alt

উপ-সম্পাদকীয়

রাজস্ব ও দেশের উন্নয়ন

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

: বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
image

বাংলাদেশে জিডিপি ছিল ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। আমরা যদি ২০২০ সাল থেকে পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের দিকে নজর দেই, তাহলে দেখা যায় যে, প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। নেপাল একটি ছোট দেশ। সেই দেশে রাজস্ব জিডিপিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। যেমন- ২০১৯ সালে নেপালে কর জিডিপির হার ছিল ২৬ দশমিক ০২ শতাংশ, একই সময়ে বাংলাদেশে ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। ভারতে ছিল ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত ২০২০ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৫ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০১৯ সালে ছিল ২৫ দশমিক ০৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ২৬ দশমিক ০১ শতাংশ।

বাংলাদেশের রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ঠিকই তবে আশানুরূপ গতিশীলতা বাড়ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশে পৌঁছলেও করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক ধাক্কায় কমে আসে ৪ দশমিক ০২ শতাংশে। বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন। উন্নত দেশে যেতে রূপকল্প-২০৪১ এর রোডম্যাপ বা পথচিত্র তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২০ বছরের জন্য অথনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথাও বলা হয়েছে। ওই সময়ে বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, আর কর জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ শতাংশে। এমতাবস্থায় রাজস্ব আহরণের গতি অবশ্যই বাড়াতে হবে। অপরদিকে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বব্যাপী আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন অতিরিক্ত বিনিয়োগ দরকার। আর বাংলাদেশের দরকার ৯২৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতিবছর অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ লাগবে। ব্যাপক এ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার করে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়াতে হবে, আঞ্চলিক সহযোগিতও বাড়াতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ খাতকে রাজস্ব আহরণে উৎসাহিত হয়, সেই নীতিও গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। আর এর মধ্যে মাত্র আয়কর দেন মাত্র সাড়ে ১৭ থেকে ১৮ লাখ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জরিপ অনুযায়ী আয় দিতে সক্ষম প্রায় এক কোটি লোক। বিপুলসংখ্যক লোক এখনো করের আওতার বাইরে।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে সরকারের আয়ের প্রধান উৎস হলো রাজস্ব খাত। আর সেটা আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে। চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫৮ দশকিক ১ শতাংশ আর করবহির্ভূত খাত থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওয়াতায় সর্বাদিক রাজস্ব আসে মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে। আর এই ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা বেশি। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে রাজস্ব বা আয় কর না দেয়ার একটা প্রবণতা তো আছেই। সক্ষম করদতাদের মধ্যে কর প্রদান না করা যেন একটি মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- বড় বড় করদাতারা কর প্রদানে নানা টালবাহানা করেন, একপর্যায়ে তারা আদালতের আশ্রয় নেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী উচ্চ আদালতে রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি; যার বিপরীতে রাজস্বের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর না দেয়া, কর প্রদানে টালবাহানা, রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা বেড়েই চলছে। এটা দেশের জন্য কোনো ইতিবাচক দিক নয়। বিশ্বের উন্নত দেশ বা প্রতিবেশী স্বল্পোন্নত দেশেও করদাতারা নিজ ইচ্ছায় বা নিজ উদোগে কর প্রদান করে থাকেন। তারা কর প্রদানকে নাগরিক দায়িত্ব বলে মনে করেন। তারা আরো মনে করেন যে, সরকারকে রাজস্ব প্রদান একটি সম্মানজনক অধ্যায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে এবং করদাতাদের কর প্রদানে নানা উদ্যোগও নিচ্ছে। তবে বোর্ডের কিছু আইনি জঠিলতাও আছে। যার কারণে রাজস্ব বোর্ড ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় প্রয়োজনী ও সময়োপযোগী অনেক পদক্ষেপ নিতে পারে না। তাদের আইনি সীমাবন্ধতার কারণে কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারে না। জনবল সংকটের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রয়োজনী জনবলও নিয়োগ দিতে পারে না।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১০ হাজারের অধিক জনবল তাদের প্রয়োজন; যা ইতোপূর্বে সরকারের ঊর্ধ্বমহলকে জানানো হয়েছে। বোর্ডে জনবল সংকটের কারণে সমস্যা আছে বলে জানা গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেহেতু বোর্ড সরাসরি সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন। এমতাবস্থায় কর ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন নামে একটি রাজস্ব কমিশন গঠন সময়ে দাবি হয়ে উঠেছে। ইতোপূর্বে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে এমন দাবিও করা হয়েছিল। অর্থনীতিবিদদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতে আলাদা দুটি কমিশন গঠনের কথাও বলেছিলেন। মন্ত্রী বলেছিলেন, ফিন্যান্সিয়াল সাইট দেখার জন্য একটি, রাজস্ব সাইট দেখার জন্য আরেকটি; অর্থাৎ পৃথক দুটি কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু এখনও সরকার সেই বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে, রাজধানী ঢাকায় অনেক ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু এগুলো রেজিস্ট্রেশন হয় না। রেজিস্ট্রেশন ফি স্ট্যাম্প ডিউটি এত বেশি যে, কেউ রেজিস্ট্রেশন করবে না। আমরা এগুলো যদি একটু সহনশীল হই, তাহলে অনেক লাভ হবে। রাজধানী ঢাকায় বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা কত, এর কোন হিসাব নেই। বাড়ি-গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলছে। যারা বাড়ি-গাড়ির মালিক তাদের কর প্রদানের সক্ষমতা আছে; কিন্তু তারা করজালের বাইরে রয়েছেন। তাদের করের আওতায় আনা দরকার, দরকার এ বিষয়ে জরিপ চালানো এবং কর প্রদানে জনমনে উৎসাহিত করা। জনবলের সংকটেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, তাদের করের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এক কথায় বলতে গেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানা সমস্যায় রয়েছে। এমতাবস্থায় রাজস্ব বাড়াতে একটি স্বাধীন রাজস্ব কমিশন গঠন অত্যন্ত জরুরি। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবেন বলে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে- একটি রাষ্ট্রের রাজস্ব উন্নয়ন হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বেগবান হবে। প্রত্যেক নাগরিককে রাজস্ব প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা সরকারের পলিসিগত একটি নৈতিক দায়িত্ব।

[লেখক : সাবেক কর কমিশনার]

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রাজস্ব ও দেশের উন্নয়ন

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

image

বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে জিডিপি ছিল ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। আমরা যদি ২০২০ সাল থেকে পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের দিকে নজর দেই, তাহলে দেখা যায় যে, প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। নেপাল একটি ছোট দেশ। সেই দেশে রাজস্ব জিডিপিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। যেমন- ২০১৯ সালে নেপালে কর জিডিপির হার ছিল ২৬ দশমিক ০২ শতাংশ, একই সময়ে বাংলাদেশে ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। ভারতে ছিল ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত ২০২০ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৫ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০১৯ সালে ছিল ২৫ দশমিক ০৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ২৬ দশমিক ০১ শতাংশ।

বাংলাদেশের রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ঠিকই তবে আশানুরূপ গতিশীলতা বাড়ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশে পৌঁছলেও করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক ধাক্কায় কমে আসে ৪ দশমিক ০২ শতাংশে। বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন। উন্নত দেশে যেতে রূপকল্প-২০৪১ এর রোডম্যাপ বা পথচিত্র তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২০ বছরের জন্য অথনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথাও বলা হয়েছে। ওই সময়ে বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, আর কর জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ শতাংশে। এমতাবস্থায় রাজস্ব আহরণের গতি অবশ্যই বাড়াতে হবে। অপরদিকে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বব্যাপী আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন অতিরিক্ত বিনিয়োগ দরকার। আর বাংলাদেশের দরকার ৯২৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতিবছর অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ লাগবে। ব্যাপক এ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার করে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়াতে হবে, আঞ্চলিক সহযোগিতও বাড়াতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ খাতকে রাজস্ব আহরণে উৎসাহিত হয়, সেই নীতিও গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। আর এর মধ্যে মাত্র আয়কর দেন মাত্র সাড়ে ১৭ থেকে ১৮ লাখ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জরিপ অনুযায়ী আয় দিতে সক্ষম প্রায় এক কোটি লোক। বিপুলসংখ্যক লোক এখনো করের আওতার বাইরে।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে সরকারের আয়ের প্রধান উৎস হলো রাজস্ব খাত। আর সেটা আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে। চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫৮ দশকিক ১ শতাংশ আর করবহির্ভূত খাত থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওয়াতায় সর্বাদিক রাজস্ব আসে মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে। আর এই ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা বেশি। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে রাজস্ব বা আয় কর না দেয়ার একটা প্রবণতা তো আছেই। সক্ষম করদতাদের মধ্যে কর প্রদান না করা যেন একটি মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- বড় বড় করদাতারা কর প্রদানে নানা টালবাহানা করেন, একপর্যায়ে তারা আদালতের আশ্রয় নেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী উচ্চ আদালতে রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি; যার বিপরীতে রাজস্বের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর না দেয়া, কর প্রদানে টালবাহানা, রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা বেড়েই চলছে। এটা দেশের জন্য কোনো ইতিবাচক দিক নয়। বিশ্বের উন্নত দেশ বা প্রতিবেশী স্বল্পোন্নত দেশেও করদাতারা নিজ ইচ্ছায় বা নিজ উদোগে কর প্রদান করে থাকেন। তারা কর প্রদানকে নাগরিক দায়িত্ব বলে মনে করেন। তারা আরো মনে করেন যে, সরকারকে রাজস্ব প্রদান একটি সম্মানজনক অধ্যায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে এবং করদাতাদের কর প্রদানে নানা উদ্যোগও নিচ্ছে। তবে বোর্ডের কিছু আইনি জঠিলতাও আছে। যার কারণে রাজস্ব বোর্ড ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় প্রয়োজনী ও সময়োপযোগী অনেক পদক্ষেপ নিতে পারে না। তাদের আইনি সীমাবন্ধতার কারণে কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারে না। জনবল সংকটের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রয়োজনী জনবলও নিয়োগ দিতে পারে না।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১০ হাজারের অধিক জনবল তাদের প্রয়োজন; যা ইতোপূর্বে সরকারের ঊর্ধ্বমহলকে জানানো হয়েছে। বোর্ডে জনবল সংকটের কারণে সমস্যা আছে বলে জানা গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেহেতু বোর্ড সরাসরি সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন। এমতাবস্থায় কর ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন নামে একটি রাজস্ব কমিশন গঠন সময়ে দাবি হয়ে উঠেছে। ইতোপূর্বে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে এমন দাবিও করা হয়েছিল। অর্থনীতিবিদদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতে আলাদা দুটি কমিশন গঠনের কথাও বলেছিলেন। মন্ত্রী বলেছিলেন, ফিন্যান্সিয়াল সাইট দেখার জন্য একটি, রাজস্ব সাইট দেখার জন্য আরেকটি; অর্থাৎ পৃথক দুটি কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু এখনও সরকার সেই বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে, রাজধানী ঢাকায় অনেক ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু এগুলো রেজিস্ট্রেশন হয় না। রেজিস্ট্রেশন ফি স্ট্যাম্প ডিউটি এত বেশি যে, কেউ রেজিস্ট্রেশন করবে না। আমরা এগুলো যদি একটু সহনশীল হই, তাহলে অনেক লাভ হবে। রাজধানী ঢাকায় বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা কত, এর কোন হিসাব নেই। বাড়ি-গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলছে। যারা বাড়ি-গাড়ির মালিক তাদের কর প্রদানের সক্ষমতা আছে; কিন্তু তারা করজালের বাইরে রয়েছেন। তাদের করের আওতায় আনা দরকার, দরকার এ বিষয়ে জরিপ চালানো এবং কর প্রদানে জনমনে উৎসাহিত করা। জনবলের সংকটেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, তাদের করের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এক কথায় বলতে গেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানা সমস্যায় রয়েছে। এমতাবস্থায় রাজস্ব বাড়াতে একটি স্বাধীন রাজস্ব কমিশন গঠন অত্যন্ত জরুরি। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবেন বলে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে- একটি রাষ্ট্রের রাজস্ব উন্নয়ন হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বেগবান হবে। প্রত্যেক নাগরিককে রাজস্ব প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা সরকারের পলিসিগত একটি নৈতিক দায়িত্ব।

[লেখক : সাবেক কর কমিশনার]

back to top