alt

চিঠিপত্র

চিঠি : চিকিৎসা ব্যবস্থার হালচাল

: শুক্রবার, ১১ নভেম্বর ২০২২

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

স্বাস্থ্য খাত রাষ্ট্রের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বলা হয়ে থাকে, যে দেশের জনগণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে এগিয়ে, সে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে গতিশীল। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসাসেবা অন্যতম। সরকারকে এ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তারা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেন না, চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করেন, আয় বাড়ানোর জন্য একগাদা টেস্ট ও ওষুধ ধরিয়ে দেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

পেশাদার সৎ ও মানবিক চিকিৎসক যে নেই, তা নয়; তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল এবং তারাও চিকিৎসক নামের এক ধরনের কসাইদের কাছে জিম্মি। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন করেন এবং তুলনামূলক কম খরচে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরত আসেন।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মোট যে ব্যয় হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশই আসে নাগরিকদের নিজের পকেট থেকে। এটা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে স্বাস্থ্য ব্যয়ে ব্যক্তি খরচ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে অনেকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব প্রাইভেট হসপিটালসের এক তথ্য অনুযায়ী, গড়ে প্রতিবছর পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। শুধু গত বছর যেসব মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে দেশের বাইরে গেছে, তাদের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে প্রতিটি রোগীর ভ্রমণ, থাকা, খাওয়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ও রয়েছে। এর বড় অংশই যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে। রোগীরা মূলত স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অদক্ষতা ও আস্থার সংকটে বিদেশে যাচ্ছে।

জাতীয় বাজেটে দেশের চিকিৎসা খাতে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ দেয়া হয়। যারা সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে পড়াশোনা করছে সাধারণ মানুষের করের টাকায় তাদের পড়াশোনার ৯৫ শতাংশই অর্থের জোগান দেয়া হয়। দেশের সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পেছনেও ব্যয় করা হয় বিপুল অর্থ। তারপরও দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে চিকিৎসা খাত কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। দেশে মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উদারভাবে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক, এমনকি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে সরকারিভাবে অনুমতি দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলছে চরম নৈরাজ্য। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি চিকিৎসা খাত সেবার বদলে বাণিজ্যিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। উভয় খাতেই বিরাজ করছে যাচ্ছেতাই অবস্থা।

দেশের চিকিৎসকদের বেশির ভাগই ওষুধ কোম্পানির হুকুম তালিমের ভূমিকা পালন করছে। রোগীদের কাছ থেকে বড় অংশের ফি নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকতে পারছেন না। ওষুধ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশন করার নামে তাদের কাছ থেকেও গ্রহণ করছেন বড় অঙ্কের টাকা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সঙ্গে চিকিৎসকদের অলিখিত চুক্তি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয়কে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা কমিশনের লোভে যেসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই সেসব বিষয়ে পরীক্ষার জন্যও রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করছে।

চিকিৎসকদের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক থাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যেনতেনভাবে রিপোর্ট দিয়েই খালাস। বাংলাদেশের এসব পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এমনকি ভারতে গেলে সে দেশের চিকিৎসকরা হাসাহাসি শুরু করেন। সোজা কথায় চিকিৎসার নামে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রেই চলছে মহা প্রতারণা। ফলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জাতীয় বাজেটে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তা আদতে খুব একটা কাজে লাগছে না। জনস্বার্থে এসব বিষয়ে সরকারকে কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জাগতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।

জিল্লুর রহমান

লেখক, ব্যাংকার

কালীকচ্ছের ধর্মতীর্থ বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি

চিঠি : হলে খাবারের মান উন্নত করুন

চিঠি : স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ে ডিপ্লোমাধারীদের বৈষম্য দূর করুন

চিঠি : শিক্ষার মান উন্নয়ন চাই

চিঠি : সড়ক আইন বাস্তবায়ন করুন

চিঠি : রাস্তায় বাইক সন্ত্রাস

চিঠি : কঠিন হয়ে পড়ছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

চিঠি : ডিসেম্বরের স্মৃতি

চিঠি : টেকসই ও সাশ্রয়ী ক্লিন এনার্জি

চিঠি : নকল গুড় জব্দ হোক

চিঠি : সড়কে বাড়ছে লেন ঝরছে প্রাণ

চিঠি : ঢাকাবাসীর কাছে মেট্রোরেল আশীর্বাদ

চিঠি : কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরি

চিঠি : পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস চাই

চিঠি : তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগান

চিঠি : এইডস থেকে বাঁচতে সচেতন হোন

চিঠি : অতিথি পাখি নিধন বন্ধ হোক

চিঠি : হাসুন, সুস্থ থাকুন

চিঠি : হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ হোক

চিঠি : রাজনীতিতে তরুণ সমাজের অংশগ্রহণ

চিঠি : মাদককে ‘না’ বলুন

চিঠি : পুনরুন্নয়ন প্রকল্প : পাল্টে যাবে পুরান ঢাকা

চিঠি : শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

চিঠি : চন্দ্রগঞ্জে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চাই

চিঠি : বাড়ছে বাল্যবিয়ে

চিঠি : টিকটকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে

চিঠি : আত্মবিশ্বাস ও আস্থা

চিঠি : শিক্ষকরা কি প্রকৃত মর্যাদা পাচ্ছে

চিঠি : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সম্প্রীতি চাই

চিঠি : সকালে ও বিকেলে মেট্রোরেল চলুক

চিঠি : অতিথি পাখি নিধন বন্ধ করতে হবে

চিঠি : ঢাবি’র কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার আধুনিকায়ন করা হোক

চিঠি : নিত্যপণ্যের দাম

চিঠি : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাই পরিচ্ছন্ন শৌচাগার

চিঠি : বায়ুদূষণ থেকে রাজধানীকে রক্ষা করুন

চিঠি : পর্যটনকেন্দ্রে খাবারের অস্বাভাবিক মূল্য

tab

চিঠিপত্র

চিঠি : চিকিৎসা ব্যবস্থার হালচাল

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শুক্রবার, ১১ নভেম্বর ২০২২

স্বাস্থ্য খাত রাষ্ট্রের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বলা হয়ে থাকে, যে দেশের জনগণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে এগিয়ে, সে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে গতিশীল। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসাসেবা অন্যতম। সরকারকে এ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তারা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেন না, চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করেন, আয় বাড়ানোর জন্য একগাদা টেস্ট ও ওষুধ ধরিয়ে দেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

পেশাদার সৎ ও মানবিক চিকিৎসক যে নেই, তা নয়; তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল এবং তারাও চিকিৎসক নামের এক ধরনের কসাইদের কাছে জিম্মি। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন করেন এবং তুলনামূলক কম খরচে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরত আসেন।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মোট যে ব্যয় হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশই আসে নাগরিকদের নিজের পকেট থেকে। এটা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে স্বাস্থ্য ব্যয়ে ব্যক্তি খরচ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে অনেকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব প্রাইভেট হসপিটালসের এক তথ্য অনুযায়ী, গড়ে প্রতিবছর পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। শুধু গত বছর যেসব মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে দেশের বাইরে গেছে, তাদের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে প্রতিটি রোগীর ভ্রমণ, থাকা, খাওয়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ও রয়েছে। এর বড় অংশই যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে। রোগীরা মূলত স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অদক্ষতা ও আস্থার সংকটে বিদেশে যাচ্ছে।

জাতীয় বাজেটে দেশের চিকিৎসা খাতে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ দেয়া হয়। যারা সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে পড়াশোনা করছে সাধারণ মানুষের করের টাকায় তাদের পড়াশোনার ৯৫ শতাংশই অর্থের জোগান দেয়া হয়। দেশের সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পেছনেও ব্যয় করা হয় বিপুল অর্থ। তারপরও দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে চিকিৎসা খাত কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। দেশে মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উদারভাবে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক, এমনকি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে সরকারিভাবে অনুমতি দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলছে চরম নৈরাজ্য। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি চিকিৎসা খাত সেবার বদলে বাণিজ্যিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। উভয় খাতেই বিরাজ করছে যাচ্ছেতাই অবস্থা।

দেশের চিকিৎসকদের বেশির ভাগই ওষুধ কোম্পানির হুকুম তালিমের ভূমিকা পালন করছে। রোগীদের কাছ থেকে বড় অংশের ফি নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকতে পারছেন না। ওষুধ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশন করার নামে তাদের কাছ থেকেও গ্রহণ করছেন বড় অঙ্কের টাকা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সঙ্গে চিকিৎসকদের অলিখিত চুক্তি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয়কে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা কমিশনের লোভে যেসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই সেসব বিষয়ে পরীক্ষার জন্যও রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করছে।

চিকিৎসকদের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক থাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যেনতেনভাবে রিপোর্ট দিয়েই খালাস। বাংলাদেশের এসব পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এমনকি ভারতে গেলে সে দেশের চিকিৎসকরা হাসাহাসি শুরু করেন। সোজা কথায় চিকিৎসার নামে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রেই চলছে মহা প্রতারণা। ফলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জাতীয় বাজেটে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তা আদতে খুব একটা কাজে লাগছে না। জনস্বার্থে এসব বিষয়ে সরকারকে কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জাগতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।

জিল্লুর রহমান

লেখক, ব্যাংকার

back to top