alt

উপ-সম্পাদকীয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

জমির দলিলে এবং খতিয়ানে জমির শ্রেণী যেমন চালা ভূমি, নাল জমি, চান্দিনা ভিটি, কোলা জমি, চিরাগী, পালাম ভূমি, ভিটি, সিকস্তি, পয়স্তি ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। এ শব্দগুলো দ্বারা আসলে কী ধরনের জমি বোঝায়?

যেমন জমির দলিল বা খতিয়ান পর্যালোচনা করতে গিয়ে অনেক সময় একটি শব্দ চোখে পড়ে ‘চালা ভূমি’। তবে এই শব্দটির প্রকৃত অর্থ অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘চালা’ মূলত জমির শ্রেণী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত একটি শব্দ, যার মাধ্যমে বোঝানো হয় উঁচু আবাদযোগ্য ভূমি। ‘চালা’ বলতে সাধারণভাবে সেইসব ভূমিকে বোঝানো হয়, যা স্বাভাবিক জমির তুলনায় কিছুটা উঁচু এবং যেখানে চাষাবাদ সম্ভব। অনেক সময় পুকুরের পাড়, যেটা সাধারণত একটু উঁচু হয়, সেটাও ‘চালাভূমি’ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এসব স্থানে মানুষ গাছ লাগায়, কখনো কখনো শাকসবজিও আবাদ করে। অর্থাৎ এটি এক ধরনের আবাদযোগ্য জমি, তবে তা নিচু ফসলি জমির মতো নয়।

আর নাল জমি হচ্ছে ২-৩ ফসলি সমতল ভূমিকে নাল জমি বলা হয়। অর্থাৎ সাধারণত নিচুঁ সমতল কৃষি জমিকে নাল জমি বলে।

চান্দিনা ভিটি জমি হচ্ছে হাট বাজারের স্থায়ী বা অস্থায়ী অকৃষি জমির যে অংশ প্রজার প্রতি বরাদ্দ দেয়া হয় তাকে চান্দিনা ভিটি বলে।

চিরাগী জমি হচ্ছে মসজিদ বা কবরস্থান আলোকিত করার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত নিষ্কর ভূমি।

পালাম ভূমি হচ্ছে বসতবাড়ি সংলগ্ন সবজি চাষের জন্য উঁচু ভিটি জমিকে পালাম ভূমি বলে। বসত বাড়ির জমির শ্রেণীকে বর্তমানে ভিটি বলা হয়। জমি হস্তান্তরের সময় দলিলে কিংবা জরিপের সময় পর্চায় বসত বাড়ির জমির শ্রেণীর নাম লেখা হয় ভিটি।

যেগুলো একটু নিচু প্রকৃতির আবাদযোগ্য ফসলি জমি সে জমিগুলো বাইদ শ্রেণীর জমি বলা হয়। এই বাইদ শব্দটি ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় বহুল প্রচলিত। যে জমিগুলো নদী ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে গেছে, খাস হয়ে গেছে সেই সব জমিগুলোকে সিকস্তি শ্রেণীর জমি বলা হয়। পয়স্তি শ্রেণীর জমি হচ্ছে সিকস্তি শ্রেণীর জমির বিপরীত। অর্থাৎ নদী ভাঙ্গণের পর যখন চর জেগে ওঠে সেই সকল চর এলাকার জমিগুলোকে পয়স্তি শ্রেণীর জমি বলা হয়।

জমির শ্রেণী নির্ধারণে এ শব্দগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ জমির শ্রেণী অনুযায়ী তার মূল্য, কর নির্ধারণ, ব্যবহার এবং বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির প্রকৃত শ্রেণী সম্পর্কে না জেনে দলিলপত্র সম্পাদন করলে পরবর্তীতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।

জমির শ্রেণী পরিবর্তনের জন্য প্রথমে ১০ টাকার কোর্ট ফিসহ একটি আবেদন দাখিল করতে হবে। এরপর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আবেদনটি প্রতিবেদনের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পাঠাবেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর শুনানির জন্য নোটিস প্রদান করা হয়। শুনানি শেষে কাগজপত্র বিবেচনা করে কোনো আপত্তি না থাকলে ভূমি শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

জমির দলিলে এবং খতিয়ানে জমির শ্রেণী যেমন চালা ভূমি, নাল জমি, চান্দিনা ভিটি, কোলা জমি, চিরাগী, পালাম ভূমি, ভিটি, সিকস্তি, পয়স্তি ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। এ শব্দগুলো দ্বারা আসলে কী ধরনের জমি বোঝায়?

যেমন জমির দলিল বা খতিয়ান পর্যালোচনা করতে গিয়ে অনেক সময় একটি শব্দ চোখে পড়ে ‘চালা ভূমি’। তবে এই শব্দটির প্রকৃত অর্থ অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘চালা’ মূলত জমির শ্রেণী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত একটি শব্দ, যার মাধ্যমে বোঝানো হয় উঁচু আবাদযোগ্য ভূমি। ‘চালা’ বলতে সাধারণভাবে সেইসব ভূমিকে বোঝানো হয়, যা স্বাভাবিক জমির তুলনায় কিছুটা উঁচু এবং যেখানে চাষাবাদ সম্ভব। অনেক সময় পুকুরের পাড়, যেটা সাধারণত একটু উঁচু হয়, সেটাও ‘চালাভূমি’ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এসব স্থানে মানুষ গাছ লাগায়, কখনো কখনো শাকসবজিও আবাদ করে। অর্থাৎ এটি এক ধরনের আবাদযোগ্য জমি, তবে তা নিচু ফসলি জমির মতো নয়।

আর নাল জমি হচ্ছে ২-৩ ফসলি সমতল ভূমিকে নাল জমি বলা হয়। অর্থাৎ সাধারণত নিচুঁ সমতল কৃষি জমিকে নাল জমি বলে।

চান্দিনা ভিটি জমি হচ্ছে হাট বাজারের স্থায়ী বা অস্থায়ী অকৃষি জমির যে অংশ প্রজার প্রতি বরাদ্দ দেয়া হয় তাকে চান্দিনা ভিটি বলে।

চিরাগী জমি হচ্ছে মসজিদ বা কবরস্থান আলোকিত করার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত নিষ্কর ভূমি।

পালাম ভূমি হচ্ছে বসতবাড়ি সংলগ্ন সবজি চাষের জন্য উঁচু ভিটি জমিকে পালাম ভূমি বলে। বসত বাড়ির জমির শ্রেণীকে বর্তমানে ভিটি বলা হয়। জমি হস্তান্তরের সময় দলিলে কিংবা জরিপের সময় পর্চায় বসত বাড়ির জমির শ্রেণীর নাম লেখা হয় ভিটি।

যেগুলো একটু নিচু প্রকৃতির আবাদযোগ্য ফসলি জমি সে জমিগুলো বাইদ শ্রেণীর জমি বলা হয়। এই বাইদ শব্দটি ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় বহুল প্রচলিত। যে জমিগুলো নদী ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে গেছে, খাস হয়ে গেছে সেই সব জমিগুলোকে সিকস্তি শ্রেণীর জমি বলা হয়। পয়স্তি শ্রেণীর জমি হচ্ছে সিকস্তি শ্রেণীর জমির বিপরীত। অর্থাৎ নদী ভাঙ্গণের পর যখন চর জেগে ওঠে সেই সকল চর এলাকার জমিগুলোকে পয়স্তি শ্রেণীর জমি বলা হয়।

জমির শ্রেণী নির্ধারণে এ শব্দগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ জমির শ্রেণী অনুযায়ী তার মূল্য, কর নির্ধারণ, ব্যবহার এবং বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির প্রকৃত শ্রেণী সম্পর্কে না জেনে দলিলপত্র সম্পাদন করলে পরবর্তীতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।

জমির শ্রেণী পরিবর্তনের জন্য প্রথমে ১০ টাকার কোর্ট ফিসহ একটি আবেদন দাখিল করতে হবে। এরপর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আবেদনটি প্রতিবেদনের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পাঠাবেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর শুনানির জন্য নোটিস প্রদান করা হয়। শুনানি শেষে কাগজপত্র বিবেচনা করে কোনো আপত্তি না থাকলে ভূমি শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top