ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
বাংলাদেশের মোট আয়তনের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম। আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্বের বিবেচনায় এর আয়তন ২৩ হাজার ১৮৪ বর্গকিলোমিটার, যা মোট আয়তনের এক দশমাংশ। সেখানকার ভূমি বিন্যাস, পাহাড় ও উপত্যকা, ১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন, অভাবনীয় ও অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সর্বোপরি ভৌগোলিক অবস্থানে বাংলাদেশের এক অপার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঐশ্বর্যমন্ডিত পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা) নান্দনিকতা ক্রমেই ভ্রমণপিয়াসী দেশি-বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। পরিকল্পিত অবকাঠামোতে পরিণত হতে পারে বিপুল সম্ভাবনাময় এক পর্যটন অঞ্চলে। তবে অকৃত্রিমতার মধ্যে কৃত্রিমতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে পারে তার ঐতিহ্য আর বহুভাষাভাষীর বৈচিত্র্যময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবনবোধ। কাজেই পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করাও সমীচীন হবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে কথা চিন্তা করে ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রণীত ‘ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন, ১৯৫৭’ (কনভেনশন নম্বর ১০৭) এ অনুস্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী ও ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়সহ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘের এ সংস্থা আবার সংশোধিত ‘ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন ১৯৮৯’ (কনভেনশন নম্বর ১৬৯) গ্রহণ করেছে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল জাতীয় পর্যায়ে উপজাতিদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয়।
এখানে ট্রাইবাল বা সেমিট্রাইবাল বলতে ওই গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ট্রাইবাল বৈশিষ্ট্য হারানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং এখনও জাতীয় জনসমষ্টির সঙ্গে একীভূত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ভারতের সব সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উৎখাত করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর সরকার ঘোষণা করে অন্য দেশের সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ঘোষণা অনুযায়ী কাজও হয়। ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হয় যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্বাধীনভাবে কাজ করে। স্বাধীনতার পর দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জটিল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনীতিকভাবে সমাধান না করে বিভিন্ন ভ্রান্তনীতিতে প্রচেষ্টা চালিয়েও সমাধানের পথ খুঁজে পায়নি। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা পদক্ষেপে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা ঘটে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘শান্তিচুক্তি’ নামক এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়।
কিন্তু সুদীর্ঘ দুই দশকে পদার্পণ করলেও শান্তিচুক্তি এখনও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে দিন দিন বাড়ছে হতাশা এবং চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্বার্থবাদী মহলের ইন্ধনে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্র দল ও উপদল। স্থানীয়দের তথ্যমতে বর্তমানে সেখানে ০৫টি সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। যেমন-জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা), জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টি। এছাড়াও বান্দরবানে দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির কিছু তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় উপজাতীয় সশস্ত্র দল ও উপদলগুলো প্রতিনিয়ত ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া নিজেদের শক্তি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজিসহ নানা রকম অপকর্মের সঙ্গে তারা জড়িত রয়েছে। যা পার্বত্য অঞ্চলে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে স্থানীয় পাহাড়ি বাঙালি জনগণের সবার শান্তির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। পাহাড়ি-বাঙালি শান্তিকামী জনগণ ও ব্যবসায়ীরা আজ এ সব সশস্ত্র দলগুলোর হাতে জিম্মি। এ সব সন্ত্রাসী সশস্ত্র দলগুলোকে চাঁদা না দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন মহল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিঘœ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই সরকারকে পার্বত্য ‘শান্তিচুক্তি’ দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি এ সব সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটন ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনে র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যেতে হবে। এটাই স্থানীয়দের অভিমত ও প্রত্যাশা।
সমগ্র দেশবাসী পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার যে নীতি অনুসরণ করেছে এবং পার্বত্য শান্তিু চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে যেসব অঙ্গীকার করেছে, তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ব্যাপারে যে আন্তরিক সদিচ্ছা নানা সময় তার বক্তব্য ও পদক্ষেপে প্রতিফলিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাপ্রসূত নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য অঞ্চলের যে মূল ভূমিকেন্দ্রিক সমস্যা অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তৎকালীন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতে আশ্রয় নেয়া ও পরবর্তীতে ভারত থেকে প্রত্যাগত উপজাতিদের বসতবাটি চিহ্নিত করে ফিরিয়ে দেয়া এবং তৎকালীন সময়ে সমতল এলাকা থেকে যাওয়া বাঙালিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জটিলতা, তা এখনও নিরসন হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও নির্দেশনায় বাস্তবায়িত হয়েছে, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠনও করা হয়েছে। তবে তার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, উপযুক্ত লোকবল এবং অন্যান্য লজিস্টিক সাহায্য সহযোগিতার বিষয় এখনও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিধিমালার খসড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ থেকে প্রস্তাব আকারে পেশ করা হলেও এখনও তা অনুমোদনের অপেক্ষায় প্রায় দুই বছর কাল পড়ে আছে। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নৃগোষ্ঠী মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, তাদের চিরাচরিত ঐতিহ্য ও অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে অন্যান্য অঞ্চলগুলো থেকে আলাদা হিসেবে গণ্য করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’-এর প্রণয়ন করে। উক্ত শাসন বিধির অধীনেই সুদীর্ঘকাল যাবৎ পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যসমূহ ও প্রথাগত ভূমির অধিকারসহ অন্য অধিকারগুলোর সুরক্ষা দিয়েছে। কিছু মহল রাজনৈতিক কারণে পার্বত্য শাসনবিধি ১৯০০-এর বিরোধিতা করেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে এসব অধিকার বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। কাজেই পার্বত্য শাসনবিধি ১৯০০-এর বিরোধিতার অর্থ হচ্ছে পার্বত্য শান্তি চুক্তিরই বিরোধিতা করা। দীর্ঘ দুই যুগের পথপরিক্রমায় এসে পার্বত্য শান্তি চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করা আজ সময়ে দাবিতে পরিণত হয়েছে।
২০২১ এ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি ২৪ বছরে পদার্পণ করেছে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় পার্বত্য এলাকা তার স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পায়; সমসাময়িককালে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সফল রাজনৈতিক পরিসমাপ্তি আমাদের দেশের জন্য এক বিরল অর্জন হিসেবে গণ্য হয়। এ কারণে শেখ হাসিনার ইউনেস্কো পুরস্কার প্রাপ্তি ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অনন্য অবদানের স্বীকৃতি। চুক্তির পর পুরো পার্বত্যাঞ্চলজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিকাশ যথেষ্ট বেগবান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সফলভাবে পরিচালনার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত থেকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অপরিহার্যতা লক্ষ করা যায়। তবে শান্তিচুক্তিতে বর্ণিত সব নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় বাস্তবায়নে পাহাড়ি-বাঙালির যৌথ প্রচেষ্টা দরকার। একসময় শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার সরকার। শান্তিচুক্তিতে বর্ণিত সব নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় বাস্তবায়নে পাহাড়ি-বাঙালির যৌথ প্রচেষ্টা থাকা দরকার। অর্থাৎ পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকার, উপজাতি নেতৃবৃন্দ, বাঙালি নেতৃবৃন্দ সবার ঐকান্তিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টাই গুরুত্বপূর্ণ। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, সেটি সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।
পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষায় স্থানীয় বাঙালি ও উপজাতি উভয়েরই বৈরী মনোভাব পরিহার করা উচিত। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিশেষ অধিকার নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত একটি বিষয়। মধ্যযুগের মনোভাব পোষণ করা ব্যক্তিগণ বুঝতে অপারগ যে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করা ও সহায়তার মানসিকতা সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব ও কর্তব্য। শান্তিচুক্তির ২৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলেও ক্রমশ ইতিবাচক গতিতেই অগ্রসরমান শান্তিচুক্তি। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে পার্বত্য শান্তিচুক্তির অনন্য সাধারণ সাফল্যের কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে জননেত্রী শেখ হাসিনার। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-জাতিগোষ্ঠী বা উপজাতিদের অধিকার ও মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটিয়েছেন তিনি। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার আন্তরিকতা নিয়ে কোনো বিরোধী পক্ষের প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় শান্তিচুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে, অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা বিশ^াস করি। তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন পাহাড়ি-বাঙালি পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনগণের আন্তরিক সহমর্মিতা ও আন্তরিক সহযোগিতার মনোভাব। আমরা সবাই প্রত্যাশা করি যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে; কাজেই এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দায় আওয়ামী লীগ সরকারের নৈতিক দায়িত্বও বটে।
[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]
ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের মোট আয়তনের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম। আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্বের বিবেচনায় এর আয়তন ২৩ হাজার ১৮৪ বর্গকিলোমিটার, যা মোট আয়তনের এক দশমাংশ। সেখানকার ভূমি বিন্যাস, পাহাড় ও উপত্যকা, ১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন, অভাবনীয় ও অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সর্বোপরি ভৌগোলিক অবস্থানে বাংলাদেশের এক অপার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঐশ্বর্যমন্ডিত পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা) নান্দনিকতা ক্রমেই ভ্রমণপিয়াসী দেশি-বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। পরিকল্পিত অবকাঠামোতে পরিণত হতে পারে বিপুল সম্ভাবনাময় এক পর্যটন অঞ্চলে। তবে অকৃত্রিমতার মধ্যে কৃত্রিমতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে পারে তার ঐতিহ্য আর বহুভাষাভাষীর বৈচিত্র্যময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবনবোধ। কাজেই পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করাও সমীচীন হবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে কথা চিন্তা করে ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রণীত ‘ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন, ১৯৫৭’ (কনভেনশন নম্বর ১০৭) এ অনুস্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী ও ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়সহ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘের এ সংস্থা আবার সংশোধিত ‘ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন ১৯৮৯’ (কনভেনশন নম্বর ১৬৯) গ্রহণ করেছে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল জাতীয় পর্যায়ে উপজাতিদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয়।
এখানে ট্রাইবাল বা সেমিট্রাইবাল বলতে ওই গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ট্রাইবাল বৈশিষ্ট্য হারানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং এখনও জাতীয় জনসমষ্টির সঙ্গে একীভূত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ভারতের সব সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উৎখাত করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর সরকার ঘোষণা করে অন্য দেশের সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ঘোষণা অনুযায়ী কাজও হয়। ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হয় যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্বাধীনভাবে কাজ করে। স্বাধীনতার পর দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জটিল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনীতিকভাবে সমাধান না করে বিভিন্ন ভ্রান্তনীতিতে প্রচেষ্টা চালিয়েও সমাধানের পথ খুঁজে পায়নি। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা পদক্ষেপে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা ঘটে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘শান্তিচুক্তি’ নামক এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়।
কিন্তু সুদীর্ঘ দুই দশকে পদার্পণ করলেও শান্তিচুক্তি এখনও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে দিন দিন বাড়ছে হতাশা এবং চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্বার্থবাদী মহলের ইন্ধনে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্র দল ও উপদল। স্থানীয়দের তথ্যমতে বর্তমানে সেখানে ০৫টি সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। যেমন-জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা), জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টি। এছাড়াও বান্দরবানে দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির কিছু তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় উপজাতীয় সশস্ত্র দল ও উপদলগুলো প্রতিনিয়ত ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া নিজেদের শক্তি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজিসহ নানা রকম অপকর্মের সঙ্গে তারা জড়িত রয়েছে। যা পার্বত্য অঞ্চলে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে স্থানীয় পাহাড়ি বাঙালি জনগণের সবার শান্তির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। পাহাড়ি-বাঙালি শান্তিকামী জনগণ ও ব্যবসায়ীরা আজ এ সব সশস্ত্র দলগুলোর হাতে জিম্মি। এ সব সন্ত্রাসী সশস্ত্র দলগুলোকে চাঁদা না দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন মহল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিঘœ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই সরকারকে পার্বত্য ‘শান্তিচুক্তি’ দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি এ সব সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটন ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনে র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যেতে হবে। এটাই স্থানীয়দের অভিমত ও প্রত্যাশা।
সমগ্র দেশবাসী পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার যে নীতি অনুসরণ করেছে এবং পার্বত্য শান্তিু চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে যেসব অঙ্গীকার করেছে, তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ব্যাপারে যে আন্তরিক সদিচ্ছা নানা সময় তার বক্তব্য ও পদক্ষেপে প্রতিফলিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাপ্রসূত নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য অঞ্চলের যে মূল ভূমিকেন্দ্রিক সমস্যা অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তৎকালীন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতে আশ্রয় নেয়া ও পরবর্তীতে ভারত থেকে প্রত্যাগত উপজাতিদের বসতবাটি চিহ্নিত করে ফিরিয়ে দেয়া এবং তৎকালীন সময়ে সমতল এলাকা থেকে যাওয়া বাঙালিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জটিলতা, তা এখনও নিরসন হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও নির্দেশনায় বাস্তবায়িত হয়েছে, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠনও করা হয়েছে। তবে তার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, উপযুক্ত লোকবল এবং অন্যান্য লজিস্টিক সাহায্য সহযোগিতার বিষয় এখনও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিধিমালার খসড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ থেকে প্রস্তাব আকারে পেশ করা হলেও এখনও তা অনুমোদনের অপেক্ষায় প্রায় দুই বছর কাল পড়ে আছে। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নৃগোষ্ঠী মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, তাদের চিরাচরিত ঐতিহ্য ও অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে অন্যান্য অঞ্চলগুলো থেকে আলাদা হিসেবে গণ্য করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’-এর প্রণয়ন করে। উক্ত শাসন বিধির অধীনেই সুদীর্ঘকাল যাবৎ পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যসমূহ ও প্রথাগত ভূমির অধিকারসহ অন্য অধিকারগুলোর সুরক্ষা দিয়েছে। কিছু মহল রাজনৈতিক কারণে পার্বত্য শাসনবিধি ১৯০০-এর বিরোধিতা করেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে এসব অধিকার বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। কাজেই পার্বত্য শাসনবিধি ১৯০০-এর বিরোধিতার অর্থ হচ্ছে পার্বত্য শান্তি চুক্তিরই বিরোধিতা করা। দীর্ঘ দুই যুগের পথপরিক্রমায় এসে পার্বত্য শান্তি চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করা আজ সময়ে দাবিতে পরিণত হয়েছে।
২০২১ এ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি ২৪ বছরে পদার্পণ করেছে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় পার্বত্য এলাকা তার স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পায়; সমসাময়িককালে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সফল রাজনৈতিক পরিসমাপ্তি আমাদের দেশের জন্য এক বিরল অর্জন হিসেবে গণ্য হয়। এ কারণে শেখ হাসিনার ইউনেস্কো পুরস্কার প্রাপ্তি ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অনন্য অবদানের স্বীকৃতি। চুক্তির পর পুরো পার্বত্যাঞ্চলজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিকাশ যথেষ্ট বেগবান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সফলভাবে পরিচালনার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত থেকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অপরিহার্যতা লক্ষ করা যায়। তবে শান্তিচুক্তিতে বর্ণিত সব নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় বাস্তবায়নে পাহাড়ি-বাঙালির যৌথ প্রচেষ্টা দরকার। একসময় শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার সরকার। শান্তিচুক্তিতে বর্ণিত সব নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় বাস্তবায়নে পাহাড়ি-বাঙালির যৌথ প্রচেষ্টা থাকা দরকার। অর্থাৎ পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকার, উপজাতি নেতৃবৃন্দ, বাঙালি নেতৃবৃন্দ সবার ঐকান্তিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টাই গুরুত্বপূর্ণ। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, সেটি সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।
পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষায় স্থানীয় বাঙালি ও উপজাতি উভয়েরই বৈরী মনোভাব পরিহার করা উচিত। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিশেষ অধিকার নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত একটি বিষয়। মধ্যযুগের মনোভাব পোষণ করা ব্যক্তিগণ বুঝতে অপারগ যে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করা ও সহায়তার মানসিকতা সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব ও কর্তব্য। শান্তিচুক্তির ২৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলেও ক্রমশ ইতিবাচক গতিতেই অগ্রসরমান শান্তিচুক্তি। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে পার্বত্য শান্তিচুক্তির অনন্য সাধারণ সাফল্যের কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে জননেত্রী শেখ হাসিনার। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-জাতিগোষ্ঠী বা উপজাতিদের অধিকার ও মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটিয়েছেন তিনি। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার আন্তরিকতা নিয়ে কোনো বিরোধী পক্ষের প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় শান্তিচুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে, অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা বিশ^াস করি। তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন পাহাড়ি-বাঙালি পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনগণের আন্তরিক সহমর্মিতা ও আন্তরিক সহযোগিতার মনোভাব। আমরা সবাই প্রত্যাশা করি যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে; কাজেই এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দায় আওয়ামী লীগ সরকারের নৈতিক দায়িত্বও বটে।
[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]