কাজী আল নোমান
আজ ১ জুন, বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের মতো যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০০১ সাল থেকে এ দিনটিকে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১১৯.৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০১১-১২ অর্থবছরে উৎপাদিত ৩৪.৬ লক্ষ মেট্রিক টনের চারগুণের অধিক। বর্তমানে জনপ্রতি ২৫০ মিলি দুধ গ্রহণের যে লক্ষ্যমাত্রা, তন্মধ্যে ১৯৩.৩৮ মিলি অর্জিত হয়েছে। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, এর সাথে জড়িত রয়েছে মানুষের অর্থনৈতিক, পুষ্টি ও সামাজিক সুবিধা। দুধ শুধু শিশুখাদ্য নয়, সকল বয়সের মানুষের খাবার। রান্নাতে বিভিন্নভাবে এর ব্যবহার রয়েছে।
দুধের গড় উপাদানে আছে ৮৭.৬% পানি, ৩.৭% চর্বি, ৩.২% প্রোটিন, ৪.২% ল্যাকটোজ, ০.৭২% খনিজ এবং সামান্য কিছু ভিটামিন। ১০০ মিলি দুধ থেকে ৬৫.৩ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। দুধকে বলা হয় সুপারফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি১২ ও নিয়াসিন।
দুধের নানা পুষ্টিগুণ একজন মানুষকে সুস্থ সবল ও নিরোগ রাখতে পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যা, পিরিয়ডের সময় তীব্র যন্ত্রণা, কাজের সময় অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা- এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এক গ্লাস দুধ। দুধ থেকে ছানা, পনির, দই, ঘি, আইসক্রিম প্রভৃতি নানা খাদ্যদ্রব্য তৈরী করা হয়। ছানা থেকে তৈরী করা হয় বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়।
বর্তমানে জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ এবং ৫০ শতাংশ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদের উপর নির্ভরশীল। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন দুধের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতের আমূল পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম- ফেজ টু প্রকল্প, মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার, বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরী সাইন্স বিভাগ, একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল প্রোডাকশন বিভাগ সহ বিভিন্ন গবেষণায় সংস্থা তাদের গবেষণার মাধ্যমে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে দেশে দুধ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে জাতীয় দুগ্ধনীতি বাস্তবায়ন এবং জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
[লেখক: প্রভাষক (ডেইরী সায়েন্স), ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়]
কাজী আল নোমান
বুধবার, ০১ জুন ২০২২
আজ ১ জুন, বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের মতো যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০০১ সাল থেকে এ দিনটিকে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১১৯.৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০১১-১২ অর্থবছরে উৎপাদিত ৩৪.৬ লক্ষ মেট্রিক টনের চারগুণের অধিক। বর্তমানে জনপ্রতি ২৫০ মিলি দুধ গ্রহণের যে লক্ষ্যমাত্রা, তন্মধ্যে ১৯৩.৩৮ মিলি অর্জিত হয়েছে। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, এর সাথে জড়িত রয়েছে মানুষের অর্থনৈতিক, পুষ্টি ও সামাজিক সুবিধা। দুধ শুধু শিশুখাদ্য নয়, সকল বয়সের মানুষের খাবার। রান্নাতে বিভিন্নভাবে এর ব্যবহার রয়েছে।
দুধের গড় উপাদানে আছে ৮৭.৬% পানি, ৩.৭% চর্বি, ৩.২% প্রোটিন, ৪.২% ল্যাকটোজ, ০.৭২% খনিজ এবং সামান্য কিছু ভিটামিন। ১০০ মিলি দুধ থেকে ৬৫.৩ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। দুধকে বলা হয় সুপারফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি১২ ও নিয়াসিন।
দুধের নানা পুষ্টিগুণ একজন মানুষকে সুস্থ সবল ও নিরোগ রাখতে পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যা, পিরিয়ডের সময় তীব্র যন্ত্রণা, কাজের সময় অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা- এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এক গ্লাস দুধ। দুধ থেকে ছানা, পনির, দই, ঘি, আইসক্রিম প্রভৃতি নানা খাদ্যদ্রব্য তৈরী করা হয়। ছানা থেকে তৈরী করা হয় বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়।
বর্তমানে জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ এবং ৫০ শতাংশ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদের উপর নির্ভরশীল। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন দুধের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতের আমূল পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম- ফেজ টু প্রকল্প, মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার, বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরী সাইন্স বিভাগ, একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল প্রোডাকশন বিভাগ সহ বিভিন্ন গবেষণায় সংস্থা তাদের গবেষণার মাধ্যমে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে দেশে দুধ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে জাতীয় দুগ্ধনীতি বাস্তবায়ন এবং জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
[লেখক: প্রভাষক (ডেইরী সায়েন্স), ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়]