alt

মুক্ত আলোচনা

মানসিক সুস্থতা কতটা জরুরি?

জোহরা শিউলী

: সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১

শারীরিক অসুস্থতায় আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। চিকিৎসা নেই। সুস্থ হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। কিন্তু মনেরও যে একটা স্বাস্থ্য আছে, তা আমরা কতজন ভাবি? সেই ভাবনা থাকে না আমাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝেও। আবার সামাজিক সংস্কারের কারণে মানতে চান না যে, মনের রোগ হয়েছে। বিষয়টি লুকিয়ে রেখে সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শরীরের পাশাপাশি মনকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে; করোনার এ সময়ে শরীরের যত্নে আমরা যে রকম উদ্যোগী হই। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে তেমন উদ্যেগী হতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা নিয়ে পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল। তিনি জানান- মানসিক স্বাস্থ্য অর্থ কিন্তু কেবল মানসিক রোগ নয়। শরীরে কোনো রোগ না থাকলেও শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করতে হয়, গোসল করতে হয়, সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, ব্যায়াম করতে হয়, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য আর অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে হয়। তেমনি মনের সুস্থতার জন্য নিয়মিত মনের যত্ন নিতে হয়, মনকে তার ‘খাদ্য’ দিতে হয়। আমরা অনেকেই তা বুঝে উঠতে পারি না এবং এটাকে গুরুত্বসহকারে নেই না। মন আর শরীর পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত, সে কারণে মনের সমস্যা হলে শরীরের ওপর এর প্রভাব পড়ে আবার শরীর খারাপ হলে মনও খারাপ হয়।

আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না, ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ আর ‘মানসিক রোগ’ আলাদা বিষয়। মানসিক রোগ হলো মনের কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা, যার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা এবং ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার জন্য প্রযোজ্য। সবারই মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করা জরুরি। মনের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। সার্বিক অর্থে সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিবারের সবারই মনের যত্ন নিতে হবে।

মনের যত্ন আমরা কীভাবে নেব? ভাবনার জায়গায় পরিবর্তন সবার আগে ভাবতে হবে ‘মন’ স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আমরা শরীরের যেভাবে যত্ন নেব, তেমনি যত্ন নিতে হবে মনেরও। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে নিয়ম করে। কারও ঘুম বেশি, আবার কারও কম, সেটা সমস্যা নয়। জরুরি হচ্ছে রাতে ঘুমাতে হবে, আর দিনে কাজ করতে হবে। যদি এর উল্টোটা হয়ে যায়, তবে মস্তিষ্কের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ এলোমেলো হয়ে যায় আর এতে করে মনেরও পরিবর্তন ঘটে, মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। রাত না জেগে রাতকে ঘুমানোর জন্যই ব্যবহার আবশ্যক। মনের সুস্থতায় পরিবারের প্রাধান্য সবার আগে। পারিবারিক বন্ধন আমাদের সুস্থ রাখে। পরিবারের সবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা-বোঝাপড়ায় আমাদের মন প্রফুল্ল থাকে। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। একবেলা সবাই একসঙ্গে খাওয়া, সপ্তাহে নিয়ম করে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, বেড়াতে যাওয়া পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। সন্তানদের সামনে যতটা সম্ভব নেতিবাচক আলোচনা এড়িয়ে চলা উচিত।

সামাজিক দক্ষতা মনের চাপ কমায়। সামাজিকভাবে দক্ষ হলে মনের ওপর চাপ কম পড়ে, মন সুস্থ থাকে। তার অর্থ এই নয় যে, এ দক্ষতা অর্জনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই আমাদের সময় কাটাতে হবে। বরং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে সক্রিয় অংশ নিতে হবে, যদিও করোনাকালে এ সুযোগ এখন সীমিত। তথাপি, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থেকে যোগাযোগ রক্ষা করে চললে, তা মনের প্রফুল্লতা বৃদ্ধি করে। মানুষের সঙ্গে মিশে আনন্দে জীবন কাটানোর দক্ষতাই হলো সামজিক দক্ষতা।

ব্যায়ামে প্রফুল্ল থাকে মন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরও প্রফুল্ল থাকে। হালকা ব্যায়ামে মাংসপেশি শিথিল হয়, দৃঢ় হয়। মনের স্বাস্থ্যের জন্য এই হালকা ব্যায়াম খুব জরুরি। এর মেডিটেশনও এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। মেডিটেশন মনের ইতিবাচক দরজা খুলে দেয়। মনকে প্রশান্ত করে।

মনকে সুস্থ রাখতে ভালো বই পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ আনন্দ কথা। আনন্দ করুন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ার পর বই পড়ার প্রতি আমাদের সবারই আগ্রহ কমে গেছে অনেকখানি। পাঠ্যবই কিংবা দরকারি কাগজ ছাড়া তেমন আর কিছুই পড়া হয় না। কিন্তু বই পড়া মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বাড়িতে একটি ছোট পারিবারিক পাঠাগার এই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। এ সঙ্গে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা, সংগীত, নাচ, ছবি আঁকা মনের অন্যতম খোরাক জোগায়। হাসিখুশি থাকাও মনের যতেœর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বাহ্যিক স্বাস্থের সঙ্গে মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে খাদ্যাভাস অনেক বড় ভুমিকা রাখে। শরীর ফিট থাকলে মনও ফিট থাকে। এজন্য ভেবেচিন্তে খেতে হবে। নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে সময় মেনে। অনিয়ম করে খাওয়া শরীরে চাপ সৃষ্টি করে হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মনের স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে চিবিয়ে খাওয়া খুব জরুরি। সুষম খাদ্য ও প্রচুর পানি পান করতে হবে। এগুলো মেনে চললে শরীর ফিট থাকবে। শরীরের সুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে তখন ভালো থাকবে মনও।

মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যার জন্য পরিহার করতে হবে ক্ষতিকর বিভিন্ন বিষয়। পারিবারিক কলহ মনের শান্তি নষ্ট করার অন্যতম বিষয়। তাই পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ, মাদকের নেশা, অনর্থক কুটিলতা-হিংসা, অন্যায্য শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের মতো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, পেশা জীবনে অনৈতিকতার চর্চা, ইত্যাদি মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে মনের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। সারাক্ষণ চিন্তা থাকে সেই সব বিষয়ের উপরই। তাই অস্বস্তি থাকে মনে। মনের অজান্তে সেই ক্ষতিকর বিষয়গুলো শুধু ভাবিয়েই চলে। এতে করে মনের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পড়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপরেও। মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়গুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

শরীরের যে কোনো সমস্যার জন্য আমরা যেমন চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হই। চিকিৎসা গ্রহণ করি। সে রকম মানসিক যোকোন সমস্যার ক্ষেত্রে বিষয়টিকে এড়িয়ে না গিয়ে, লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তার পরিবারের সদস্যদের সেই আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে থাকতে হবে। হতে হবে মনের সঙ্গী। এ জন্য মানসিক সমস্যার সাধারণ লক্ষণ যেমন ঘুমের সমস্যা, আচার-আচরণের পরিবর্তন, আবেগের পরিবর্তন, অতিউত্তেজনা, অতিউৎকণ্ঠা, ভাঙচুর, কথাবার্তার পরিবর্তন, অহেতুক মন খারাপ, সমস্যাকে অস্বীকার করা, সম্পর্কেও জটিলতা, শিশুর অবাধ্যতা বা অতিচঞ্চলতা, রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা ইত্যাদি দেখা দিলে অযথা দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সেই পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কাউন্সেলিং করতে হবে। কাউন্সেলিংয়ের শুরুটা যদি খুব প্রাথমিক পর্যায় থেকেই করা হয় তাহলে রোগী অসুস্থতার চরম পর্যায়ে চলে যায় না। তাই যখনই মনে হবে মনের মধ্যে অজানা কালো অনুভূতি উঁকি দিচ্ছে তখনই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম বিষয়ক নিবন্ধ)

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

মানসিক সুস্থতা কতটা জরুরি?

জোহরা শিউলী

সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১

শারীরিক অসুস্থতায় আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। চিকিৎসা নেই। সুস্থ হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। কিন্তু মনেরও যে একটা স্বাস্থ্য আছে, তা আমরা কতজন ভাবি? সেই ভাবনা থাকে না আমাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝেও। আবার সামাজিক সংস্কারের কারণে মানতে চান না যে, মনের রোগ হয়েছে। বিষয়টি লুকিয়ে রেখে সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শরীরের পাশাপাশি মনকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে; করোনার এ সময়ে শরীরের যত্নে আমরা যে রকম উদ্যোগী হই। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে তেমন উদ্যেগী হতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা নিয়ে পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল। তিনি জানান- মানসিক স্বাস্থ্য অর্থ কিন্তু কেবল মানসিক রোগ নয়। শরীরে কোনো রোগ না থাকলেও শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করতে হয়, গোসল করতে হয়, সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, ব্যায়াম করতে হয়, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য আর অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে হয়। তেমনি মনের সুস্থতার জন্য নিয়মিত মনের যত্ন নিতে হয়, মনকে তার ‘খাদ্য’ দিতে হয়। আমরা অনেকেই তা বুঝে উঠতে পারি না এবং এটাকে গুরুত্বসহকারে নেই না। মন আর শরীর পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত, সে কারণে মনের সমস্যা হলে শরীরের ওপর এর প্রভাব পড়ে আবার শরীর খারাপ হলে মনও খারাপ হয়।

আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না, ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ আর ‘মানসিক রোগ’ আলাদা বিষয়। মানসিক রোগ হলো মনের কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা, যার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা এবং ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার জন্য প্রযোজ্য। সবারই মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করা জরুরি। মনের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। সার্বিক অর্থে সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিবারের সবারই মনের যত্ন নিতে হবে।

মনের যত্ন আমরা কীভাবে নেব? ভাবনার জায়গায় পরিবর্তন সবার আগে ভাবতে হবে ‘মন’ স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আমরা শরীরের যেভাবে যত্ন নেব, তেমনি যত্ন নিতে হবে মনেরও। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে নিয়ম করে। কারও ঘুম বেশি, আবার কারও কম, সেটা সমস্যা নয়। জরুরি হচ্ছে রাতে ঘুমাতে হবে, আর দিনে কাজ করতে হবে। যদি এর উল্টোটা হয়ে যায়, তবে মস্তিষ্কের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ এলোমেলো হয়ে যায় আর এতে করে মনেরও পরিবর্তন ঘটে, মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। রাত না জেগে রাতকে ঘুমানোর জন্যই ব্যবহার আবশ্যক। মনের সুস্থতায় পরিবারের প্রাধান্য সবার আগে। পারিবারিক বন্ধন আমাদের সুস্থ রাখে। পরিবারের সবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা-বোঝাপড়ায় আমাদের মন প্রফুল্ল থাকে। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। একবেলা সবাই একসঙ্গে খাওয়া, সপ্তাহে নিয়ম করে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, বেড়াতে যাওয়া পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। সন্তানদের সামনে যতটা সম্ভব নেতিবাচক আলোচনা এড়িয়ে চলা উচিত।

সামাজিক দক্ষতা মনের চাপ কমায়। সামাজিকভাবে দক্ষ হলে মনের ওপর চাপ কম পড়ে, মন সুস্থ থাকে। তার অর্থ এই নয় যে, এ দক্ষতা অর্জনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই আমাদের সময় কাটাতে হবে। বরং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে সক্রিয় অংশ নিতে হবে, যদিও করোনাকালে এ সুযোগ এখন সীমিত। তথাপি, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থেকে যোগাযোগ রক্ষা করে চললে, তা মনের প্রফুল্লতা বৃদ্ধি করে। মানুষের সঙ্গে মিশে আনন্দে জীবন কাটানোর দক্ষতাই হলো সামজিক দক্ষতা।

ব্যায়ামে প্রফুল্ল থাকে মন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরও প্রফুল্ল থাকে। হালকা ব্যায়ামে মাংসপেশি শিথিল হয়, দৃঢ় হয়। মনের স্বাস্থ্যের জন্য এই হালকা ব্যায়াম খুব জরুরি। এর মেডিটেশনও এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। মেডিটেশন মনের ইতিবাচক দরজা খুলে দেয়। মনকে প্রশান্ত করে।

মনকে সুস্থ রাখতে ভালো বই পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ আনন্দ কথা। আনন্দ করুন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ার পর বই পড়ার প্রতি আমাদের সবারই আগ্রহ কমে গেছে অনেকখানি। পাঠ্যবই কিংবা দরকারি কাগজ ছাড়া তেমন আর কিছুই পড়া হয় না। কিন্তু বই পড়া মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বাড়িতে একটি ছোট পারিবারিক পাঠাগার এই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। এ সঙ্গে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা, সংগীত, নাচ, ছবি আঁকা মনের অন্যতম খোরাক জোগায়। হাসিখুশি থাকাও মনের যতেœর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বাহ্যিক স্বাস্থের সঙ্গে মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে খাদ্যাভাস অনেক বড় ভুমিকা রাখে। শরীর ফিট থাকলে মনও ফিট থাকে। এজন্য ভেবেচিন্তে খেতে হবে। নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে সময় মেনে। অনিয়ম করে খাওয়া শরীরে চাপ সৃষ্টি করে হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মনের স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে চিবিয়ে খাওয়া খুব জরুরি। সুষম খাদ্য ও প্রচুর পানি পান করতে হবে। এগুলো মেনে চললে শরীর ফিট থাকবে। শরীরের সুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে তখন ভালো থাকবে মনও।

মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যার জন্য পরিহার করতে হবে ক্ষতিকর বিভিন্ন বিষয়। পারিবারিক কলহ মনের শান্তি নষ্ট করার অন্যতম বিষয়। তাই পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ, মাদকের নেশা, অনর্থক কুটিলতা-হিংসা, অন্যায্য শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের মতো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, পেশা জীবনে অনৈতিকতার চর্চা, ইত্যাদি মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে মনের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। সারাক্ষণ চিন্তা থাকে সেই সব বিষয়ের উপরই। তাই অস্বস্তি থাকে মনে। মনের অজান্তে সেই ক্ষতিকর বিষয়গুলো শুধু ভাবিয়েই চলে। এতে করে মনের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পড়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপরেও। মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়গুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

শরীরের যে কোনো সমস্যার জন্য আমরা যেমন চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হই। চিকিৎসা গ্রহণ করি। সে রকম মানসিক যোকোন সমস্যার ক্ষেত্রে বিষয়টিকে এড়িয়ে না গিয়ে, লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তার পরিবারের সদস্যদের সেই আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে থাকতে হবে। হতে হবে মনের সঙ্গী। এ জন্য মানসিক সমস্যার সাধারণ লক্ষণ যেমন ঘুমের সমস্যা, আচার-আচরণের পরিবর্তন, আবেগের পরিবর্তন, অতিউত্তেজনা, অতিউৎকণ্ঠা, ভাঙচুর, কথাবার্তার পরিবর্তন, অহেতুক মন খারাপ, সমস্যাকে অস্বীকার করা, সম্পর্কেও জটিলতা, শিশুর অবাধ্যতা বা অতিচঞ্চলতা, রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা ইত্যাদি দেখা দিলে অযথা দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সেই পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কাউন্সেলিং করতে হবে। কাউন্সেলিংয়ের শুরুটা যদি খুব প্রাথমিক পর্যায় থেকেই করা হয় তাহলে রোগী অসুস্থতার চরম পর্যায়ে চলে যায় না। তাই যখনই মনে হবে মনের মধ্যে অজানা কালো অনুভূতি উঁকি দিচ্ছে তখনই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম বিষয়ক নিবন্ধ)

back to top