alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব ফুসফুস দিবস: সুস্থ শ্বাসের অঙ্গীকার

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতিবছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব ফুসফুস দিবস। ফুসফুস আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান অঙ্গ, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগের কাজ করে। ফুসফুস সুস্থ না থাকলে মানুষের জীবন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা, ধূমপান, বায়ুদূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সংক্রমণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা), আন্তর্জাতিক শ্বাসতন্ত্র সংস্থার ফোরাম, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে গ্লোবাল উদ্যোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস রোগ নিয়ন্ত্রণে গ্লোবাল উদ্যোগসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে এ দিবস পালন করে। উদ্দেশ্য একটাইÑমানুষকে সচেতন করা, ঝুঁকির কারণ বোঝানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করা।

ফুসফুসের রোগের প্রধান কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য। ধূমপান ফুসফুস ক্যানসার, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসেমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের অন্যতম কারণ। শহরাঞ্চলের ধোঁয়া, শিল্পকারখানার নির্গত গ্যাস, যানবাহনের ধোঁয়া কিংবা গ্রামীণ চুলার ধোঁয়া ফুসফুসের জন্য সমান ক্ষতিকর। পাশাপাশি যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কোভিড-১৯-এর মতো সংক্রমণ, বংশগত রোগ, অ্যালার্জি এবং কয়লা বা অ্যাসবেস্টসের ধুলিকণা শ্বাস নেওয়ার মতো পেশাগত ঝুঁকিও ফুসফুসকে দুর্বল করে তোলে। অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, স্থূলতা ও ব্যায়ামের অভাব সমস্যাকে আরও জটিল করে।

ফুসফুসের রোগের প্রধান লক্ষণ হলো দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপ ধরা, বুকব্যথা, শ্বাসের সময় শোঁ শোঁ শব্দ, কাশির সঙ্গে রক্ত আসা, বারবার জ্বর হওয়া, দুর্বলতা ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া। প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত হলে অধিকাংশ ফুসফুসজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এ রোগগুলোকে সংক্রামক (যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, কোভিড-১৯), অসংক্রামক (হাঁপানি, ফুসফুস ক্যানসার, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ), পেশাগত (সিলিকোসিস, অ্যাসবেস্টোসিস) এবং জেনেটিক বা অন্যান্য রোগ (সিস্টিক ফাইব্রোসিস, পালমোনারি ফাইব্রোসিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া) হিসেবে ভাগ করা যায়।

পরিসংখ্যান ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে মারা যায়। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। প্রায় ২৬ কোটি মানুষ হাঁপানিতে ভুগছে। প্রতি বছর যক্ষ্মায় মারা যায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ, ফুসফুস ক্যানসারে মারা যায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত, যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ।

ফুসফুস সুস্থ রাখতে হলে প্রথমেই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, রান্নাঘরে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। সচেতন জীবনযাপনই পারে আমাদের ফুসফুসকে সুরক্ষা দিতে। এ ছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

ফুসফুসের সুরক্ষায় কিছু ঘরোয়া উপায় কার্যকর হতে পারে। যেমনÑআনারসের রস, বাদামজাতীয় খাবার, মধু, তুলসী পাতা, কালোজিরা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, রসুন, গাজরের রস, লেবু-মধুর পানি ও সামুদ্রিক মাছ। এসব খাবার শ্বাসযন্ত্রকে শক্তিশালী করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ফুসফুস মানবদেহের অপরিহার্য অঙ্গ। ধূমপান, বায়ুদূষণ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এ অঙ্গকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো সচেতন হওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। সুস্থ ফুসফুসই সুস্থ জীবনের মূল ভিত্তি।

[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব ফুসফুস দিবস: সুস্থ শ্বাসের অঙ্গীকার

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতিবছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব ফুসফুস দিবস। ফুসফুস আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান অঙ্গ, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগের কাজ করে। ফুসফুস সুস্থ না থাকলে মানুষের জীবন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা, ধূমপান, বায়ুদূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সংক্রমণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা), আন্তর্জাতিক শ্বাসতন্ত্র সংস্থার ফোরাম, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে গ্লোবাল উদ্যোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস রোগ নিয়ন্ত্রণে গ্লোবাল উদ্যোগসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে এ দিবস পালন করে। উদ্দেশ্য একটাইÑমানুষকে সচেতন করা, ঝুঁকির কারণ বোঝানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করা।

ফুসফুসের রোগের প্রধান কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য। ধূমপান ফুসফুস ক্যানসার, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসেমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের অন্যতম কারণ। শহরাঞ্চলের ধোঁয়া, শিল্পকারখানার নির্গত গ্যাস, যানবাহনের ধোঁয়া কিংবা গ্রামীণ চুলার ধোঁয়া ফুসফুসের জন্য সমান ক্ষতিকর। পাশাপাশি যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কোভিড-১৯-এর মতো সংক্রমণ, বংশগত রোগ, অ্যালার্জি এবং কয়লা বা অ্যাসবেস্টসের ধুলিকণা শ্বাস নেওয়ার মতো পেশাগত ঝুঁকিও ফুসফুসকে দুর্বল করে তোলে। অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, স্থূলতা ও ব্যায়ামের অভাব সমস্যাকে আরও জটিল করে।

ফুসফুসের রোগের প্রধান লক্ষণ হলো দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপ ধরা, বুকব্যথা, শ্বাসের সময় শোঁ শোঁ শব্দ, কাশির সঙ্গে রক্ত আসা, বারবার জ্বর হওয়া, দুর্বলতা ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া। প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত হলে অধিকাংশ ফুসফুসজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এ রোগগুলোকে সংক্রামক (যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, কোভিড-১৯), অসংক্রামক (হাঁপানি, ফুসফুস ক্যানসার, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ), পেশাগত (সিলিকোসিস, অ্যাসবেস্টোসিস) এবং জেনেটিক বা অন্যান্য রোগ (সিস্টিক ফাইব্রোসিস, পালমোনারি ফাইব্রোসিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া) হিসেবে ভাগ করা যায়।

পরিসংখ্যান ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে মারা যায়। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। প্রায় ২৬ কোটি মানুষ হাঁপানিতে ভুগছে। প্রতি বছর যক্ষ্মায় মারা যায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ, ফুসফুস ক্যানসারে মারা যায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত, যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ।

ফুসফুস সুস্থ রাখতে হলে প্রথমেই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, রান্নাঘরে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। সচেতন জীবনযাপনই পারে আমাদের ফুসফুসকে সুরক্ষা দিতে। এ ছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

ফুসফুসের সুরক্ষায় কিছু ঘরোয়া উপায় কার্যকর হতে পারে। যেমনÑআনারসের রস, বাদামজাতীয় খাবার, মধু, তুলসী পাতা, কালোজিরা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, রসুন, গাজরের রস, লেবু-মধুর পানি ও সামুদ্রিক মাছ। এসব খাবার শ্বাসযন্ত্রকে শক্তিশালী করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ফুসফুস মানবদেহের অপরিহার্য অঙ্গ। ধূমপান, বায়ুদূষণ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এ অঙ্গকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো সচেতন হওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। সুস্থ ফুসফুসই সুস্থ জীবনের মূল ভিত্তি।

[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

back to top