alt

উপ-সম্পাদকীয়

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

এম মনির উদ্দিন

: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বাংলাদেশে সব থেকে উচ্চ ফলনশীল এবং বায়োফর্টিফাইড জিংক, আয়রন ও সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ মসুর ডালের একটি জাত; বারি মসুর-৮ উদ্ভাবন করেছে যাকে মসুরের মেগা ভ্যারাইটি নামেও অভিহিত করা হয়। বারি মসুর-৮ এ রয়েছে ২৭.৮ শতাংশ প্রোটিন এবং এই জাতটির জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। হেক্টরপ্রতি বারি মসুর-৮ এর ফলন প্রায় ২.৭ টন। এই জাতটির বীজ বপনের সময় অক্টোবর এর শেষ সপ্তাহ থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত এবং ফসল উত্তোলনের সময় মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত। মসুর ডাল বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য একটি পুষ্টিকর খাবার। মসুর ডাল বাংলাদেশে প্রোটিন এবং মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টের ভালো একটি উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেখানে কম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাণিজ প্রোটিনের ক্রয়ের সামর্থ্য কম। বারি মসুর-৮ এর প্রথম বৈশিষ্ট্য হলোÑ এটি অনেকটা কা- ও শিকড় পচা রোগ এবং স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এটি দেরিতেও বপন করা যায়। অর্থাৎ বেশি জীবনকালের আমন ধান চাষের পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা যায়। এই উন্নত জাতটি দেশের মসুর ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে বায়োফর্টিফাইড বারি মসুর-৮ ১০০ গ্রাম কাঁচা বারি মসুর-৮ এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মানব শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কার্বোহাইড্রেট-২০.১৩ গ্রাম, প্রোটিন-৯.০২ গ্রাম, হজমকারী ফাইবার-৭.৯০ গ্রাম, ভিটামিন বি-৯ বা ফোলেট-২১৬-২৯০ মাইক্রো গ্রাম, আয়রন-৭.৪০ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ-১.৩৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস-২৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন-০.৮৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম-৩৬৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন-০.২০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লোবিন-০.০৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিন-১.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৫ বা প্যানটোথেনিক এসিড-২.১৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম-৩৬ মিলিগ্রাম, জিংক-৬.১ মিলিগ্রাম, সেলেনিয়াম-৩২৫ মাইক্রো গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম-২ মিলিগ্রাম। মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যার কারণে একে বলা হয়ে থাকে ‘গরিবের সস্তা প্রোটিন’। লাল মাংসের মতো উদ্ভিদজাত এই ডালে নেই কোন ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল। প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকায় মসুর ডাল পেশি, হাঁড়, ত্বক গঠন ও বজায় রাখতে সাহায্য করে। ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ, যে কোন প্রকার প্রদাহ, কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই, মস্তিস্কের স্বাস্থ্য বজায়, কোলোস্টেরলের মাত্রা উন্নতা করা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ফাইবার থাকায় হজমে সাহায্য করে। মাত্র ১ কাপ মসুরের ডালে ১৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে যা ২টি ডিমের থেকেও বেশি। মসুর ডালে ফোলেট থাকেÑ একটি বি ভিটামিন যা লোহিত রক্তকনিকা গঠনে সাহায্য করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মসুর ডাল চাষকারী কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মসুর ডালের চাষ বিগত বছরগুলোর তুলনায় ক্রমান্বয়ে কমছে। এর অন্যতম কারণগুলো হলো : বিভিন্ন ফসলের চাহিদা বেড়েছে এবং কিছু ফসল রয়েছে যা কৃষকদের জন্য মসুর ডালের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বর্তমানে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষক অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় সেই ফসল চাষে বেশি মনোযোগী হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাভজনক ফসলগুলো হচ্ছেÑ ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকারের সবজি, সরিষা ইত্যাদি। কৃষক তার পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় বোরো ধান চাষকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ফলে বোরো ধান চাষ করার ফলে মসুর ডাল চাষ শস্য বিন্যাসে খাপ না খাওয়ায় কমে গিয়েছে। বারি মসুর-৮ চাষ করা কৃষকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয় সর্ম্পকে জানা যায় তা হচ্ছে : কৃষক যারা ইতোমধ্যে বারি মসুর-৮ এর চাষ করেছেন, তারা বিগত দিনের অন্য সব জাতের মসুরের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ফলন পেয়েছেন। তারা বারি মসুর-৮ এর বিঘাপ্রতি ৮-৯ মণ ফলন পেয়েছেন। যদিও কৃষক বারি মসুর-৮ এর পুষ্টিগুণ বা এটি যে জিংক ও আয়রন বায়োফর্টিফাইড একটি ফসল তা জানে না। কৃষক বর্তমানে মসুর ডাল চাষ করতে গিয়ে প্রধান ২টি রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন যার কারণে তারা মসুর ডাল চাষ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে প্রথমটি হলো, মসুর ডালের বীজ বপনের পর চারার বয়স ২০-৩০ দিন সময়ে চারার গোড়া পচে গিয়ে মারা যায় এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মসুর ডালের ফুল ফোটার সময়ে পাতার ঝলসে পড়া (স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট) রোগ যার ফলে মসুর ডালের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষক মসুর ডাল চাষ করলে তাদের জমি ভালো থাকে, জমির উর্বরতা বাড়ে যা মসুর ডাল চাষের পরের ফসলের ফলন ভালো হয়। সেই সঙ্গে মসুর ডালের গাছের বিভিন্ন অংশ গবাদিপশুর জন্য স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য হিসেবে তারা গবাদিপশুকে খাওয়ায়। কৃষিবিজ্ঞানী এবং কৃষি কর্মকর্তাদের আলোচনার ভিত্তিতে বারি মসুর-৮ এর চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে মসুর ডালের মোট উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যেসব সুপারিশ উঠে আসে তা নি¤œরূপ :

মসুর ডালের প্রধান দুটি রোগ বিশেষ করে গোড়া পচা এবং স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন তা হলোÑ মসুর ডালের গোড়া পচা রোগের ছত্রাকের বীজানু মাটির অভ্যন্তরে অক্সিজেন কম থাকার কারনে সুপ্তাবস্থায় থাকে। তবে, যখন জমিতে ৩-৪টি চাষ দিয়ে মসুর ডালের বীজ বপন করা হয় তখন ছত্রাকের বীজানুগুলো বাইরের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে এবং দ্রুত অংকুরোদগম হয়। এ অবস্থায় মসুরের ডালের বীজ অংকুরোদগম হওয়ার পর পরই অংকুরিত ছত্রাক মসুর ডালের চারায় আক্রমণ করে এবং চারার গোড়া পচে যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য করণীয় : আমন ধানের পর যখন মসুর করা হয়, সেক্ষেত্রে আমন ধান কাটার মাসখানেক আগে বিনাচাষে মসুর ডালের বীজ ছিটিয়ে দেয়া। এতে মসুর ডালের বীজ অংকুরিত হয়ে ধানের গোড়া বেয়ে লম্বা হবে এবং ধান কাটার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে মসুরের ভালো ফলন পাওয়া যাবে। অধিকন্তু, এতে জমি চাষ না দেয়ায় মসুর ডালে গোড়া পচা রোগ দেখা দেয় না। মসুর ডালের গুণগত মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করতে হবে। কৃষক পর্যায়ে বীজ রোগবিহীন জমি থেকে সংগ্রহ করে সঠিকভাবে শুকিয়ে পলিথিন ব্যাগ বা টিনের পাত্রে ভালোভাবে রাখতে হবে যাতে বীজে কোন পোকা আক্রমণ না করে এবং বীজের আর্দ্রতা না বাড়ে। কখনো সাধারণভাবে রাখা অবীজ ব্যবহার করা যাবে না। মসুর ডালের বীজ বপনের আগে অবশ্যই বীজ শোধনকারী ছত্রাকনাশক যেমন প্রোভেক্স, ভিটাভ্যাক্স দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বীজ শোধনের জন্য প্রোভেক্স যাতে বীজের সঙ্গে ভালোভাবে লেগে থাকে তার জন্য ভাতের মাড় দিয়ে বীজ প্রোভেক্স মিশালে ভালোভাবে মেশানো হবে। এক্ষেত্রে শোধন করা বীজ বপন করার ১ মাস পর আবার প্রয়োজনে প্রোভেক্স বা অন্য কোন ছত্রাকনাশক বিকেলে জমিতে স্প্রে করে দিতে হবে যাতে রাতের কুয়াশার মাধ্যমে ছত্রাকনাশক গাছের গোড়ায় পড়ে।

(চলবে)

[লেখক : অ্যাগ্রোনমিস্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ]

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য বয়সবৈষম্য দূর করুন

আসন্ন বোরো উৎপাদন ও কিছু শঙ্কা

ছবি

আইন পেশার জানা-অজানা কথা

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট

একাকিত্ব ও মানসিক অশান্তি

বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজ

ব্রি: কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর

ক্রেতা ঠকে গেলে তার আইনগত প্রতিকার

ঢাকার যানজট : কিছু প্রস্তাব

রম্যগদ্য : দারিদ্র্য যাবে জাদুঘরে

গার্মেন্টস খাতে সংকট

সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনায় করুণ দশা

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বাড়াতে

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির দুর্বলতা

ইরানের কেন কৌশলগত পরিবর্তন

শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

প্রত্যাশিত শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবিত রূপরেখা

ব্যাংক খাতের সংস্কার

শিক্ষার একটি স্থায়ী কমিশন সময়ের দাবি

ছবি

ক্ষমতা এখন ‘মব’-এর হাতে

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বামপন্থির উত্থান

আমন ধানে আগাম ফুল আসার কারণ

কী হবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি

রম্যগদ্য : ‘বল করে দুর্বল...’

মধ্যপ্রাচ্যে প্রযুক্তিগত যুদ্ধ

বন্যাপরবর্তী কৃষি উৎপাদনে সময়োপযোগী সহায়তা প্রদান

গুণগত উন্নয়নই সমাজের প্রকৃত উন্নতির চাবিকাঠি

বিশেষ শিশু ও বিশেষ শিক্ষালয়

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অধিকার

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি

প্রসঙ্গ : আনসার বাহিনী

শান্তির সংস্কৃতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

এম মনির উদ্দিন

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বাংলাদেশে সব থেকে উচ্চ ফলনশীল এবং বায়োফর্টিফাইড জিংক, আয়রন ও সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ মসুর ডালের একটি জাত; বারি মসুর-৮ উদ্ভাবন করেছে যাকে মসুরের মেগা ভ্যারাইটি নামেও অভিহিত করা হয়। বারি মসুর-৮ এ রয়েছে ২৭.৮ শতাংশ প্রোটিন এবং এই জাতটির জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। হেক্টরপ্রতি বারি মসুর-৮ এর ফলন প্রায় ২.৭ টন। এই জাতটির বীজ বপনের সময় অক্টোবর এর শেষ সপ্তাহ থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত এবং ফসল উত্তোলনের সময় মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত। মসুর ডাল বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য একটি পুষ্টিকর খাবার। মসুর ডাল বাংলাদেশে প্রোটিন এবং মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টের ভালো একটি উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেখানে কম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাণিজ প্রোটিনের ক্রয়ের সামর্থ্য কম। বারি মসুর-৮ এর প্রথম বৈশিষ্ট্য হলোÑ এটি অনেকটা কা- ও শিকড় পচা রোগ এবং স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এটি দেরিতেও বপন করা যায়। অর্থাৎ বেশি জীবনকালের আমন ধান চাষের পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা যায়। এই উন্নত জাতটি দেশের মসুর ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে বায়োফর্টিফাইড বারি মসুর-৮ ১০০ গ্রাম কাঁচা বারি মসুর-৮ এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মানব শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কার্বোহাইড্রেট-২০.১৩ গ্রাম, প্রোটিন-৯.০২ গ্রাম, হজমকারী ফাইবার-৭.৯০ গ্রাম, ভিটামিন বি-৯ বা ফোলেট-২১৬-২৯০ মাইক্রো গ্রাম, আয়রন-৭.৪০ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ-১.৩৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস-২৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন-০.৮৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম-৩৬৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন-০.২০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লোবিন-০.০৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিন-১.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৫ বা প্যানটোথেনিক এসিড-২.১৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম-৩৬ মিলিগ্রাম, জিংক-৬.১ মিলিগ্রাম, সেলেনিয়াম-৩২৫ মাইক্রো গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম-২ মিলিগ্রাম। মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যার কারণে একে বলা হয়ে থাকে ‘গরিবের সস্তা প্রোটিন’। লাল মাংসের মতো উদ্ভিদজাত এই ডালে নেই কোন ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল। প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকায় মসুর ডাল পেশি, হাঁড়, ত্বক গঠন ও বজায় রাখতে সাহায্য করে। ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ, যে কোন প্রকার প্রদাহ, কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই, মস্তিস্কের স্বাস্থ্য বজায়, কোলোস্টেরলের মাত্রা উন্নতা করা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ফাইবার থাকায় হজমে সাহায্য করে। মাত্র ১ কাপ মসুরের ডালে ১৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে যা ২টি ডিমের থেকেও বেশি। মসুর ডালে ফোলেট থাকেÑ একটি বি ভিটামিন যা লোহিত রক্তকনিকা গঠনে সাহায্য করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মসুর ডাল চাষকারী কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মসুর ডালের চাষ বিগত বছরগুলোর তুলনায় ক্রমান্বয়ে কমছে। এর অন্যতম কারণগুলো হলো : বিভিন্ন ফসলের চাহিদা বেড়েছে এবং কিছু ফসল রয়েছে যা কৃষকদের জন্য মসুর ডালের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বর্তমানে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষক অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় সেই ফসল চাষে বেশি মনোযোগী হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাভজনক ফসলগুলো হচ্ছেÑ ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকারের সবজি, সরিষা ইত্যাদি। কৃষক তার পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় বোরো ধান চাষকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ফলে বোরো ধান চাষ করার ফলে মসুর ডাল চাষ শস্য বিন্যাসে খাপ না খাওয়ায় কমে গিয়েছে। বারি মসুর-৮ চাষ করা কৃষকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয় সর্ম্পকে জানা যায় তা হচ্ছে : কৃষক যারা ইতোমধ্যে বারি মসুর-৮ এর চাষ করেছেন, তারা বিগত দিনের অন্য সব জাতের মসুরের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ফলন পেয়েছেন। তারা বারি মসুর-৮ এর বিঘাপ্রতি ৮-৯ মণ ফলন পেয়েছেন। যদিও কৃষক বারি মসুর-৮ এর পুষ্টিগুণ বা এটি যে জিংক ও আয়রন বায়োফর্টিফাইড একটি ফসল তা জানে না। কৃষক বর্তমানে মসুর ডাল চাষ করতে গিয়ে প্রধান ২টি রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন যার কারণে তারা মসুর ডাল চাষ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে প্রথমটি হলো, মসুর ডালের বীজ বপনের পর চারার বয়স ২০-৩০ দিন সময়ে চারার গোড়া পচে গিয়ে মারা যায় এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মসুর ডালের ফুল ফোটার সময়ে পাতার ঝলসে পড়া (স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট) রোগ যার ফলে মসুর ডালের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষক মসুর ডাল চাষ করলে তাদের জমি ভালো থাকে, জমির উর্বরতা বাড়ে যা মসুর ডাল চাষের পরের ফসলের ফলন ভালো হয়। সেই সঙ্গে মসুর ডালের গাছের বিভিন্ন অংশ গবাদিপশুর জন্য স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য হিসেবে তারা গবাদিপশুকে খাওয়ায়। কৃষিবিজ্ঞানী এবং কৃষি কর্মকর্তাদের আলোচনার ভিত্তিতে বারি মসুর-৮ এর চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে মসুর ডালের মোট উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যেসব সুপারিশ উঠে আসে তা নি¤œরূপ :

মসুর ডালের প্রধান দুটি রোগ বিশেষ করে গোড়া পচা এবং স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন তা হলোÑ মসুর ডালের গোড়া পচা রোগের ছত্রাকের বীজানু মাটির অভ্যন্তরে অক্সিজেন কম থাকার কারনে সুপ্তাবস্থায় থাকে। তবে, যখন জমিতে ৩-৪টি চাষ দিয়ে মসুর ডালের বীজ বপন করা হয় তখন ছত্রাকের বীজানুগুলো বাইরের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে এবং দ্রুত অংকুরোদগম হয়। এ অবস্থায় মসুরের ডালের বীজ অংকুরোদগম হওয়ার পর পরই অংকুরিত ছত্রাক মসুর ডালের চারায় আক্রমণ করে এবং চারার গোড়া পচে যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য করণীয় : আমন ধানের পর যখন মসুর করা হয়, সেক্ষেত্রে আমন ধান কাটার মাসখানেক আগে বিনাচাষে মসুর ডালের বীজ ছিটিয়ে দেয়া। এতে মসুর ডালের বীজ অংকুরিত হয়ে ধানের গোড়া বেয়ে লম্বা হবে এবং ধান কাটার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে মসুরের ভালো ফলন পাওয়া যাবে। অধিকন্তু, এতে জমি চাষ না দেয়ায় মসুর ডালে গোড়া পচা রোগ দেখা দেয় না। মসুর ডালের গুণগত মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করতে হবে। কৃষক পর্যায়ে বীজ রোগবিহীন জমি থেকে সংগ্রহ করে সঠিকভাবে শুকিয়ে পলিথিন ব্যাগ বা টিনের পাত্রে ভালোভাবে রাখতে হবে যাতে বীজে কোন পোকা আক্রমণ না করে এবং বীজের আর্দ্রতা না বাড়ে। কখনো সাধারণভাবে রাখা অবীজ ব্যবহার করা যাবে না। মসুর ডালের বীজ বপনের আগে অবশ্যই বীজ শোধনকারী ছত্রাকনাশক যেমন প্রোভেক্স, ভিটাভ্যাক্স দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বীজ শোধনের জন্য প্রোভেক্স যাতে বীজের সঙ্গে ভালোভাবে লেগে থাকে তার জন্য ভাতের মাড় দিয়ে বীজ প্রোভেক্স মিশালে ভালোভাবে মেশানো হবে। এক্ষেত্রে শোধন করা বীজ বপন করার ১ মাস পর আবার প্রয়োজনে প্রোভেক্স বা অন্য কোন ছত্রাকনাশক বিকেলে জমিতে স্প্রে করে দিতে হবে যাতে রাতের কুয়াশার মাধ্যমে ছত্রাকনাশক গাছের গোড়ায় পড়ে।

(চলবে)

[লেখক : অ্যাগ্রোনমিস্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ]

back to top