alt

উপ-সম্পাদকীয়

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

‘মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

প্রতি বছর বর্ষা আসে জীবনে এক নতুন সতেজতার বার্তা নিয়ে। বৃষ্টির স্পর্শে প্রকৃতি জেগে ওঠে, সবুজে ছেয়ে যায় নগর আর গ্রাম। এই ঋতু শুধু সৌন্দর্যের উৎস নয়, মানব সমাজের জন্যও এক সম্ভাবনার সময়। বর্ষা মৌসুম হলো বৃক্ষরোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, কারণ তখন মাটি থাকে আর্দ্র ও কোমল। এমন পরিবেশে গাছ সহজে শিকড় বিস্তার করতে পারে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষাপটে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা যে কতটা বেড়েছে, তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বৃক্ষ হলো প্রকৃতির ফুসফুস। গাছ বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এক হেক্টর বনভূমি বছরে প্রায় ২.৫ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম। এর ফলে শুধু বায়ুদূষণই কমে না, মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বৃক্ষ ভূমিক্ষয় রোধ করে, ভূগর্ভস্থ পানি ধরে রাখে এবং খরা ও বন্যার প্রভাব হ্রাস করে। বর্ষায় লাগানো গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে, কারণ এ সময় পর্যাপ্ত পানি ও সঠিক তাপমাত্রা থাকে। ফলে গাছের শিকড় মাটিতে শক্তভাবে গাঁথে এবং তা টিকে থাকে দীর্ঘদিন।

বিশ্বব্যাপী নগরায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ এবং কাঠের অতিরিক্ত ব্যবহার গাছের সংখ্যা হ্রাস করছে। এই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণে একমাত্র পথ হলো বৃক্ষরোপণ। গবেষণায় বলা হয়, একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ বছরে প্রায় ১ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। যদি আমরা বর্ষাকালে সংগঠিতভাবে গাছ লাগাতে পারি, তবে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সহনীয় ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলবে।

গাছ শুধু পরিবেশ নয়, সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে। গাছপালা পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বায়ু পরিষ্কার রাখে। মাটির গুণাগুণ উন্নত করে ও ভূমিক্ষয় রোধ করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন গাছ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে, কারণ তারা বহু প্রজাতির পাখি, প্রাণী ও পোকামাকড়ের আবাসস্থল। অর্থনৈতিক দিক থেকেও গাছ মূল্যবান সম্পদ দেয়Ñফল, কাঠ, ভেষজ ও অন্যান্য উপাদান। এসব ব্যবহারে ব্যক্তিগত আয় যেমন বাড়ে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান পড়ে। পাশাপাশি, গাছ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্ষা মৌসুম আরও গুরুত্বপূর্ণ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় জুড়ে গড় বৃষ্টিপাত ৭০ শতাংশের বেশি হয়। এ সময় মাটি থাকে আর্দ্র ও উপযোগী। সরকার প্রতি বছর এই সময়টিকে ঘিরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও এই উদ্যোগে শরিক হয়। শহর ও গ্রামে স্কুল, কলেজ, সামাজিক সংগঠন, কৃষক ও প্রবাসীরা একত্র হয়ে গাছ লাগান। বিভিন্ন এলাকায় মেলা ও প্রচারাভিযানের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা হয়।

বর্ষায় যেসব গাছ রোপণ করা উচিত, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধক প্রজাতি। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, নারিকেল ইত্যাদি ফলজ গাছ যেমন পুষ্টি ও আয় বাড়ায়, তেমনি মেহগনি, শাল, গামারি প্রভৃতি বনজ গাছ কাঠ ও জ্বালানির উৎস হয়ে ওঠে। নিম, অর্জুন, হরিতকি, তুলসী ইত্যাদি ঔষধি গাছের রয়েছে বহুমাত্রিক উপকারিতা। আবার কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচূড়ার মতো শোভাবর্ধক গাছ প্রকৃতিকে করে তোলে আরও মোহনীয়।

সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৃক্ষরোপণের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। একজন কৃষক যদি তার জমিতে পরিকল্পিতভাবে গাছ রোপণ করেন, তবে কয়েক বছরের মধ্যে তা থেকে আয় করতে পারেন। নারকেল, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে আসে স্থিতিশীলতা। একইভাবে বনজ গাছ কাঠ ও অন্যান্য শিল্পের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে অর্থনীতিকে মজবুত করে।

পরিবেশ সচেতনতা তৈরির অন্যতম উপযুক্ত জায়গা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালু করলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগানো ও পরিচর্যার সঙ্গে যুক্ত হবে। যদি তাদের নামে একটি গাছ লাগিয়ে পরিচর্যার দায়িত্ব দেয়া হয়, তবে তারা তা সন্তানের মতো যতœ নেবে। এতে গড়ে উঠবে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ।

তবে বৃক্ষরোপণে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছেÑযেমন সচেতনতার অভাব, অতিবৃষ্টিতে চারা নষ্ট হওয়া, নিয়মিত পরিচর্যার ঘাটতি, এবং ভূমির সংকট। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, টেকসই পরিকল্পনা ও নিয়মিত তদারকি। বিদ্যালয় পর্যায়ে পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।

বৃক্ষরোপণ নিছক কোনো প্রকল্প নয়, এটি এক সামাজিক, নৈতিক ও পরিবেশগত দায়িত্ব। বর্ষা আমাদের সামনে এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়, নতুন জীবনের শুরু করার। যদি এই সময় আমরা প্রত্যেকে অন্তত একটি গাছও লাগাই, তবে তা সম্মিলিতভাবে হয়ে উঠতে পারে এক সবুজ বিপ্লব। আসুন, বর্ষার এই সুযোগ কাজে লাগাইÑগাছ লাগিয়ে জীবন ও প্রকৃতিকে বাঁচাই, গড়ি একটি সুন্দর, সবুজ ও সুস্থ বাংলাদেশ।

[লেখক : কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন]

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

‘মাহতাব হোসাইন মাজেদ

মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

প্রতি বছর বর্ষা আসে জীবনে এক নতুন সতেজতার বার্তা নিয়ে। বৃষ্টির স্পর্শে প্রকৃতি জেগে ওঠে, সবুজে ছেয়ে যায় নগর আর গ্রাম। এই ঋতু শুধু সৌন্দর্যের উৎস নয়, মানব সমাজের জন্যও এক সম্ভাবনার সময়। বর্ষা মৌসুম হলো বৃক্ষরোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, কারণ তখন মাটি থাকে আর্দ্র ও কোমল। এমন পরিবেশে গাছ সহজে শিকড় বিস্তার করতে পারে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষাপটে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা যে কতটা বেড়েছে, তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বৃক্ষ হলো প্রকৃতির ফুসফুস। গাছ বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এক হেক্টর বনভূমি বছরে প্রায় ২.৫ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম। এর ফলে শুধু বায়ুদূষণই কমে না, মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বৃক্ষ ভূমিক্ষয় রোধ করে, ভূগর্ভস্থ পানি ধরে রাখে এবং খরা ও বন্যার প্রভাব হ্রাস করে। বর্ষায় লাগানো গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে, কারণ এ সময় পর্যাপ্ত পানি ও সঠিক তাপমাত্রা থাকে। ফলে গাছের শিকড় মাটিতে শক্তভাবে গাঁথে এবং তা টিকে থাকে দীর্ঘদিন।

বিশ্বব্যাপী নগরায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ এবং কাঠের অতিরিক্ত ব্যবহার গাছের সংখ্যা হ্রাস করছে। এই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণে একমাত্র পথ হলো বৃক্ষরোপণ। গবেষণায় বলা হয়, একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ বছরে প্রায় ১ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। যদি আমরা বর্ষাকালে সংগঠিতভাবে গাছ লাগাতে পারি, তবে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সহনীয় ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলবে।

গাছ শুধু পরিবেশ নয়, সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে। গাছপালা পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বায়ু পরিষ্কার রাখে। মাটির গুণাগুণ উন্নত করে ও ভূমিক্ষয় রোধ করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন গাছ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে, কারণ তারা বহু প্রজাতির পাখি, প্রাণী ও পোকামাকড়ের আবাসস্থল। অর্থনৈতিক দিক থেকেও গাছ মূল্যবান সম্পদ দেয়Ñফল, কাঠ, ভেষজ ও অন্যান্য উপাদান। এসব ব্যবহারে ব্যক্তিগত আয় যেমন বাড়ে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান পড়ে। পাশাপাশি, গাছ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্ষা মৌসুম আরও গুরুত্বপূর্ণ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় জুড়ে গড় বৃষ্টিপাত ৭০ শতাংশের বেশি হয়। এ সময় মাটি থাকে আর্দ্র ও উপযোগী। সরকার প্রতি বছর এই সময়টিকে ঘিরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও এই উদ্যোগে শরিক হয়। শহর ও গ্রামে স্কুল, কলেজ, সামাজিক সংগঠন, কৃষক ও প্রবাসীরা একত্র হয়ে গাছ লাগান। বিভিন্ন এলাকায় মেলা ও প্রচারাভিযানের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা হয়।

বর্ষায় যেসব গাছ রোপণ করা উচিত, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধক প্রজাতি। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, নারিকেল ইত্যাদি ফলজ গাছ যেমন পুষ্টি ও আয় বাড়ায়, তেমনি মেহগনি, শাল, গামারি প্রভৃতি বনজ গাছ কাঠ ও জ্বালানির উৎস হয়ে ওঠে। নিম, অর্জুন, হরিতকি, তুলসী ইত্যাদি ঔষধি গাছের রয়েছে বহুমাত্রিক উপকারিতা। আবার কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচূড়ার মতো শোভাবর্ধক গাছ প্রকৃতিকে করে তোলে আরও মোহনীয়।

সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৃক্ষরোপণের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। একজন কৃষক যদি তার জমিতে পরিকল্পিতভাবে গাছ রোপণ করেন, তবে কয়েক বছরের মধ্যে তা থেকে আয় করতে পারেন। নারকেল, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে আসে স্থিতিশীলতা। একইভাবে বনজ গাছ কাঠ ও অন্যান্য শিল্পের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে অর্থনীতিকে মজবুত করে।

পরিবেশ সচেতনতা তৈরির অন্যতম উপযুক্ত জায়গা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালু করলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগানো ও পরিচর্যার সঙ্গে যুক্ত হবে। যদি তাদের নামে একটি গাছ লাগিয়ে পরিচর্যার দায়িত্ব দেয়া হয়, তবে তারা তা সন্তানের মতো যতœ নেবে। এতে গড়ে উঠবে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ।

তবে বৃক্ষরোপণে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছেÑযেমন সচেতনতার অভাব, অতিবৃষ্টিতে চারা নষ্ট হওয়া, নিয়মিত পরিচর্যার ঘাটতি, এবং ভূমির সংকট। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, টেকসই পরিকল্পনা ও নিয়মিত তদারকি। বিদ্যালয় পর্যায়ে পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।

বৃক্ষরোপণ নিছক কোনো প্রকল্প নয়, এটি এক সামাজিক, নৈতিক ও পরিবেশগত দায়িত্ব। বর্ষা আমাদের সামনে এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়, নতুন জীবনের শুরু করার। যদি এই সময় আমরা প্রত্যেকে অন্তত একটি গাছও লাগাই, তবে তা সম্মিলিতভাবে হয়ে উঠতে পারে এক সবুজ বিপ্লব। আসুন, বর্ষার এই সুযোগ কাজে লাগাইÑগাছ লাগিয়ে জীবন ও প্রকৃতিকে বাঁচাই, গড়ি একটি সুন্দর, সবুজ ও সুস্থ বাংলাদেশ।

[লেখক : কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন]

back to top