alt

মুক্ত আলোচনা

পদ্মা সেতু বাঙালির সক্ষমতার প্রতীক

লুৎফুল হাসান

: শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২

দেশের মধ্যভাগ ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে বড় বাধা ছিল পদ্মা পারাপার। যানবাহন পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল ফেরি। মানুষ পারাপারের মাধ্যম লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট অথবা নৌকা। বর্ষায় পদ্মা যখন ভয়ংকর রূপ নেয়, তখন ছোট নৌযানে নদীটি পাড়ি দেওয়া অনেকটা প্রাণ হাতে নেওয়ার মতো। তাইত আবদুল লতিফের লেখা ও সুর করা এবং আবদুল আলীম এর গাওয়া ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই –– কূল কিনারা নাই...’ পল্লীগীতীতে ফুটে উঠেছে প্রমত্ত পদ্মা নদীর বিশালত্ব ও ভয়ংকর রূপ।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ‘স্বাধীনতা অর্থহীন যদি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব না হয়। অল্প সময়েই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে, সদ্য স্বাধীন দেশে যুদ্ধ ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন উন্নয়নের যাত্রা। স্বল্প সময়েই তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ অনেক স্থাপনা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করা।

মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। ’৭৫-এর পরে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলতে থাকে, সেই সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধেরপক্ষের সকল শক্তিকে সংগঠিত করে আবার মুক্তিযুদ্ধের ধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাবার জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন ।

২৫ জুন ২০২২, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন। এটি পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা মুক্ত হয়। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রান্সের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার যা বিশ্বের অন্যতম একটি সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যএ সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

এ সেতুর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষের সাথে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। কোটি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হবে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করবে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারের সঙ্গে এ দেশের সড়ক ও রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত আর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকারের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। প্রকৌশলগত এক বিস্ময়ের প্রতীক। পদ্মা সেতুর ফলে জাতির আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়েছে।

পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের অনন্য গৌরব, মর্যাদা আর অহংকারের প্রতীক। দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের অনবদ্য উপাখ্যান।

[লেখক: ভাইস চ্যান্সেলর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

পদ্মা সেতু বাঙালির সক্ষমতার প্রতীক

লুৎফুল হাসান

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২

দেশের মধ্যভাগ ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে বড় বাধা ছিল পদ্মা পারাপার। যানবাহন পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল ফেরি। মানুষ পারাপারের মাধ্যম লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট অথবা নৌকা। বর্ষায় পদ্মা যখন ভয়ংকর রূপ নেয়, তখন ছোট নৌযানে নদীটি পাড়ি দেওয়া অনেকটা প্রাণ হাতে নেওয়ার মতো। তাইত আবদুল লতিফের লেখা ও সুর করা এবং আবদুল আলীম এর গাওয়া ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই –– কূল কিনারা নাই...’ পল্লীগীতীতে ফুটে উঠেছে প্রমত্ত পদ্মা নদীর বিশালত্ব ও ভয়ংকর রূপ।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ‘স্বাধীনতা অর্থহীন যদি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব না হয়। অল্প সময়েই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে, সদ্য স্বাধীন দেশে যুদ্ধ ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন উন্নয়নের যাত্রা। স্বল্প সময়েই তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ অনেক স্থাপনা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করা।

মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। ’৭৫-এর পরে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলতে থাকে, সেই সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধেরপক্ষের সকল শক্তিকে সংগঠিত করে আবার মুক্তিযুদ্ধের ধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাবার জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন ।

২৫ জুন ২০২২, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন। এটি পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা মুক্ত হয়। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রান্সের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার যা বিশ্বের অন্যতম একটি সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যএ সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

এ সেতুর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষের সাথে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। কোটি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হবে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করবে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারের সঙ্গে এ দেশের সড়ক ও রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত আর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকারের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। প্রকৌশলগত এক বিস্ময়ের প্রতীক। পদ্মা সেতুর ফলে জাতির আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়েছে।

পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের অনন্য গৌরব, মর্যাদা আর অহংকারের প্রতীক। দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের অনবদ্য উপাখ্যান।

[লেখক: ভাইস চ্যান্সেলর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ]

back to top