alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল সাম্য সমাজের বীজ বঙ্গবন্ধু বপন করেছেন

মোস্তাফা জব্বার

: সোমবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের সব মানুষ জানে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেছেন। সেই ইশতেহারের নামই ছিল দিনবদলের সনদ। তাতে ২০২১ সালে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই তার একুশ দফার সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দিন বদলের সনদ নামেই উল্লিখিত ছিল। এই ইশতেহারটির রচনা মূলত ২০০১ থেকে শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের নির্বাচনের জন্য।

কিন্তু সেই নির্বাচন ২০০৮ সালে পিছিয়ে যাওয়ায় ইশতেহারটি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ আপডেট করে প্রস্তুত করা হয়। ২০০৮ সালের ৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ অফিসে তৎকালীন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূহ উল আলম লেনিনের রুমে বসে সেটির সর্বশেষ খসড়া তৈরি করা হয়। ১১ ডিসেম্বর সেটি আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদ অনুমোদন করে ও ১২ ডিসেম্বর দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেটি জাতির সামনে ধোষণা করেন। সেই ইশতেহারের ১৪ নং কলামে লেখা ছিলো “২০২১ সালে তথ্যপ্রযুক্তিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে।” আমরা সবাই জানি সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা শুরু করেন এবং এখনও লাগাতার দেশ শাসনের দায়িত্বভার পালন করছেন। শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ ২১ সালে কতটা দৃশ্যমান সেটি নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। আমি বুঝি

এদেশের ছোট্ট শিশুটিও এখন বোঝে ডিজিটাল বাংলাদেশ কি, কেন এবং তার জীবনেও ডিজিটাল বাংলাদেশ কত প্রয়োজনীয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন এই ধারণা তিনি তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে পেয়েছেন। বস্তুত তিনি দুটি কথা প্রকাশ্যেই বলেন, বাংলা শিখেছি মোস্তাফা জব্বারের কাছ থেকে আর কম্পিউটার শিখেছি জয়ের কাছ থেকে। যারা জানেন না তাদের অবগতির জন্য জানাই যে তিনি ৯১ সালে কম্পিউটার চালনা শিখে সেটি নিজে সবার আগে অনুশীলন করেন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি কম্পিউটার চর্চার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। অনেকে এটাও হয়তো জানেন না যে তিনিই প্রথম দেশের কোন রাজনৈতিক দলকে ডিজিটাইজ করেন। ৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। ৯১ হোক আর ৯৬ হোক বাংলাদেশের রাজনীতি বা সরকারে শেখ হাসিনার হাত ধরে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। ৯৬-২০০১ সময়কালে তথ্যপ্রযুক্তির স্বপক্ষে গ্রহণ করা যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো একটি কৃষি প্রধান শিল্পবিপ্লব মিস করা দেশটাকে তৃতীয় শিল্পবিপ্লব বা তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করায়। সেই দেশটিই ২০০৯ সালে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে পা রাখে।

ওপরের যে তথ্যগুলো আমরা তুলে ধরেছি তাতে এ দেশের ডিজিটাল যুগে যাত্রার ন্যূনতম খতিয়ান। আমাদের জানার বিষয় যে বাংলাদেশের রূপান্তর কি তখন থেকেই শুরু। দুনিয়াতে কেউ যখন ডিজিটাল যুগের কথা ভাবেনি তখন শেখ হাসিনা ডিজিটাল যুগের নির্মাণকাজও শুরু করে দেন, সেটি কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের জন্য অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু তিনি সেই কাজটিই শুরু করেন এবং এজন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা সোসাইটি ৫.০-এর যুগে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।

আমরা সেই প্রেক্ষিত বিবেচনা করেই আলোচনাটি এভাবে করতে চাই যে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা কি ২০০৮ সালে-নাকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশটি স্বাধীন করেই দেশটিকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেননি কিন্তু বাংলাদেশের আজকের ডিজিটাল রূপান্তরের বীজ তিনি আপনহস্তে বপন করেন। তিনি সোনার বাংলা গড়ার কথা বলেছিলেন। আমি তাকে বঙ্গবন্ধুর ডিজিটাল সাম্য সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন বলে চিহ্নিত করি। এর মানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি বৈষম্যহীন সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

এই বিষয়ে মাত্র কয়েকটি প্রসঙ্গ আমরা আলোচনায় আনব।

মানবসম্পদ : সবাই জানেন ডিজিটাল যুগ মানে মেধাসম্পন্ন সৃজনশীল মানবসম্পদ। বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করে এই মানব সম্পদ গড়ে তোলাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তিনি ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষাকে ছুড়ে ফেলে দেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের পদক্ষেপ নেন। শাসনভার গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিক্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী কুদরত-ই-খুদাকে সভাপতি করে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এ কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষানীতি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগটিই বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। বিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা, আইন, ললিতকলা প্রভৃত্তি শিক্ষার জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করে এ কমিশন। যাতে বাঙালি জাতি শিক্ষাব্যবস্থায় অগ্রসর হতে পারে। মার্চ একাত্তর থেকে ডিসেম্বর একাত্তর পর্যন্ত সময়কালের ছাত্রদের সব বকেয়া টিউশন ফি মওকুফ করেন, শিক্ষকদের ৯ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেন; আর্থিক সংকটে থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ করেন এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন; বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে তিনি দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিকরণ করেন। এর ফলে ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হয়। বঙ্গবন্ধু সরকার ৯০০ কলেজ ভবন ও ৪০০ হাইস্কুল পুনর্নির্মাণ করেন। জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাসের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। এটি বস্তুত আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৪১ সালে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা।

প্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তিসহ আধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্ব বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন বহু আগেই। ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয় তখন বিশ্বের তৃতীয় শিল্পবিপ্লব চলছিল। দেশের মানুষ যাতে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারে সেজন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে আইটিইউ (International Telecommunication Union) এর সদস্যপদ লাভ করে। একই বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ করে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তিনি বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকেও তিনি সক্রিয় করে তোলেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ৫৫ হাজার টেলিফোন চালুর ব্যবস্থা করেন। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহজেই সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য ২০২৫ সাল নাগাদ ২৭টি দেশে ১৭৩টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এগুলোর মধ্যে ৩০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই নির্মাণ করা হবে পরমাণু বিশ্বে নবাগত দেশগুলোয়, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করেন। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫ মার্চ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন উৎসব সপ্তাহের উদ্বোধনকালে বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ এর থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় দেশ গড়ায় বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞান চর্চার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত আশাবাদী ছিলেন। ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির সম্মেলন উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি বলেছিলেন ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো দরকার। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবেন।’ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের কাছে বঙ্গবন্ধুর অনেক প্রত্যাশা ছিল। ১৯৭৫ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের এক যৌথ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে কোন দেশের শতকরা ৮০ ভাগ উন্নতি নির্ভর করে সে দেশের প্রকৌশলী ও কারিগরদের ওপর।’ স্থানীয় অবস্থার পটভূমিকায় সমস্যার সমাধান খোঁজার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের তিনি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক সম্পদ জরিপ, পরিবেশ, দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র উৎক্ষেপিত আর্থ রিসোর্স টেকনোলজি স্যাটেলাইটের (ইআরটিএস) প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ইআরটিএস নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পরবর্তীকালে ‘বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) তৈরি হয়। এছাড়া বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড প্রসারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সময়ে বেশকিছু অর্ডার, অধ্যাদেশ ও আইন তৈরি করা হয়। যেমন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন অর্ডার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ অধ্যাদেশ, বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন ইত্যাদি। এগুলো তৈরির মাধ্যমে দেশে নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ বিজ্ঞানের গবেষণার পথ প্রসারিত হয়। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৫০০ কিমি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন এবং দেশব্যাপী পল্লী বিদ্যুৎ কর্মসূচি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়। সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে পল্লী বিদ্যুৎতায়নের প্রতিশ্রুতি সন্নিবেশন করা হয়। তার কাজের মাঝে ছিল ঢাকার রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্থায়ী নতুন ভবন উদ্বোধন। সস্তায় রেডিও টিভি দেয়ার ব্যবস্থা করা। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মিগ বিমান হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান সংগ্রহ করা হয়। যুগোস্লাভিয়া থেকে ক্ষুদ্র অস্ত্রশস্ত্র ও সাঁজোয়া বাহিনীর জন্য ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। ৪০০ ধ্বংসপ্রাপ্ত সাবস্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হয়। খুলনা রাজশাহী ও সিদ্ধিরগঞ্জে পাওয়ার স্টেশন পুনঃসংস্কার, টিএন্ডটি বোর্ড গঠন, জাতিসংঘের সহায়তায় ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের পদক্ষেপ, নতুন শিক্ষা বোর্ড গঠনসহ তিনি অসংখ্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

খুব সঙ্গতকারণেই আমরা বঙ্গবন্ধুর আরও যেসব কাজ আছে সেগুলো এখানে তুলে ধরিনি। তবে আমি মনে করি অতি সংক্ষেপে যে কয়টি কাজের কথা আমি এখানে উল্লেখ করেছি তাতেই এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নটাই শুধু তিনি দেখেননি-তিনি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নটাও দেখেননি আমরা আজকে যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় মানবিক ডিজিটাল যুগের কথা বলছি তার বীজ বঙ্গবন্ধুর রোপণ করা বীজ থেকেই অংকুরিত। আমরা আজকাল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে একটি ডিজিটাল সাম্য সমাজ গড়ার কথা বলি। এই সাম্য সমাজটির কথা ভাবতেও বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের কথা ভাবতে হবে। তিনিই সমাজটাকে শুধু ডিজিটাল নয় সাম্য সমাজ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। আমরা গর্বিত যে জাতির পিতার নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে তার সোনার বাংলা গড়ছি এবং তার রোপিত ডিজিটাল বাংলাদেশ সেই সোনার বাংলা বা ডিজিটাল সাম্য সমাজ গড়ার হাতিয়ার।

ঢাকা। ৩ ডিসেম্বর, ২০২১।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী]

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল সাম্য সমাজের বীজ বঙ্গবন্ধু বপন করেছেন

মোস্তাফা জব্বার

সোমবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের সব মানুষ জানে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেছেন। সেই ইশতেহারের নামই ছিল দিনবদলের সনদ। তাতে ২০২১ সালে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই তার একুশ দফার সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দিন বদলের সনদ নামেই উল্লিখিত ছিল। এই ইশতেহারটির রচনা মূলত ২০০১ থেকে শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের নির্বাচনের জন্য।

কিন্তু সেই নির্বাচন ২০০৮ সালে পিছিয়ে যাওয়ায় ইশতেহারটি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ আপডেট করে প্রস্তুত করা হয়। ২০০৮ সালের ৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ অফিসে তৎকালীন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূহ উল আলম লেনিনের রুমে বসে সেটির সর্বশেষ খসড়া তৈরি করা হয়। ১১ ডিসেম্বর সেটি আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদ অনুমোদন করে ও ১২ ডিসেম্বর দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেটি জাতির সামনে ধোষণা করেন। সেই ইশতেহারের ১৪ নং কলামে লেখা ছিলো “২০২১ সালে তথ্যপ্রযুক্তিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে।” আমরা সবাই জানি সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা শুরু করেন এবং এখনও লাগাতার দেশ শাসনের দায়িত্বভার পালন করছেন। শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ ২১ সালে কতটা দৃশ্যমান সেটি নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। আমি বুঝি

এদেশের ছোট্ট শিশুটিও এখন বোঝে ডিজিটাল বাংলাদেশ কি, কেন এবং তার জীবনেও ডিজিটাল বাংলাদেশ কত প্রয়োজনীয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন এই ধারণা তিনি তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে পেয়েছেন। বস্তুত তিনি দুটি কথা প্রকাশ্যেই বলেন, বাংলা শিখেছি মোস্তাফা জব্বারের কাছ থেকে আর কম্পিউটার শিখেছি জয়ের কাছ থেকে। যারা জানেন না তাদের অবগতির জন্য জানাই যে তিনি ৯১ সালে কম্পিউটার চালনা শিখে সেটি নিজে সবার আগে অনুশীলন করেন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি কম্পিউটার চর্চার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। অনেকে এটাও হয়তো জানেন না যে তিনিই প্রথম দেশের কোন রাজনৈতিক দলকে ডিজিটাইজ করেন। ৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। ৯১ হোক আর ৯৬ হোক বাংলাদেশের রাজনীতি বা সরকারে শেখ হাসিনার হাত ধরে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। ৯৬-২০০১ সময়কালে তথ্যপ্রযুক্তির স্বপক্ষে গ্রহণ করা যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো একটি কৃষি প্রধান শিল্পবিপ্লব মিস করা দেশটাকে তৃতীয় শিল্পবিপ্লব বা তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করায়। সেই দেশটিই ২০০৯ সালে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে পা রাখে।

ওপরের যে তথ্যগুলো আমরা তুলে ধরেছি তাতে এ দেশের ডিজিটাল যুগে যাত্রার ন্যূনতম খতিয়ান। আমাদের জানার বিষয় যে বাংলাদেশের রূপান্তর কি তখন থেকেই শুরু। দুনিয়াতে কেউ যখন ডিজিটাল যুগের কথা ভাবেনি তখন শেখ হাসিনা ডিজিটাল যুগের নির্মাণকাজও শুরু করে দেন, সেটি কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের জন্য অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু তিনি সেই কাজটিই শুরু করেন এবং এজন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা সোসাইটি ৫.০-এর যুগে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।

আমরা সেই প্রেক্ষিত বিবেচনা করেই আলোচনাটি এভাবে করতে চাই যে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা কি ২০০৮ সালে-নাকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশটি স্বাধীন করেই দেশটিকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেননি কিন্তু বাংলাদেশের আজকের ডিজিটাল রূপান্তরের বীজ তিনি আপনহস্তে বপন করেন। তিনি সোনার বাংলা গড়ার কথা বলেছিলেন। আমি তাকে বঙ্গবন্ধুর ডিজিটাল সাম্য সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন বলে চিহ্নিত করি। এর মানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি বৈষম্যহীন সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

এই বিষয়ে মাত্র কয়েকটি প্রসঙ্গ আমরা আলোচনায় আনব।

মানবসম্পদ : সবাই জানেন ডিজিটাল যুগ মানে মেধাসম্পন্ন সৃজনশীল মানবসম্পদ। বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করে এই মানব সম্পদ গড়ে তোলাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তিনি ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষাকে ছুড়ে ফেলে দেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের পদক্ষেপ নেন। শাসনভার গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিক্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী কুদরত-ই-খুদাকে সভাপতি করে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এ কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষানীতি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগটিই বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। বিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা, আইন, ললিতকলা প্রভৃত্তি শিক্ষার জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করে এ কমিশন। যাতে বাঙালি জাতি শিক্ষাব্যবস্থায় অগ্রসর হতে পারে। মার্চ একাত্তর থেকে ডিসেম্বর একাত্তর পর্যন্ত সময়কালের ছাত্রদের সব বকেয়া টিউশন ফি মওকুফ করেন, শিক্ষকদের ৯ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেন; আর্থিক সংকটে থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ করেন এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন; বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে তিনি দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিকরণ করেন। এর ফলে ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হয়। বঙ্গবন্ধু সরকার ৯০০ কলেজ ভবন ও ৪০০ হাইস্কুল পুনর্নির্মাণ করেন। জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাসের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। এটি বস্তুত আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৪১ সালে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা।

প্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তিসহ আধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্ব বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন বহু আগেই। ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয় তখন বিশ্বের তৃতীয় শিল্পবিপ্লব চলছিল। দেশের মানুষ যাতে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারে সেজন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে আইটিইউ (International Telecommunication Union) এর সদস্যপদ লাভ করে। একই বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ করে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তিনি বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকেও তিনি সক্রিয় করে তোলেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ৫৫ হাজার টেলিফোন চালুর ব্যবস্থা করেন। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহজেই সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য ২০২৫ সাল নাগাদ ২৭টি দেশে ১৭৩টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এগুলোর মধ্যে ৩০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই নির্মাণ করা হবে পরমাণু বিশ্বে নবাগত দেশগুলোয়, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করেন। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫ মার্চ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন উৎসব সপ্তাহের উদ্বোধনকালে বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ এর থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় দেশ গড়ায় বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞান চর্চার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত আশাবাদী ছিলেন। ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির সম্মেলন উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি বলেছিলেন ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো দরকার। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবেন।’ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের কাছে বঙ্গবন্ধুর অনেক প্রত্যাশা ছিল। ১৯৭৫ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের এক যৌথ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে কোন দেশের শতকরা ৮০ ভাগ উন্নতি নির্ভর করে সে দেশের প্রকৌশলী ও কারিগরদের ওপর।’ স্থানীয় অবস্থার পটভূমিকায় সমস্যার সমাধান খোঁজার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের তিনি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক সম্পদ জরিপ, পরিবেশ, দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র উৎক্ষেপিত আর্থ রিসোর্স টেকনোলজি স্যাটেলাইটের (ইআরটিএস) প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ইআরটিএস নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পরবর্তীকালে ‘বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) তৈরি হয়। এছাড়া বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড প্রসারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সময়ে বেশকিছু অর্ডার, অধ্যাদেশ ও আইন তৈরি করা হয়। যেমন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন অর্ডার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ অধ্যাদেশ, বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন ইত্যাদি। এগুলো তৈরির মাধ্যমে দেশে নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ বিজ্ঞানের গবেষণার পথ প্রসারিত হয়। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৫০০ কিমি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন এবং দেশব্যাপী পল্লী বিদ্যুৎ কর্মসূচি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়। সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে পল্লী বিদ্যুৎতায়নের প্রতিশ্রুতি সন্নিবেশন করা হয়। তার কাজের মাঝে ছিল ঢাকার রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্থায়ী নতুন ভবন উদ্বোধন। সস্তায় রেডিও টিভি দেয়ার ব্যবস্থা করা। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মিগ বিমান হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান সংগ্রহ করা হয়। যুগোস্লাভিয়া থেকে ক্ষুদ্র অস্ত্রশস্ত্র ও সাঁজোয়া বাহিনীর জন্য ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। ৪০০ ধ্বংসপ্রাপ্ত সাবস্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হয়। খুলনা রাজশাহী ও সিদ্ধিরগঞ্জে পাওয়ার স্টেশন পুনঃসংস্কার, টিএন্ডটি বোর্ড গঠন, জাতিসংঘের সহায়তায় ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের পদক্ষেপ, নতুন শিক্ষা বোর্ড গঠনসহ তিনি অসংখ্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

খুব সঙ্গতকারণেই আমরা বঙ্গবন্ধুর আরও যেসব কাজ আছে সেগুলো এখানে তুলে ধরিনি। তবে আমি মনে করি অতি সংক্ষেপে যে কয়টি কাজের কথা আমি এখানে উল্লেখ করেছি তাতেই এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নটাই শুধু তিনি দেখেননি-তিনি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নটাও দেখেননি আমরা আজকে যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় মানবিক ডিজিটাল যুগের কথা বলছি তার বীজ বঙ্গবন্ধুর রোপণ করা বীজ থেকেই অংকুরিত। আমরা আজকাল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে একটি ডিজিটাল সাম্য সমাজ গড়ার কথা বলি। এই সাম্য সমাজটির কথা ভাবতেও বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের কথা ভাবতে হবে। তিনিই সমাজটাকে শুধু ডিজিটাল নয় সাম্য সমাজ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। আমরা গর্বিত যে জাতির পিতার নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে তার সোনার বাংলা গড়ছি এবং তার রোপিত ডিজিটাল বাংলাদেশ সেই সোনার বাংলা বা ডিজিটাল সাম্য সমাজ গড়ার হাতিয়ার।

ঢাকা। ৩ ডিসেম্বর, ২০২১।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী]

back to top