alt

উপ-সম্পাদকীয়

নজিরবিহীন বেনজীর

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার প্রচারণা বিশ্বাস হয় না; কারণ তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছিলেন। শুদ্ধাচার মানে শুদ্ধ আচার, ভালো আচরণ, নীতি-নৈতিকতায় সমৃদ্ধ কর্মকা-। অফিসের কাজে সততা, নীতিনিষ্ঠতা, কর্তব্যপরায়নতা, একনিষ্ঠতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে পুরস্কার দেয়ার নিয়ম রয়েছে।

বেনজীর আহমেদ শুধু শুদ্ধাচার পুরস্কার নয়, পুলিশ বাহিনীতে সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি পাঁচ-পাঁচবার বিপিএম পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তার সততা না থাকলে শুধু সাহসের জন্য পাঁচবার বিপিএম পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশে প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘নৈতিকতা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বা টাকশালের নির্বাহী প্রধান হিসেবে আমিও সম্ভবত ২০১৩ সালে একটি কমিটি গঠন করে নিয়মিত কমিটির সভার কার্যবিবরণী মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতাম, কিন্তু টাকশালের পরিচালক পর্ষদের অসম্মতির কারণে পুরস্কার প্রবর্তন করতে পারিনি।

ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত পরিচালক পর্ষদের পরিচালক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সচিব ড. আসলাম আলমের অভিমত ছিল, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্যই প্রতিষ্ঠান বেতন-ভাতাদি দিয়ে থাকে, কোনো কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করে পুরস্কার দেয়ার সুযোগ নেই, বরং যে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে না তাকে অফিসিয়ালি তিরস্কার করা দরকার।

আমি তার সঙ্গে একমত ছিলাম। সম্ভবত একই যুক্তিতে পরিচালক পর্ষদের সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও গভর্নর ফজলে কবির আমাকে প্রশংসা করে সনদপত্র দেননি। আমার অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পূর্ববর্তী পরিচালক পর্ষদ সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজিবুর রহমানের প্রস্তাবে পর্ষদ এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ‘দক্ষতা ও সততার স্বীকৃতি স্বরূপ সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদকে পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান ও গভর্নরের স্বাক্ষরে একটি প্রশংসাপত্র দেয়া হবে।’

কিন্তু পরবর্তীতে গভর্নর আর প্রশংসাপত্র দেননি, তার যুক্তি ছিল অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রশংসাপত্র দেয়া সঠিক নয়। অবশ্য এই প্রশংসাপত্র না দেয়ার পেছনে আরেকটি কারণও ছিল, আমি আমার ব্যাচমেট ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর এবং গভর্নরের একটি নির্দেশ পালন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম।

কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দক্ষ কর্মকর্তাদের আর্থিক বেনিফিট দেয়ার বিধান ছিল, এখনও আছে কিনা জানা নেই। ফাঁকি দেয়া ট্যাক্স কোন কর্মকর্তা চিহ্নিত করে আদায় করতে সমর্থ হলে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্ধারিত হারে অর্থ পুরস্কার দেয়া হতো। এই পুরস্কার নিয়েও প্রচুর সমালোচনা হয়েছে; যেসব কর্মকর্তা ট্যাক্স ফাঁকিতে সহায়তা করে তারাই আবার পুরস্কারের জন্য সেই ফাঁকি চিহ্নিত করে থাকেন।

বেনজীর আহমেদকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও স্বীকৃতি দিয়েছে; ২০২০-২১ অর্থবছরে তিনি ময়মনসিংহ অঞ্চলের সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রতীয়মান হয় তার অনেক বৈধ বিনিয়োগ রয়েছে, বৈধ বিনিয়োগ না থাকলে তিনি সেরা করদাতা হতে পারতেন না। মিডিয়ার বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা জমি কিনে, জোর করে দখল করে রিসোর্ট করেছেন, বাগানবাড়ি বানিয়েছেন, বালাখানা তৈরি করেছেন। শত শত বিঘা জমিতে স্থাপনা নিশ্চয়ই একদিনে গড়ে ওঠেনি, অথচ কেউ জানল না, স্থানীয় প্রশাসনও নয়। তাহলে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন তদন্ত কর্তৃপক্ষের শাখা অফিস রাখার দরকার কী?

মনে হয় জেনেও সবাই চুপ ছিল। এই ভয় পাওয়ার প্রধান কারণ সুশাসনের অভাব। অবশ্য সুশাসন গুটিকয়েক দেশে থাকলেও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে নেই। বাংলাদেশে কখনোই ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে মনে হয় না। মিডিয়ার কিছু কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বিভিন্ন দেশেও বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ রয়েছে, তার মধ্যে মালয়েশিয়া হচ্ছে তার ‘সেকেন্ড হোম’। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হলে মালয়েশিয়া বিনিয়োগকারীকে তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেয়। ‘সেকেন্ড হোম’ কথাটি প্রথম শোনা যায় বিএনপির আমলে, পরে তা ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, যখন অনেকে পালিয়ে সেকেন্ড হোমে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শোনা গেছে কানাডার ‘বেগম পাড়ার’ কথা। পাচার করা অর্থ একসময় শুধু সুইজারল্যান্ডে জমা হতো, এখন হয় দুবাইতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের শত-সহস্র লোক বিদেশে নির্বিঘেœ অর্থ পাচার করছে। এই দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় সব অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার শপথ করে ক্ষমতায় গিয়ে চুপ হয়ে যান, কারণ যেসব দেশে অর্থ পাচার হয় সেই সব দেশ অর্থ পাচারের তথ্য গোপন রাখে, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও কিচ্ছু করতে পারে না।

দেশের বাইরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কোনো কার্যকর ক্ষমতা নেই, আমেরিকাসহ পশ্চিম দুনিয়া শুধু আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কর্মকা- রোধ করতে এন্টি মানিলন্ডারিং বা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সৃষ্টি করেছে, পাচার করা অবৈধ অর্থ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহৃত না হলে তা তাদের বিবেচনায় হালাল। বিভিন্ন মুসলিম ও নাসারা দেশে অর্থ পাচারের এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেনজীর আহমেদ দেশে এত বিপুল বিনিয়োগ করে নির্বোধের মতো কাঁচা কাজ করলেন কেন?

তিনি তো অশিক্ষিত ও বোকা নন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেবল ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে থেমে যাননি, পিএইচডিও করেছেন। শুধু সর্বোচ্চ ডিগ্রি নয়, তার অফুরন্ত ক্ষমতাও ছিল। ক্ষমতা থাকলে অবৈধ টাকাকে বৈধ করার ফন্দিফিকির, নানা অলিগলি বাতলিয়ে দেয়ার লোক খুঁজলেই পাওয়া যেত।

বাংলাদেশে বেনজীর একমাত্র লোক নন, ক্ষমতা ব্যবহার করে ঘুষ, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমগ্ন ছিলেন এবং আছেন বহু লোক। অর্থের মালিক হয়েই তারা হজ করেন, বেনজীর আহমেদও হজ করেছেন। আমাদের দেশে ক্ষমতা হারালেই শুধু দুর্নীতির হদিস পাওয়া যায়। বিএনপির আমলে কখনো বিএনপির লোককে ঘুষ আর দুর্নীতির জন্য ধরা হয়নি; একই ঘটনা লক্ষ্য করা যায় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও।

ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো সচিব, মন্ত্রীর দুর্নীতির কথা কেউ জানে না, জানে শুধু ক্ষমতা হারানোর পর। যে কর্মকর্তা ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে সেই কর্মকর্তা আবার পদোন্নতিও পায়, পদকও পায়। বড় বড় পদে নিয়োগ বা পদোন্নতি দেয়ার আগে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক রিপোর্টের প্রয়োজন হয়। এখন মনে হচ্ছে ওই সব রিপোর্টে শুধু রাজনৈতিক আনুগত্যই যাচাই করা হয়; সততা, দক্ষতা ইত্যাদি যাচাই করার রেওয়াজ নেই। অবশ্য যারা রিপোর্ট দেয় তাদের সততা না থাকলে ‘যা জল তা-ই পানি।’

সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন; তিনি দেশের সব দুর্নীতির দায়ভার নিতে নারাজ, তিনি প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন, সব দুর্নীতির তদন্ত দুদক করবে কেন? তার কথাটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হওয়া উচিত। সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা হয়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সরকারের অডিট অধিদপ্তর প্রায় প্রতি বছর নিরীক্ষা করে। এত নিরীক্ষার পরও একজন কর্মচারী বা কর্মকর্তা কীভাবে এত ঘুষ খায়, এত দুর্নীতি করার সুযোগ পায়?

মিডিয়ায় যেভাবে প্রতিদিন বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিবরণ দিচ্ছে তাতে মনে হয় তিনি নির্বিবাদে শত শত কোটি টাকা দুই হাতে প্রাকাশ্যে সংগ্রহ করেছেন। তার এই শত শত কোটি টাকা কি একদিনে হয়েছে? একদিনে হয়নি। অথচ চাকরি থাকাকালীন কেউ তার দুর্নীতির হদিসও পেল না। মিডিয়ায় প্রকাশিত সব তথ্য সত্য হলে শত-সহস্র লোক তার এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারা কারা?

দুঃখজনক হচ্ছে, সাংবাদিকদের অনুসন্ধিৎসু চোখে বেনজীরের অবৈধ সম্পদের কোন পূর্বাভাস ইতোপূর্বে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দুর্নীতির তালাশ করতে দেখা যায়, কিন্তু বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ছিটেফোঁটাও প্রকাশ করেনি। তাহলে দেশে শত শত পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া থাকার দরকার কী! এখন বড় বড় সাংবাদিক গলা উঁচু করে বলছেন, তারা সব জানতেন, কিন্তু ভয়ে প্রকাশ করেননি। সাংবাদিকরা কি জানেন না, গাজায় ইসরায়েলের গোলার আঘাতে শতাধিক সাংবাদিকের মৃত্যু হলেও অন্য সাংবাদিকরা ভয়ে গাজা ছাড়েননি। বেনজীরের এই জঘন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুধু মেইন স্ট্রিমের কয়েকটি পত্রিকা এক জোট হলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের রিপোর্টকে সমীহ করতে বাধ্য হতো।

দেশের বাইরে অবস্থান করে অসংখ্য ইউটিউবার সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে কর্কষ ভাষায় সরকারের সমালোচনা করছে, তাদের মুখেও বেনজীরের দুর্নীতির কথা শোনা যায়নি। জাতির জন্য দুঃখজনক হচ্ছে, যারা ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে তারাও এখন অফিস-আদালত, পাড়া-মহল্লায় বেনজীরের দুর্নীতির কঠোর সমালোচক।

আরও দুঃখজনক হচ্ছে বেনজীর আহমেদ নিজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন, দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রভাবশালী ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল শুধু ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তখন বড় বড় দুর্নীতিবাজের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন অফিস ও সংস্থার ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারী।

তখনকার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আইন যত কঠোর হয়, আইনের প্রয়োগ যত কড়া হয় ঘুষের মাত্রা তত বাড়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকেও অপ্রদর্শিত সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হয়েছিল। তখন মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, জাগুয়ার প্রভৃতি ব্রান্ডের নামিদামি গাড়ির মালিক খুঁজে পাওয়া যেত না, রাস্তাঘাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় অযতেœ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তাই ঘুষ আর দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। অসংখ্য বেনজীর আহমেদ রাষ্ট্রে আছে, থাকবেÑ নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ রাজনৈতিক দল এবং জনগণ দুর্নীতির আশ্রয়দাতা, যার সম্পদ বেশি তিনি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পান, তাকে জনগণ ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি বানায়। কোনো মাদ্রাসা, মসজিদ বা মন্দির, আলেম, পুরোহিত দান গ্রহণে হারাম টাকা প্রত্যাখ্যান করেনি। তারপরও ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মতো আরেকটি ঝড় আসা দরকার, এমন ঝড় এলে কিছুদিনের জন্য হলেও ঘুষ আর দুর্নীতি হ্রাস পাবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাকশালের সাবেক এমডি]

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট

একাকিত্ব ও মানসিক অশান্তি

বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজ

ব্রি: কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর

ক্রেতা ঠকে গেলে তার আইনগত প্রতিকার

ঢাকার যানজট : কিছু প্রস্তাব

রম্যগদ্য : দারিদ্র্য যাবে জাদুঘরে

গার্মেন্টস খাতে সংকট

সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনায় করুণ দশা

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বাড়াতে

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির দুর্বলতা

ইরানের কেন কৌশলগত পরিবর্তন

শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

প্রত্যাশিত শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবিত রূপরেখা

ব্যাংক খাতের সংস্কার

শিক্ষার একটি স্থায়ী কমিশন সময়ের দাবি

ছবি

ক্ষমতা এখন ‘মব’-এর হাতে

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বামপন্থির উত্থান

আমন ধানে আগাম ফুল আসার কারণ

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

কী হবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি

রম্যগদ্য : ‘বল করে দুর্বল...’

মধ্যপ্রাচ্যে প্রযুক্তিগত যুদ্ধ

বন্যাপরবর্তী কৃষি উৎপাদনে সময়োপযোগী সহায়তা প্রদান

গুণগত উন্নয়নই সমাজের প্রকৃত উন্নতির চাবিকাঠি

বিশেষ শিশু ও বিশেষ শিক্ষালয়

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অধিকার

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি

প্রসঙ্গ : আনসার বাহিনী

শান্তির সংস্কৃতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

মব লিঞ্চিং আইনের শাসনের পরিপন্থি

মব জাস্টিসের মতো বর্বরতা বন্ধ হোক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নজিরবিহীন বেনজীর

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার প্রচারণা বিশ্বাস হয় না; কারণ তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছিলেন। শুদ্ধাচার মানে শুদ্ধ আচার, ভালো আচরণ, নীতি-নৈতিকতায় সমৃদ্ধ কর্মকা-। অফিসের কাজে সততা, নীতিনিষ্ঠতা, কর্তব্যপরায়নতা, একনিষ্ঠতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে পুরস্কার দেয়ার নিয়ম রয়েছে।

বেনজীর আহমেদ শুধু শুদ্ধাচার পুরস্কার নয়, পুলিশ বাহিনীতে সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি পাঁচ-পাঁচবার বিপিএম পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তার সততা না থাকলে শুধু সাহসের জন্য পাঁচবার বিপিএম পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশে প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘নৈতিকতা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বা টাকশালের নির্বাহী প্রধান হিসেবে আমিও সম্ভবত ২০১৩ সালে একটি কমিটি গঠন করে নিয়মিত কমিটির সভার কার্যবিবরণী মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতাম, কিন্তু টাকশালের পরিচালক পর্ষদের অসম্মতির কারণে পুরস্কার প্রবর্তন করতে পারিনি।

ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত পরিচালক পর্ষদের পরিচালক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সচিব ড. আসলাম আলমের অভিমত ছিল, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্যই প্রতিষ্ঠান বেতন-ভাতাদি দিয়ে থাকে, কোনো কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করে পুরস্কার দেয়ার সুযোগ নেই, বরং যে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে না তাকে অফিসিয়ালি তিরস্কার করা দরকার।

আমি তার সঙ্গে একমত ছিলাম। সম্ভবত একই যুক্তিতে পরিচালক পর্ষদের সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও গভর্নর ফজলে কবির আমাকে প্রশংসা করে সনদপত্র দেননি। আমার অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পূর্ববর্তী পরিচালক পর্ষদ সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজিবুর রহমানের প্রস্তাবে পর্ষদ এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ‘দক্ষতা ও সততার স্বীকৃতি স্বরূপ সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদকে পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান ও গভর্নরের স্বাক্ষরে একটি প্রশংসাপত্র দেয়া হবে।’

কিন্তু পরবর্তীতে গভর্নর আর প্রশংসাপত্র দেননি, তার যুক্তি ছিল অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রশংসাপত্র দেয়া সঠিক নয়। অবশ্য এই প্রশংসাপত্র না দেয়ার পেছনে আরেকটি কারণও ছিল, আমি আমার ব্যাচমেট ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর এবং গভর্নরের একটি নির্দেশ পালন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম।

কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দক্ষ কর্মকর্তাদের আর্থিক বেনিফিট দেয়ার বিধান ছিল, এখনও আছে কিনা জানা নেই। ফাঁকি দেয়া ট্যাক্স কোন কর্মকর্তা চিহ্নিত করে আদায় করতে সমর্থ হলে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্ধারিত হারে অর্থ পুরস্কার দেয়া হতো। এই পুরস্কার নিয়েও প্রচুর সমালোচনা হয়েছে; যেসব কর্মকর্তা ট্যাক্স ফাঁকিতে সহায়তা করে তারাই আবার পুরস্কারের জন্য সেই ফাঁকি চিহ্নিত করে থাকেন।

বেনজীর আহমেদকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও স্বীকৃতি দিয়েছে; ২০২০-২১ অর্থবছরে তিনি ময়মনসিংহ অঞ্চলের সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রতীয়মান হয় তার অনেক বৈধ বিনিয়োগ রয়েছে, বৈধ বিনিয়োগ না থাকলে তিনি সেরা করদাতা হতে পারতেন না। মিডিয়ার বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা জমি কিনে, জোর করে দখল করে রিসোর্ট করেছেন, বাগানবাড়ি বানিয়েছেন, বালাখানা তৈরি করেছেন। শত শত বিঘা জমিতে স্থাপনা নিশ্চয়ই একদিনে গড়ে ওঠেনি, অথচ কেউ জানল না, স্থানীয় প্রশাসনও নয়। তাহলে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন তদন্ত কর্তৃপক্ষের শাখা অফিস রাখার দরকার কী?

মনে হয় জেনেও সবাই চুপ ছিল। এই ভয় পাওয়ার প্রধান কারণ সুশাসনের অভাব। অবশ্য সুশাসন গুটিকয়েক দেশে থাকলেও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে নেই। বাংলাদেশে কখনোই ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে মনে হয় না। মিডিয়ার কিছু কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বিভিন্ন দেশেও বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ রয়েছে, তার মধ্যে মালয়েশিয়া হচ্ছে তার ‘সেকেন্ড হোম’। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হলে মালয়েশিয়া বিনিয়োগকারীকে তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেয়। ‘সেকেন্ড হোম’ কথাটি প্রথম শোনা যায় বিএনপির আমলে, পরে তা ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, যখন অনেকে পালিয়ে সেকেন্ড হোমে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শোনা গেছে কানাডার ‘বেগম পাড়ার’ কথা। পাচার করা অর্থ একসময় শুধু সুইজারল্যান্ডে জমা হতো, এখন হয় দুবাইতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের শত-সহস্র লোক বিদেশে নির্বিঘেœ অর্থ পাচার করছে। এই দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় সব অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার শপথ করে ক্ষমতায় গিয়ে চুপ হয়ে যান, কারণ যেসব দেশে অর্থ পাচার হয় সেই সব দেশ অর্থ পাচারের তথ্য গোপন রাখে, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও কিচ্ছু করতে পারে না।

দেশের বাইরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কোনো কার্যকর ক্ষমতা নেই, আমেরিকাসহ পশ্চিম দুনিয়া শুধু আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কর্মকা- রোধ করতে এন্টি মানিলন্ডারিং বা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সৃষ্টি করেছে, পাচার করা অবৈধ অর্থ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহৃত না হলে তা তাদের বিবেচনায় হালাল। বিভিন্ন মুসলিম ও নাসারা দেশে অর্থ পাচারের এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেনজীর আহমেদ দেশে এত বিপুল বিনিয়োগ করে নির্বোধের মতো কাঁচা কাজ করলেন কেন?

তিনি তো অশিক্ষিত ও বোকা নন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেবল ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে থেমে যাননি, পিএইচডিও করেছেন। শুধু সর্বোচ্চ ডিগ্রি নয়, তার অফুরন্ত ক্ষমতাও ছিল। ক্ষমতা থাকলে অবৈধ টাকাকে বৈধ করার ফন্দিফিকির, নানা অলিগলি বাতলিয়ে দেয়ার লোক খুঁজলেই পাওয়া যেত।

বাংলাদেশে বেনজীর একমাত্র লোক নন, ক্ষমতা ব্যবহার করে ঘুষ, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমগ্ন ছিলেন এবং আছেন বহু লোক। অর্থের মালিক হয়েই তারা হজ করেন, বেনজীর আহমেদও হজ করেছেন। আমাদের দেশে ক্ষমতা হারালেই শুধু দুর্নীতির হদিস পাওয়া যায়। বিএনপির আমলে কখনো বিএনপির লোককে ঘুষ আর দুর্নীতির জন্য ধরা হয়নি; একই ঘটনা লক্ষ্য করা যায় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও।

ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো সচিব, মন্ত্রীর দুর্নীতির কথা কেউ জানে না, জানে শুধু ক্ষমতা হারানোর পর। যে কর্মকর্তা ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে সেই কর্মকর্তা আবার পদোন্নতিও পায়, পদকও পায়। বড় বড় পদে নিয়োগ বা পদোন্নতি দেয়ার আগে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক রিপোর্টের প্রয়োজন হয়। এখন মনে হচ্ছে ওই সব রিপোর্টে শুধু রাজনৈতিক আনুগত্যই যাচাই করা হয়; সততা, দক্ষতা ইত্যাদি যাচাই করার রেওয়াজ নেই। অবশ্য যারা রিপোর্ট দেয় তাদের সততা না থাকলে ‘যা জল তা-ই পানি।’

সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন; তিনি দেশের সব দুর্নীতির দায়ভার নিতে নারাজ, তিনি প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন, সব দুর্নীতির তদন্ত দুদক করবে কেন? তার কথাটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হওয়া উচিত। সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা হয়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সরকারের অডিট অধিদপ্তর প্রায় প্রতি বছর নিরীক্ষা করে। এত নিরীক্ষার পরও একজন কর্মচারী বা কর্মকর্তা কীভাবে এত ঘুষ খায়, এত দুর্নীতি করার সুযোগ পায়?

মিডিয়ায় যেভাবে প্রতিদিন বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিবরণ দিচ্ছে তাতে মনে হয় তিনি নির্বিবাদে শত শত কোটি টাকা দুই হাতে প্রাকাশ্যে সংগ্রহ করেছেন। তার এই শত শত কোটি টাকা কি একদিনে হয়েছে? একদিনে হয়নি। অথচ চাকরি থাকাকালীন কেউ তার দুর্নীতির হদিসও পেল না। মিডিয়ায় প্রকাশিত সব তথ্য সত্য হলে শত-সহস্র লোক তার এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারা কারা?

দুঃখজনক হচ্ছে, সাংবাদিকদের অনুসন্ধিৎসু চোখে বেনজীরের অবৈধ সম্পদের কোন পূর্বাভাস ইতোপূর্বে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দুর্নীতির তালাশ করতে দেখা যায়, কিন্তু বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ছিটেফোঁটাও প্রকাশ করেনি। তাহলে দেশে শত শত পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া থাকার দরকার কী! এখন বড় বড় সাংবাদিক গলা উঁচু করে বলছেন, তারা সব জানতেন, কিন্তু ভয়ে প্রকাশ করেননি। সাংবাদিকরা কি জানেন না, গাজায় ইসরায়েলের গোলার আঘাতে শতাধিক সাংবাদিকের মৃত্যু হলেও অন্য সাংবাদিকরা ভয়ে গাজা ছাড়েননি। বেনজীরের এই জঘন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুধু মেইন স্ট্রিমের কয়েকটি পত্রিকা এক জোট হলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের রিপোর্টকে সমীহ করতে বাধ্য হতো।

দেশের বাইরে অবস্থান করে অসংখ্য ইউটিউবার সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে কর্কষ ভাষায় সরকারের সমালোচনা করছে, তাদের মুখেও বেনজীরের দুর্নীতির কথা শোনা যায়নি। জাতির জন্য দুঃখজনক হচ্ছে, যারা ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে তারাও এখন অফিস-আদালত, পাড়া-মহল্লায় বেনজীরের দুর্নীতির কঠোর সমালোচক।

আরও দুঃখজনক হচ্ছে বেনজীর আহমেদ নিজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন, দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রভাবশালী ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল শুধু ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তখন বড় বড় দুর্নীতিবাজের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন অফিস ও সংস্থার ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারী।

তখনকার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আইন যত কঠোর হয়, আইনের প্রয়োগ যত কড়া হয় ঘুষের মাত্রা তত বাড়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকেও অপ্রদর্শিত সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হয়েছিল। তখন মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, জাগুয়ার প্রভৃতি ব্রান্ডের নামিদামি গাড়ির মালিক খুঁজে পাওয়া যেত না, রাস্তাঘাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় অযতেœ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তাই ঘুষ আর দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। অসংখ্য বেনজীর আহমেদ রাষ্ট্রে আছে, থাকবেÑ নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ রাজনৈতিক দল এবং জনগণ দুর্নীতির আশ্রয়দাতা, যার সম্পদ বেশি তিনি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পান, তাকে জনগণ ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি বানায়। কোনো মাদ্রাসা, মসজিদ বা মন্দির, আলেম, পুরোহিত দান গ্রহণে হারাম টাকা প্রত্যাখ্যান করেনি। তারপরও ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মতো আরেকটি ঝড় আসা দরকার, এমন ঝড় এলে কিছুদিনের জন্য হলেও ঘুষ আর দুর্নীতি হ্রাস পাবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাকশালের সাবেক এমডি]

back to top