মিহির কুমার রায়
গত ১১ জুলাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিলÑ “একটি ন্যায্য এবং আশাবাদী পৃথিবীতে তাদের পছন্দের পরিবার তৈরি করতে তরুণদের ক্ষমতায়ন”। এই প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যুবসমাজ বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের জরুরি দাবি।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে। পরিবার পরিকল্পনা, লিঙ্গসমতা, দারিদ্র্য, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারÑএসব জনস্বার্থমূলক বিষয়ের ওপর সচেতনতা বাড়ানোই এ দিবসের উদ্দেশ্য। বিগত প্রতিপাদ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জনগণের ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশুদের অধিকার এবং পছন্দের স্বাধীনতা বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালের কায়রো সম্মেলন জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বিশ্ব নেতারা স্বীকার করেন যে, টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করা আবশ্যক। সম্মেলনের ঘোষিত আইসিডিপি কর্মপরিকল্পনায় সর্বজনীন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার বিশেষ করে তরুণ, কিশোর-কিশোরী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দিবসের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কিন্তু মানুষের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ সে অনুপাতে বাড়ছে না। ফলে রাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ। যেসব দেশে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, সেখানে প্রশাসনিক চাপও বেশি। আবার কিছু দেশে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তাদের অন্যরকম নীতিমালার অনুসরণ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি, যা উদ্বেগজনক।
এ আলোচনা প্রসঙ্গে বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার হার, তার প্রবৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির বহুমাত্রিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা জরুরি। অধিক জনসংখ্যার ফলে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক কাঠামোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সীমিত সম্পদের জোগান। এতে সৃষ্টি হচ্ছে পানি সংকট, ভূমির চাপে ফসল উৎপাদন হ্রাস, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিনির্ভরতা, বায়ু ও জল দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং টেকসই কৃষির পথে প্রতিবন্ধকতা।
গবেষণা বলছে, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নারীর কর্মজীবনে অংশগ্রহণ, সন্তান লালন-পালনের উচ্চ ব্যয়, ভোগবাদিতা এবং কঠিন জীবনযাত্রার কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক নারী সন্তান ধারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সেসব দেশে জনসংখ্যা কমছে। এশিয়ার দেশ জাপানও এই তালিকায় রয়েছে। তবে তারা অভিবাসন নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, যার অর্ধেকই নারী। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনুপাত দুই-তৃতীয়াংশ। আর বিশ্বে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮.২ বিলিয়ন। বাংলাদেশে ৭ শতাংশ মানুষ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের, যা বার্ধক্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে ১০-২৪ বছর বয়সী তরুণ ৫০ মিলিয়নের বেশি, যা মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। এবারের প্রতিপাদ্যে এই তরুণদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক।
তবে কেবল প্রতিপাদ্যে গুরুত্ব দিলেই হবে না। তরুণদের কাক্সিক্ষত পরিবার গঠনের জন্য সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও নীতিমালায় সময়োপযোগী পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমানে দেশের মোট প্রজনন হার ২.১, যা স্থিতিশীলতার নির্দেশক হলেও কিছু এলাকায় কিশোরী মাতৃত্বের হার বেশি। এর পেছনে রয়েছে বাল্যবিয়ে, জন্মনিরোধের সীমিত ব্যবহার এবং যৌন শিক্ষার অভাব।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের কিছু দেশে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। এর মধ্যে বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে। জনসংখ্যা কমার পেছনে কেবল প্রাকৃতিক কারণ নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাও জড়িত।
বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হলো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫-৬৪ বছর) প্রায় ১১ কোটি। তবে চ্যালেঞ্জ হলো, এই জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা এবং কর্মসংস্থানের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি। এদের কাজে লাগানোর চারটি প্রধান পথ রয়েছেÑসরকারি চাকরি, বেসরকারি খাত, উদ্যোক্তা তৈরি এবং জনশক্তি রপ্তানি। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, যার মধ্যে ১২-১৫ লাখের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়। বাকি ৫-৮ লাখের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা জরুরি।
আরও বড় সমস্যা হলো দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে পিছিয়ে থাকা। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদের জন্য বিদেশে চাহিদা থাকলেও বাছাই ও রপ্তানির পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয় না। অথচ, উদ্বৃত্ত কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রপ্তানি করলে তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
আমাদের যুবসমাজ এখন শিক্ষামুখী হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাজারমুখী দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে। তারা শুধু সার্টিফিকেটের পেছনে ছুটছে, বাস্তব দক্ষতা অর্জনে আগ্রহ কম। অথচ আজকের দিনে জিজ্ঞেস করা উচিতÑ কে কী পাস করেছে নয়, বরং সে কী দক্ষতা অর্জন করেছে এবং সমাজকে কী ধরনের সেবা দিতে পারছে?
ধরা যাক, দেশের ১১ কোটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা আয় করলে, প্রতিদিন ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জিডিপি উৎপন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু যদি এর ৪০ শতাংশ কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন থাকে এবং দিনে গড়ে ৩০০ টাকা করে খরচ করে, তাহলে প্রতিদিন ৩৫ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক অপচয় হচ্ছে। সুতরাং, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কী পরিমাণ সেবা ও সম্পদ উৎপাদন করছে, তা মূল্যায়ন জরুরি।
তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হলে তাদের পছন্দ অনুযায়ী কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করতে হবে। সমাজের মূল্যবোধেও পরিবর্তন আনতে হবে। ভোগবাদ থেকে সরে এসে কর্ম, দক্ষতা ও উপার্জনমুখী মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। মানুষ প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করছে কিনা এবং সেই দক্ষতা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারছে কিনাÑএটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ), সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]
মিহির কুমার রায়
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
গত ১১ জুলাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিলÑ “একটি ন্যায্য এবং আশাবাদী পৃথিবীতে তাদের পছন্দের পরিবার তৈরি করতে তরুণদের ক্ষমতায়ন”। এই প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যুবসমাজ বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের জরুরি দাবি।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে। পরিবার পরিকল্পনা, লিঙ্গসমতা, দারিদ্র্য, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারÑএসব জনস্বার্থমূলক বিষয়ের ওপর সচেতনতা বাড়ানোই এ দিবসের উদ্দেশ্য। বিগত প্রতিপাদ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জনগণের ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশুদের অধিকার এবং পছন্দের স্বাধীনতা বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালের কায়রো সম্মেলন জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বিশ্ব নেতারা স্বীকার করেন যে, টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করা আবশ্যক। সম্মেলনের ঘোষিত আইসিডিপি কর্মপরিকল্পনায় সর্বজনীন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার বিশেষ করে তরুণ, কিশোর-কিশোরী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দিবসের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কিন্তু মানুষের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ সে অনুপাতে বাড়ছে না। ফলে রাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ। যেসব দেশে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, সেখানে প্রশাসনিক চাপও বেশি। আবার কিছু দেশে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তাদের অন্যরকম নীতিমালার অনুসরণ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি, যা উদ্বেগজনক।
এ আলোচনা প্রসঙ্গে বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার হার, তার প্রবৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির বহুমাত্রিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা জরুরি। অধিক জনসংখ্যার ফলে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক কাঠামোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সীমিত সম্পদের জোগান। এতে সৃষ্টি হচ্ছে পানি সংকট, ভূমির চাপে ফসল উৎপাদন হ্রাস, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিনির্ভরতা, বায়ু ও জল দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং টেকসই কৃষির পথে প্রতিবন্ধকতা।
গবেষণা বলছে, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নারীর কর্মজীবনে অংশগ্রহণ, সন্তান লালন-পালনের উচ্চ ব্যয়, ভোগবাদিতা এবং কঠিন জীবনযাত্রার কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক নারী সন্তান ধারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সেসব দেশে জনসংখ্যা কমছে। এশিয়ার দেশ জাপানও এই তালিকায় রয়েছে। তবে তারা অভিবাসন নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, যার অর্ধেকই নারী। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনুপাত দুই-তৃতীয়াংশ। আর বিশ্বে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮.২ বিলিয়ন। বাংলাদেশে ৭ শতাংশ মানুষ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের, যা বার্ধক্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে ১০-২৪ বছর বয়সী তরুণ ৫০ মিলিয়নের বেশি, যা মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। এবারের প্রতিপাদ্যে এই তরুণদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক।
তবে কেবল প্রতিপাদ্যে গুরুত্ব দিলেই হবে না। তরুণদের কাক্সিক্ষত পরিবার গঠনের জন্য সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও নীতিমালায় সময়োপযোগী পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমানে দেশের মোট প্রজনন হার ২.১, যা স্থিতিশীলতার নির্দেশক হলেও কিছু এলাকায় কিশোরী মাতৃত্বের হার বেশি। এর পেছনে রয়েছে বাল্যবিয়ে, জন্মনিরোধের সীমিত ব্যবহার এবং যৌন শিক্ষার অভাব।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের কিছু দেশে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। এর মধ্যে বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে। জনসংখ্যা কমার পেছনে কেবল প্রাকৃতিক কারণ নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাও জড়িত।
বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হলো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫-৬৪ বছর) প্রায় ১১ কোটি। তবে চ্যালেঞ্জ হলো, এই জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা এবং কর্মসংস্থানের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি। এদের কাজে লাগানোর চারটি প্রধান পথ রয়েছেÑসরকারি চাকরি, বেসরকারি খাত, উদ্যোক্তা তৈরি এবং জনশক্তি রপ্তানি। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, যার মধ্যে ১২-১৫ লাখের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়। বাকি ৫-৮ লাখের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা জরুরি।
আরও বড় সমস্যা হলো দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে পিছিয়ে থাকা। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদের জন্য বিদেশে চাহিদা থাকলেও বাছাই ও রপ্তানির পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয় না। অথচ, উদ্বৃত্ত কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রপ্তানি করলে তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
আমাদের যুবসমাজ এখন শিক্ষামুখী হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাজারমুখী দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে। তারা শুধু সার্টিফিকেটের পেছনে ছুটছে, বাস্তব দক্ষতা অর্জনে আগ্রহ কম। অথচ আজকের দিনে জিজ্ঞেস করা উচিতÑ কে কী পাস করেছে নয়, বরং সে কী দক্ষতা অর্জন করেছে এবং সমাজকে কী ধরনের সেবা দিতে পারছে?
ধরা যাক, দেশের ১১ কোটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা আয় করলে, প্রতিদিন ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জিডিপি উৎপন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু যদি এর ৪০ শতাংশ কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন থাকে এবং দিনে গড়ে ৩০০ টাকা করে খরচ করে, তাহলে প্রতিদিন ৩৫ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক অপচয় হচ্ছে। সুতরাং, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কী পরিমাণ সেবা ও সম্পদ উৎপাদন করছে, তা মূল্যায়ন জরুরি।
তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হলে তাদের পছন্দ অনুযায়ী কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করতে হবে। সমাজের মূল্যবোধেও পরিবর্তন আনতে হবে। ভোগবাদ থেকে সরে এসে কর্ম, দক্ষতা ও উপার্জনমুখী মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। মানুষ প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করছে কিনা এবং সেই দক্ষতা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারছে কিনাÑএটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ), সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]