ব্যক্তিই বাদ পড়েছেন। তাদের পরিবর্তে কার্ড দেয়া হয়েছে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিকে।
উল্লিখিত কার্যক্রম শুরুর পর থেকে মাসিক ভাতার পরিমাণ বেড়েছে, বেড়েছে ভাতাভোগীদের সংখ্যাও। কয়েক বছর ধরে এ দুটি ভাতার ক্ষেত্রে বছরে তিন থেকে পাঁচ লাখ করে সংখ্যা বাড়ানো হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতাভোগীর মোট সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৪ লাখ ৭৫ হাজার। এ দুটি ভাতার ক্ষেত্রে ৭ বছর ধরে মাসে ৫০০ টাকা করে ৩ মাস পরপর দেড় হাজার টাকা ভাতা পান সুবিধাভোগীরা। যা শুরুতে ছিল প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে, পরে তা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়। এতে দেশের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। এর বাইরে দুস্থ, বিধবা, প্রতিবন্ধী তো রয়েছেই। এসব জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা দরকার।
স্বল্প মেয়াদে সামাজিক সুরক্ষাখাতে অনিয়ম-চুরি-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ‘অযোগ্য ব্যক্তিদের’ বাদ দিয়ে প্রকৃত দুস্থ ব্যক্তিদেরই তালিকাভুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবছর তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। তাহলে ছাহেরা খাতুনের মতো প্রকৃত বয়স্ক বা বিধবারা বঞ্চিত হবেন না।
শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২
ছাহেরা খাতুন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কালাদহ ইউনিয়নের হোরবাড়ি গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ নারী। তিনি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বা সুযোগ-সুবিধা পাননি এখনো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তার কপালে জোটেনি একটি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আমরা তালিকা পাঠিয়েছি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কিন্তু নতুন কার্ড হচ্ছে না। তবে মৃত ব্যক্তির কার্ড প্রতিস্থাপন করে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়ার চেষ্টা করব।
দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় পুরুষদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬৫ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর বয়সীরা বয়স্ক ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত হন। এর বাইরে ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলা ভাতা’ বা ‘বিধবা ভাতা’ও চালু রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা ও পরের বছর থেকে বিধবা ভাতা কর্মসূচি চালু হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ছাহেরা খাতুনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে তার বয়স্ক ভাতা পাওয়া কথা আরও দেড় যুগ আগে থেকেই। পাওয়ার কথা বিধবা ভাতাও। কিন্তু এত দিনে তিনি কোনটিই পাননি।
ফুলবাড়িয়ার ছাহেরা খাতুন একটা উদাহরণমাত্র। দেশে তার মতো এমন অনেক ছাহেরা খাতুন রয়েছেন, যারা বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা পাওয়ার উপযোগী। কিন্তু পাচ্ছেন না। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা বৃদ্ধ, বিধবা, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষকে সহায়তা করার জন্য সরকার মাসিক ভাতা চালু করেছিল। শুরু থেকে সব মহলেই তা প্রশংসিত হয়। কিন্তু সরকারি আরও অনেক কর্মসূচির মতো এ ক্ষেত্রেও তালিকায় নয়-ছয় বন্ধ করা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, ভাতা পাওয়ার যোগ্য অনেক ব্যক্তিই বাদ পড়েছেন। তাদের পরিবর্তে কার্ড দেয়া হয়েছে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিকে।
উল্লিখিত কার্যক্রম শুরুর পর থেকে মাসিক ভাতার পরিমাণ বেড়েছে, বেড়েছে ভাতাভোগীদের সংখ্যাও। কয়েক বছর ধরে এ দুটি ভাতার ক্ষেত্রে বছরে তিন থেকে পাঁচ লাখ করে সংখ্যা বাড়ানো হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতাভোগীর মোট সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৪ লাখ ৭৫ হাজার। এ দুটি ভাতার ক্ষেত্রে ৭ বছর ধরে মাসে ৫০০ টাকা করে ৩ মাস পরপর দেড় হাজার টাকা ভাতা পান সুবিধাভোগীরা। যা শুরুতে ছিল প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে, পরে তা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়। এতে দেশের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। এর বাইরে দুস্থ, বিধবা, প্রতিবন্ধী তো রয়েছেই। এসব জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা দরকার।
স্বল্প মেয়াদে সামাজিক সুরক্ষাখাতে অনিয়ম-চুরি-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ‘অযোগ্য ব্যক্তিদের’ বাদ দিয়ে প্রকৃত দুস্থ ব্যক্তিদেরই তালিকাভুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবছর তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। তাহলে ছাহেরা খাতুনের মতো প্রকৃত বয়স্ক বা বিধবারা বঞ্চিত হবেন না।