গৌরমোহন দাস
আমরা শ্রদ্ধার সাথে তাঁদের স্মরণ করি, যাঁদের দ্বারা সমাজ, সংসার ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধিত হয়েছে, যাঁদের অপরিসীম অবদান রয়েছে। শঙ্করাচার্য, স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ধর্মীয় ক্ষেত্রে ও হিন্দু সমাজের কুসংস্কার দূরীকরণে অবদান অসীম, অপরিমেয় ও অপরিশোধ্য অবদান রেখেছেন। বর্তমান সময়ে ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সর্বজন প্রশংসনীয় কর্ম করে গেছেন-শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাসিক ‘সমাজ দর্পণ’ পত্রিকা ও ‘সুদর্শন’ পঞ্জিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, শাস্ত্রজ্ঞপণ্ডিত ও সমাজসংস্কারক শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী ২০০৮ সালের ১২ মে তিনি প্রয়াত হন। তাঁর ১৫তম প্রয়াণ দিবসে জানাই- শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ৪ আশ্বিন) মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি থানাধীন কাইচাইলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি একজন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত (ট্রিপল এম.এ.) অগাধ জ্ঞানের অধিকারী সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। যে কোনো সময়, যেকোনো মানুষ ফোনে কথা বলতে পারতেন, দেখা করতে পারতেন। তিনি দ্বেষহীন, বন্ধুভাবাপন্ন, দয়া ও ক্ষমাশীল এবং অহঙ্কারহীন একজন মানুষ ছিলেন। মোট কথা তাঁর চলন-বলন, আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও ব্যবহারে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার (১২/১৭) কথা খুব মনে পড়ে। ‘যো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাক্সক্ষতি।/ শুভাশুভপরিত্যাগী ভক্তিমান যঃ স মে প্রিয়ঃ ॥ অর্থাৎ যে সুখে হর্ষিত হয় না, দ্বেষ করে না, শোকাতুর হয় না, কোনো প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা করেন না, শুভ এবং অশুভ কর্মফলে যার সমভাব, এমন ভক্তিমান ব্যক্তিই আমার প্রিয়।’
শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী কোনো ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তাঁর কর্মকা- ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশব্যাপী। প্রাতিষ্ঠানিক কাজের মাঝে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সগৌরবে ‘এক ধর্ম এক বর্ণ এক সমাজ এক সংস্কার’ মূলমন্ত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামে-গঞ্জে, বাংলার আনাচে-কানাচে সবার মাঝে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ও সঠিক ধর্মতত্ত্ব প্রচারে ও সমস্যায় সমাধান দিয়ে তিনি সকলের অন্তরে শ্রদ্ধার আসন গড়েছেন। এরপর আজো তাঁর প্রতিষ্ঠিত শাখা সমিতিসমূহ ও মাসিক ‘সমাজ দর্পণ’ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।
প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করলেও জ্ঞান অšে¦ষণে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা এবং লেখালেখি করতেন। তিনি বলতেন- “বই পড়তে পড়তে কখন যে রাত দুইটা/তিনটা বেজে যায় খেয়াল থাকে না। প্রভাতে ঘুম থেকে ওঠে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে যখন হাঁটাহাঁটি করি তখনও ভাবি-হাঁটাহাঁটিতে বুঝি অযথা সময় চলে গেল। এ সময়টাতে যদি ... গ্রন্থ পড়তে পারতাম তা হলে ভালো হতো, কিংবা হাঁটায় সময় ব্যয় না করে যদি একটা প্রবন্ধ লেখায় সময় ব্যয় হতো, আরও ভালো হতো।” নিজে জ্ঞানচর্চা করে তিনি সকলকে জ্ঞানচর্চার কথা বলতেন, শুধু বলতেনই না, এর জন্য কাজও করেছেন। সমিতিতে সঠিকভাবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার মন্ত্রের সঠিক উচ্চারণ শিখাতে গীতার ক্লাস করিয়েছেন; বেদ অনুশীলন করিয়েছেন। শুক্রবার সকাল ১১.০০টা থেকে বেলা ২.০০ পর্যন্ত উন্মুক্ত ধর্মীয় আলোচনা করেছেন। তাঁর অমূল্য আলোচনা শুনেছি, শুনেছেন অনেকে; যা আজো আমাদের প্রেরণা যোগায়। সে সময় সকলের সম্পৃক্ততার জন্য উপস্থিত সকলের প্রশ্নোত্তরে প্রাণবন্ত আলোচনার সুযোগ দেয়া হতো।
তাঁর সম্পাদিত মাসিক সমাজ দর্পণে লেখা পাঠালে তিনি অনেককে লেখার প্রেরণা দিতেন। সকলকে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে প্রেরণা যোগাতেন, যুবক ও মাতৃম-লীর ধর্মীয় সচেতনতা নিয়েও বক্তব্য রাখতেন। ধর্মীয় লেখায় অনেককে প্রেরণা দিতেন। সমাজ দর্পণের বহু লেখককে বই প্রকাশে উৎসাহ দিয়েছেন। যুবকদের প্রেরণা দেয়ার বিষয়ে তরুণ প্রভাষক শ্রী অরুণ কুমার বিশ্বাসের কথা মনে পড়ে। শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর নিকট থেকে ও মাসিক সমাজ দর্পণে প্রচারিত হওয়া কথা-‘বিবাহের নিমন্ত্রণপত্রে পতঙ্গ প্রজাপতি নয়, চতুর্মুখ প্রজাপতি ব্রহ্মার ছবি ব্যবহার করুন’ বিষয়ে শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাকে মুদ্রিত প্রচারপত্র তৈরি করে সারা দেশে প্রচার করেছেন। আরও যে বিষয় প্রচারে তৎপর ছিলেন- ১. বিবাহ সর্বদা অসবর্ণে হয়। ২. ব্রাহ্মণ কোনো বর্ণ নয়, গুণ অর্জনে ব্রাহ্মণ হয়। ৩.সর্ববর্ণে ১০দিন অশৌচ পালন শেষ ১১ দিনে শ্রাদ্ধ শাস্ত্রসম্মত। ৪. জাতক অশৌচ কোনো অশৌচ নয়, মা ও সন্তানের পৃথক ব্যবস্থা মাত্র। জাতক অশৌচ কোন মাঙ্গলিক কাজে বাধার সৃষ্টি করে না। ৫. দেবতা সকলের, পূজার অধিকারও সকলের। মন্ত্র ও ক্রিয়াদি জেনে দেব-দেবীর পূজা নিজে করুন ইত্যাদি।
পদবি প্রথার কু-ফলের কারণে আমরা আজ বহুভাবে বিভক্ত। আমাদের সকলের আদর্শ শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর প্রয়াণ দিবসে ‘পদবি’ প্রথার অবসান প্রত্যাশা করছি।
শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর সে জ্ঞানচর্চার ধারা তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমিতিতে এখনও অব্যাহত আছে, আছে প্রতি শুক্রবারে আগের সময়েই এখনো উন্মুক্ত আলোচনা হয়, হয় বিষয়ভিক্তিক সেমিনারও। শাস্ত্র নির্ভর আলোচনা ও চর্চায় সমিতি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের যে কোনো প্রান্তে ধর্মীয় ও শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তের জন্য যখন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সহায়তা চায়, শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর আদর্শ অনুসরণে সমিতির নেতৃবৃন্দ ছুঁটে চলেন সঠিক তত্ত্ব ও তথ্য তুলে ধরার জন্য।
সমাজে তাঁর অবদান অসীম, অপরিমেয়, কোনো মূল্যে তাঁর ঋণ শোধরাতে পারবো না। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আমরা গৌরবের সাথে শ্রদ্ধেয় শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী’র আদর্শ- শিক্ষা অনুসরণের কথা বলে স্মৃতিচারণ করি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।
সকল কামনা, বাসনা, ক্রোধ, ঈর্ষা ত্যাগ করে, অহঙ্কারশূন্য ও স্পৃহাহীনভাবে কথা-বার্তা, কাজে-কর্মে আমরাও শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীকে স্মরণ করে, মনে-প্রাণে ভালবেসে, তাঁর মতো কাজ করি। এগিয়ে নিয়ে যাই তাঁর কাজকে। তাতে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ নিহিত। শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী’র ভাবনায় ভাবিত হয়ে নিজেকে জ্ঞানচর্চায় সমৃদ্ধ হই, সকলের অপার্থিব শান্তি বয়ে আনুক।
[লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি]
গৌরমোহন দাস
বুধবার, ১১ মে ২০২২
আমরা শ্রদ্ধার সাথে তাঁদের স্মরণ করি, যাঁদের দ্বারা সমাজ, সংসার ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধিত হয়েছে, যাঁদের অপরিসীম অবদান রয়েছে। শঙ্করাচার্য, স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ধর্মীয় ক্ষেত্রে ও হিন্দু সমাজের কুসংস্কার দূরীকরণে অবদান অসীম, অপরিমেয় ও অপরিশোধ্য অবদান রেখেছেন। বর্তমান সময়ে ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সর্বজন প্রশংসনীয় কর্ম করে গেছেন-শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাসিক ‘সমাজ দর্পণ’ পত্রিকা ও ‘সুদর্শন’ পঞ্জিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, শাস্ত্রজ্ঞপণ্ডিত ও সমাজসংস্কারক শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী ২০০৮ সালের ১২ মে তিনি প্রয়াত হন। তাঁর ১৫তম প্রয়াণ দিবসে জানাই- শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ৪ আশ্বিন) মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি থানাধীন কাইচাইলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি একজন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত (ট্রিপল এম.এ.) অগাধ জ্ঞানের অধিকারী সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। যে কোনো সময়, যেকোনো মানুষ ফোনে কথা বলতে পারতেন, দেখা করতে পারতেন। তিনি দ্বেষহীন, বন্ধুভাবাপন্ন, দয়া ও ক্ষমাশীল এবং অহঙ্কারহীন একজন মানুষ ছিলেন। মোট কথা তাঁর চলন-বলন, আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও ব্যবহারে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার (১২/১৭) কথা খুব মনে পড়ে। ‘যো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাক্সক্ষতি।/ শুভাশুভপরিত্যাগী ভক্তিমান যঃ স মে প্রিয়ঃ ॥ অর্থাৎ যে সুখে হর্ষিত হয় না, দ্বেষ করে না, শোকাতুর হয় না, কোনো প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা করেন না, শুভ এবং অশুভ কর্মফলে যার সমভাব, এমন ভক্তিমান ব্যক্তিই আমার প্রিয়।’
শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী কোনো ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তাঁর কর্মকা- ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশব্যাপী। প্রাতিষ্ঠানিক কাজের মাঝে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সগৌরবে ‘এক ধর্ম এক বর্ণ এক সমাজ এক সংস্কার’ মূলমন্ত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামে-গঞ্জে, বাংলার আনাচে-কানাচে সবার মাঝে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ও সঠিক ধর্মতত্ত্ব প্রচারে ও সমস্যায় সমাধান দিয়ে তিনি সকলের অন্তরে শ্রদ্ধার আসন গড়েছেন। এরপর আজো তাঁর প্রতিষ্ঠিত শাখা সমিতিসমূহ ও মাসিক ‘সমাজ দর্পণ’ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।
প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করলেও জ্ঞান অšে¦ষণে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা এবং লেখালেখি করতেন। তিনি বলতেন- “বই পড়তে পড়তে কখন যে রাত দুইটা/তিনটা বেজে যায় খেয়াল থাকে না। প্রভাতে ঘুম থেকে ওঠে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে যখন হাঁটাহাঁটি করি তখনও ভাবি-হাঁটাহাঁটিতে বুঝি অযথা সময় চলে গেল। এ সময়টাতে যদি ... গ্রন্থ পড়তে পারতাম তা হলে ভালো হতো, কিংবা হাঁটায় সময় ব্যয় না করে যদি একটা প্রবন্ধ লেখায় সময় ব্যয় হতো, আরও ভালো হতো।” নিজে জ্ঞানচর্চা করে তিনি সকলকে জ্ঞানচর্চার কথা বলতেন, শুধু বলতেনই না, এর জন্য কাজও করেছেন। সমিতিতে সঠিকভাবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার মন্ত্রের সঠিক উচ্চারণ শিখাতে গীতার ক্লাস করিয়েছেন; বেদ অনুশীলন করিয়েছেন। শুক্রবার সকাল ১১.০০টা থেকে বেলা ২.০০ পর্যন্ত উন্মুক্ত ধর্মীয় আলোচনা করেছেন। তাঁর অমূল্য আলোচনা শুনেছি, শুনেছেন অনেকে; যা আজো আমাদের প্রেরণা যোগায়। সে সময় সকলের সম্পৃক্ততার জন্য উপস্থিত সকলের প্রশ্নোত্তরে প্রাণবন্ত আলোচনার সুযোগ দেয়া হতো।
তাঁর সম্পাদিত মাসিক সমাজ দর্পণে লেখা পাঠালে তিনি অনেককে লেখার প্রেরণা দিতেন। সকলকে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে প্রেরণা যোগাতেন, যুবক ও মাতৃম-লীর ধর্মীয় সচেতনতা নিয়েও বক্তব্য রাখতেন। ধর্মীয় লেখায় অনেককে প্রেরণা দিতেন। সমাজ দর্পণের বহু লেখককে বই প্রকাশে উৎসাহ দিয়েছেন। যুবকদের প্রেরণা দেয়ার বিষয়ে তরুণ প্রভাষক শ্রী অরুণ কুমার বিশ্বাসের কথা মনে পড়ে। শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর নিকট থেকে ও মাসিক সমাজ দর্পণে প্রচারিত হওয়া কথা-‘বিবাহের নিমন্ত্রণপত্রে পতঙ্গ প্রজাপতি নয়, চতুর্মুখ প্রজাপতি ব্রহ্মার ছবি ব্যবহার করুন’ বিষয়ে শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাকে মুদ্রিত প্রচারপত্র তৈরি করে সারা দেশে প্রচার করেছেন। আরও যে বিষয় প্রচারে তৎপর ছিলেন- ১. বিবাহ সর্বদা অসবর্ণে হয়। ২. ব্রাহ্মণ কোনো বর্ণ নয়, গুণ অর্জনে ব্রাহ্মণ হয়। ৩.সর্ববর্ণে ১০দিন অশৌচ পালন শেষ ১১ দিনে শ্রাদ্ধ শাস্ত্রসম্মত। ৪. জাতক অশৌচ কোনো অশৌচ নয়, মা ও সন্তানের পৃথক ব্যবস্থা মাত্র। জাতক অশৌচ কোন মাঙ্গলিক কাজে বাধার সৃষ্টি করে না। ৫. দেবতা সকলের, পূজার অধিকারও সকলের। মন্ত্র ও ক্রিয়াদি জেনে দেব-দেবীর পূজা নিজে করুন ইত্যাদি।
পদবি প্রথার কু-ফলের কারণে আমরা আজ বহুভাবে বিভক্ত। আমাদের সকলের আদর্শ শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর প্রয়াণ দিবসে ‘পদবি’ প্রথার অবসান প্রত্যাশা করছি।
শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর সে জ্ঞানচর্চার ধারা তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমিতিতে এখনও অব্যাহত আছে, আছে প্রতি শুক্রবারে আগের সময়েই এখনো উন্মুক্ত আলোচনা হয়, হয় বিষয়ভিক্তিক সেমিনারও। শাস্ত্র নির্ভর আলোচনা ও চর্চায় সমিতি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের যে কোনো প্রান্তে ধর্মীয় ও শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তের জন্য যখন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সহায়তা চায়, শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীর আদর্শ অনুসরণে সমিতির নেতৃবৃন্দ ছুঁটে চলেন সঠিক তত্ত্ব ও তথ্য তুলে ধরার জন্য।
সমাজে তাঁর অবদান অসীম, অপরিমেয়, কোনো মূল্যে তাঁর ঋণ শোধরাতে পারবো না। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আমরা গৌরবের সাথে শ্রদ্ধেয় শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী’র আদর্শ- শিক্ষা অনুসরণের কথা বলে স্মৃতিচারণ করি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।
সকল কামনা, বাসনা, ক্রোধ, ঈর্ষা ত্যাগ করে, অহঙ্কারশূন্য ও স্পৃহাহীনভাবে কথা-বার্তা, কাজে-কর্মে আমরাও শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তীকে স্মরণ করে, মনে-প্রাণে ভালবেসে, তাঁর মতো কাজ করি। এগিয়ে নিয়ে যাই তাঁর কাজকে। তাতে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ নিহিত। শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী’র ভাবনায় ভাবিত হয়ে নিজেকে জ্ঞানচর্চায় সমৃদ্ধ হই, সকলের অপার্থিব শান্তি বয়ে আনুক।
[লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি]