alt

মুক্ত আলোচনা

পলিথিনের পাপ, প্রকৃতির প্রতিশোধ

রহিম আব্দুর রহিম

: বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

প্রকৃতি কোনো প্রাণের জন্য সৃষ্টি হয়নি, বরং প্রাণ ও প্রাণীর জন্যই প্রকৃতির প্রয়োজন। এই প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণের মেলবন্ধনেই গড়ে ওঠে পরিবেশ। প্রকৃতির সব উপহার আমরা মানুষরা নিঃস্বার্থে গ্রহণ করি, অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী আমরাই। মাটি, পানি, আলো, বাতাস, বৃক্ষ, নদীÑসব মিলে পৃথিবীর পরিবেশ। আর এই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই রয়েছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মাটি। এই মাটির বুকেই গড়ে ওঠে ফুল, ফসল, ফলমূল, গৃহ, জনপদ এবং জীবন। মা যেমন সন্তান ধারণ করেন, তেমনি মাটিও ধারণ করে সব প্রাণকে। তাই ‘মা-মাটি-মানুষ’ শব্দত্রয় প্রকৃতি ও পরিবেশের গভীর সম্পর্ককে বোঝায়।

প্রকৃতি রক্ষার শিক্ষা নতুন কিছু নয়। দেড়শ বছর আগে পরিবেশ বিজ্ঞানী ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস তার উরধষবপঃরপং ড়ভ ঘধঃঁৎব গ্রন্থে সতর্ক করেছিলেন, ‘বৃক্ষ নিধন, নদীর গতিপথ রোধÑএইসব করলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবে। যদি আমরা প্রকৃতির অনুগত প্রজা হই, তাহলে প্রকৃতিও আমাদের রক্ষা করবে। একে তার নিজের নিয়মে চলতে দিতে হবে।’

একসময় বাংলাদেশে ছিল প্রায় ৮০০ নদী। বর্তমানে সরকারি তালিকায় ১২০০ নদীর কথা বলা হলেও বাস্তবে সচল নদীর সংখ্যা ১০০-এর মতো। বাকি নদীগুলো মৃতপ্রায়। নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইমারত, কলকারখানা, হাটবাজার। শুধু দখল নয়, মারাত্মক দূষণ নদী পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। জলজ-স্থলজ প্রাণী, মাছ, পোকা-মাকড় সবই হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় পরিপূর্ণ ছিল এ দেশের প্রকৃতি। আজ তা বিরূপ।

নদীদূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। এর ভয়াবহতা বোঝাতে গেলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উদাহরণ যথেষ্ট। চীনের শক্তিশালী সাকশন ড্রেজার পর্যন্ত থেমে গিয়েছিল পলিথিনের স্তরে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নদীর তলদেশে ২-৩ মিটার পলিথিন জমেছে, যা ড্রেজিং কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।

পলিথিন এখন হাট-বাজার, শপিংমল থেকে আমাদের ঘরে আসছে খুব সহজেই। ব্যবহার শেষে যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়ার ফলে জমির নিচে জমছে কঠিন স্তর। এতে বৃষ্টির পানি মাটির নিচে যেতে পারছে না, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পলিথিন এমন একটি অক্ষয় পদার্থ, যা ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক দ্বারা সহজে পচে না। পোড়ালেও তা থেকে নির্গত হয় বিষাক্ত গ্যাস, যেমন মনো-অক্সাইড বা ডাই-অক্সাইড, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করতে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন করা হয়; কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ হয়নি। উৎপাদন ও ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে। ২০১২ সালে সরকার অভিযান জোরদার করলেও, মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবার পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যায়। বর্তমান সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো দরকার। পাটজাত বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাতে কৃষক উপকৃত হবে, রাষ্ট্র লাভবান হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে লাখ লাখ মানুষের। আমাদের দরকার দূষণমুক্ত মাটি, পরিবেশবান্ধব জীবন।

[লেখক : শিক্ষক]

হারিয়ে যাওয়া অভিযোগকৃত চেকের মামলা

জার্মানীতে এসবি ৬২ সম্মেলন : বাংলাদেশের নজর অর্থায়নের ন্যায্যতায়

ছবি

শতবর্ষ পরেও যার প্রয়োজন ফুরোয় না : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

আদিবাসী মুণ্ডা ভাষার বাঁচার আর্তনাদ

মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

বিশ্ব রেড ক্রস দিবস

আত্মরক্ষার খালি-হাতের ইতিহাস ও আধুনিক বিস্তার

বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর : সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ

ছবি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস “বিজয় বসন্ত“গ্রন্থের লেখক

পয়লা বৈশাখ : বাঙালির সংহতি চেতনার সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কমরেড রূপনারায়ণ রায়

সাংবাদিক-সাহিত্যিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু কথা

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

tab

মুক্ত আলোচনা

পলিথিনের পাপ, প্রকৃতির প্রতিশোধ

রহিম আব্দুর রহিম

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

প্রকৃতি কোনো প্রাণের জন্য সৃষ্টি হয়নি, বরং প্রাণ ও প্রাণীর জন্যই প্রকৃতির প্রয়োজন। এই প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণের মেলবন্ধনেই গড়ে ওঠে পরিবেশ। প্রকৃতির সব উপহার আমরা মানুষরা নিঃস্বার্থে গ্রহণ করি, অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী আমরাই। মাটি, পানি, আলো, বাতাস, বৃক্ষ, নদীÑসব মিলে পৃথিবীর পরিবেশ। আর এই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই রয়েছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মাটি। এই মাটির বুকেই গড়ে ওঠে ফুল, ফসল, ফলমূল, গৃহ, জনপদ এবং জীবন। মা যেমন সন্তান ধারণ করেন, তেমনি মাটিও ধারণ করে সব প্রাণকে। তাই ‘মা-মাটি-মানুষ’ শব্দত্রয় প্রকৃতি ও পরিবেশের গভীর সম্পর্ককে বোঝায়।

প্রকৃতি রক্ষার শিক্ষা নতুন কিছু নয়। দেড়শ বছর আগে পরিবেশ বিজ্ঞানী ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস তার উরধষবপঃরপং ড়ভ ঘধঃঁৎব গ্রন্থে সতর্ক করেছিলেন, ‘বৃক্ষ নিধন, নদীর গতিপথ রোধÑএইসব করলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবে। যদি আমরা প্রকৃতির অনুগত প্রজা হই, তাহলে প্রকৃতিও আমাদের রক্ষা করবে। একে তার নিজের নিয়মে চলতে দিতে হবে।’

একসময় বাংলাদেশে ছিল প্রায় ৮০০ নদী। বর্তমানে সরকারি তালিকায় ১২০০ নদীর কথা বলা হলেও বাস্তবে সচল নদীর সংখ্যা ১০০-এর মতো। বাকি নদীগুলো মৃতপ্রায়। নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইমারত, কলকারখানা, হাটবাজার। শুধু দখল নয়, মারাত্মক দূষণ নদী পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। জলজ-স্থলজ প্রাণী, মাছ, পোকা-মাকড় সবই হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় পরিপূর্ণ ছিল এ দেশের প্রকৃতি। আজ তা বিরূপ।

নদীদূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। এর ভয়াবহতা বোঝাতে গেলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উদাহরণ যথেষ্ট। চীনের শক্তিশালী সাকশন ড্রেজার পর্যন্ত থেমে গিয়েছিল পলিথিনের স্তরে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নদীর তলদেশে ২-৩ মিটার পলিথিন জমেছে, যা ড্রেজিং কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।

পলিথিন এখন হাট-বাজার, শপিংমল থেকে আমাদের ঘরে আসছে খুব সহজেই। ব্যবহার শেষে যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়ার ফলে জমির নিচে জমছে কঠিন স্তর। এতে বৃষ্টির পানি মাটির নিচে যেতে পারছে না, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পলিথিন এমন একটি অক্ষয় পদার্থ, যা ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক দ্বারা সহজে পচে না। পোড়ালেও তা থেকে নির্গত হয় বিষাক্ত গ্যাস, যেমন মনো-অক্সাইড বা ডাই-অক্সাইড, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করতে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন করা হয়; কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ হয়নি। উৎপাদন ও ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে। ২০১২ সালে সরকার অভিযান জোরদার করলেও, মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবার পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যায়। বর্তমান সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো দরকার। পাটজাত বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাতে কৃষক উপকৃত হবে, রাষ্ট্র লাভবান হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে লাখ লাখ মানুষের। আমাদের দরকার দূষণমুক্ত মাটি, পরিবেশবান্ধব জীবন।

[লেখক : শিক্ষক]

back to top