প্রীতি রাহা
৮ মে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে, বাংলা বর্ষপঞ্জির পরিবর্তনে বর্তমানে তা বাংলাদেশে ৮ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরুর বাবার নাম ছিল দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মায়ের নাম সারদা দেবী। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৪ জন সন্তানের মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সবার ছোট। তাঁরা ছিলেন আট ভাই ও ছয় বোন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন মোটেও সহজ সরলরেখার ন্যায় ছিল না। ১৮৭৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা দেবী পরলোগমন করেছিলেন। তখন কবিগুরুর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণের বেশ শখ ছিল। এ কারণে তিনি বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অবস্থান করতেন। মায়ের শূন্যতা এবং বাবার অনুপস্থিতির কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঞ্ছিত হয়েছিলেন পিতামাতার স্নেহ থেকে। তাঁর ভাইবোনেদের সঙ্গেও তেমন সখ্যতা লক্ষ করা যায়নি। ছোটবেলা থেকেই একাকীত্ব তাঁর সঙ্গী ছিল। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি বহু কষ্টের সাক্ষী হয়েছেন। এর মাঝেও আমাদের জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছে গান-কবিতা-ছোটগল্প-প্রবন্ধ ইত্যাদি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী এবং গল্পকার। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ববোধিনী পত্রিকা’তে কবিগুরুর প্রথম রচিত কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সাল তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থটি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তাঁর ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য। তাঁর খ্যাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তাঁর সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্যসূচিতে সংযোজিত হয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য আরোও অনেক সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ১৯ খন্ডে রয়েছে তাঁর ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র।’ ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
আজি হতে শতবর্ষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/ কৌতূহল ভরে.../ আজি হতে শতবর্ষ পরে।
কবিগুরু রচিত উপরোক্ত লাইনগুলো নেয়া হয়েছে কবির ‘১৪০০ সাল’ শীর্ষক কবিতা থেকে। কবিতার লাইনগুলো পড়লে যেন মনে হয় নিজের জন্যই লিখে গেছেন তিনি।
আসুন, জেনে নেয়া যাক কবিগুরুর আরোও কিছু তথ্য।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
তিনি জীবনের প্রথমাংশে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে অবস্থান করতে বেশি পছন্দ করতেন। তাঁর এই প্রকৃতি প্রেম পরবর্তীতে লক্ষ্য করা গেছে তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টিকর্মে।
মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন।
১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে তিনি ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন।
১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।
প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে থাকার পর ১৮৮০ সালে কোন ডিগ্রি না নিয়ে দেশে ফিরে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের প্রতি প্রেম ছিল অনেক গভীর। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মাঝেই চলছিল তাঁর সাহিত্যচর্চা। পিতার আদেশে ১৮৯১ সাল থেকে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি করতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জমিদারি কাজকর্মের মাঝেও তিনি চালাতে থাকেন তাঁর সাহিত্যকর্মও। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। এই শিলাইদহেই তাঁর অনেক সৃষ্টিকর্মের জন্ম হয়েছিল।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম যুগে যুগে সত্য। তিনি সেই সময়ে বসে আমাদের জন্য যা লিখে গেছেন তা এ সময়েও বর্তমান। তিনি বাঙালির প্রাণের মানুষ। শুধু বাঙালিদের কথা বলছি কেন! তাঁর সাহিত্যকর্মের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য, তাঁকে জানার জন্য অনেক বিদেশি বাংলা শিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের অমুল্য সম্পদ। তিনি আমাদের মাঝে নেই বহু বছর কিন্তু তিনি আছেন আমাদের মাঝেই, আমাদের হৃদয়ের গভীরে।
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া
চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি
গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি
ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা
কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা
ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি
চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী
কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়
কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়
আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি
কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি
কবিগুরুর লেখা গানের এই লাইনগুলো এখনো সত্য তাঁর জন্যই।
আবার কবিগুরুর লেখা আরেকটি গান –
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে—
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে ।।
বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী –
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে ।।
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসে
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে ।।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন লিখেছেন সুখের কথা, তেমনি লিখেছেন দুখের কথাও। তিনি সকল সময়ে বর্তমান, সকল সময়ে তিনি সত্য।
সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে ।/ তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’/ সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময় ।/ সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?/ লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন প্রেমিক মানুষ ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে প্রকাশ পেয়েছে যে, তিনি ছিলেন যুগকে অতিক্রমকারী। এ যুগেও তিনি সত্য, তিনি বর্তমান। এ যুগেও তিনি অনেকের প্রাণের মানুষ, মনের মানুষ। লোকে শ্রদ্ধা করে তাঁকে বলে ‘কবিগুরু বা বিশ্বকবি’; আদর করে বা ভালোবেসে বলে ‘ রবি’দা ‘; আবার এ যুগের অনেকেই ডাকে শুধু ‘গুরু’ বলে।
১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট (বাংলা ১৩৪৮-এর ২২ শ্রাবণ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই ২২শে শ্রাবণে প্রকৃতি কেঁদেছিল কিনা তা আমার জানা নেই কিন্তু সেদিন সকল বাঙালি হৃদয় কেঁদেছিল অঝোর ধারায়।
প্রণাম, কবিগুরু। শুভ জন্মদিন।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]
প্রীতি রাহা
শনিবার, ০৭ মে ২০২২
৮ মে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে, বাংলা বর্ষপঞ্জির পরিবর্তনে বর্তমানে তা বাংলাদেশে ৮ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরুর বাবার নাম ছিল দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মায়ের নাম সারদা দেবী। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৪ জন সন্তানের মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সবার ছোট। তাঁরা ছিলেন আট ভাই ও ছয় বোন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন মোটেও সহজ সরলরেখার ন্যায় ছিল না। ১৮৭৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা দেবী পরলোগমন করেছিলেন। তখন কবিগুরুর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণের বেশ শখ ছিল। এ কারণে তিনি বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অবস্থান করতেন। মায়ের শূন্যতা এবং বাবার অনুপস্থিতির কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঞ্ছিত হয়েছিলেন পিতামাতার স্নেহ থেকে। তাঁর ভাইবোনেদের সঙ্গেও তেমন সখ্যতা লক্ষ করা যায়নি। ছোটবেলা থেকেই একাকীত্ব তাঁর সঙ্গী ছিল। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি বহু কষ্টের সাক্ষী হয়েছেন। এর মাঝেও আমাদের জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছে গান-কবিতা-ছোটগল্প-প্রবন্ধ ইত্যাদি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী এবং গল্পকার। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ববোধিনী পত্রিকা’তে কবিগুরুর প্রথম রচিত কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সাল তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থটি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তাঁর ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য। তাঁর খ্যাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তাঁর সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্যসূচিতে সংযোজিত হয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য আরোও অনেক সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ১৯ খন্ডে রয়েছে তাঁর ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র।’ ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
আজি হতে শতবর্ষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/ কৌতূহল ভরে.../ আজি হতে শতবর্ষ পরে।
কবিগুরু রচিত উপরোক্ত লাইনগুলো নেয়া হয়েছে কবির ‘১৪০০ সাল’ শীর্ষক কবিতা থেকে। কবিতার লাইনগুলো পড়লে যেন মনে হয় নিজের জন্যই লিখে গেছেন তিনি।
আসুন, জেনে নেয়া যাক কবিগুরুর আরোও কিছু তথ্য।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
তিনি জীবনের প্রথমাংশে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে অবস্থান করতে বেশি পছন্দ করতেন। তাঁর এই প্রকৃতি প্রেম পরবর্তীতে লক্ষ্য করা গেছে তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টিকর্মে।
মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন।
১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে তিনি ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন।
১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।
প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে থাকার পর ১৮৮০ সালে কোন ডিগ্রি না নিয়ে দেশে ফিরে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের প্রতি প্রেম ছিল অনেক গভীর। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মাঝেই চলছিল তাঁর সাহিত্যচর্চা। পিতার আদেশে ১৮৯১ সাল থেকে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি করতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জমিদারি কাজকর্মের মাঝেও তিনি চালাতে থাকেন তাঁর সাহিত্যকর্মও। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। এই শিলাইদহেই তাঁর অনেক সৃষ্টিকর্মের জন্ম হয়েছিল।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম যুগে যুগে সত্য। তিনি সেই সময়ে বসে আমাদের জন্য যা লিখে গেছেন তা এ সময়েও বর্তমান। তিনি বাঙালির প্রাণের মানুষ। শুধু বাঙালিদের কথা বলছি কেন! তাঁর সাহিত্যকর্মের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য, তাঁকে জানার জন্য অনেক বিদেশি বাংলা শিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের অমুল্য সম্পদ। তিনি আমাদের মাঝে নেই বহু বছর কিন্তু তিনি আছেন আমাদের মাঝেই, আমাদের হৃদয়ের গভীরে।
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া
চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি
গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি
ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা
কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা
ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি
চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী
কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়
কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়
আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি
কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি
কবিগুরুর লেখা গানের এই লাইনগুলো এখনো সত্য তাঁর জন্যই।
আবার কবিগুরুর লেখা আরেকটি গান –
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে—
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে ।।
বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী –
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে ।।
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসে
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে ।।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন লিখেছেন সুখের কথা, তেমনি লিখেছেন দুখের কথাও। তিনি সকল সময়ে বর্তমান, সকল সময়ে তিনি সত্য।
সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে ।/ তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’/ সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময় ।/ সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?/ লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন প্রেমিক মানুষ ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে প্রকাশ পেয়েছে যে, তিনি ছিলেন যুগকে অতিক্রমকারী। এ যুগেও তিনি সত্য, তিনি বর্তমান। এ যুগেও তিনি অনেকের প্রাণের মানুষ, মনের মানুষ। লোকে শ্রদ্ধা করে তাঁকে বলে ‘কবিগুরু বা বিশ্বকবি’; আদর করে বা ভালোবেসে বলে ‘ রবি’দা ‘; আবার এ যুগের অনেকেই ডাকে শুধু ‘গুরু’ বলে।
১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট (বাংলা ১৩৪৮-এর ২২ শ্রাবণ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই ২২শে শ্রাবণে প্রকৃতি কেঁদেছিল কিনা তা আমার জানা নেই কিন্তু সেদিন সকল বাঙালি হৃদয় কেঁদেছিল অঝোর ধারায়।
প্রণাম, কবিগুরু। শুভ জন্মদিন।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]