ডোরিন চৌধুরী
জলবায়ু পরিবর্তনে জীবাশ্ম জ্বালানীর বিরুপ প্রভাব এবং এর সীমিত ভান্ডারের কারণে গত একদশক যাবত গোটা বিশ্বেই বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার। নবায়নযোগ্য উৎসের মধ্যে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলশক্তি এবং বায়োমাস বা জীবের মল-মূত্র ও বৃক্ষের দেহাবশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও জিওথার্মাল এনার্জি বা পৃথিবীর ভূগর্ভে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া তাপ শক্তিও নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ, তবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবে এর ব্যবহার এখনো বেশ সীমিত। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার অংশ হিসেবে বাংলাদেশও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে মনোযোগী হয়েছে। আগামীতে দেশের এনার্জি মিক্স বা শক্তি-উৎসে নবায়নযোগ্য শক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর সুফল নিয়ে সকলেই অবগত, তাই নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই। তবে স্বল্পমেয়াদে বিশেষ করে বহুমুখী বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে নবায়নযোগ্য শক্তি বাড়তি সুবিধা প্রদানের সক্ষমতা রাখে, বিশেষ করে হাউজহোল্ড বা পরিবারপর্যায়ে। ব্যক্তিপর্যায়ে সবচেয়ে সহজলভ্য নবায়নযোগ্য শক্তি- সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার জ্বালানী সংকট ও বিদ্যুত সংকট মোকাবেলায় গৃহস্থালীকে বাড়তি সুবিধা প্রদান করতে পারে।
বহুমুখী বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপট
বিশ্বব্যপী করোনা মহামারীর ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মত যুক্ত হলো ইউক্রেন সংকট। ফলে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত হয় লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, কমোডিটি শক, জ্বালানী সংকট এবং ডলার সংকট। ফলে, দেশে দেশে সরকার মিতব্যয়ীতার নীতি গ্রহণে বাধ্য হয়। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে। জ্বালানীসংকটের প্রেক্ষিতে শতভাগ বিদ্যুৎ সক্ষমতা থাকার পরেও উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে সরকার। ফলে প্রতিনিয়ত রুটিনমাফিক এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে যার সাথে জনগণ ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও, বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের উচ্চমূল্যের ফলে সরকার একপ্রকার নিরুপায় হয়ে মূল্য সমন্বয় করে দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। উপরন্তু, যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক ডলার সংকট।
মহামারী, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতি এবং যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি সংকটের দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়েছে। ডলার, জ্বালানী বা মূল্যস্ফীতি বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় আলাদাভাবে ফুটে উঠলেও সবগুলি সংকট মূলত পরস্পর সংযুক্ত এবং সবগুলো মিলেই একটি দুষ্টচক্র। এই দুষ্টচক্র থেকে সহসা উত্তোলন যদি সম্ভবও হয়, সংকট এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের আরো কয়েকবছর সময় লাগবেই। সর্বশেষ সংকট- ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের প্রাথমিক প্রভাব কাটাতেই পশ্চিমা বিশ্বের ৩-৪ বছর লেগে গিয়েছিল। তাই, হাউজহোল্ড বা পরিবারকে অর্থনীতির একটি একক বিবেচনায় বাড়তি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত যা তাদের সংকট মোকাবেলায় ও পরবর্তীতে প্রভাব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। এক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার একটি ভালো কৌশল হতে পারে, বিশেষ করে লোডশেডিং এর ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর চিত্র
নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বাংলাদেশে সৌরশক্তি এবং জলশক্তির ব্যবহার রয়েছে। খরচের বিবেচনায় বায়োমাস এবং জিওথার্মাল এনার্জির ব্যবহার নেই। অন্যদিকে, বায়ুশক্তির ব্যবহার এতদিন অবহেলিত থাকলেও প্রায় ৭০০ কিলোমিটার বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকায় এখন উইন্ডমিল তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সৌরশক্তি সহজলভ্য এবং সহজে আহরণ করার সুবিধা থাকায় জাতীয় পর্যায়ের বাহিরেও ব্যক্তিপর্যায়ে এর বেশ ব্যবহার রয়েছে; বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেরিতে হয়েছে সেখানে বেশ অনেকদিন ধরেই মানুষ সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে অনগ্রিডে প্রায় ৪২৭ মেগাওয়াট এবং অফগ্রিডে প্রায় ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় যার সিংহভাগ আসে সৌরশক্তি হতে। এছাড়া, ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের পরিকল্পনা আছে যার উল্লেখযোগ্য অংশ আসবে সৌরবিদ্যুত থেকে। ২০৪১ সাল নাগাদ, জাতীয় সৌরবিদ্যুত পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি দ্বারা উৎপাদন করা। এরমধ্যে ১২ গিগাওয়াট,যা৪০%আসবে বাড়ির ছাদ বা চালে বসানো সোলার প্যানেল থেকে।
জাতীয় পরিকল্পনার বাহিরেও সোলার প্যানেল বসানো ব্যক্তিপর্যায়ে খুবি সহজলভ্যও বটে। এমনকি কৃষিকাজে জ্বালানী খরচ কমানোর অংশ হিসেবেও সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সৌরবিদ্যুত দ্বারা সেচব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংকট মোকাবেলায় সৌরবিদ্যুতের ভূমিকা
ব্যক্তিপর্যায়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার অনেকাংশেই দৈনন্দিন বিদ্যুতের খরচে সাশ্রয়ী হতে সাহায্য করবে। এছাড়া, এর ব্যবহার বিদ্যুতের জাতীয় চাহিদার উপর চাপ প্রশমন করতেও বেশ সহায়ক হবে। লোডশেডিং এর সময় বসতবাড়িতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতেও এটি বেশ কার্যকর হবে। এছাড়াও, শহরাঞ্চলে বাসার সিড়ি কিংবা আঙ্গিনা আলোকিত করতে গ্রিডের বিদ্যুতের পরিবর্তে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বিনামূল্যে করা যেতেই পারে। উল্লেখ্য যে, লোডশেডিং এর সময় বসতবাড়িতে আইপিএস বা জেনারেটরের ব্যবহার সর্বসাকুল্যে আসলে তেমন কোন ফারাক বয়ে আনে না যেহেতু জ্বালানী খরচ হয় এবং ব্যাটারির চার্জ জাতীয় গ্রিডের থেকেই আগে সংরক্ষণ করতে হয়। তাই সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার এক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিডকে যেমন চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে তেমনি সংকটের সময় জ্বালানীর ব্যবহার কমাতে এবং হাউজহোল্ড বা গৃহস্থালীকে খরচ সাশ্রয়ে সহায়তা করতে পারে।
রাজধানী ঢাকায় গৃহনির্মাণ ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার একটি পূর্বশর্ত হিসেবে বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসাতে হয়। নিয়মটি বেশ কয়েকবছর ধরেই চলছে কিন্তু সচেতনতা এবং ব্যবহারের সঠিক জ্ঞান না থাকায় এগুলো একপ্রকার আনুষ্ঠানিক ‘শর্ত মানা’ পর্যায়েই পড়ে আছে। নিম্নমানের প্যানেল বসানোর ফলে অল্পদিনেই সেগুলো অকেজো ও পরবর্তীতে সার্ভিসিং এর অভাবে বাতিলের খাতায় চলে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
সংকট মোকাবেলায় তাই এসব প্যানেলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং খরচ সাশ্রয়ে এর অবদান সম্পর্কে জনপরিসরে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে তা রাষ্ট্র ও গৃহস্থালী উভয়কেই বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুত সেক্টর এখনো বেশ পিছিয়ে রয়েছে। মূলত বিনিয়োগের অভাব এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এটি এখনো জনপ্রিয় বিকল্প হতে পারেনি। সংকটকালে, তাই এক্ষেত্রেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি সংকট মোকাবেলার একটি কৌশল হতেই পারে। বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুতের যথাযথ ব্যবহারের অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায়ও সাহায্য করবে। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকেরা কিন্তু ভাবতেই পারেন!
[লেখক: নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডক্টোরাল গবেষক]
ডোরিন চৌধুরী
রোববার, ২১ আগস্ট ২০২২
জলবায়ু পরিবর্তনে জীবাশ্ম জ্বালানীর বিরুপ প্রভাব এবং এর সীমিত ভান্ডারের কারণে গত একদশক যাবত গোটা বিশ্বেই বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার। নবায়নযোগ্য উৎসের মধ্যে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলশক্তি এবং বায়োমাস বা জীবের মল-মূত্র ও বৃক্ষের দেহাবশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও জিওথার্মাল এনার্জি বা পৃথিবীর ভূগর্ভে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া তাপ শক্তিও নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ, তবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবে এর ব্যবহার এখনো বেশ সীমিত। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার অংশ হিসেবে বাংলাদেশও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে মনোযোগী হয়েছে। আগামীতে দেশের এনার্জি মিক্স বা শক্তি-উৎসে নবায়নযোগ্য শক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর সুফল নিয়ে সকলেই অবগত, তাই নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই। তবে স্বল্পমেয়াদে বিশেষ করে বহুমুখী বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে নবায়নযোগ্য শক্তি বাড়তি সুবিধা প্রদানের সক্ষমতা রাখে, বিশেষ করে হাউজহোল্ড বা পরিবারপর্যায়ে। ব্যক্তিপর্যায়ে সবচেয়ে সহজলভ্য নবায়নযোগ্য শক্তি- সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার জ্বালানী সংকট ও বিদ্যুত সংকট মোকাবেলায় গৃহস্থালীকে বাড়তি সুবিধা প্রদান করতে পারে।
বহুমুখী বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপট
বিশ্বব্যপী করোনা মহামারীর ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মত যুক্ত হলো ইউক্রেন সংকট। ফলে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত হয় লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, কমোডিটি শক, জ্বালানী সংকট এবং ডলার সংকট। ফলে, দেশে দেশে সরকার মিতব্যয়ীতার নীতি গ্রহণে বাধ্য হয়। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে। জ্বালানীসংকটের প্রেক্ষিতে শতভাগ বিদ্যুৎ সক্ষমতা থাকার পরেও উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে সরকার। ফলে প্রতিনিয়ত রুটিনমাফিক এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে যার সাথে জনগণ ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও, বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের উচ্চমূল্যের ফলে সরকার একপ্রকার নিরুপায় হয়ে মূল্য সমন্বয় করে দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। উপরন্তু, যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক ডলার সংকট।
মহামারী, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতি এবং যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি সংকটের দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়েছে। ডলার, জ্বালানী বা মূল্যস্ফীতি বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় আলাদাভাবে ফুটে উঠলেও সবগুলি সংকট মূলত পরস্পর সংযুক্ত এবং সবগুলো মিলেই একটি দুষ্টচক্র। এই দুষ্টচক্র থেকে সহসা উত্তোলন যদি সম্ভবও হয়, সংকট এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের আরো কয়েকবছর সময় লাগবেই। সর্বশেষ সংকট- ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের প্রাথমিক প্রভাব কাটাতেই পশ্চিমা বিশ্বের ৩-৪ বছর লেগে গিয়েছিল। তাই, হাউজহোল্ড বা পরিবারকে অর্থনীতির একটি একক বিবেচনায় বাড়তি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত যা তাদের সংকট মোকাবেলায় ও পরবর্তীতে প্রভাব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। এক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার একটি ভালো কৌশল হতে পারে, বিশেষ করে লোডশেডিং এর ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর চিত্র
নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বাংলাদেশে সৌরশক্তি এবং জলশক্তির ব্যবহার রয়েছে। খরচের বিবেচনায় বায়োমাস এবং জিওথার্মাল এনার্জির ব্যবহার নেই। অন্যদিকে, বায়ুশক্তির ব্যবহার এতদিন অবহেলিত থাকলেও প্রায় ৭০০ কিলোমিটার বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকায় এখন উইন্ডমিল তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সৌরশক্তি সহজলভ্য এবং সহজে আহরণ করার সুবিধা থাকায় জাতীয় পর্যায়ের বাহিরেও ব্যক্তিপর্যায়ে এর বেশ ব্যবহার রয়েছে; বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেরিতে হয়েছে সেখানে বেশ অনেকদিন ধরেই মানুষ সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে অনগ্রিডে প্রায় ৪২৭ মেগাওয়াট এবং অফগ্রিডে প্রায় ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় যার সিংহভাগ আসে সৌরশক্তি হতে। এছাড়া, ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের পরিকল্পনা আছে যার উল্লেখযোগ্য অংশ আসবে সৌরবিদ্যুত থেকে। ২০৪১ সাল নাগাদ, জাতীয় সৌরবিদ্যুত পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি দ্বারা উৎপাদন করা। এরমধ্যে ১২ গিগাওয়াট,যা৪০%আসবে বাড়ির ছাদ বা চালে বসানো সোলার প্যানেল থেকে।
জাতীয় পরিকল্পনার বাহিরেও সোলার প্যানেল বসানো ব্যক্তিপর্যায়ে খুবি সহজলভ্যও বটে। এমনকি কৃষিকাজে জ্বালানী খরচ কমানোর অংশ হিসেবেও সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সৌরবিদ্যুত দ্বারা সেচব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংকট মোকাবেলায় সৌরবিদ্যুতের ভূমিকা
ব্যক্তিপর্যায়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার অনেকাংশেই দৈনন্দিন বিদ্যুতের খরচে সাশ্রয়ী হতে সাহায্য করবে। এছাড়া, এর ব্যবহার বিদ্যুতের জাতীয় চাহিদার উপর চাপ প্রশমন করতেও বেশ সহায়ক হবে। লোডশেডিং এর সময় বসতবাড়িতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতেও এটি বেশ কার্যকর হবে। এছাড়াও, শহরাঞ্চলে বাসার সিড়ি কিংবা আঙ্গিনা আলোকিত করতে গ্রিডের বিদ্যুতের পরিবর্তে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বিনামূল্যে করা যেতেই পারে। উল্লেখ্য যে, লোডশেডিং এর সময় বসতবাড়িতে আইপিএস বা জেনারেটরের ব্যবহার সর্বসাকুল্যে আসলে তেমন কোন ফারাক বয়ে আনে না যেহেতু জ্বালানী খরচ হয় এবং ব্যাটারির চার্জ জাতীয় গ্রিডের থেকেই আগে সংরক্ষণ করতে হয়। তাই সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার এক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিডকে যেমন চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে তেমনি সংকটের সময় জ্বালানীর ব্যবহার কমাতে এবং হাউজহোল্ড বা গৃহস্থালীকে খরচ সাশ্রয়ে সহায়তা করতে পারে।
রাজধানী ঢাকায় গৃহনির্মাণ ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার একটি পূর্বশর্ত হিসেবে বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসাতে হয়। নিয়মটি বেশ কয়েকবছর ধরেই চলছে কিন্তু সচেতনতা এবং ব্যবহারের সঠিক জ্ঞান না থাকায় এগুলো একপ্রকার আনুষ্ঠানিক ‘শর্ত মানা’ পর্যায়েই পড়ে আছে। নিম্নমানের প্যানেল বসানোর ফলে অল্পদিনেই সেগুলো অকেজো ও পরবর্তীতে সার্ভিসিং এর অভাবে বাতিলের খাতায় চলে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
সংকট মোকাবেলায় তাই এসব প্যানেলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং খরচ সাশ্রয়ে এর অবদান সম্পর্কে জনপরিসরে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে তা রাষ্ট্র ও গৃহস্থালী উভয়কেই বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুত সেক্টর এখনো বেশ পিছিয়ে রয়েছে। মূলত বিনিয়োগের অভাব এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এটি এখনো জনপ্রিয় বিকল্প হতে পারেনি। সংকটকালে, তাই এক্ষেত্রেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি সংকট মোকাবেলার একটি কৌশল হতেই পারে। বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুতের যথাযথ ব্যবহারের অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায়ও সাহায্য করবে। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকেরা কিন্তু ভাবতেই পারেন!
[লেখক: নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডক্টোরাল গবেষক]