alt

উপ-সম্পাদকীয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

কামরুজ্জামান

: রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আমাদের দেশে বেশি শীত পড়ে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। প্রতিবছর এই সময়টাতে এক-দুইটা শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়। তবে উত্তরবঙ্গে শীত আরও আগে শুরু হয়। নভেম্বরের ২০ তারিখের পর থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। জানুয়ারির ১৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকে এবং বেশির ভাগ সময় শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করে। শীত তখন জেঁকে বসে। শীতের এই সময় টুকুতে গরীব অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ শীত বস্ত্রের অভাবে নিদারুন কষ্ট করে। যা অবর্ণনীয়, অমানবিক এবং কষ্টদায়ক হয়ে উঠে।

আমাদের দেশে অসংখ্য ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষ রয়েছে যাদের আয়রোজগার নেই বললেই চলে। আবার কিছু মানুষ রয়েছে যাদের নেই কোন নির্দিষ্ট বাসস্থান। আরও কিছু মানুষ রয়েছে যারা বসবাস করে গাছের নিচে, রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে, ফুটপাতে, ফুটওভার ও ফ্লাইওভারের নিচে। এই সব মানুষগুলো সবসময় মানবেতর জীবন-যাপন করে। শীত বেশি হলে এই মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। শীতে নিদারুণ কষ্ট করে। শীতের সময়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো সমাজের বিত্তবানদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।

শীতে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী মানুষদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এখানে বলে রাখা হয়- শীতার্তদের মাঝে সাহায্য সহযোগিতা সবসময়ই করা হয়। তবে এই সাহায্য সহযোগিতা অনেকসময় দেখা যায় লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়। এবং মানহীন শীত বস্ত্র ও শীত চলে গেলে বিতরণ করা হয়। তবে অনেক সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শীতার্তদের মাঝে শুরু থেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে পর্যাপ্ত নয়। আরও বেশি পরিসরে করতে পারলে অসহায় মানুষগুলো হয়তো সুবিধা পাবে। আর এর জন্য বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যায়- ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। খেটে খাওয়া মানুষ সকালের দিকে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। যেতে পারছে না কর্মক্ষেত্রে। যারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করে তারা ঘর থেকে বের হতে না পারলে অর্থ কষ্টে ভোগে। শীতে আমাদের দেশে নানা রকমের রোগবালাই দেখা দেয়। এগুলো শীতকালীন অসুখবিসুখ বলা যায়। এর মধ্যে ঠান্ডা কাশি, হালকা জ্বর ও পাতলা পায়খানার মতো রোগ হয়। বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হয় বেশি। শীতের রোগবালাইয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যায়।

অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের বেশি শীতে শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট যেমন হয় তেমনি নানা রকমের রোগবালাই কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেয়। সমাজে যারা সামর্থ্যবান আছে তারা একটু এগিয়ে এলে অনেক মানুষেরই কষ্ট লাগব হয়।

ছিন্নমূল মানুষের অনেক সমস্যা। এই মানুষগুলোর যে সব পরিধেয় কাপড় থাকে তা তারা সংরক্ষণ করতে পারে না। বিশেষ করে শীতবস্ত্র সংরক্ষণ করার সুযোগ তাদের নেই বললেই চলে। ফলে দেখা যায় তারা শীত নিবারনের জন্য যে বস্ত্র সংগ্রহ করে তা শীত চলে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে ফেলে বা নষ্ট হয়ে যায়। তাই তারা শীত আসলেই অপেক্ষা করতে থাকে একটি শীতবস্ত্রের। সমাজের সামর্থ্যবান যারা তারা যদি সচেতনতার জায়গা থেকে একটি দু’টি করে শীতের কাপড় অন্তত একজন কিংবা সম্ভব হলে দুজন মানুষকে উপহার দিতে পারে তাহলেও ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের অনেক উপকার হয়।

আরও একটি বিষয় আমাদের দেশে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনেকেই করে। যেমন আছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তেমনি আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ধনী ব্যক্তি। রাজনৈতিক ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। বরাবরই দেখা যায়-শীতের মাঝামাঝি কিংবা শীতের শেষে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কাজটি অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। অর্থের জোগান করতে হয়। কিন্তু যারা উপকারী তারা এর সুবিধা পেতে দেরি হয়ে যায়।

সমাজে সামর্থ্যবান কারা? যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল ও সুস্থ মানুষ তারাই সামর্থ্যবান। তবে আর্থিক মানদ-ে যারা ধনী ও টাকা ওয়ালা তারাই সামর্থ্যবান। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় স্বচ্ছল ও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। যারা ইচ্ছে করলেই গরীব অসহায় মানুষের মাঝে সময়মতো শীতবস্ত্র বিতরণ করা কঠিন কোনো কাজ নয়। আমাদের দেশে ঢাকাসহ বড় শহর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে প্রচুর অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। এরা বেশির ভাগ বস্তি, রেললাইনের প্লাটফর্ম, ফুটওভার ও ফ্লাইওভারের নিচে বসবাস করে। এই মানুষগুলোর শীত বস্ত্রের বেশি প্রয়োজন পড়ে। দরিদ্র প্রতিবন্ধী মানুষও রয়েছে অনেক যাদের একটা শীতবস্ত্রই হয় বেঁচে থাকার অবলম্বন।

সমাজে বিত্তবান মানুষের অব্যবহৃত অনেক জামাকাপড় থেকে যায়। যেগুলো কখনও পরিধান করা হয় না। এটা প্রতিটি বাড়িতে থাকে। ব্যবহার না করার কারণে একটা সময় পরে কাপড়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর ইচ্ছে করলেও কাউকে দেয়া যায় না। বা দিলেও ব্যবহার করতে পারে না। এটা দুঃখজনক। সেজন্য একটু সচেতন হয়ে অব্যবহৃত জামাকাপড় বিশেষ করে শীতের এই সময় অব্যবহৃত শীতবস্ত্র গরীব ও অসহায় মানুষকে দান করে দিলে খুবই ভালো হয়।

আমাদের দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে। “পৌষের শীতে ভূষি ওড়ে, মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে।” পৌষ মাঘ মাসে আমাদের দেশে হাড় কাঁপানো শীত পড়ে। বিশেষ করে মাঘের শীত ভয়ংকর হয়। এই সময়টাতে ধনীরাও হাড়কাঁপানো শীতের টের পায়।

উত্তর থেকে আসা হিমশীতল শৈত্যপ্রবাহ ও মাঘের শীত আমাদের দেশের দরিদ্র ও অসহায় শীতার্ত মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট হয়। সামর্থ্যবান মানুষের উচিত এ সময়টাতে শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা। এর ফলে পথশিশু, অসহায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী মানুষ, ভাসমান ও বস্তিবাসী মানুষ এবং রেলওয়ে প্লাটফর্ম ও ফুটওভার, ফ্লাইওভারের নিচে বসবাসকারী মানুষের উপকার হবে। আশা করি বিত্তবান ও সামর্থ্যবান মানুষ উদারতা নিয়ে এগিয়ে আসবে।

[ লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

শুভ বড়দিন

উগান্ডায় নতুন ভাইরাস ডিঙ্গা ডিঙ্গা

পরিবেশবান্ধব ঢাকা চাই

বনভূমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সৃষ্টির প্রথম ভ্রুণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা

প্রগতিতে অগ্রগতি

পরিবারতন্ত্র ও পরিবারতত্ত্ব : উত্তরণের উপায়

উপেক্ষিত উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা

সরিষার তেল গবেষণায় সাফল্য

সিরিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদল : কার লাভ, কার ক্ষতি?

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

কামরুজ্জামান

রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আমাদের দেশে বেশি শীত পড়ে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। প্রতিবছর এই সময়টাতে এক-দুইটা শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়। তবে উত্তরবঙ্গে শীত আরও আগে শুরু হয়। নভেম্বরের ২০ তারিখের পর থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। জানুয়ারির ১৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকে এবং বেশির ভাগ সময় শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করে। শীত তখন জেঁকে বসে। শীতের এই সময় টুকুতে গরীব অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ শীত বস্ত্রের অভাবে নিদারুন কষ্ট করে। যা অবর্ণনীয়, অমানবিক এবং কষ্টদায়ক হয়ে উঠে।

আমাদের দেশে অসংখ্য ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষ রয়েছে যাদের আয়রোজগার নেই বললেই চলে। আবার কিছু মানুষ রয়েছে যাদের নেই কোন নির্দিষ্ট বাসস্থান। আরও কিছু মানুষ রয়েছে যারা বসবাস করে গাছের নিচে, রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে, ফুটপাতে, ফুটওভার ও ফ্লাইওভারের নিচে। এই সব মানুষগুলো সবসময় মানবেতর জীবন-যাপন করে। শীত বেশি হলে এই মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। শীতে নিদারুণ কষ্ট করে। শীতের সময়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো সমাজের বিত্তবানদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।

শীতে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী মানুষদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এখানে বলে রাখা হয়- শীতার্তদের মাঝে সাহায্য সহযোগিতা সবসময়ই করা হয়। তবে এই সাহায্য সহযোগিতা অনেকসময় দেখা যায় লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়। এবং মানহীন শীত বস্ত্র ও শীত চলে গেলে বিতরণ করা হয়। তবে অনেক সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শীতার্তদের মাঝে শুরু থেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে পর্যাপ্ত নয়। আরও বেশি পরিসরে করতে পারলে অসহায় মানুষগুলো হয়তো সুবিধা পাবে। আর এর জন্য বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যায়- ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। খেটে খাওয়া মানুষ সকালের দিকে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। যেতে পারছে না কর্মক্ষেত্রে। যারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করে তারা ঘর থেকে বের হতে না পারলে অর্থ কষ্টে ভোগে। শীতে আমাদের দেশে নানা রকমের রোগবালাই দেখা দেয়। এগুলো শীতকালীন অসুখবিসুখ বলা যায়। এর মধ্যে ঠান্ডা কাশি, হালকা জ্বর ও পাতলা পায়খানার মতো রোগ হয়। বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হয় বেশি। শীতের রোগবালাইয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যায়।

অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের বেশি শীতে শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট যেমন হয় তেমনি নানা রকমের রোগবালাই কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেয়। সমাজে যারা সামর্থ্যবান আছে তারা একটু এগিয়ে এলে অনেক মানুষেরই কষ্ট লাগব হয়।

ছিন্নমূল মানুষের অনেক সমস্যা। এই মানুষগুলোর যে সব পরিধেয় কাপড় থাকে তা তারা সংরক্ষণ করতে পারে না। বিশেষ করে শীতবস্ত্র সংরক্ষণ করার সুযোগ তাদের নেই বললেই চলে। ফলে দেখা যায় তারা শীত নিবারনের জন্য যে বস্ত্র সংগ্রহ করে তা শীত চলে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে ফেলে বা নষ্ট হয়ে যায়। তাই তারা শীত আসলেই অপেক্ষা করতে থাকে একটি শীতবস্ত্রের। সমাজের সামর্থ্যবান যারা তারা যদি সচেতনতার জায়গা থেকে একটি দু’টি করে শীতের কাপড় অন্তত একজন কিংবা সম্ভব হলে দুজন মানুষকে উপহার দিতে পারে তাহলেও ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের অনেক উপকার হয়।

আরও একটি বিষয় আমাদের দেশে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনেকেই করে। যেমন আছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তেমনি আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ধনী ব্যক্তি। রাজনৈতিক ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। বরাবরই দেখা যায়-শীতের মাঝামাঝি কিংবা শীতের শেষে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কাজটি অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। অর্থের জোগান করতে হয়। কিন্তু যারা উপকারী তারা এর সুবিধা পেতে দেরি হয়ে যায়।

সমাজে সামর্থ্যবান কারা? যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল ও সুস্থ মানুষ তারাই সামর্থ্যবান। তবে আর্থিক মানদ-ে যারা ধনী ও টাকা ওয়ালা তারাই সামর্থ্যবান। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় স্বচ্ছল ও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। যারা ইচ্ছে করলেই গরীব অসহায় মানুষের মাঝে সময়মতো শীতবস্ত্র বিতরণ করা কঠিন কোনো কাজ নয়। আমাদের দেশে ঢাকাসহ বড় শহর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে প্রচুর অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। এরা বেশির ভাগ বস্তি, রেললাইনের প্লাটফর্ম, ফুটওভার ও ফ্লাইওভারের নিচে বসবাস করে। এই মানুষগুলোর শীত বস্ত্রের বেশি প্রয়োজন পড়ে। দরিদ্র প্রতিবন্ধী মানুষও রয়েছে অনেক যাদের একটা শীতবস্ত্রই হয় বেঁচে থাকার অবলম্বন।

সমাজে বিত্তবান মানুষের অব্যবহৃত অনেক জামাকাপড় থেকে যায়। যেগুলো কখনও পরিধান করা হয় না। এটা প্রতিটি বাড়িতে থাকে। ব্যবহার না করার কারণে একটা সময় পরে কাপড়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর ইচ্ছে করলেও কাউকে দেয়া যায় না। বা দিলেও ব্যবহার করতে পারে না। এটা দুঃখজনক। সেজন্য একটু সচেতন হয়ে অব্যবহৃত জামাকাপড় বিশেষ করে শীতের এই সময় অব্যবহৃত শীতবস্ত্র গরীব ও অসহায় মানুষকে দান করে দিলে খুবই ভালো হয়।

আমাদের দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে। “পৌষের শীতে ভূষি ওড়ে, মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে।” পৌষ মাঘ মাসে আমাদের দেশে হাড় কাঁপানো শীত পড়ে। বিশেষ করে মাঘের শীত ভয়ংকর হয়। এই সময়টাতে ধনীরাও হাড়কাঁপানো শীতের টের পায়।

উত্তর থেকে আসা হিমশীতল শৈত্যপ্রবাহ ও মাঘের শীত আমাদের দেশের দরিদ্র ও অসহায় শীতার্ত মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট হয়। সামর্থ্যবান মানুষের উচিত এ সময়টাতে শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা। এর ফলে পথশিশু, অসহায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী মানুষ, ভাসমান ও বস্তিবাসী মানুষ এবং রেলওয়ে প্লাটফর্ম ও ফুটওভার, ফ্লাইওভারের নিচে বসবাসকারী মানুষের উপকার হবে। আশা করি বিত্তবান ও সামর্থ্যবান মানুষ উদারতা নিয়ে এগিয়ে আসবে।

[ লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]

back to top