alt

মুক্ত আলোচনা

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতে উচ্চশিক্ষা: সুযোগ এবং বাস্তবতা

ফরিদ হোসেন

: মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট ২০২২

সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রী প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবরেটরীতে পাঠদানের মাধ্যমে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রী প্রদানের সুযোগ নাই। শুধুমাত্র দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতেই শিক্ষাদান করতে পারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এই ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণ এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যেই সবার উদ্দেশ্যে আজকের এই লেখা।

যে কোন ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বহুমূখী পন্থায় সর্বস্তরের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সম্প্রসারণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার গণমুখীকরণের মাধ্যমে সর্বসাধারণের নিকট শিক্ষার সুযোগ পৌছাইয়া দেওয়া এবং সাধারণভাবে জনগণের শিক্ষার মান উন্নীত করিয়া দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ২০ অক্টোবর ১৯৯২ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯২’ গৃহীত এবং ২১ অক্টোবর মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মতি লাভের পর ১৯৯২ সালের ৩৮ নং আইন হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। আইনটি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য বাউবি’র ওয়েবসাইটে রয়েছে (https://bou.ac.bd/index. php/act-rules)। বাউবি আইনের ধারা ১৯ ও ২০(১) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘বোর্ড অব গভর্ণস’ থাকিবে এবং যাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী সংস্থা হইবে। যার সদস্য হইবেন: (ক) ভাইস-চ্যান্সেলর, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন; (খ) চ্যান্সেলর কর্তৃক পর্যায়ক্রমে মনোনীত একজন করিয়া প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর; (গ) কোষাধ্যক্ষ; (ঘ) সরকারের শিক্ষা সচিব; (ঙ) সরকারের তথ্য সচিব; (চ) চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহির হইতে একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী মহল হইতে একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি এবং দুইজন খ্যাতনামা পেশাজীবী; (ছ) ভাইস-চ্যান্সেলরের সুপারিশক্রমে বোর্ড কর্তৃক মনোনীত স্কুলসমূহ হইতে দুইজন ডীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক।

উক্ত আইনের ২১ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘একাডেমিক কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা হইবে এবং এই আইন, সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন সাপেক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি ও উহার নিয়ন্ত্রণ ও তদারক করিবে’। এছাড়া ২৩ (২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘একাডেমিক কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে, প্রত্যেক স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় রেগুলেশন দ্বারা নির্দিষ্ট বিষয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা পরিচালনার দায়িত্বে থাকিবে’।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল স্থাপনের বিষয়ে বাউবির আইনের ২৩ নং ধারার ১ নং উপধারায় উল্লেখ রয়েছে যে : ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা, মানবিক বিষয়াবলী, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, প্রকৌশল ও কারিগরী, সাধারণ বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক স্কুলসমূহ, নারী-শিক্ষা বিষয়ক স্কুলসমূহ, উš§ুক্ত স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য স্কুল অন্তর্ভুক্ত থাকিবে’। আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে (১) স্কুল অব এডুকেশন; (২) স্কুল অব সোসাল সায়েন্স, হিউম্যানিটিজ এন্ড ল্যাংগুয়েজ; (৩) ওপেন স্কুল; (৪) স্কুল অব বিজনেস; (৫) স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট এবং (৬) স্কুল অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি খোলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতার বিষয়ে বাউবি আইনের ৬ নং ধারার উপ-ধারা ক, খ, গ-এ উল্লেখ রয়েছে যে, (ক) জাতীয় উন্নয়নের তাগিদে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত জ্ঞানের ক্ষেত্রসমূহে প্রযুক্তি, বৃত্তি এবং পেশাগত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা এবং গবেষণার ব্যবস্থাকরণ; (খ) ডিগ্রী, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট প্রদানের অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে পাঠ্যক্রমসমূহের পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রণয়ন; (গ) পরীক্ষা গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও রেগুলেশন অনুযায়ী কোন পাঠ্যক্রম অনুসরণকারী বা গবেষণাকার্য সম্পাদনকারী কোন ব্যক্তিকে ডিগ্রী, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট অথবা শিক্ষাক্ষেত্রে অন্য কোন সম্মান বা স্বীকৃতি প্রদান।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রণালী বিষয়ে বাউবি আইনের ৯ নং ধারার উপধারা-১ এ বলা হয়েছে যে, ‘শিক্ষাদানের বিভিন্ন কার্যক্রম সংবিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত হইবে এবং করেস্পন্ডেন্স প্যাকেজ, ফিল্ম, ক্যাসেট, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বেতার অনুষ্ঠান, বক্তৃতা, টিউটরিয়েল, আলোচনা, সেমিনার, পরিদর্শন, প্রদর্শন এবং ল্যাবরেটরী, ওয়ার্কশপ ও কৃষি জমিতে ব্যবহারিক শিক্ষাসহ বাস্তব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অন্যান্য মাধ্যমে শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ উক্ত পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হইবে’।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ৬টি স্কুল, ১২টি আঞ্চলিক ও ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৬০ এর অধিক প্রোগ্রামের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষা, মানবিক, ভাষা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (Mphil, PhD) প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে ঢাকা ও গাজীপুর ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলমান রয়েছে। স্কুল কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন একাডেমিক প্রোগ্রামের কারিকুলাম ও সিলেবাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশে ‘বোর্ড অব গভর্নর্স’ কর্তৃক অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট স্কুল প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্রোগ্রামসমূহ ২টি পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে: ১। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউটকে বাউবি’র স্টাডি সেন্টার হিসেবে অনুমোদন দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/গবেষক/প্রশিক্ষকদের দ্বারা পরিচালনা। ২। বাউবি’র শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং গাজীপুর ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম পরিচালনা।

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদালয়সহ আরও কয়েকটি পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রী দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কৃষিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এখনও সীমিত। প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ হতে উত্তীর্ণ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হলেও আসন সীমিত থাকায় ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাউবি আইনের ২৩(১) ধারা অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল স্থাপন করে। স্কুলের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৭ সালে ৩ বছর মেয়াদী Bachelor of Agricultural Education (BAgEd), ১৯৯৯ সালে ১৮ মাসে মেয়াদি Diploma in Youth Development Work (DYDW), ৬ মাসে মেয়াদি Certificate in Livestock and Poultry (CLP) ও Certificate in Pisciculture and Fish Processing (CPFP) চালু করা হয়। প্রোগ্রামসমূহ বাউবি’র স্টাডি সেন্টার হিসেবে অনুমোদিত দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/প্রশিক্ষকগণ প্রোগ্রামের তত্ত্বীয়-ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে কৃষি বিষয়ক ল্যাব ও গবেষণা খামার স্থাপন করায় স্কুলের শিক্ষকসহ নিকটস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/গবেষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে ১৮ মাসে মেয়াদি MS প্রোগ্রাম এবং ২০১৯ সালে ২ বছর মেয়াদি Master in Sustainable Agriculture and Rural Livelihood (MSARL) প্রোগ্রাম চালু করা হয়।

বর্তমানে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলে কৃষি, কৃষি প্রকৌশল, মাৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ের ৭ জন অধ্যাপক ও ৪ জন সহযোগী অধ্যাপক কর্মরত রয়েছেন। সকলেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে PhD ডিগ্রি এবং দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্কুলে আরও ৬টি শূন্যপদে চাহিদাভিত্তিক কৃষি বিষয়ক নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিশ্ববিদালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ২০১২ সালে বিএসসিএজি প্রোগ্রামের কারিকুলাম ও সিলেবাস অনুমোদিত হয়। বর্তমান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরী, সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লেকচার গ্যালারি ও পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাসরুম থাকায় এবং স্কুলের শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ এবং কৃষি বিষয়ক গবেষণা ল্যাবরেটরী উন্নয়নের জন্য চলতি অর্থবছরে (২০২২-২০২৩) ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখায় স্কুল জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২২ সিমেস্টারে ৪ বছর মেয়াদি BScAg প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। চালুতব্য ৪ বছর মেয়াদি BScAg প্রোগ্রামের কারিকুলাম ও সিলেবাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম ও সিলেবাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রণীত হয়েছে। তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্লাস বাউবি’র গাজীপুর ক্যাম্পাসের শ্রেণীকক্ষ ও ল্যাবরেটরিতে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলের শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। ক্লাসের সংখ্যা ক্রেডিট অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে যা দেশের অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলন করা হয়। সপ্তাহের কার্যদিবসসমূহে প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী শিক্ষকবৃন্দ সরাসরি শ্রেণীকক্ষ, ল্যাব ও মাঠ গবেষণা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনা করবেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যলয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব ও মাঠ গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। পরীক্ষা ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ সম্পৃক্ত থাকবেন।

কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলের BScAgসহ চলমান অন্যান্য প্রোগ্রামসমূহের কোর্স কারিকুলাম ও সিলেবাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে। চলমান প্রোগ্রামসমূহের কারিকুলাম, পরীক্ষাসহ অন্যান্য কমিটির বহিঃসদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞগণ দায়িত্ব পালন করে প্রোগ্রাম পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান অধ্যাপকবৃন্দ চ্যান্সেলর কর্তৃক বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বাউবি’র শিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দেশে কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলের সক্ষমতা বিবেচনা করে আইনবলে BScAg প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। স্কুলের অভিজ্ঞ কৃষি বিষয়ক শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাউবি’র মূল ক্যাম্পাসের শ্রেণীকক্ষ ও ল্যাবে পরিচালিত এ প্রোগ্রামে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে দক্ষ কৃষিবিদ হয়ে জাতীয় উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে। স্কুলে কর্মরত কৃষি শিক্ষকগণ কৃষি শিক্ষার মান ও কৃষিবিদদের সম্মান বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

[লেখক: অধ্যাপক ও ডিন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতে উচ্চশিক্ষা: সুযোগ এবং বাস্তবতা

ফরিদ হোসেন

মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট ২০২২

সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রী প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবরেটরীতে পাঠদানের মাধ্যমে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রী প্রদানের সুযোগ নাই। শুধুমাত্র দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতেই শিক্ষাদান করতে পারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এই ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণ এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যেই সবার উদ্দেশ্যে আজকের এই লেখা।

যে কোন ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বহুমূখী পন্থায় সর্বস্তরের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সম্প্রসারণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার গণমুখীকরণের মাধ্যমে সর্বসাধারণের নিকট শিক্ষার সুযোগ পৌছাইয়া দেওয়া এবং সাধারণভাবে জনগণের শিক্ষার মান উন্নীত করিয়া দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ২০ অক্টোবর ১৯৯২ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯২’ গৃহীত এবং ২১ অক্টোবর মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মতি লাভের পর ১৯৯২ সালের ৩৮ নং আইন হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। আইনটি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য বাউবি’র ওয়েবসাইটে রয়েছে (https://bou.ac.bd/index. php/act-rules)। বাউবি আইনের ধারা ১৯ ও ২০(১) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘বোর্ড অব গভর্ণস’ থাকিবে এবং যাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী সংস্থা হইবে। যার সদস্য হইবেন: (ক) ভাইস-চ্যান্সেলর, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন; (খ) চ্যান্সেলর কর্তৃক পর্যায়ক্রমে মনোনীত একজন করিয়া প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর; (গ) কোষাধ্যক্ষ; (ঘ) সরকারের শিক্ষা সচিব; (ঙ) সরকারের তথ্য সচিব; (চ) চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহির হইতে একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী মহল হইতে একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি এবং দুইজন খ্যাতনামা পেশাজীবী; (ছ) ভাইস-চ্যান্সেলরের সুপারিশক্রমে বোর্ড কর্তৃক মনোনীত স্কুলসমূহ হইতে দুইজন ডীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক।

উক্ত আইনের ২১ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘একাডেমিক কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা হইবে এবং এই আইন, সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন সাপেক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি ও উহার নিয়ন্ত্রণ ও তদারক করিবে’। এছাড়া ২৩ (২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘একাডেমিক কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে, প্রত্যেক স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় রেগুলেশন দ্বারা নির্দিষ্ট বিষয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা পরিচালনার দায়িত্বে থাকিবে’।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল স্থাপনের বিষয়ে বাউবির আইনের ২৩ নং ধারার ১ নং উপধারায় উল্লেখ রয়েছে যে : ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা, মানবিক বিষয়াবলী, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, প্রকৌশল ও কারিগরী, সাধারণ বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক স্কুলসমূহ, নারী-শিক্ষা বিষয়ক স্কুলসমূহ, উš§ুক্ত স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য স্কুল অন্তর্ভুক্ত থাকিবে’। আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে (১) স্কুল অব এডুকেশন; (২) স্কুল অব সোসাল সায়েন্স, হিউম্যানিটিজ এন্ড ল্যাংগুয়েজ; (৩) ওপেন স্কুল; (৪) স্কুল অব বিজনেস; (৫) স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট এবং (৬) স্কুল অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি খোলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতার বিষয়ে বাউবি আইনের ৬ নং ধারার উপ-ধারা ক, খ, গ-এ উল্লেখ রয়েছে যে, (ক) জাতীয় উন্নয়নের তাগিদে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত জ্ঞানের ক্ষেত্রসমূহে প্রযুক্তি, বৃত্তি এবং পেশাগত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা এবং গবেষণার ব্যবস্থাকরণ; (খ) ডিগ্রী, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট প্রদানের অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে পাঠ্যক্রমসমূহের পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রণয়ন; (গ) পরীক্ষা গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও রেগুলেশন অনুযায়ী কোন পাঠ্যক্রম অনুসরণকারী বা গবেষণাকার্য সম্পাদনকারী কোন ব্যক্তিকে ডিগ্রী, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট অথবা শিক্ষাক্ষেত্রে অন্য কোন সম্মান বা স্বীকৃতি প্রদান।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রণালী বিষয়ে বাউবি আইনের ৯ নং ধারার উপধারা-১ এ বলা হয়েছে যে, ‘শিক্ষাদানের বিভিন্ন কার্যক্রম সংবিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত হইবে এবং করেস্পন্ডেন্স প্যাকেজ, ফিল্ম, ক্যাসেট, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বেতার অনুষ্ঠান, বক্তৃতা, টিউটরিয়েল, আলোচনা, সেমিনার, পরিদর্শন, প্রদর্শন এবং ল্যাবরেটরী, ওয়ার্কশপ ও কৃষি জমিতে ব্যবহারিক শিক্ষাসহ বাস্তব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অন্যান্য মাধ্যমে শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ উক্ত পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হইবে’।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ৬টি স্কুল, ১২টি আঞ্চলিক ও ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৬০ এর অধিক প্রোগ্রামের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষা, মানবিক, ভাষা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (Mphil, PhD) প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে ঢাকা ও গাজীপুর ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলমান রয়েছে। স্কুল কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন একাডেমিক প্রোগ্রামের কারিকুলাম ও সিলেবাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশে ‘বোর্ড অব গভর্নর্স’ কর্তৃক অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট স্কুল প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্রোগ্রামসমূহ ২টি পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে: ১। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউটকে বাউবি’র স্টাডি সেন্টার হিসেবে অনুমোদন দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/গবেষক/প্রশিক্ষকদের দ্বারা পরিচালনা। ২। বাউবি’র শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং গাজীপুর ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম পরিচালনা।

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদালয়সহ আরও কয়েকটি পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রী দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কৃষিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এখনও সীমিত। প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ হতে উত্তীর্ণ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হলেও আসন সীমিত থাকায় ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাউবি আইনের ২৩(১) ধারা অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল স্থাপন করে। স্কুলের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৭ সালে ৩ বছর মেয়াদী Bachelor of Agricultural Education (BAgEd), ১৯৯৯ সালে ১৮ মাসে মেয়াদি Diploma in Youth Development Work (DYDW), ৬ মাসে মেয়াদি Certificate in Livestock and Poultry (CLP) ও Certificate in Pisciculture and Fish Processing (CPFP) চালু করা হয়। প্রোগ্রামসমূহ বাউবি’র স্টাডি সেন্টার হিসেবে অনুমোদিত দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/প্রশিক্ষকগণ প্রোগ্রামের তত্ত্বীয়-ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে কৃষি বিষয়ক ল্যাব ও গবেষণা খামার স্থাপন করায় স্কুলের শিক্ষকসহ নিকটস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/গবেষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে ১৮ মাসে মেয়াদি MS প্রোগ্রাম এবং ২০১৯ সালে ২ বছর মেয়াদি Master in Sustainable Agriculture and Rural Livelihood (MSARL) প্রোগ্রাম চালু করা হয়।

বর্তমানে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলে কৃষি, কৃষি প্রকৌশল, মাৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ের ৭ জন অধ্যাপক ও ৪ জন সহযোগী অধ্যাপক কর্মরত রয়েছেন। সকলেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে PhD ডিগ্রি এবং দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্কুলে আরও ৬টি শূন্যপদে চাহিদাভিত্তিক কৃষি বিষয়ক নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিশ্ববিদালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ২০১২ সালে বিএসসিএজি প্রোগ্রামের কারিকুলাম ও সিলেবাস অনুমোদিত হয়। বর্তমান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরী, সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লেকচার গ্যালারি ও পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাসরুম থাকায় এবং স্কুলের শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ এবং কৃষি বিষয়ক গবেষণা ল্যাবরেটরী উন্নয়নের জন্য চলতি অর্থবছরে (২০২২-২০২৩) ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখায় স্কুল জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২২ সিমেস্টারে ৪ বছর মেয়াদি BScAg প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। চালুতব্য ৪ বছর মেয়াদি BScAg প্রোগ্রামের কারিকুলাম ও সিলেবাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম ও সিলেবাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রণীত হয়েছে। তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্লাস বাউবি’র গাজীপুর ক্যাম্পাসের শ্রেণীকক্ষ ও ল্যাবরেটরিতে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলের শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। ক্লাসের সংখ্যা ক্রেডিট অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে যা দেশের অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলন করা হয়। সপ্তাহের কার্যদিবসসমূহে প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী শিক্ষকবৃন্দ সরাসরি শ্রেণীকক্ষ, ল্যাব ও মাঠ গবেষণা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনা করবেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যলয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব ও মাঠ গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। পরীক্ষা ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ সম্পৃক্ত থাকবেন।

কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলের BScAgসহ চলমান অন্যান্য প্রোগ্রামসমূহের কোর্স কারিকুলাম ও সিলেবাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে। চলমান প্রোগ্রামসমূহের কারিকুলাম, পরীক্ষাসহ অন্যান্য কমিটির বহিঃসদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞগণ দায়িত্ব পালন করে প্রোগ্রাম পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান অধ্যাপকবৃন্দ চ্যান্সেলর কর্তৃক বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বাউবি’র শিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দেশে কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুলের সক্ষমতা বিবেচনা করে আইনবলে BScAg প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। স্কুলের অভিজ্ঞ কৃষি বিষয়ক শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাউবি’র মূল ক্যাম্পাসের শ্রেণীকক্ষ ও ল্যাবে পরিচালিত এ প্রোগ্রামে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে দক্ষ কৃষিবিদ হয়ে জাতীয় উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে। স্কুলে কর্মরত কৃষি শিক্ষকগণ কৃষি শিক্ষার মান ও কৃষিবিদদের সম্মান বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

[লেখক: অধ্যাপক ও ডিন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top