alt

উপ-সম্পাদকীয়

নাসিক নির্বাচন কি বার্তা দিচ্ছে?

মিহির কুমার রায়

: রোববার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২
image

বাংলাদেশে অনেক দিন পর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতার পথ এড়িয়ে অনুষ্ঠিত হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) জনপ্রতিনিধি নির্ণয়ে যা সবাইকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ইসি যদি ঠুঁটো জগন্নাথও হয় তাহলেও ক্ষমতাসীনরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। আর নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সেটা দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। নির্বাচনটি স্থানীয় হলেও দেশের জনগণের দৃষ্টি ছিল নির্বাচনে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন আলোচিত হচ্ছিল। জয়ের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেদের মতো করে কৌশল নিয়ে চলছিল আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে অনুশীলন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণাও যে সহিংসতামুক্ত থাকতে পারে, তার সত্যতা সবাই প্রত্যক্ষ করেছি ।

এবারের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ১৮৭টি ভোটকেন্দ্রে মোট পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। এ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেবার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যায় শতকরা ৫০ ভাগের কিছু বেশি ভোট কাস্ট হয়ে যেখানে নৌকা মার্কার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছে ১,৫৯,৩৯৭ ভোট এবং হাতি মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছে ৯২,৫৬২ ভোট। ১৬ জানুয়ারির এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো নাসিক মেয়রের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী।

ফলাফলে আরও দেখা যায় যে এই নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ১৮ জন, বিএনপির ১৪ জন, জাতীয় পার্টির দুজন, বাসদের একজন এবং নির্দলীয় একজন বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীদের অধিকাংশই সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন এবং নির্বাচিত ৩৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জন নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মেয়র পদে এবার ৬৯ হাজার ১০২ ভোটের ব্যবধানে জিতলেন আইভী। এর আগে গত দুই নির্বাচনে প্রথমবার লক্ষাধিক ভোট এবং দ্বিতীয়বার প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেও লক্ষণীয় যে এবারের ভোটের ব্যবধান কমেছে। ডা. আইভী ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায়ও ২০০৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এবারের এই নির্বাচনটি বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা দেশের পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে শিক্ষণীয় হতে পারে। নির্বাচন শেষে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে টানা তিনবার মেয়র পদে জয় পেলেন যা নারী নেত্রী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটি উদাহরণ হয়ে রইল। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো আইভী নৌকার প্রার্থী যার সঙ্গে স্থানীয় দলীয় সংসদ সদস্যদের সম্পর্ক ভালো নয়, যা আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে অবলোকন করেছি, তার পরও সততা দিয়ে নিজের যোগ্যতায় বলিয়ান হয়ে তিনি বিজয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন সেটাই সত্য। নারায়ণগঞ্জে একটি নদী বন্দর কেন্দ্রিক শিল্পবাণিজ্য শহর যেখানে সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা তার পিতার পরিচয়ে রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে।

মেয়র হিসেবে আইভী নারায়ণগঞ্জ শহরটাকে জানতে চেয়েছেন নিজের মনে করে যেমন প্রতিটি ওয়ার্ডের অবস্থা, জনগণের সমস্যা এবং তার সমাধানের উপায় সমূকে যা সত্যিকারের নেতা হতে প্রয়োজন যেমন সততা, বুদ্ধি, প্রকাশের ক্ষমতা, বিচারক্ষমতা, প্রশ্ন করার মানসিকতা, মতামত গ্রহণের ইচ্ছা, তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা, তিক্ষ্ম স্মৃতিশক্তি, সাহস, দূরদর্শিতা, সীমাহীন উৎসাহ, চিন্তা-ভাবনায় আধুনিক মননশিলতা ইত্যাদি। তারপর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরদিন সেলিনা হায়াৎ আইভী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের বাড়িতে যান মিষ্টি নিয়ে এবং চাচা বলে সম্বোধন করে তাকে মিষ্টি তোলে দেন মুখে যা চাচা-ভতিজীর সম্পর্ক হিসাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলো, যা সম্প্রতির একটি কৌশল বটে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার যে বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করেছে তা হলো সরকারের ওপর জনগণের আস্থা বজায় রাখা যার মাধ্যমে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়। সাম্প্রতিককালে সরকার অনেক দিক থেকেই চাপে আছে বিশেষত : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলদেশের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর ক্ষিপ্ত যার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সামিটে বাংলাদেশকে নিমন্ত্রণ জানায়নি। কারণ নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে দেশে-বিদেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন-এগুলোর জন্য সরকার অভ্যন্তরীণভাবে বেকায়দায়।

সরকার ভাবছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন যার মাধ্যমে ক্ষমতার বদল হবে না এবং এ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হলেন তারকা প্রার্থী। যার পাহাড় সম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারকা প্রার্থীই জিতেছেন কারন তার ব্যাপক জনসমর্থন আছে, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত সজ্জন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি কোন অভিযোগ দুদকে নেই, তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক, তার একটি ভোটব্যাংক আছে এবং শেষে তাদেও প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। কিন্তু যে বার্তাটি তারা মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে, সেটা তারা ২০১৩ সালেও দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এখানে উল্লেখ্য যে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এরপরও পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সবকটিতে তাদের অনেক ভালো প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও তারা ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল। কারণ তারা সেখানে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেনি। তখনও তারা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়া সত্ত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এখন নসিক নির্বাচনে সরকার যে বার্তাটি দিল, সেটা মানুষ কীভাবে নেবে তা দেখার বিষয়।

[লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ]

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নাসিক নির্বাচন কি বার্তা দিচ্ছে?

মিহির কুমার রায়

image

রোববার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

বাংলাদেশে অনেক দিন পর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতার পথ এড়িয়ে অনুষ্ঠিত হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) জনপ্রতিনিধি নির্ণয়ে যা সবাইকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ইসি যদি ঠুঁটো জগন্নাথও হয় তাহলেও ক্ষমতাসীনরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। আর নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সেটা দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। নির্বাচনটি স্থানীয় হলেও দেশের জনগণের দৃষ্টি ছিল নির্বাচনে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন আলোচিত হচ্ছিল। জয়ের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেদের মতো করে কৌশল নিয়ে চলছিল আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে অনুশীলন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণাও যে সহিংসতামুক্ত থাকতে পারে, তার সত্যতা সবাই প্রত্যক্ষ করেছি ।

এবারের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ১৮৭টি ভোটকেন্দ্রে মোট পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। এ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেবার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যায় শতকরা ৫০ ভাগের কিছু বেশি ভোট কাস্ট হয়ে যেখানে নৌকা মার্কার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছে ১,৫৯,৩৯৭ ভোট এবং হাতি মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছে ৯২,৫৬২ ভোট। ১৬ জানুয়ারির এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো নাসিক মেয়রের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী।

ফলাফলে আরও দেখা যায় যে এই নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ১৮ জন, বিএনপির ১৪ জন, জাতীয় পার্টির দুজন, বাসদের একজন এবং নির্দলীয় একজন বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীদের অধিকাংশই সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন এবং নির্বাচিত ৩৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জন নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মেয়র পদে এবার ৬৯ হাজার ১০২ ভোটের ব্যবধানে জিতলেন আইভী। এর আগে গত দুই নির্বাচনে প্রথমবার লক্ষাধিক ভোট এবং দ্বিতীয়বার প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেও লক্ষণীয় যে এবারের ভোটের ব্যবধান কমেছে। ডা. আইভী ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায়ও ২০০৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এবারের এই নির্বাচনটি বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা দেশের পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে শিক্ষণীয় হতে পারে। নির্বাচন শেষে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে টানা তিনবার মেয়র পদে জয় পেলেন যা নারী নেত্রী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটি উদাহরণ হয়ে রইল। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো আইভী নৌকার প্রার্থী যার সঙ্গে স্থানীয় দলীয় সংসদ সদস্যদের সম্পর্ক ভালো নয়, যা আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে অবলোকন করেছি, তার পরও সততা দিয়ে নিজের যোগ্যতায় বলিয়ান হয়ে তিনি বিজয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন সেটাই সত্য। নারায়ণগঞ্জে একটি নদী বন্দর কেন্দ্রিক শিল্পবাণিজ্য শহর যেখানে সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা তার পিতার পরিচয়ে রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে।

মেয়র হিসেবে আইভী নারায়ণগঞ্জ শহরটাকে জানতে চেয়েছেন নিজের মনে করে যেমন প্রতিটি ওয়ার্ডের অবস্থা, জনগণের সমস্যা এবং তার সমাধানের উপায় সমূকে যা সত্যিকারের নেতা হতে প্রয়োজন যেমন সততা, বুদ্ধি, প্রকাশের ক্ষমতা, বিচারক্ষমতা, প্রশ্ন করার মানসিকতা, মতামত গ্রহণের ইচ্ছা, তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা, তিক্ষ্ম স্মৃতিশক্তি, সাহস, দূরদর্শিতা, সীমাহীন উৎসাহ, চিন্তা-ভাবনায় আধুনিক মননশিলতা ইত্যাদি। তারপর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরদিন সেলিনা হায়াৎ আইভী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের বাড়িতে যান মিষ্টি নিয়ে এবং চাচা বলে সম্বোধন করে তাকে মিষ্টি তোলে দেন মুখে যা চাচা-ভতিজীর সম্পর্ক হিসাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলো, যা সম্প্রতির একটি কৌশল বটে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার যে বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করেছে তা হলো সরকারের ওপর জনগণের আস্থা বজায় রাখা যার মাধ্যমে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়। সাম্প্রতিককালে সরকার অনেক দিক থেকেই চাপে আছে বিশেষত : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলদেশের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর ক্ষিপ্ত যার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সামিটে বাংলাদেশকে নিমন্ত্রণ জানায়নি। কারণ নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে দেশে-বিদেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন-এগুলোর জন্য সরকার অভ্যন্তরীণভাবে বেকায়দায়।

সরকার ভাবছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন যার মাধ্যমে ক্ষমতার বদল হবে না এবং এ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হলেন তারকা প্রার্থী। যার পাহাড় সম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারকা প্রার্থীই জিতেছেন কারন তার ব্যাপক জনসমর্থন আছে, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত সজ্জন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি কোন অভিযোগ দুদকে নেই, তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক, তার একটি ভোটব্যাংক আছে এবং শেষে তাদেও প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। কিন্তু যে বার্তাটি তারা মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে, সেটা তারা ২০১৩ সালেও দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এখানে উল্লেখ্য যে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এরপরও পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সবকটিতে তাদের অনেক ভালো প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও তারা ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল। কারণ তারা সেখানে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেনি। তখনও তারা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়া সত্ত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এখন নসিক নির্বাচনে সরকার যে বার্তাটি দিল, সেটা মানুষ কীভাবে নেবে তা দেখার বিষয়।

[লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ]

back to top