alt

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : বাঙালিকে রুচির দৈন্যে টেনে নামানো হচ্ছে

গৌতম রায়

: শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি তথা বিজেপির বর্তমান সংসদ সদস্য অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পত্তি গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন। তাকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হওয়ায় চিকিৎসকরা, তার পরিবার এবং তার দলের যৌথ সিদ্ধান্তে, তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে ভর্তি ছিলেন। এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

অভিজিৎ বাবু অসুস্থ হওয়ার পর সমাজমাধ্যমে তার অসুস্থতা ঘিরে একাংশের মানুষ এমন একধরনের আচার-আচরণ করছেন, মন্তব্য প্রকাশ করছেন, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হচ্ছে।

বিচারপতি হিসেবে অভিজিৎ বাবুর অবস্থান কারো পছন্দ হতে পারে। কারো পছন্দ না হতে পারে। বিজেপি দলে তার যোগদান বা বিজেপির সংসদ সদস্য হিসেবে তার নির্বাচিত হওয়া, কিছু মানুষের পছন্দের বিষয়। আবার বহু মানুষের কাছেই সেটি খুব হতাশাব্যঞ্জক; কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে যে পর্বত প্রমাণ দুর্নীতি, তাকে আইনি মান্যতা দেয়ার ক্ষেত্রে তার যে ভূমিকা ছিল, সেটি সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সমর্থক এমন মানুষ, যারা কখনো কোন অবস্থাতেই দলের সিংহভাগের এই সীমাহীন আর্থিক দুরাচার পছন্দ করেন না। সেই অংশের মানুষ থেকে শুরু করে, সমস্ত ধরনের গণতান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ, তাদের কাছে শিক্ষা দুর্নীতি ঘিরে অভিজিৎ বাবু বিচারপতি হিসেবে অবস্থান অত্যন্ত ইতিবাচক একটা ধারণা তৈরি করেছে।

বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত যে সমস্ত মানুষজন আছেন, তারা তাদের রাজনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে অভিজিৎ বাবুর বিচারপতি হিসেবে যে অবস্থান, তাতে অত্যন্ত উৎসাহিত হয়েছেন। অভিজিৎ বাবুর অবস্থান বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাজনীতির ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সীমাহীন দুর্নীতিকে আরো মানুষের কাছে তুলে ধরবার ক্ষেত্রে একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

তার বাইরে অবশ্য একটা অংশের লোক, যারা তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা মন্ত্রী কর্মীদের বিপুল অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে, সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি কিনেছিল, কেউ কেউ সামান্য দুই এক নম্বরের উত্তর দিয়ে চাকরি কিনেছিল ,অভিজিৎ বাবুর বিচারপতি হিসেবে অবস্থানের দরুণ ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া সেই অংশের লোকেরা এখন চাকরিচ্যুত হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে ।

তবে একটা অংশের মানুষ যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, পরীক্ষা দিয়ে সঠিকভাবে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছিলেন , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মুড়ি মিছরি এক করে, তাদের এই ঘুষ নেয়ার বিষয়টিকে আড়াল করতে দীর্ঘদিন কলকাতা হাইকোর্ট এবং পরবর্তীকালে দুই দফায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন, এই যোগ্য আর অযোগ্যের বিষয়টি কোন অবস্থাতেই স্পষ্ট করেনি।

ফলে যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশে তারাও চাকরিচ্যুত হয়েছেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা চাকরি পেয়েছিলেন, সেসব যোগ্য প্রার্থীদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঘুষ নিয়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেয়াটা কে স্বীকৃত করার তাগিদে মুড়ি-মিছরি একদর করে দিয়েছেন। আদালত বারবার যোগ্য অযোগ্যের তালিকা চেয়েছেন। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে সে তালিকা কখনও কোন সময়েই আদালতের কাছে পেশ করা হয়নি।

একই অবস্থা গ্রুপ সি গ্রুপ ডি কর্মীদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে যখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের নির্দেশে অভিজিৎ বাবুর রায়দান কে বহাল রাখা হয়েছে, খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সতীর্থদের সীমাহীন ঘুষের কারবারকে আড়াল করতে এবং এইসব মানুষদের ক্ষোভ খুব যাতে তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর বিস্ফোরণের আকারে বর্ষিত না হয়, সেই জন্য সাধারণ মানুষের করের টাকায়, সরকারের তহবিল থেকে গ্রুপ সি গ্রুপ ডি ও অযোগ্য সবাইকেই একযোগে সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। যদিও এই গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র একটি তালিকা ঘিরে মামলা হওয়ার পর, এই মামলার সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ হলো; বিচারপতি অমৃতা সিনহা ভাতা দেয়ার নির্দেশ টিকে সামরিক স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে এই কথা উঠে আসছে যে, যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা দেয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের থাকলেও, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ রাজ্য সরকারের কাছে থাকলেও, ঘুষের বিনিময়ে যে সমস্ত অযোগ্য লোকেদের তৃণমূল কংগ্রেস চাকরি দিয়েছে, তাদেরকে আড়াল করতেই, শিক্ষকদের প্রশ্নে এ যোগ্য অযোগ্যতার তালিকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আদালতে পেশ করেননি। তবে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি ক্ষেত্রে, রাজ্য সরকার যদি যোগ্যদের কেবল সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা দিতেন, আশা করা যায়, সেই বিষয়টি বিচারপতি অমৃতা সিনহা অত্যন্ত সহৃদয় চিত্তে বিবেচনা করতেন।

আলোচনা বিষয়টি অবশ্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বা বিচারপতি সিনহার রায় এসব ঘিরে নয়। আমাদের আলোচনার বিষয় হলো সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ বাবু অসুস্থ হওয়ার পর সমাজমাধ্যমে একাংশের মানুষ যে বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়ে চলেছেন অভিজিৎ বাবুর অসুস্থতা ঘিরেÑসে নিয়ে। একাংশের লোকের সমাজমাধ্যমে এই বিকৃত অভিব্যক্তি থেকে বুঝতে পারা যায় যে, তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে একটা বড় অংশের লোক কে কীভাবে রুচির দৈন্যে টেনে নামিয়েছে। এই রুচির বিকৃতির বিষয়টি ভারতীয় সংস্কৃতি তথা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। ভারতীয় সংস্কৃতি কখনোই কোন শত্রুর ব্যক্তিগত ক্ষতি চায় না।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

জনসংখ্যা ও যুবশক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

রাষ্ট্রের কাছে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

পার্বত্য চট্টগ্রাম : প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

ইউরেশিয়ায় তৃতীয় বিকল্প গালফ কূটনীতি

‘বিপ্লবী সংস্কার’ কি সম্ভব

রম্যগদ্য : ‘ব্যাংক, ব্যাংক নয়’

মবতন্ত্রের জয়

ডিজিটাল ক্লান্তি ও ‘সর্বক্ষণ সক্রিয়’ সংস্কৃতির শ্রেণীগত রাজনীতি

ছবি

বোধের স্ফূরণ, না ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’?

এসএসসিতে গণিত বিষয়ে ফল বিপর্যয় : কারণ ও উত্তরণের উপায়

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : বাঙালিকে রুচির দৈন্যে টেনে নামানো হচ্ছে

গৌতম রায়

শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি তথা বিজেপির বর্তমান সংসদ সদস্য অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পত্তি গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন। তাকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হওয়ায় চিকিৎসকরা, তার পরিবার এবং তার দলের যৌথ সিদ্ধান্তে, তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে ভর্তি ছিলেন। এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

অভিজিৎ বাবু অসুস্থ হওয়ার পর সমাজমাধ্যমে তার অসুস্থতা ঘিরে একাংশের মানুষ এমন একধরনের আচার-আচরণ করছেন, মন্তব্য প্রকাশ করছেন, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হচ্ছে।

বিচারপতি হিসেবে অভিজিৎ বাবুর অবস্থান কারো পছন্দ হতে পারে। কারো পছন্দ না হতে পারে। বিজেপি দলে তার যোগদান বা বিজেপির সংসদ সদস্য হিসেবে তার নির্বাচিত হওয়া, কিছু মানুষের পছন্দের বিষয়। আবার বহু মানুষের কাছেই সেটি খুব হতাশাব্যঞ্জক; কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে যে পর্বত প্রমাণ দুর্নীতি, তাকে আইনি মান্যতা দেয়ার ক্ষেত্রে তার যে ভূমিকা ছিল, সেটি সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সমর্থক এমন মানুষ, যারা কখনো কোন অবস্থাতেই দলের সিংহভাগের এই সীমাহীন আর্থিক দুরাচার পছন্দ করেন না। সেই অংশের মানুষ থেকে শুরু করে, সমস্ত ধরনের গণতান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ, তাদের কাছে শিক্ষা দুর্নীতি ঘিরে অভিজিৎ বাবু বিচারপতি হিসেবে অবস্থান অত্যন্ত ইতিবাচক একটা ধারণা তৈরি করেছে।

বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত যে সমস্ত মানুষজন আছেন, তারা তাদের রাজনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে অভিজিৎ বাবুর বিচারপতি হিসেবে যে অবস্থান, তাতে অত্যন্ত উৎসাহিত হয়েছেন। অভিজিৎ বাবুর অবস্থান বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাজনীতির ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সীমাহীন দুর্নীতিকে আরো মানুষের কাছে তুলে ধরবার ক্ষেত্রে একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

তার বাইরে অবশ্য একটা অংশের লোক, যারা তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা মন্ত্রী কর্মীদের বিপুল অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে, সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি কিনেছিল, কেউ কেউ সামান্য দুই এক নম্বরের উত্তর দিয়ে চাকরি কিনেছিল ,অভিজিৎ বাবুর বিচারপতি হিসেবে অবস্থানের দরুণ ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া সেই অংশের লোকেরা এখন চাকরিচ্যুত হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে ।

তবে একটা অংশের মানুষ যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, পরীক্ষা দিয়ে সঠিকভাবে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছিলেন , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মুড়ি মিছরি এক করে, তাদের এই ঘুষ নেয়ার বিষয়টিকে আড়াল করতে দীর্ঘদিন কলকাতা হাইকোর্ট এবং পরবর্তীকালে দুই দফায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন, এই যোগ্য আর অযোগ্যের বিষয়টি কোন অবস্থাতেই স্পষ্ট করেনি।

ফলে যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশে তারাও চাকরিচ্যুত হয়েছেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা চাকরি পেয়েছিলেন, সেসব যোগ্য প্রার্থীদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঘুষ নিয়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেয়াটা কে স্বীকৃত করার তাগিদে মুড়ি-মিছরি একদর করে দিয়েছেন। আদালত বারবার যোগ্য অযোগ্যের তালিকা চেয়েছেন। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে সে তালিকা কখনও কোন সময়েই আদালতের কাছে পেশ করা হয়নি।

একই অবস্থা গ্রুপ সি গ্রুপ ডি কর্মীদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে যখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের নির্দেশে অভিজিৎ বাবুর রায়দান কে বহাল রাখা হয়েছে, খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সতীর্থদের সীমাহীন ঘুষের কারবারকে আড়াল করতে এবং এইসব মানুষদের ক্ষোভ খুব যাতে তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর বিস্ফোরণের আকারে বর্ষিত না হয়, সেই জন্য সাধারণ মানুষের করের টাকায়, সরকারের তহবিল থেকে গ্রুপ সি গ্রুপ ডি ও অযোগ্য সবাইকেই একযোগে সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। যদিও এই গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র একটি তালিকা ঘিরে মামলা হওয়ার পর, এই মামলার সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ হলো; বিচারপতি অমৃতা সিনহা ভাতা দেয়ার নির্দেশ টিকে সামরিক স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে এই কথা উঠে আসছে যে, যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা দেয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের থাকলেও, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ রাজ্য সরকারের কাছে থাকলেও, ঘুষের বিনিময়ে যে সমস্ত অযোগ্য লোকেদের তৃণমূল কংগ্রেস চাকরি দিয়েছে, তাদেরকে আড়াল করতেই, শিক্ষকদের প্রশ্নে এ যোগ্য অযোগ্যতার তালিকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আদালতে পেশ করেননি। তবে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি ক্ষেত্রে, রাজ্য সরকার যদি যোগ্যদের কেবল সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা দিতেন, আশা করা যায়, সেই বিষয়টি বিচারপতি অমৃতা সিনহা অত্যন্ত সহৃদয় চিত্তে বিবেচনা করতেন।

আলোচনা বিষয়টি অবশ্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বা বিচারপতি সিনহার রায় এসব ঘিরে নয়। আমাদের আলোচনার বিষয় হলো সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ বাবু অসুস্থ হওয়ার পর সমাজমাধ্যমে একাংশের মানুষ যে বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়ে চলেছেন অভিজিৎ বাবুর অসুস্থতা ঘিরেÑসে নিয়ে। একাংশের লোকের সমাজমাধ্যমে এই বিকৃত অভিব্যক্তি থেকে বুঝতে পারা যায় যে, তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে একটা বড় অংশের লোক কে কীভাবে রুচির দৈন্যে টেনে নামিয়েছে। এই রুচির বিকৃতির বিষয়টি ভারতীয় সংস্কৃতি তথা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। ভারতীয় সংস্কৃতি কখনোই কোন শত্রুর ব্যক্তিগত ক্ষতি চায় না।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

back to top