alt

মুক্ত আলোচনা

সাফারি পার্কে প্রাণী মৃত্যুর রহস্য

নিশাত ছিদ্দিকা

: বৃহস্পতিবার, ০৭ এপ্রিল ২০২২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত জানুয়ারি মাসে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লিখিত মতামত অনুযায়ী দায়ীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ফৌজদারি মামলা দায়েরের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। দেশি-বিদেশি নানা প্রাণী ও পাখির বৈচিত্র্যময় সম্ভারে মুগ্ধ আগত দর্শনার্থীরা। পার্কের আফ্রিকান সাফারি জোনে অন্যসব প্রাণীর সঙ্গে জেব্রার পাল বাস করে। তার মধ্যে বছরের শুরুতেই একটি জেব্রা মারা যায়। পরে পর্যায়ক্রমে ২ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করেই একের পর এক জেব্রা মারা গেছে। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কী কারণে এই কদিনে এতগুলো জেব্রা মারা গেল তা নিয়ে চলছিল পরীক্ষানিরীক্ষাÑ জানিয়েছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান।

জানা যায়, ২০১৩ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠার পর দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাঘ, সাদা বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, হরিণ, ক্যাঙ্গারু, কালো ভালুক, সাম্বার, গয়াল, হাতিসহ প্রচুর প্রাণী ও পাখি আনা হয়। তবে গত আট বছরে বাঘ, জিরাফ, ক্যাঙ্গারু, জেব্রাসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছে দুর্লভ কিছু পাখি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার এবং দেশীয় বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার করাপ্রাণী ও পাখির বেশিরভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এসেছে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ও রোগাক্রান্ত হয়ে গত ৮ বছরে বেশ কয়েকটি জিরাফের মৃত্যু হয়। পার্কটিতে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু শাবকের জন্ম হয়েছে। করোনাকালেও গত বছর বেশ কয়টি শাবকের জন্ম হলো। এর ফলে পার্কে মোট জেব্রার সংখ্যা হয়েছিল ৩১টি। ৯টি জেব্রার মৃত্যুর পর এখন রয়েছে ২২টি।

মৃতপ্রাণীর মরদেহের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল বিচ্ছিন্নভাবে এসেছে। অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু হলেও একই ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে জেব্রার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে নমুনা পরীক্ষা করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সাফারি পার্কের চারণভূমির ঘাস ও মাটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে পরীক্ষাগারে। কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ৯টি জেব্রার পাকস্থলীর বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করে নাইট্রো ফসফরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে।

উল্লেখ্য, জেব্রা মৃত্যুর ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন, দায়দায়িত্ব নিরূপণ ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশের জন্য পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২৬ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ৩০ জানুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পরবর্তী সময়ে কমিটিতে আরো দুজন বিশেষজ্ঞ সদস্য এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জেলা প্রশাসক, গাজীপুরের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে কো-অপ্ট করা হয়। তাছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিকে কাজের সহায়তা এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আট সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট সহায়ক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ও ১২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য যে, তদন্ত কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আরো সাত কার্যদিবস বৃদ্ধি করা হয়। সার্বিক তদন্ত শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সভায়সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় মামলা করা হবে। এছাড়াও, তদন্ত কমিটির করা ২৪টি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনের ওপর পর্যালোচনায় বলা হয়, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, ক্লস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরো চারটি জেব্রা মারা যায়।

তবে, প্রথম দিকের তিনটি জেব্রার (২ ও ৩ জানুয়ারি) মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ওই মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কে বা কারা ওই মৃত তিনটি জেব্রার পেট কেটেছে তা উদ্ঘাটন করার জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিক্যাল বোর্ডের সভা ডাকার কথা থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরিভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ডের সভা ডাকা হয়নি, যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল।

কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি, যা রহস্যজনক। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। ওই দিন পর্যন্ত আটটি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা কর্মরত অন্য কেউ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি সচিবকে অবহিত করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল। তদন্ত কমিটির এ সকল মতামত বিবেচনায় নিয়েপ্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি জেব্রার সংখ্যা দিন দিন বাড়ার কারণে এখান থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় কিছু জেব্রা পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন মৃত্যু সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে শিগ্গিরই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

[লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি]

সৌজন্যে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

সাফারি পার্কে প্রাণী মৃত্যুর রহস্য

নিশাত ছিদ্দিকা

বৃহস্পতিবার, ০৭ এপ্রিল ২০২২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত জানুয়ারি মাসে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লিখিত মতামত অনুযায়ী দায়ীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ফৌজদারি মামলা দায়েরের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। দেশি-বিদেশি নানা প্রাণী ও পাখির বৈচিত্র্যময় সম্ভারে মুগ্ধ আগত দর্শনার্থীরা। পার্কের আফ্রিকান সাফারি জোনে অন্যসব প্রাণীর সঙ্গে জেব্রার পাল বাস করে। তার মধ্যে বছরের শুরুতেই একটি জেব্রা মারা যায়। পরে পর্যায়ক্রমে ২ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করেই একের পর এক জেব্রা মারা গেছে। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কী কারণে এই কদিনে এতগুলো জেব্রা মারা গেল তা নিয়ে চলছিল পরীক্ষানিরীক্ষাÑ জানিয়েছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান।

জানা যায়, ২০১৩ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠার পর দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাঘ, সাদা বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, হরিণ, ক্যাঙ্গারু, কালো ভালুক, সাম্বার, গয়াল, হাতিসহ প্রচুর প্রাণী ও পাখি আনা হয়। তবে গত আট বছরে বাঘ, জিরাফ, ক্যাঙ্গারু, জেব্রাসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছে দুর্লভ কিছু পাখি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার এবং দেশীয় বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার করাপ্রাণী ও পাখির বেশিরভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এসেছে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ও রোগাক্রান্ত হয়ে গত ৮ বছরে বেশ কয়েকটি জিরাফের মৃত্যু হয়। পার্কটিতে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু শাবকের জন্ম হয়েছে। করোনাকালেও গত বছর বেশ কয়টি শাবকের জন্ম হলো। এর ফলে পার্কে মোট জেব্রার সংখ্যা হয়েছিল ৩১টি। ৯টি জেব্রার মৃত্যুর পর এখন রয়েছে ২২টি।

মৃতপ্রাণীর মরদেহের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল বিচ্ছিন্নভাবে এসেছে। অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু হলেও একই ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে জেব্রার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে নমুনা পরীক্ষা করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সাফারি পার্কের চারণভূমির ঘাস ও মাটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে পরীক্ষাগারে। কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ৯টি জেব্রার পাকস্থলীর বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করে নাইট্রো ফসফরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে।

উল্লেখ্য, জেব্রা মৃত্যুর ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন, দায়দায়িত্ব নিরূপণ ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশের জন্য পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২৬ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ৩০ জানুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পরবর্তী সময়ে কমিটিতে আরো দুজন বিশেষজ্ঞ সদস্য এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জেলা প্রশাসক, গাজীপুরের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে কো-অপ্ট করা হয়। তাছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিকে কাজের সহায়তা এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আট সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট সহায়ক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ও ১২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য যে, তদন্ত কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আরো সাত কার্যদিবস বৃদ্ধি করা হয়। সার্বিক তদন্ত শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সভায়সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় মামলা করা হবে। এছাড়াও, তদন্ত কমিটির করা ২৪টি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনের ওপর পর্যালোচনায় বলা হয়, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, ক্লস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরো চারটি জেব্রা মারা যায়।

তবে, প্রথম দিকের তিনটি জেব্রার (২ ও ৩ জানুয়ারি) মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ওই মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কে বা কারা ওই মৃত তিনটি জেব্রার পেট কেটেছে তা উদ্ঘাটন করার জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিক্যাল বোর্ডের সভা ডাকার কথা থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরিভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ডের সভা ডাকা হয়নি, যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল।

কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি, যা রহস্যজনক। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। ওই দিন পর্যন্ত আটটি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা কর্মরত অন্য কেউ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি সচিবকে অবহিত করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল। তদন্ত কমিটির এ সকল মতামত বিবেচনায় নিয়েপ্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি জেব্রার সংখ্যা দিন দিন বাড়ার কারণে এখান থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় কিছু জেব্রা পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন মৃত্যু সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে শিগ্গিরই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

[লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি]

সৌজন্যে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)

back to top