আসফাক বীন রহমান
ওমা এটা কি? জালশুকার প্রত্যেকটা ছেলের হাতে তীর -ধনুক । কয়েকজনতো পাটের আঁশ তার দিয়ে পেঁচিয়ে কোমড়ের পিছন থেকে উপরের দিকে বাঁকিয়ে দিয়েছে । অনেকটা লেজের মতো ।
আমিঃ কী ?
রুবেলঃ হনুমান ।
আমিঃ এটা তো জানি, এরা প্রায় সবাই এক একটা হনুমান । দাদার গাছ থেকে আম ,গাব,ডাব চুরি করে নিয়ে যায় ।
রুবেলঃ না, এটা মহাভারতের হনুমান ; তুমিও একটা লেজ লাগাও !
বাঁশের ফালি বাঁকিয়ে তুন হিসেবে দড়ি লাগিয়ে শোলার লম্বা সোজা অংশকে সবাই তীর হিসেবে ব্যবহার করছে । এটা নাকি হালের দূরদর্শনের টিভি সিরিয়াল’ মহাভারত’এর হনুমান বাহিনীর অস্ত্র । আগরতলার সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘরে ঘরে দূরদর্শন এর ‘মহাভারত’ ও ‘শক্তিমান’ সিরিজের অনেক অনুসারী । অ্যান্টেনা একটু উঁচু করে লাগালেই ঢাকার থেকে দূরদর্শন স্পষ্ট । অনেকে ‘যতো গুড় ততো মিষ্টি’- এই নীতিতে এরিয়েলের সাইড থেকে অ্যালুমিনিয়ামের সরা ঝুলিয়ে দেয় । এতে রং আরো সুন্দর হবে !
তীর -ধনুকের মাঝে ব্যতিক্রম বাবুল মামুর রকেট । লম্বা একটা শোলার পিছনের প্রায় দুই হাত অংশ ভেঙে সামনের চিকন অংশটা ব্লেড দিয়ে চোখা করে এই রকেট এর মূল অংশ তৈরি করা হয়েছে । পিছনের মোটা অংশ যোগ চিহ্নের মতো চিরে দুই টুকরো সিগারেটের প্যাকেটের কাগজ দিয়ে ব্যালেন্স এর কাজটি করা হয় । একটি পাটের চিকন দড়ি সামনের অংশে ফসকা গিড়ু দিয়ে আরেক মাথা শোলার মোটা অংশে ধরে জোড়ে ছুঁড়ে দিলেই সাঁই করে শোলার রকেট নিশানায় চলে যায় । বানুর মা বুবু বেশ কবার বাবুলকে সাবধান করে দিয়েছেন ,চোখে লাগবে ।
বাবুল মামু হালিমা বুবুর ছেলে । কালা মানিক । হাসিখুশি মানুষ , হাসলে মুক্তা নিমের দাঁতের মাজন এর মতো সুন্দর দাঁত দেখা যায় । জালশুকায় এলে একসঙ্গেই খেলি । গত পরশু আমাদের বাড়ির পিছন দিকের কড়ই গাছের বাবুই কলোনি থেকে একটি বাসা নিয়ে আসে । আমরা দূর থেকে দেখেছি , বইয়ে পড়েছি ; কিন্তু হাতের উপর চড়ুইয়ের থেকে একটু বড় বাবুইয়ের বাসা দেখে হতবাক হয়ে যাই। কি নিখুঁত শিল্পকর্ম । তাঁতীর মতো - আর্কিটেক্টের মতো খড় বুনে বুনে কিভাবে কলসির মতো এই বাসাটি বানিয়েছে ? নীচের দিকের ফোলা অংশে ফুটো থাকায় বৃষ্টি ঢোকার যো নেই । আমি তার রকেট মহাভারতের কোন চরিত্র ব্যবহার করে বললে , বলে - ‘আমি শক্তিমান’ । বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় ।
বিকেলে আমাদের জালশুকা গ্রামের নওজোয়ানেরা ব্যাপক উৎসাহ -উদ্দীপনার সাথে ঈদগাহ মাঠে ফুটবল প্র্যাক্টিসে নামে । চার পাঁচ দিন পর চর গোঁসাইপুর গ্রামের সাথে ফুটবল ম্যাচ । এজ লিমিটেশন নাই । বাচ্চা - বাচ্চার বাপ সবাই অ্যালাউড । প্লেয়ার বাছাই চলছে । আমি অল্প বিস্তর ফুটবল খেলতে পারায় প্রাথমিক সিলেকশনে আমাকেও রাখা হয়েছে পিঠে ‘ঢাকাইয়া প্লেয়ার’ তকমা দিয়ে । এটা নাকি অপজিট পার্টির উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে ; এটাই ফুটবলের ‘মেন্টাল গেম’ । আমাদের দলের প্লেয়ারদের বয়স মোটামুটি তারুণ্যনির্ভর । দল ভালোই , স্ট্রাইকার মালিবাগ অভিযাত্রিক স্পোর্টিং ক্লাবে খেলা বেলাল কাকা । খুব সুন্দর ড্রিবলিং ,বডিডজ দিতে পারেন , কিন্তু সমস্যা হলো বল ছাড়েন না । আড়ালে-আবডালে গ্রামবাসী ওনাকে ‘বেলাডোনা’ বলে ডাকে ।
খেলার দিন সকালে দাদি জানতে পেরে যান ‘আমিও জালশুকা দলের একজন প্লেয়া’ । “ভাই , ঐখানে ফুটবল খেলা হয় না; কাবাডি খেলা হয় । হাত- পা ভেঙ্গে দিবে, তোর কচি হাত- পা নিয়ে ঝুনা নারকেলের মত শক্ত হাত পায়ের বুড়াদের সাথে পারবি না ”। আম্মাকেও দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন । আম্মা খুব একটা চিন্তিত না । দাদা এক কাঠি উপরে ,“ গত কয়টা ম্যাচ আমাদের টিম হেরেছে ,এইবার আমার নাতি জিতে আসবে ”। দাদীর জোরাজুরিতে শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে পারমিশন পেলাম ।
নাইল্যা ক্ষেতের (পাট ক্ষেত) পাশ দিয়ে , মাঝে মাঝে মাটির সড়ক দিয়ে হাঁটতেই আছি হাঁটতেই আছি । রাস্তাতো শেষ হয়না । কোথায় ‘চর গোঁসাইপুর’? গোঁসাইপুর গ্রাম পার হয়ে চর গোঁসাইপুর, কৃষ্ণনগর গ্রামের আগে - যেখানে তিতাস নদী পাগলা নদীর সাথে মিশেছে । বিরাট মাঠের চারপাশে প্রচুর দর্শক- শ্রোতা । বাদাম খেতে খেতে দেখতে পেলাম নদী পার হয়ে ছোট ছোট নৌকায় অনেক দর্শক আসছেন ।ওইদিকে নাকি মনিপুর, রাজাপুর ,মেরাতলী গ্রাম ।
“গুছলেংটি মাইরা কে রে নামছে ?” - মাইকে ঘোষণা শুনে মাঠের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম রেফারী একজন লুঙ্গি কাছা মেরে মাঠে নামা প্লেয়ারকে হাত নেড়ে ইশারায় সাইডলাইন দেখাচ্ছেন । সাময়িক উত্তেজনা প্লেয়ারটি হাফ প্যান্ট পড়ে মাঠে নামতেই থেমে গেলো । দর্শক মহলে বিশাল আলোড়ন আর প্রবল হাততালির সাথে সাথে ওই টিমের ‘আব্দুর রহিম’ নামের একজন প্লেয়ার মাঠে নামলেন । উনি নাকি এই খেলার নিয়ামক। আমাদের টিমের প্লেয়ারদের গড় বয়স ১৯ থেকে ২০ হতে পারে , কিন্তু উনিতো আমাদের দলের দুজনের সমান বয়সী । অনেক মহড়া আর ওয়ার্ম -আপ করে দর্শকদের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে সেন্টারের দিকে এগোচ্ছেন । পরিশেষে আগের খেলাগুলোর রেজাল্ট এর পুনরাবৃত্তি । দাদীকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম এই রেসলিং ও কাবাডীর মিক্চার দেয়া ফুটবল খেলা থেকে আমাকে আটকানোর জন্য ।
মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে দুই গ্রুপের মারামারিতে কর্তৃপক্ষ হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন । ইদানিং বাইরে থেকে চোর এসে জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে । রুমে জিনিসপত্র রেখে যাওয়াটা রিস্কি । কি করবো ? হঠাৎ মুক্তা নিমের দাঁতের মাজনের ঝিলিকমারা হাসি দিয়ে বাবুলমামু রুমে ঢুকে পড়লেন , সাথে আরেকজন । অকল্পনীয় ব্যাপার ! কোথায় আগরতলা কোথায় চৌকির তলা ! হাসি, চেহারা একই আছে ! শুধু স্বাস্থ্যটা বেড়েছে । “ মামু আমি গতকালই আব্দুল মোমেন কন্সট্রাকশনের এই সাইটে ম্যানেজার হিসেবে এসেছি , ঐযে হাসপাতালের পাশে আমাদের অফিস ” ,বাবুল। আমাকে সকালে দেখতে পেয়েছে , আমার বিপদে চলে এসেছে । তোমার জিনিসপত্র আমার অফিসে নিয়ে যাই, হোস্টেল খুললে দিয়ে যাবো ।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পিয়ন বললেন,“ স্যার, আপনার এক ভাগিনা দেখা করতে এসেছে । আসতে বলবো?” দরজার ফাঁকে সেই বাবুল মামুকে দেখে আর মুক্তা নিমের মাজন এর বিজ্ঞাপন মনে হলো না । কাহিল দশা । নিয়মিত ডায়ালাইসিসে জর্জরিত ।“ শুধু বাচ্চা দুইটার দিকে তাকাইয়া আল্লাহর কাছে আর কয়টাদিন হায়াত চাই ,” মামু বেশ কষ্ট করে বললেন ।
ভোরবেলা বাবু ভাই ফোনে বললেন , “খবরটা শুনেছো ?” “ হ্যাঁ ,শক্তিমান আর নেই ” মনে মনে আমি বলি।
[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ]
আসফাক বীন রহমান
মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২
ওমা এটা কি? জালশুকার প্রত্যেকটা ছেলের হাতে তীর -ধনুক । কয়েকজনতো পাটের আঁশ তার দিয়ে পেঁচিয়ে কোমড়ের পিছন থেকে উপরের দিকে বাঁকিয়ে দিয়েছে । অনেকটা লেজের মতো ।
আমিঃ কী ?
রুবেলঃ হনুমান ।
আমিঃ এটা তো জানি, এরা প্রায় সবাই এক একটা হনুমান । দাদার গাছ থেকে আম ,গাব,ডাব চুরি করে নিয়ে যায় ।
রুবেলঃ না, এটা মহাভারতের হনুমান ; তুমিও একটা লেজ লাগাও !
বাঁশের ফালি বাঁকিয়ে তুন হিসেবে দড়ি লাগিয়ে শোলার লম্বা সোজা অংশকে সবাই তীর হিসেবে ব্যবহার করছে । এটা নাকি হালের দূরদর্শনের টিভি সিরিয়াল’ মহাভারত’এর হনুমান বাহিনীর অস্ত্র । আগরতলার সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘরে ঘরে দূরদর্শন এর ‘মহাভারত’ ও ‘শক্তিমান’ সিরিজের অনেক অনুসারী । অ্যান্টেনা একটু উঁচু করে লাগালেই ঢাকার থেকে দূরদর্শন স্পষ্ট । অনেকে ‘যতো গুড় ততো মিষ্টি’- এই নীতিতে এরিয়েলের সাইড থেকে অ্যালুমিনিয়ামের সরা ঝুলিয়ে দেয় । এতে রং আরো সুন্দর হবে !
তীর -ধনুকের মাঝে ব্যতিক্রম বাবুল মামুর রকেট । লম্বা একটা শোলার পিছনের প্রায় দুই হাত অংশ ভেঙে সামনের চিকন অংশটা ব্লেড দিয়ে চোখা করে এই রকেট এর মূল অংশ তৈরি করা হয়েছে । পিছনের মোটা অংশ যোগ চিহ্নের মতো চিরে দুই টুকরো সিগারেটের প্যাকেটের কাগজ দিয়ে ব্যালেন্স এর কাজটি করা হয় । একটি পাটের চিকন দড়ি সামনের অংশে ফসকা গিড়ু দিয়ে আরেক মাথা শোলার মোটা অংশে ধরে জোড়ে ছুঁড়ে দিলেই সাঁই করে শোলার রকেট নিশানায় চলে যায় । বানুর মা বুবু বেশ কবার বাবুলকে সাবধান করে দিয়েছেন ,চোখে লাগবে ।
বাবুল মামু হালিমা বুবুর ছেলে । কালা মানিক । হাসিখুশি মানুষ , হাসলে মুক্তা নিমের দাঁতের মাজন এর মতো সুন্দর দাঁত দেখা যায় । জালশুকায় এলে একসঙ্গেই খেলি । গত পরশু আমাদের বাড়ির পিছন দিকের কড়ই গাছের বাবুই কলোনি থেকে একটি বাসা নিয়ে আসে । আমরা দূর থেকে দেখেছি , বইয়ে পড়েছি ; কিন্তু হাতের উপর চড়ুইয়ের থেকে একটু বড় বাবুইয়ের বাসা দেখে হতবাক হয়ে যাই। কি নিখুঁত শিল্পকর্ম । তাঁতীর মতো - আর্কিটেক্টের মতো খড় বুনে বুনে কিভাবে কলসির মতো এই বাসাটি বানিয়েছে ? নীচের দিকের ফোলা অংশে ফুটো থাকায় বৃষ্টি ঢোকার যো নেই । আমি তার রকেট মহাভারতের কোন চরিত্র ব্যবহার করে বললে , বলে - ‘আমি শক্তিমান’ । বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় ।
বিকেলে আমাদের জালশুকা গ্রামের নওজোয়ানেরা ব্যাপক উৎসাহ -উদ্দীপনার সাথে ঈদগাহ মাঠে ফুটবল প্র্যাক্টিসে নামে । চার পাঁচ দিন পর চর গোঁসাইপুর গ্রামের সাথে ফুটবল ম্যাচ । এজ লিমিটেশন নাই । বাচ্চা - বাচ্চার বাপ সবাই অ্যালাউড । প্লেয়ার বাছাই চলছে । আমি অল্প বিস্তর ফুটবল খেলতে পারায় প্রাথমিক সিলেকশনে আমাকেও রাখা হয়েছে পিঠে ‘ঢাকাইয়া প্লেয়ার’ তকমা দিয়ে । এটা নাকি অপজিট পার্টির উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে ; এটাই ফুটবলের ‘মেন্টাল গেম’ । আমাদের দলের প্লেয়ারদের বয়স মোটামুটি তারুণ্যনির্ভর । দল ভালোই , স্ট্রাইকার মালিবাগ অভিযাত্রিক স্পোর্টিং ক্লাবে খেলা বেলাল কাকা । খুব সুন্দর ড্রিবলিং ,বডিডজ দিতে পারেন , কিন্তু সমস্যা হলো বল ছাড়েন না । আড়ালে-আবডালে গ্রামবাসী ওনাকে ‘বেলাডোনা’ বলে ডাকে ।
খেলার দিন সকালে দাদি জানতে পেরে যান ‘আমিও জালশুকা দলের একজন প্লেয়া’ । “ভাই , ঐখানে ফুটবল খেলা হয় না; কাবাডি খেলা হয় । হাত- পা ভেঙ্গে দিবে, তোর কচি হাত- পা নিয়ে ঝুনা নারকেলের মত শক্ত হাত পায়ের বুড়াদের সাথে পারবি না ”। আম্মাকেও দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন । আম্মা খুব একটা চিন্তিত না । দাদা এক কাঠি উপরে ,“ গত কয়টা ম্যাচ আমাদের টিম হেরেছে ,এইবার আমার নাতি জিতে আসবে ”। দাদীর জোরাজুরিতে শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে পারমিশন পেলাম ।
নাইল্যা ক্ষেতের (পাট ক্ষেত) পাশ দিয়ে , মাঝে মাঝে মাটির সড়ক দিয়ে হাঁটতেই আছি হাঁটতেই আছি । রাস্তাতো শেষ হয়না । কোথায় ‘চর গোঁসাইপুর’? গোঁসাইপুর গ্রাম পার হয়ে চর গোঁসাইপুর, কৃষ্ণনগর গ্রামের আগে - যেখানে তিতাস নদী পাগলা নদীর সাথে মিশেছে । বিরাট মাঠের চারপাশে প্রচুর দর্শক- শ্রোতা । বাদাম খেতে খেতে দেখতে পেলাম নদী পার হয়ে ছোট ছোট নৌকায় অনেক দর্শক আসছেন ।ওইদিকে নাকি মনিপুর, রাজাপুর ,মেরাতলী গ্রাম ।
“গুছলেংটি মাইরা কে রে নামছে ?” - মাইকে ঘোষণা শুনে মাঠের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম রেফারী একজন লুঙ্গি কাছা মেরে মাঠে নামা প্লেয়ারকে হাত নেড়ে ইশারায় সাইডলাইন দেখাচ্ছেন । সাময়িক উত্তেজনা প্লেয়ারটি হাফ প্যান্ট পড়ে মাঠে নামতেই থেমে গেলো । দর্শক মহলে বিশাল আলোড়ন আর প্রবল হাততালির সাথে সাথে ওই টিমের ‘আব্দুর রহিম’ নামের একজন প্লেয়ার মাঠে নামলেন । উনি নাকি এই খেলার নিয়ামক। আমাদের টিমের প্লেয়ারদের গড় বয়স ১৯ থেকে ২০ হতে পারে , কিন্তু উনিতো আমাদের দলের দুজনের সমান বয়সী । অনেক মহড়া আর ওয়ার্ম -আপ করে দর্শকদের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে সেন্টারের দিকে এগোচ্ছেন । পরিশেষে আগের খেলাগুলোর রেজাল্ট এর পুনরাবৃত্তি । দাদীকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম এই রেসলিং ও কাবাডীর মিক্চার দেয়া ফুটবল খেলা থেকে আমাকে আটকানোর জন্য ।
মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে দুই গ্রুপের মারামারিতে কর্তৃপক্ষ হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন । ইদানিং বাইরে থেকে চোর এসে জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে । রুমে জিনিসপত্র রেখে যাওয়াটা রিস্কি । কি করবো ? হঠাৎ মুক্তা নিমের দাঁতের মাজনের ঝিলিকমারা হাসি দিয়ে বাবুলমামু রুমে ঢুকে পড়লেন , সাথে আরেকজন । অকল্পনীয় ব্যাপার ! কোথায় আগরতলা কোথায় চৌকির তলা ! হাসি, চেহারা একই আছে ! শুধু স্বাস্থ্যটা বেড়েছে । “ মামু আমি গতকালই আব্দুল মোমেন কন্সট্রাকশনের এই সাইটে ম্যানেজার হিসেবে এসেছি , ঐযে হাসপাতালের পাশে আমাদের অফিস ” ,বাবুল। আমাকে সকালে দেখতে পেয়েছে , আমার বিপদে চলে এসেছে । তোমার জিনিসপত্র আমার অফিসে নিয়ে যাই, হোস্টেল খুললে দিয়ে যাবো ।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পিয়ন বললেন,“ স্যার, আপনার এক ভাগিনা দেখা করতে এসেছে । আসতে বলবো?” দরজার ফাঁকে সেই বাবুল মামুকে দেখে আর মুক্তা নিমের মাজন এর বিজ্ঞাপন মনে হলো না । কাহিল দশা । নিয়মিত ডায়ালাইসিসে জর্জরিত ।“ শুধু বাচ্চা দুইটার দিকে তাকাইয়া আল্লাহর কাছে আর কয়টাদিন হায়াত চাই ,” মামু বেশ কষ্ট করে বললেন ।
ভোরবেলা বাবু ভাই ফোনে বললেন , “খবরটা শুনেছো ?” “ হ্যাঁ ,শক্তিমান আর নেই ” মনে মনে আমি বলি।
[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ]