alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : লাল ঝান্ডা ও সম্পাদকের কলম

নূহ-উল-আলম লেনিন

: মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১
image

সেটি ছিল উত্থানের যুগ। সবে মাত্র ঢাকায় এসেছি। ভর্তি হয়েছি জগন্নাথ কলেজে। থাকি ৩১/১ হোসেনি দালানে। বাস্তব সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে আমি বিত্তহীন দরিদ্র স্কুলশিক্ষকের সন্তান। আসলেই প্রান্তিকজন। যদিও রাজনীতি করার কারণে আমাদের পরিবার মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির উঠোনে বৃত্তাবদ্ধ। মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির অন্দরে প্রবেশ করতে পারিনি। সারা অঙ্গে মফস্বলের উদাসী আলো-হাওয়া। নাগরিক সংস্কৃতি তো দূর অস্ত। ছাত্র ইউনিয়ন অফিসকে কেন্দ্র করে একটু একটু করে নাগরিক সংস্কৃতির তালিম নিচ্ছি। ১৯৬৫ সালে আমি যখন জগন্নাথে ভর্তি হয়েছি। জগন্নাথে পড়ুয়া, আমরা ছিলাম নিম্নমধ্যম ও মধ্য মানের অনুজ্জ্বল ছাত্র। অন্যদিকে ঢাকা কলেজ ও নটর ডেম-এ আমাদের যারা পড়তেন, ধরে নিতেই হবে, তারা প্রায় সবাই ভালো ছাত্র। কারণ এ দুটি কলেজই এসএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া, নিদেনপক্ষে ব্যতিক্রম হিসেবে কেউ কেউ ফার্স্ট ডিভিশনের কাছাকাছি নম্বর পাওয়া ছাত্র। ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়া তো ছিল পরম সৌভাগ্যের বিষয়। এই কলেজে সব ‘ব্রাইট’ এবং স্টার ছাত্ররা ভর্তির সুযোগ পেত। লক্ষণীয় ছিল ছাত্রদের একটা বড় অংশ নাগরিক মধ্যবিত্ত থেকে আসা। মফস্বল থেকে যারা ভর্তির সুযোগ পেত, তারাও গড়পড়তা নয়, ভালো ফল করা ‘ব্রাইট’ ছাত্র।

আমার পরম সৌভাগ্য ঢাকা কলেজ ও নটর ডেম কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ও ব্রাইট ছাত্রদের একটা বড় অংশ সে-সময় ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়। ঢাকা বোর্ডে স্ট্যান্ড করা কাইউম মুকুল, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, হুমায়ূন, মাহফুজ, মুনীরুজ্জামান, নাজমুল হাসান মন্টু, হিলাল উদ্দিন প্রমুখ প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা ব্রাইট বন্ধুদের সাহচর্য পেয়েছিলাম। ছাত্র ইউনিয়ন করতে গিয়ে ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে এক ধরনের সখ্য গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা শহরে জন্মেছেন- বড় হয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নে এবং পরবর্তীকালে গোপন কমিউনিস্ট পার্টিতে তাদের কদর খুব বেশি। আমরা সবাই একসঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। জগন্নাথ থেকে মধ্যমানের একটা বেশ বড়সড় দলও কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা একসঙ্গে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর জাতীয় রাজনীতির বামধারার মূলস্রোতে অংশগ্রহণ করেছি। উত্তরকালে এরা সবাই, জাতীয় রাজনীতি, কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। জীবন সায়াহ্নে নিঃসন্দেহে আমি এসব বন্ধুদের সান্নিধ্য লাভকে শ্লাঘার সঙ্গে স্মরণ করি।

তোরা দলীয় ব্যানারে থেকে তোদের মতো বলবি, আমি প্রকৃত স্বাধীন মানুষ হিসেবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমার মতো বলব

জীবনের মহাসড়কে পা মেলাতে গিয়ে কারও কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের হেরফের যে হয়নি, তা নয়। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, শুধু মুনীরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল সবচেয়ে ইন্টিমেট, আমরা পরস্পরকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতাম। অথচ ছাত্র-জীবনের পর সেলিম, মুকুল ও হিলালের সঙ্গে ওয়ার্কিং রিলেশন ছিল সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘ সময়জুড়ে। অথচ আমরা আজও আপনির বৃত্ত ভাঙতে পারিনি।

এই লেখাটা প্রয়াত বন্ধু মুনীরের উদ্দেশ্যে হলেও আমি আমাদের জীবনের একটা দীর্ঘ পটভূমি ধরতে চেয়েছি। কিন্তু এর সম্পর্কে আমাদের লিখতে হবে, এটা ভাবতে গিয়ে আমার মন, কলম ও সময় যেন নিশ্চল হয়ে পড়েছে। বারবার আমাকে তাগিদ দিয়েছে, ডাক্তার রেখা, মুনীরের জন্মান্ধ প্রেমিকা ও স্ত্রী; আমার ও আমার স্ত্রীর বন্ধু। রেখা আমাকে কতবার যে তাগিদ দিয়েছে। আমি আসলে ভাবতেও পারছি না মুনীরকে নিয়ে আমাকে লিখতে হবে। এমন তো কথা ছিল না। ও কেন আমার আগে চলে যাবে। সুগঠিত শরীর এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মুনীর কখনও অসুস্থ হয়েছে শুনিনি। কিন্তু সেই মুনীর কি না প্রাণঘাতী করোনার কাছে হেরে গেল। করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও আমার সঙ্গে ওর টেলিফোনে কথা হয়েছে। তখন পর্যন্ত ওর মনোবল অক্ষুণœ ছিল। স্বভাবসুলভ শ্ল্যাং ব্যবহার করে করোনার ‘মায় রে বাপ’- আমার ... ছিঁড়তে পারবে না দোস্ত। দ্বিতীয় ও শেষবার যখন কথা বলি, মুনীর ম্লান কণ্ঠে বলে উঠল, না দোস্ত এইবার বোধহয় ঠেকাতে পারলাম না। আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে সাহস জোগাতে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা বললাম। যেদিন শেষ নিঃশ্বাস ফেলে তার আগের দিন রেখাকে ওর অবস্থা জানতে ফোন করি। রেখা আমাকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘করোনা নেগেটিভ হয়েছে। কয়েকদিন পর বাসায় নিয়ে আসব।’ অথচ পরের দিনই শুনতে হলো সূর্য ডুবে গেছে। আমি এ-কথা শুনে স্তম্ভিত। বাক স্তব্ধ ও রক্ত হিমশীতল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলাম, দোস্ত ‘আমিও আসছি।’

আমার একান্ত ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু, দুজনেরই নাম মুনীর। একজন জগন্নাথ কলেজের সিরাজুম মুনীর, অন্যজন ঢাকা কলেজের মুনীরুজ্জামান। একজন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বেতিয়ারার শহিদ। অন্যজন করোনাক্রান্ত ভয়াল মৃত্যুর শিকার। ওদের আলাদাভাবে চেনার জন্য বলা হতো ডি. মুনীর ও জগন্নাথ মুনীর। দুজনেরই অকাল মৃত্যু এবং অস্বাভাবিক।

ওরা দুজনেই ছিল বাংলাদেশের বাম রাজনীতিতে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতার আগেই আমরা যখন ছাত্র আন্দোলনের সিঁড়ি ভেঙে শীর্ষে পৌঁছার কোশেষ করছি, তখন ছাত্রত্ব শেষ না হওয়া সত্ত্বেও বিপ্লবের নেশায় বিভোর এক মুনীর যোগ দিল কৃষক সমিতিতে, অন্যজন ট্রেড ইউনিয়নে। সিরাজুম মুনীর কৃষক নেতা জিতেন ঘোষের হাত ধরে কৃষক সমিতিতে আর মুনীর ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর আমাদের মধ্যে মুনীরই প্রথম পার্টির ‘সার্বক্ষণিক’ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র দেশের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনে পরিণত হয়। উচ্চ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের মুনিরুজ্জামান শ্রেণিচ্যুত হয়ে শ্রমিকের বস্তিতে, তাদের সংগঠিত করার জন্য যেমন নিজেকে উৎসর্গ করেছিল, তেমনি স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে স্কপের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করেছে।

আমি সে-সময়ে কৃষক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছি। স্বাভাবিক কারণেই আমাদের মধ্যে তখন দেখা-সাক্ষাৎ তেমন হতো না। আমরা তখন অজানা এক বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর। তারপর মস্কোয় লাল তারা খসে পড়ায়, অর্থাৎ ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় উভয়েই কম-বেশি দিশেহারা। মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও মুনীর তেমন লেখালেখি করত না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমরা যখন স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছি, কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রে লেখালেখি করছি, তখনও মুনীরের লেখায় সমাজতন্ত্র ও বিপ্লবের স্বপ্নাঞ্জন মাখা। মুনীর একতায় লিখতে শুরু করে। আমি ছিলাম কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রথমসারির সংস্কারবাদী। কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যাওয়ার আগে পার্টিতে একদিকে একটি অংশ মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে অভ্রান্ত মনে করে পুরোনো ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ধরে আমাদের বিরুদ্ধে বিলোপবাদী, সংস্কারবাদী এবং বুর্জোয়া ব্যবস্থার প্রতি আত্মসমর্পণকারী বলে নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে, অন্য প্রধান অংশটি চিরায়ত কট্টর মার্কসবাদী লাইন বাদ দিয়ে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক লাইনে কর্মসূচির ভিত্তিতে পার্টিকে ঢেলে সাজানোর পক্ষপাতী। শেষোক্ত অংশটি নিজেদের রূপান্তরকামী হিসেবে পরিচয় দিত। খোদ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, বাংলাদেশের বাস্তবতায় কমিউনিস্ট পার্টির উপযোগিতা ইত্যাকার বিষয় পার্টিতে চলছে তুমুল বিতর্ক।

সবাই আমরা পথানুসন্ধানে ব্যাপৃত। ১৯৯২ সালে এই বিতর্ক চলাকালে আমি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় পার্টির একটি সভায় যাই। স্বভাবতই নানা প্রশ্নে তৃণমূলের কর্মীরা আমাকে বিদ্ধ করে। আমি যতটা সম্ভব সহজ ভাষায় তাদের নানা তাত্ত্বিক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। একতায় সে সভার বিস্তারিত বিবরণ ছাপা হয়।

কয়েকদিন পর দেখি মুনীরের একটা প্রবন্ধ উঠেছে। মুনীর তীব্র শ্লেষের ভঙ্গিতে আমার বক্তব্য খন্ডন করার চেষ্টা করেছে। তার মোদ্দা কথা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ঠিক আছে; কিন্তু ‘লেনিনবাদ’ (অর্থাৎ আমার বক্তব্য) ঠিক নেই। অন্তহীন এই বিতর্কের একপর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যায়। ১৯৯৩ সালে পার্টি ভাঙার পর মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে কট্টর অংশটি কমিউনিস্ট পার্টির সংখ্যালঘু অংশ নিয়ে পুরোনো পার্টি ধরে রাখে। আর রূপান্তরকামীরা আলাদা পার্টি করে।

ভাঙাভাঙির এই সময়টায় দেখা গেল মুনীর কোনো অংশেই নেই। সে কোনো অংশকে সমর্থন করছে না। একপর্যায়ে দলীয় রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে দৈনিক সংবাদ-এ যোগদান করেছে।

এসব ভাঙাভাঙির বেশ কিছুদিন পর ‘সংবাদ’ অফিসে মুনীরের সঙ্গে আমার দেখা। মুনীর মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘না দোস্ত, এক অর্থে তুই-ই ঠিক। তবে আমার ধারণা সেলিমরাও পারবে না, তোরাও কিছু করতে পারবি না। সব শালা মরীচিকার পেছনে ঘুরছিস।

আমি বললাম, ‘তুই ছাড়লি ক্যান?’ মুনীর স্মিত হাস্যে বলল, ‘আমাদের জেনারেশন দিয়ে নতুন কিছু হবে না। অযথা সময় নষ্ট করে কী লাভ? তোরা দলীয় ব্যানারে থেকে তোদের মতো বলবি, আমি প্রকৃত স্বাধীন মানুষ হিসেবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমার মতো বলব। চালিয়ে যাও দোস্ত!’

আমরা বৃহৎ একটা পরিবার শেষ পর্যন্ত নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে অথবা রাজনীতি ছেড়ে পরমায়ু ক্ষয় করছি। আর আমার বন্ধু তড়তড় সিঁড়ি ভেঙে বাংলাদেশের প্রাচীনতম প্রগতিশীল দৈনিকের শিখর স্পর্শ করছিল। ‘সংবাদ’-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নতুন পরিচয়ে ঋদ্ধ করেছে।

বন্ধু মুনীর তোর কথাই ঠিক, আমরা অনেক কিছু করার চেষ্টা করলেও দিন শেষে কিছুই না করার অতৃপ্তি নিয়ে একদিন তোর কাছে পৌঁছে যাব। (পরিমার্জিত)

০৬.০২.২০২১

(আজ খন্দকার মুনীরুজ্জামানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্মরণে লেখাটি প্রকাশিত হলো। লেখাটি ‘জীবন নিবেদিত মুক্তির সংগ্রামে মুনীরুজ্জামান’ স্মারকগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।)

[লেখক: মুনীরুজ্জামানের বন্ধু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : লাল ঝান্ডা ও সম্পাদকের কলম

নূহ-উল-আলম লেনিন

image

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১

সেটি ছিল উত্থানের যুগ। সবে মাত্র ঢাকায় এসেছি। ভর্তি হয়েছি জগন্নাথ কলেজে। থাকি ৩১/১ হোসেনি দালানে। বাস্তব সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে আমি বিত্তহীন দরিদ্র স্কুলশিক্ষকের সন্তান। আসলেই প্রান্তিকজন। যদিও রাজনীতি করার কারণে আমাদের পরিবার মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির উঠোনে বৃত্তাবদ্ধ। মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির অন্দরে প্রবেশ করতে পারিনি। সারা অঙ্গে মফস্বলের উদাসী আলো-হাওয়া। নাগরিক সংস্কৃতি তো দূর অস্ত। ছাত্র ইউনিয়ন অফিসকে কেন্দ্র করে একটু একটু করে নাগরিক সংস্কৃতির তালিম নিচ্ছি। ১৯৬৫ সালে আমি যখন জগন্নাথে ভর্তি হয়েছি। জগন্নাথে পড়ুয়া, আমরা ছিলাম নিম্নমধ্যম ও মধ্য মানের অনুজ্জ্বল ছাত্র। অন্যদিকে ঢাকা কলেজ ও নটর ডেম-এ আমাদের যারা পড়তেন, ধরে নিতেই হবে, তারা প্রায় সবাই ভালো ছাত্র। কারণ এ দুটি কলেজই এসএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া, নিদেনপক্ষে ব্যতিক্রম হিসেবে কেউ কেউ ফার্স্ট ডিভিশনের কাছাকাছি নম্বর পাওয়া ছাত্র। ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়া তো ছিল পরম সৌভাগ্যের বিষয়। এই কলেজে সব ‘ব্রাইট’ এবং স্টার ছাত্ররা ভর্তির সুযোগ পেত। লক্ষণীয় ছিল ছাত্রদের একটা বড় অংশ নাগরিক মধ্যবিত্ত থেকে আসা। মফস্বল থেকে যারা ভর্তির সুযোগ পেত, তারাও গড়পড়তা নয়, ভালো ফল করা ‘ব্রাইট’ ছাত্র।

আমার পরম সৌভাগ্য ঢাকা কলেজ ও নটর ডেম কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ও ব্রাইট ছাত্রদের একটা বড় অংশ সে-সময় ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়। ঢাকা বোর্ডে স্ট্যান্ড করা কাইউম মুকুল, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, হুমায়ূন, মাহফুজ, মুনীরুজ্জামান, নাজমুল হাসান মন্টু, হিলাল উদ্দিন প্রমুখ প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা ব্রাইট বন্ধুদের সাহচর্য পেয়েছিলাম। ছাত্র ইউনিয়ন করতে গিয়ে ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে এক ধরনের সখ্য গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা শহরে জন্মেছেন- বড় হয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নে এবং পরবর্তীকালে গোপন কমিউনিস্ট পার্টিতে তাদের কদর খুব বেশি। আমরা সবাই একসঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। জগন্নাথ থেকে মধ্যমানের একটা বেশ বড়সড় দলও কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা একসঙ্গে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর জাতীয় রাজনীতির বামধারার মূলস্রোতে অংশগ্রহণ করেছি। উত্তরকালে এরা সবাই, জাতীয় রাজনীতি, কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। জীবন সায়াহ্নে নিঃসন্দেহে আমি এসব বন্ধুদের সান্নিধ্য লাভকে শ্লাঘার সঙ্গে স্মরণ করি।

তোরা দলীয় ব্যানারে থেকে তোদের মতো বলবি, আমি প্রকৃত স্বাধীন মানুষ হিসেবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমার মতো বলব

জীবনের মহাসড়কে পা মেলাতে গিয়ে কারও কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের হেরফের যে হয়নি, তা নয়। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, শুধু মুনীরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল সবচেয়ে ইন্টিমেট, আমরা পরস্পরকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতাম। অথচ ছাত্র-জীবনের পর সেলিম, মুকুল ও হিলালের সঙ্গে ওয়ার্কিং রিলেশন ছিল সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘ সময়জুড়ে। অথচ আমরা আজও আপনির বৃত্ত ভাঙতে পারিনি।

এই লেখাটা প্রয়াত বন্ধু মুনীরের উদ্দেশ্যে হলেও আমি আমাদের জীবনের একটা দীর্ঘ পটভূমি ধরতে চেয়েছি। কিন্তু এর সম্পর্কে আমাদের লিখতে হবে, এটা ভাবতে গিয়ে আমার মন, কলম ও সময় যেন নিশ্চল হয়ে পড়েছে। বারবার আমাকে তাগিদ দিয়েছে, ডাক্তার রেখা, মুনীরের জন্মান্ধ প্রেমিকা ও স্ত্রী; আমার ও আমার স্ত্রীর বন্ধু। রেখা আমাকে কতবার যে তাগিদ দিয়েছে। আমি আসলে ভাবতেও পারছি না মুনীরকে নিয়ে আমাকে লিখতে হবে। এমন তো কথা ছিল না। ও কেন আমার আগে চলে যাবে। সুগঠিত শরীর এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মুনীর কখনও অসুস্থ হয়েছে শুনিনি। কিন্তু সেই মুনীর কি না প্রাণঘাতী করোনার কাছে হেরে গেল। করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও আমার সঙ্গে ওর টেলিফোনে কথা হয়েছে। তখন পর্যন্ত ওর মনোবল অক্ষুণœ ছিল। স্বভাবসুলভ শ্ল্যাং ব্যবহার করে করোনার ‘মায় রে বাপ’- আমার ... ছিঁড়তে পারবে না দোস্ত। দ্বিতীয় ও শেষবার যখন কথা বলি, মুনীর ম্লান কণ্ঠে বলে উঠল, না দোস্ত এইবার বোধহয় ঠেকাতে পারলাম না। আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে সাহস জোগাতে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা বললাম। যেদিন শেষ নিঃশ্বাস ফেলে তার আগের দিন রেখাকে ওর অবস্থা জানতে ফোন করি। রেখা আমাকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘করোনা নেগেটিভ হয়েছে। কয়েকদিন পর বাসায় নিয়ে আসব।’ অথচ পরের দিনই শুনতে হলো সূর্য ডুবে গেছে। আমি এ-কথা শুনে স্তম্ভিত। বাক স্তব্ধ ও রক্ত হিমশীতল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলাম, দোস্ত ‘আমিও আসছি।’

আমার একান্ত ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু, দুজনেরই নাম মুনীর। একজন জগন্নাথ কলেজের সিরাজুম মুনীর, অন্যজন ঢাকা কলেজের মুনীরুজ্জামান। একজন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বেতিয়ারার শহিদ। অন্যজন করোনাক্রান্ত ভয়াল মৃত্যুর শিকার। ওদের আলাদাভাবে চেনার জন্য বলা হতো ডি. মুনীর ও জগন্নাথ মুনীর। দুজনেরই অকাল মৃত্যু এবং অস্বাভাবিক।

ওরা দুজনেই ছিল বাংলাদেশের বাম রাজনীতিতে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতার আগেই আমরা যখন ছাত্র আন্দোলনের সিঁড়ি ভেঙে শীর্ষে পৌঁছার কোশেষ করছি, তখন ছাত্রত্ব শেষ না হওয়া সত্ত্বেও বিপ্লবের নেশায় বিভোর এক মুনীর যোগ দিল কৃষক সমিতিতে, অন্যজন ট্রেড ইউনিয়নে। সিরাজুম মুনীর কৃষক নেতা জিতেন ঘোষের হাত ধরে কৃষক সমিতিতে আর মুনীর ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর আমাদের মধ্যে মুনীরই প্রথম পার্টির ‘সার্বক্ষণিক’ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র দেশের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনে পরিণত হয়। উচ্চ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের মুনিরুজ্জামান শ্রেণিচ্যুত হয়ে শ্রমিকের বস্তিতে, তাদের সংগঠিত করার জন্য যেমন নিজেকে উৎসর্গ করেছিল, তেমনি স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে স্কপের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করেছে।

আমি সে-সময়ে কৃষক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছি। স্বাভাবিক কারণেই আমাদের মধ্যে তখন দেখা-সাক্ষাৎ তেমন হতো না। আমরা তখন অজানা এক বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর। তারপর মস্কোয় লাল তারা খসে পড়ায়, অর্থাৎ ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় উভয়েই কম-বেশি দিশেহারা। মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও মুনীর তেমন লেখালেখি করত না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমরা যখন স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছি, কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রে লেখালেখি করছি, তখনও মুনীরের লেখায় সমাজতন্ত্র ও বিপ্লবের স্বপ্নাঞ্জন মাখা। মুনীর একতায় লিখতে শুরু করে। আমি ছিলাম কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রথমসারির সংস্কারবাদী। কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যাওয়ার আগে পার্টিতে একদিকে একটি অংশ মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে অভ্রান্ত মনে করে পুরোনো ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ধরে আমাদের বিরুদ্ধে বিলোপবাদী, সংস্কারবাদী এবং বুর্জোয়া ব্যবস্থার প্রতি আত্মসমর্পণকারী বলে নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে, অন্য প্রধান অংশটি চিরায়ত কট্টর মার্কসবাদী লাইন বাদ দিয়ে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক লাইনে কর্মসূচির ভিত্তিতে পার্টিকে ঢেলে সাজানোর পক্ষপাতী। শেষোক্ত অংশটি নিজেদের রূপান্তরকামী হিসেবে পরিচয় দিত। খোদ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, বাংলাদেশের বাস্তবতায় কমিউনিস্ট পার্টির উপযোগিতা ইত্যাকার বিষয় পার্টিতে চলছে তুমুল বিতর্ক।

সবাই আমরা পথানুসন্ধানে ব্যাপৃত। ১৯৯২ সালে এই বিতর্ক চলাকালে আমি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় পার্টির একটি সভায় যাই। স্বভাবতই নানা প্রশ্নে তৃণমূলের কর্মীরা আমাকে বিদ্ধ করে। আমি যতটা সম্ভব সহজ ভাষায় তাদের নানা তাত্ত্বিক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। একতায় সে সভার বিস্তারিত বিবরণ ছাপা হয়।

কয়েকদিন পর দেখি মুনীরের একটা প্রবন্ধ উঠেছে। মুনীর তীব্র শ্লেষের ভঙ্গিতে আমার বক্তব্য খন্ডন করার চেষ্টা করেছে। তার মোদ্দা কথা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ঠিক আছে; কিন্তু ‘লেনিনবাদ’ (অর্থাৎ আমার বক্তব্য) ঠিক নেই। অন্তহীন এই বিতর্কের একপর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যায়। ১৯৯৩ সালে পার্টি ভাঙার পর মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে কট্টর অংশটি কমিউনিস্ট পার্টির সংখ্যালঘু অংশ নিয়ে পুরোনো পার্টি ধরে রাখে। আর রূপান্তরকামীরা আলাদা পার্টি করে।

ভাঙাভাঙির এই সময়টায় দেখা গেল মুনীর কোনো অংশেই নেই। সে কোনো অংশকে সমর্থন করছে না। একপর্যায়ে দলীয় রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে দৈনিক সংবাদ-এ যোগদান করেছে।

এসব ভাঙাভাঙির বেশ কিছুদিন পর ‘সংবাদ’ অফিসে মুনীরের সঙ্গে আমার দেখা। মুনীর মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘না দোস্ত, এক অর্থে তুই-ই ঠিক। তবে আমার ধারণা সেলিমরাও পারবে না, তোরাও কিছু করতে পারবি না। সব শালা মরীচিকার পেছনে ঘুরছিস।

আমি বললাম, ‘তুই ছাড়লি ক্যান?’ মুনীর স্মিত হাস্যে বলল, ‘আমাদের জেনারেশন দিয়ে নতুন কিছু হবে না। অযথা সময় নষ্ট করে কী লাভ? তোরা দলীয় ব্যানারে থেকে তোদের মতো বলবি, আমি প্রকৃত স্বাধীন মানুষ হিসেবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমার মতো বলব। চালিয়ে যাও দোস্ত!’

আমরা বৃহৎ একটা পরিবার শেষ পর্যন্ত নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে অথবা রাজনীতি ছেড়ে পরমায়ু ক্ষয় করছি। আর আমার বন্ধু তড়তড় সিঁড়ি ভেঙে বাংলাদেশের প্রাচীনতম প্রগতিশীল দৈনিকের শিখর স্পর্শ করছিল। ‘সংবাদ’-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নতুন পরিচয়ে ঋদ্ধ করেছে।

বন্ধু মুনীর তোর কথাই ঠিক, আমরা অনেক কিছু করার চেষ্টা করলেও দিন শেষে কিছুই না করার অতৃপ্তি নিয়ে একদিন তোর কাছে পৌঁছে যাব। (পরিমার্জিত)

০৬.০২.২০২১

(আজ খন্দকার মুনীরুজ্জামানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্মরণে লেখাটি প্রকাশিত হলো। লেখাটি ‘জীবন নিবেদিত মুক্তির সংগ্রামে মুনীরুজ্জামান’ স্মারকগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।)

[লেখক: মুনীরুজ্জামানের বন্ধু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য]

back to top