alt

উপ-সম্পাদকীয়

খুলনায় একুশে বইমেলার মুগ্ধতা

চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী

: মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ফেব্রুয়ারির বইমেলা বলতেই প্রথমে প্রতিটি বাঙালির মানসপটে যে মেলাটি উঁকি দিয়ে ওঠে তা হচ্ছেÑ ঢাকার বাংলা একাডেমির ঐতিহ্যবাহী ‘অমর একুশে বইমেলা’ (পূর্ব নাম অমর একুশে গ্রন্থমেলা); কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা এই একই সময়ে একই উপলক্ষে প্রায় প্রতি বছরই খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারেও একটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। যেটি ‘একুশে বইমেলা-খুলনা’ নামেই বিশেষভাবে পরিচিত। এবারও মেলাটি যথাসময়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই শুরু হয়েছে এবং যা ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে। মেলা চলাকালীন প্রায় প্রতিদিনই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও এবার যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। বই ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি প্রতিদিনই মেলা মঞ্চে তারা উপভোগ করেছেন বিভিন্ন গুণী শিল্পী-সাহিত্যিকদের বিশেষ সব পরিবেশনা। সব মিলিয়ে বাহান্নর ভাষাশহিদের স্মরণে মেলাটি প্রতিবারের মতো এবারো প্রতিদিনই যেন দিন গড়িয়ে রাত্রি মুগ্ধতায় প্রজ্বালিত হয়ে উঠছে!

অবশ্য মেলাটি বর্তমান পর্যায়ে যে খুব সহজে এসেছে তা নয়। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়েই মেলাটি বর্তমানে এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর অতীত সম্পর্কে যতটা জানা যায় তা হচ্ছেÑ বিগত ২০১০ সাল থেকে মেলাটি খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার ও খুলনা জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে মাসব্যাপী পরিচালিত হলেও পূর্বে এটি স্থানীয় একটি সাহিত্য সংগঠন ‘সাহিত্য সংসদ’ ও খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের যৌথ উদ্যোগে শুধু ‘বই মেলা’ নামেই পরিচালিত হতো। তখন মেলার সময়সীমা ও পরিসরও ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। এছাড়া গত ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণেও মেলাটি অনেকটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরিচালিত হয়। গত ২০২৩ সাল থেকে অবশ্য মেলাটি আবারও মাসব্যাপী রূপ লাভ করে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে শুরু হয়ে তা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই চলে।

সঙ্গত কারণে এবারও তাই ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলার লক্ষ্য নিয়েই মেলাটি তার যাত্রা শুরু করেছে। মেলাটিতে এবার মোট প্রায় ১০০টির মতো বইয়ের স্টলসহ বেশ কিছু হালকা খাবারের স্টলও স্থান পেয়েছে।

অন্যদিকে প্রতিবারের মতো এবারও ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা বই ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি এর মূলমঞ্চে বিভিন্ন গুণী শিল্পী-সাহিত্যিকদের বিশেষ সব পরিবেশনা উপভোগ করেছেন। সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, সেমিনার, নতুন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন সবই তারা উপভোগ করেছেন; উপভোগ করছেন মেলাটির প্রতিদিনের সান্ধ্য অধিবেশনজুড়ে।

কিন্তু এই যে এতো-এতো আছের ভিড়ে নেই-নেই শব্দের উপস্থিতিও এখনো কম নয় এখানে। মেলাটিতে আয়োজক হিসেব জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন তৎপরতা দৃশ্যমান হলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তাদের সহায়তা কতটা তা বলা মুশকিল। এ বিষয়ে যতটা জানা যায়, বরাবরই স্টল বরাদ্দের টাকা ও দু-একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশিপই নাকি মেলার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। অথচ আমাদের সবারই জানা, ঢাকার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার মূল নিয়ন্ত্রণ এখন সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওপরই ন্যন্ত থাকে। এ বিষয়ে খুলনার কোনো কোনো সাহিত্যপ্রেমী আশঙ্কা করে বলেন, এখনই মেলাটিকে সরকারের সর্বোচ্চ সুদৃষ্টিতে পৌঁছে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে মেলাটি এভাবে আর খুব বেশি দূর এগোবে বলে মনে হয় না। একই সাথে এর স্থান সংকুলানের বিষয়েও তারা আয়োজকদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

অনেকে আবার মেলাটিতে বইয়ের স্টল ভিন্ন অন্য স্টলের বরাদ্দ না দেয়াসহ মেলা ও বইমেলার পার্থক্য রক্ষা বিষয়েও বরাবরই গুরুত্বারোপ করে থাকেন। অনেকে অবশ্য বিষয়টিকে সহনশীল দৃষ্টিতে দেখে মেলাটিকে যে কোনভাবে রক্ষার পক্ষেই মত দেন।

এখন বিষয় হচ্ছেÑ পৃথিবীর সব বইমেলার চরিত্রই যে এক তা কিন্তু নয়। যেমন- বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দুটি বইমেলা জার্মানির ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট’ ও ইংল্যান্ডের ‘লন্ডন বইমেলা’; যার প্রথমটিতে মেলার শেষ সময়ে (৫ম দিন) বই ক্রয়-বিক্রয়ের কিছুটা সুযোগ থাকলেও দ্বিতীয়টিতে সে সুযোগ একদমই থাকে না। অর্থাৎ মেলা দুটি মূলত বইয়ের প্রদর্শনী বা প্রচারকেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর বই ভিন্ন অন্য স্টল বলতে এ মেলা দুটিতে সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক কিছু তথ্য ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী স্টল স্থান পায়।

অন্যদিকে হংকং বইমেলা, কোলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলা ও আমাদের বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার ক্ষেত্রে মূলত বইয়ের খুচরা ক্রয়-বিক্রয়কেই বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়। এর প্যাভিলিয়নে বইয়ের স্টল ভিন্ন কিছু সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী স্টল স্থান পায়। অবশ্য কোলকাতা বইমেলা ও হংকং বইমেলাতে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রদর্শনী স্টলেরও প্রচারণার সুযোগ থাকে।

অর্থাৎ বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ বইমেলাগুলোকে মোটামুটি দুই শ্রেণীতে দেখতে পাই আমারা। একটি শ্রেণীর মূল লক্ষ্য বইয়ের প্রদর্শনী বা প্রচার এবং অন্যটির লক্ষ্য বইয়ের ক্রয়-বিক্রয় বা খুচরা ক্রয়-বিক্রয়; কিন্তু বিস্ময়ের কারণ এই যে, এ উভয় শ্রেণীর মেলার মধ্যেই একটি বিশেষ সাদৃশ্য প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে; আর তা হচ্ছেÑ বইয়ের প্রতি মানুষের চিরন্তন ভালোবাসার প্রস্ফুট! আর আমার তো মনে হয় এটিই আসল; একটি সার্থক বইমেলা সৃষ্টিতে এর থেকে বড় উপাদান আর কী হতে পারে।

আর বাধা বা সীমাবদ্ধতা? সে কোথায় থাকে না বলেন! সেসব অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়াটাই তো আসল, তাই নয় কী? এই যে বই আর বইয়ের সুবাসিত ঘ্রাণে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন, কতো যে সে মান-অভিমান, হাজারও স্মৃতি-বিস্মৃতির দ্বন্দ্ব, বিক্ষিপ্ত হাজারও বাদামের অনিয়ম, কত যে সে বিচিত্র রাত্রি মুগ্ধতাÑ এগুলোই বা আমাদের কম কিসে!

[লেখক : প্রভাষক, ফুলতলা মোজাম মহলদার কলেজ, খুলনা]

গাছে পেরেক ঠোকা

মানুষ ও বন্য হাতি

আলুর চাষ, বীজ উৎপাদন ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

অখণ্ড বাংলা তত্ত্ব : বাইনারিজম থেকে মুক্তির পথ

রূপকথার মতো মনে হলেও তিনি ছিলেন বাস্তবেরই নায়ক

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত মত প্রকাশের গুরুত্ব

নিরাপদ অভিবাসন ও রেমিট্যান্স প্রবাহ

ভারতব্যাপী সংঘ : বিজেপির নয়া কৌশল

আর্থিক খাত নিয়ে অবিমৃষ্যকারী বক্তব্য

ভূমিকম্পের আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

মনে কী দ্বিধা রেখে নতুন প্রত্যাশায় নতুন দল!

ছবি

উন্নত বিশ্বের নাগরিকত্ব ও দুর্নীতি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির নিচে ছাত্র

নারীর অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন

আদালতের ভেতরে ভিডিও ধারণের আইনি দিক

আইনের শাসন না গণপিটুনি?

নারীর ভূমি ও কৃষি অধিকার : ন্যায়বিচারের পথে কতদূর?

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের হালচাল

জনতুষ্টিবাদীরা এগিয়ে আছে যেদিক থেকে

ভিক্ষাবৃত্তি : প্রয়োজন নাকি পেশা?

ছবি

বিনিময় কৌশল নাকি বাণিজ্য যুদ্ধ?

শিশু আদালতের বিচার-প্রক্রিয়ার আইনি ও বাস্তবিক দিক

জনদুর্ভোগের অপসংস্কৃতি ও জনশিক্ষা : আগামীর দিকনির্দেশনা

প্রসঙ্গ : নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি

হরিজনদের পদবি : ঐক্যের পথে বাধা

এল নিনো : দেশের কৃষির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

আর কীভাবে আর্জি জানালে নিরাপত্তা পাওয়া যায়?

স্বপ্ন ভাঙল সাঁওতাল মুংলু বেসরার

কোনো স্কুলই খারাপ না

ঢাকার যানজটের টেকসই সমাধান কী

বই কেন পড়বেন

ডায়াবেটিসের জটিলতা বাড়ায় তামাক ও ধূমপান

জাতীয় বিমা দিবস

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থা

ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়া ভুল হয়ে থাকলে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা সঠিক ছিল!

tab

উপ-সম্পাদকীয়

খুলনায় একুশে বইমেলার মুগ্ধতা

চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ফেব্রুয়ারির বইমেলা বলতেই প্রথমে প্রতিটি বাঙালির মানসপটে যে মেলাটি উঁকি দিয়ে ওঠে তা হচ্ছেÑ ঢাকার বাংলা একাডেমির ঐতিহ্যবাহী ‘অমর একুশে বইমেলা’ (পূর্ব নাম অমর একুশে গ্রন্থমেলা); কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা এই একই সময়ে একই উপলক্ষে প্রায় প্রতি বছরই খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারেও একটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। যেটি ‘একুশে বইমেলা-খুলনা’ নামেই বিশেষভাবে পরিচিত। এবারও মেলাটি যথাসময়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই শুরু হয়েছে এবং যা ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে। মেলা চলাকালীন প্রায় প্রতিদিনই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও এবার যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। বই ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি প্রতিদিনই মেলা মঞ্চে তারা উপভোগ করেছেন বিভিন্ন গুণী শিল্পী-সাহিত্যিকদের বিশেষ সব পরিবেশনা। সব মিলিয়ে বাহান্নর ভাষাশহিদের স্মরণে মেলাটি প্রতিবারের মতো এবারো প্রতিদিনই যেন দিন গড়িয়ে রাত্রি মুগ্ধতায় প্রজ্বালিত হয়ে উঠছে!

অবশ্য মেলাটি বর্তমান পর্যায়ে যে খুব সহজে এসেছে তা নয়। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়েই মেলাটি বর্তমানে এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর অতীত সম্পর্কে যতটা জানা যায় তা হচ্ছেÑ বিগত ২০১০ সাল থেকে মেলাটি খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার ও খুলনা জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে মাসব্যাপী পরিচালিত হলেও পূর্বে এটি স্থানীয় একটি সাহিত্য সংগঠন ‘সাহিত্য সংসদ’ ও খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের যৌথ উদ্যোগে শুধু ‘বই মেলা’ নামেই পরিচালিত হতো। তখন মেলার সময়সীমা ও পরিসরও ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। এছাড়া গত ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণেও মেলাটি অনেকটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরিচালিত হয়। গত ২০২৩ সাল থেকে অবশ্য মেলাটি আবারও মাসব্যাপী রূপ লাভ করে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে শুরু হয়ে তা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই চলে।

সঙ্গত কারণে এবারও তাই ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলার লক্ষ্য নিয়েই মেলাটি তার যাত্রা শুরু করেছে। মেলাটিতে এবার মোট প্রায় ১০০টির মতো বইয়ের স্টলসহ বেশ কিছু হালকা খাবারের স্টলও স্থান পেয়েছে।

অন্যদিকে প্রতিবারের মতো এবারও ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা বই ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি এর মূলমঞ্চে বিভিন্ন গুণী শিল্পী-সাহিত্যিকদের বিশেষ সব পরিবেশনা উপভোগ করেছেন। সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, সেমিনার, নতুন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন সবই তারা উপভোগ করেছেন; উপভোগ করছেন মেলাটির প্রতিদিনের সান্ধ্য অধিবেশনজুড়ে।

কিন্তু এই যে এতো-এতো আছের ভিড়ে নেই-নেই শব্দের উপস্থিতিও এখনো কম নয় এখানে। মেলাটিতে আয়োজক হিসেব জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন তৎপরতা দৃশ্যমান হলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তাদের সহায়তা কতটা তা বলা মুশকিল। এ বিষয়ে যতটা জানা যায়, বরাবরই স্টল বরাদ্দের টাকা ও দু-একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশিপই নাকি মেলার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। অথচ আমাদের সবারই জানা, ঢাকার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার মূল নিয়ন্ত্রণ এখন সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওপরই ন্যন্ত থাকে। এ বিষয়ে খুলনার কোনো কোনো সাহিত্যপ্রেমী আশঙ্কা করে বলেন, এখনই মেলাটিকে সরকারের সর্বোচ্চ সুদৃষ্টিতে পৌঁছে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে মেলাটি এভাবে আর খুব বেশি দূর এগোবে বলে মনে হয় না। একই সাথে এর স্থান সংকুলানের বিষয়েও তারা আয়োজকদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

অনেকে আবার মেলাটিতে বইয়ের স্টল ভিন্ন অন্য স্টলের বরাদ্দ না দেয়াসহ মেলা ও বইমেলার পার্থক্য রক্ষা বিষয়েও বরাবরই গুরুত্বারোপ করে থাকেন। অনেকে অবশ্য বিষয়টিকে সহনশীল দৃষ্টিতে দেখে মেলাটিকে যে কোনভাবে রক্ষার পক্ষেই মত দেন।

এখন বিষয় হচ্ছেÑ পৃথিবীর সব বইমেলার চরিত্রই যে এক তা কিন্তু নয়। যেমন- বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দুটি বইমেলা জার্মানির ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট’ ও ইংল্যান্ডের ‘লন্ডন বইমেলা’; যার প্রথমটিতে মেলার শেষ সময়ে (৫ম দিন) বই ক্রয়-বিক্রয়ের কিছুটা সুযোগ থাকলেও দ্বিতীয়টিতে সে সুযোগ একদমই থাকে না। অর্থাৎ মেলা দুটি মূলত বইয়ের প্রদর্শনী বা প্রচারকেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর বই ভিন্ন অন্য স্টল বলতে এ মেলা দুটিতে সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক কিছু তথ্য ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী স্টল স্থান পায়।

অন্যদিকে হংকং বইমেলা, কোলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলা ও আমাদের বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার ক্ষেত্রে মূলত বইয়ের খুচরা ক্রয়-বিক্রয়কেই বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়। এর প্যাভিলিয়নে বইয়ের স্টল ভিন্ন কিছু সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী স্টল স্থান পায়। অবশ্য কোলকাতা বইমেলা ও হংকং বইমেলাতে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রদর্শনী স্টলেরও প্রচারণার সুযোগ থাকে।

অর্থাৎ বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ বইমেলাগুলোকে মোটামুটি দুই শ্রেণীতে দেখতে পাই আমারা। একটি শ্রেণীর মূল লক্ষ্য বইয়ের প্রদর্শনী বা প্রচার এবং অন্যটির লক্ষ্য বইয়ের ক্রয়-বিক্রয় বা খুচরা ক্রয়-বিক্রয়; কিন্তু বিস্ময়ের কারণ এই যে, এ উভয় শ্রেণীর মেলার মধ্যেই একটি বিশেষ সাদৃশ্য প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে; আর তা হচ্ছেÑ বইয়ের প্রতি মানুষের চিরন্তন ভালোবাসার প্রস্ফুট! আর আমার তো মনে হয় এটিই আসল; একটি সার্থক বইমেলা সৃষ্টিতে এর থেকে বড় উপাদান আর কী হতে পারে।

আর বাধা বা সীমাবদ্ধতা? সে কোথায় থাকে না বলেন! সেসব অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়াটাই তো আসল, তাই নয় কী? এই যে বই আর বইয়ের সুবাসিত ঘ্রাণে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন, কতো যে সে মান-অভিমান, হাজারও স্মৃতি-বিস্মৃতির দ্বন্দ্ব, বিক্ষিপ্ত হাজারও বাদামের অনিয়ম, কত যে সে বিচিত্র রাত্রি মুগ্ধতাÑ এগুলোই বা আমাদের কম কিসে!

[লেখক : প্রভাষক, ফুলতলা মোজাম মহলদার কলেজ, খুলনা]

back to top