মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কৃষি অবদান রেখে চলছে। বর্তমানে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্থাপনা তৈরি উল্লেখযোগ্য হারে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস করছে। পাশাপাশি নতুনভাবে কৃষি জমি হ্রাসের ক্ষেত্রে থাবা বসিয়েছে অবৈধ পুকুর খনন।
বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষিজমিতে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে অবৈধ পুকুর খনন। ফলে দিন দিন কমছে কৃষিজমির পরিমাণ, ভূমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।
কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের পেছনে রয়েছে দলীয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের নানামুখী প্রভাব। এর ধারাবাহিকতায় বিগত কয়েক বছরে কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খননের তালিকায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে গেছে দলীয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে ভূমি হারিয়ে বর্তমানে নিঃস্ব অনেক প্রান্তিক কৃষক।
কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খননের ক্ষেত্রে রয়েছে কৃষকের কাছে থেকে জোরপূর্বক জমি দখল, মারধরের হুমকি, হত্যার হুমকিসহ নানা অভিযোগ। বর্তমানে এখনো অনেক কৃষক রয়েছেন যারা তাদের ভূমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন কিন্তু তাদের জমির ন্যায্যমূল্য পাননি।
কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের ফলে যেমন কৃষক তার সর্বস্ব হারাচ্ছেন, তেমনি কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে প্রভাব পড়ছে কৃষি পণ্য উৎপাদনে। কৃষি জমি হারিয়ে কৃষক ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছে কৃষি পণ্য বিক্রির ন্যায্যমূল্য থেকে। ফলে আগে যে ভূমিতে ফসল উৎপাদন হতো বর্তমানে সেখানে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
দেশজুড়ে খনন করা এসকল অবৈধ পুকুরের ফলে দেশের বাজারে কমেছে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের সরবরাহ। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের বাজার সংকট। সঠিক সময়ে সঠিক মৌসুমি ফসল উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় বর্তমানে পূর্বের তুলনায় বাজারে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের বাড়তি চাহিদা। ফলে বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি হচ্ছে আমদানি নির্ভর বাজার ব্যবস্থা।
এছাড়া কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পুকুর খননের ফলে পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় অনেক সময় ভারি বৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধ পুকুর খনন করে মৎস্য চাষের ফলে অর্থনৈতিক সাফল্য থাকলেও সেটা খুবই সাময়িক।
কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন ভবিষ্যতে হুমকিতে ফেলবে দেশের কৃষি খাতকে। প্রতিকূলতা সৃষ্টি করবে বিভিন্ন শ্রেণির প্রাণীকূলের মধ্যে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি মতো মারাত্মক জটিলতা তৈরির মাধ্যমে ব্যহত হচ্ছে মৌসুমি ফসল উৎপাদন।
ভবিষ্যতে কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন থামানো না গেলে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। বৃদ্ধি পাবে অর্থনৈতিক চাপ। বাজার ব্যবস্থায় তৈরি হবে আমদানিনির্ভর পণ্যের চাহিদা।
ভবিষ্যৎ খাদ্য ঘাটতির হুমকি মোকাবিলা ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি ও যথাযথ আইনের সঠিক প্রয়োগ। পাশাপাশি কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খনন প্রতিরোধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে কৃষি খাতের সোনালী অতীত।
মুজাহিদুল ইসলাম
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কৃষি অবদান রেখে চলছে। বর্তমানে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্থাপনা তৈরি উল্লেখযোগ্য হারে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস করছে। পাশাপাশি নতুনভাবে কৃষি জমি হ্রাসের ক্ষেত্রে থাবা বসিয়েছে অবৈধ পুকুর খনন।
বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষিজমিতে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে অবৈধ পুকুর খনন। ফলে দিন দিন কমছে কৃষিজমির পরিমাণ, ভূমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।
কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের পেছনে রয়েছে দলীয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের নানামুখী প্রভাব। এর ধারাবাহিকতায় বিগত কয়েক বছরে কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খননের তালিকায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে গেছে দলীয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে ভূমি হারিয়ে বর্তমানে নিঃস্ব অনেক প্রান্তিক কৃষক।
কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খননের ক্ষেত্রে রয়েছে কৃষকের কাছে থেকে জোরপূর্বক জমি দখল, মারধরের হুমকি, হত্যার হুমকিসহ নানা অভিযোগ। বর্তমানে এখনো অনেক কৃষক রয়েছেন যারা তাদের ভূমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন কিন্তু তাদের জমির ন্যায্যমূল্য পাননি।
কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের ফলে যেমন কৃষক তার সর্বস্ব হারাচ্ছেন, তেমনি কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে প্রভাব পড়ছে কৃষি পণ্য উৎপাদনে। কৃষি জমি হারিয়ে কৃষক ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছে কৃষি পণ্য বিক্রির ন্যায্যমূল্য থেকে। ফলে আগে যে ভূমিতে ফসল উৎপাদন হতো বর্তমানে সেখানে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
দেশজুড়ে খনন করা এসকল অবৈধ পুকুরের ফলে দেশের বাজারে কমেছে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের সরবরাহ। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের বাজার সংকট। সঠিক সময়ে সঠিক মৌসুমি ফসল উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় বর্তমানে পূর্বের তুলনায় বাজারে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের বাড়তি চাহিদা। ফলে বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি হচ্ছে আমদানি নির্ভর বাজার ব্যবস্থা।
এছাড়া কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পুকুর খননের ফলে পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় অনেক সময় ভারি বৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধ পুকুর খনন করে মৎস্য চাষের ফলে অর্থনৈতিক সাফল্য থাকলেও সেটা খুবই সাময়িক।
কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন ভবিষ্যতে হুমকিতে ফেলবে দেশের কৃষি খাতকে। প্রতিকূলতা সৃষ্টি করবে বিভিন্ন শ্রেণির প্রাণীকূলের মধ্যে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি মতো মারাত্মক জটিলতা তৈরির মাধ্যমে ব্যহত হচ্ছে মৌসুমি ফসল উৎপাদন।
ভবিষ্যতে কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন থামানো না গেলে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। বৃদ্ধি পাবে অর্থনৈতিক চাপ। বাজার ব্যবস্থায় তৈরি হবে আমদানিনির্ভর পণ্যের চাহিদা।
ভবিষ্যৎ খাদ্য ঘাটতির হুমকি মোকাবিলা ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি ও যথাযথ আইনের সঠিক প্রয়োগ। পাশাপাশি কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খনন প্রতিরোধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে কৃষি খাতের সোনালী অতীত।
মুজাহিদুল ইসলাম
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ