alt

মুক্ত আলোচনা

জার্মানীতে এসবি ৬২ সম্মেলন : বাংলাদেশের নজর অর্থায়নের ন্যায্যতায়

ঋণ নয়, অনুদানই হওয়া উচিত জলবায়ু অর্থায়নের মূল ভিত্তি

রাওমান স্মিতা : সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ৬২তম সহকারী সভা(এসবি৬২) শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বৈশ্বিক আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জলবায়ু অর্থায়ন। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য এটি জীবন-মরণ বিষয়। বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে খুবই সামান্য ভূমিকা রাখে। তারপরও ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, লবণাক্ততা, অতিরিক্ত তাপ ও পানির সংকট প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন ও উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই বাস্তবতা বিশ্ব সম্প্রদায়কে মনে করিয়ে দেয়, জলবায়ু অর্থায়ন কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয়, বাস্তব কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার একটি মাধ্যম হতে হবে।

সম্মেলনে বর্তমানে আলোচনায় রয়েছে নতুন জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ। এরআগে, ডেনমার্কের কপেনহেগেনে ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তা এখনও পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ বরাবরই চায় এই নতুন লক্ষ্য হোক বাস্তবসম্মত, নির্ভরযোগ্য এবং সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে এমন জনগোষ্ঠী, সংস্থা ও স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলোর নিকট অর্থ পৌঁছানো। এবারো ওই চাওয়ার ব্যাতিক্রম নয়।

আমরা মনে করি, এই সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুধু উপস্থিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কৌশলগত, প্রভাবশালী ও সাহসী হওয়া উচিত।

বাংলাদেশের জন্য করণীয় কী তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশকে স্পষ্টভাবে দাবি করতে হবে, নতুন জলবায়ু অর্থায়নের অন্তত অর্ধেক অর্থ অভিযোজন খাতে বরাদ্দ করতে হবে। কারণ অভিযোজনই হচ্ছে বাংলাদেশের টিকে থাকার চাবিকাঠি। সেইসাথে জলবায়ু তহবিলে প্রবেশের ক্ষেত্রগুলোও সহজ ও সরাসরি করতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় সংস্থাগুলো যেন জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অর্থ পায়, সে দাবি তোলা দরকার।

ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জোর দিয়ে বলতে হবে; ‘ঋণ নয়, অনুদানই হওয়া উচিত জলবায়ু অর্থায়নের মূল ভিত্তি’। সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো অতিরিক্ত ঋণের বোঝার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এছাড়াও ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ ফান্ডের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশকে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কাঠামো ও প্রক্রিয়ার দাবি তুলতে হবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফল উদাহরণ হিসেবে দেখাতে পারে, যেমন ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড ও স্থানীয় অভিযোজন প্রকল্পগুলোকে। যেন বিশ্ব দেখতে পায়, ‘আমরা শুধু দাবি করছি না, কাজও করছি’।

আগামীতে সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলে যুব,নারী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে ধনী দেশগুলোর নিকট একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক বার্তা পৌঁছাতে পারে।

বাংলাদেশ একই সঙ্গে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেমন এলডিসি ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সঙ্গে কৌশলগত জোট গঠনের মাধ্যমেও দাবিগুলো আরও শক্তিশালী করতে পারে।

আমরা মনেকরি, এসবি৬২ কেবল একটি কারিগরি সভা ও নীতিগত আলোচনা নয়, সম্মেলনটি যেন বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে সেই দাবী রয়েছে। সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ, যেখানে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার, ‘জলবায়ু অর্থায়ন কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি একটি অধিকার’।

এসবি৬২ হলো জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনের একটি কারিগরি ও নীতিনির্ধারণী সভা। এই সভায় জলবায়ু অর্থায়ন, অভিযোজন, ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা হয়।

* রাওমান স্মিতা, গ্রিন ফাইন্যান্স, মানবাধিকার, শান্তি ও যুব উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি’র সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

পলিথিনের পাপ, প্রকৃতির প্রতিশোধ

হারিয়ে যাওয়া অভিযোগকৃত চেকের মামলা

ছবি

শতবর্ষ পরেও যার প্রয়োজন ফুরোয় না : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

আদিবাসী মুণ্ডা ভাষার বাঁচার আর্তনাদ

মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

বিশ্ব রেড ক্রস দিবস

আত্মরক্ষার খালি-হাতের ইতিহাস ও আধুনিক বিস্তার

বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর : সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ

ছবি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস “বিজয় বসন্ত“গ্রন্থের লেখক

পয়লা বৈশাখ : বাঙালির সংহতি চেতনার সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কমরেড রূপনারায়ণ রায়

সাংবাদিক-সাহিত্যিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু কথা

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

tab

মুক্ত আলোচনা

জার্মানীতে এসবি ৬২ সম্মেলন : বাংলাদেশের নজর অর্থায়নের ন্যায্যতায়

ঋণ নয়, অনুদানই হওয়া উচিত জলবায়ু অর্থায়নের মূল ভিত্তি

রাওমান স্মিতা

সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ৬২তম সহকারী সভা(এসবি৬২) শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বৈশ্বিক আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জলবায়ু অর্থায়ন। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য এটি জীবন-মরণ বিষয়। বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে খুবই সামান্য ভূমিকা রাখে। তারপরও ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, লবণাক্ততা, অতিরিক্ত তাপ ও পানির সংকট প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন ও উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই বাস্তবতা বিশ্ব সম্প্রদায়কে মনে করিয়ে দেয়, জলবায়ু অর্থায়ন কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয়, বাস্তব কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার একটি মাধ্যম হতে হবে।

সম্মেলনে বর্তমানে আলোচনায় রয়েছে নতুন জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ। এরআগে, ডেনমার্কের কপেনহেগেনে ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তা এখনও পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ বরাবরই চায় এই নতুন লক্ষ্য হোক বাস্তবসম্মত, নির্ভরযোগ্য এবং সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে এমন জনগোষ্ঠী, সংস্থা ও স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলোর নিকট অর্থ পৌঁছানো। এবারো ওই চাওয়ার ব্যাতিক্রম নয়।

আমরা মনে করি, এই সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুধু উপস্থিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কৌশলগত, প্রভাবশালী ও সাহসী হওয়া উচিত।

বাংলাদেশের জন্য করণীয় কী তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশকে স্পষ্টভাবে দাবি করতে হবে, নতুন জলবায়ু অর্থায়নের অন্তত অর্ধেক অর্থ অভিযোজন খাতে বরাদ্দ করতে হবে। কারণ অভিযোজনই হচ্ছে বাংলাদেশের টিকে থাকার চাবিকাঠি। সেইসাথে জলবায়ু তহবিলে প্রবেশের ক্ষেত্রগুলোও সহজ ও সরাসরি করতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় সংস্থাগুলো যেন জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অর্থ পায়, সে দাবি তোলা দরকার।

ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জোর দিয়ে বলতে হবে; ‘ঋণ নয়, অনুদানই হওয়া উচিত জলবায়ু অর্থায়নের মূল ভিত্তি’। সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো অতিরিক্ত ঋণের বোঝার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এছাড়াও ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ ফান্ডের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশকে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কাঠামো ও প্রক্রিয়ার দাবি তুলতে হবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফল উদাহরণ হিসেবে দেখাতে পারে, যেমন ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড ও স্থানীয় অভিযোজন প্রকল্পগুলোকে। যেন বিশ্ব দেখতে পায়, ‘আমরা শুধু দাবি করছি না, কাজও করছি’।

আগামীতে সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলে যুব,নারী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে ধনী দেশগুলোর নিকট একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক বার্তা পৌঁছাতে পারে।

বাংলাদেশ একই সঙ্গে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেমন এলডিসি ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সঙ্গে কৌশলগত জোট গঠনের মাধ্যমেও দাবিগুলো আরও শক্তিশালী করতে পারে।

আমরা মনেকরি, এসবি৬২ কেবল একটি কারিগরি সভা ও নীতিগত আলোচনা নয়, সম্মেলনটি যেন বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে সেই দাবী রয়েছে। সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ, যেখানে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার, ‘জলবায়ু অর্থায়ন কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি একটি অধিকার’।

এসবি৬২ হলো জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনের একটি কারিগরি ও নীতিনির্ধারণী সভা। এই সভায় জলবায়ু অর্থায়ন, অভিযোজন, ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা হয়।

* রাওমান স্মিতা, গ্রিন ফাইন্যান্স, মানবাধিকার, শান্তি ও যুব উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি’র সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

back to top