জিল্লুর রহমান
রাশিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছিল। এজন্য বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২৫ জানুয়ারি মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বাংলাদেশ রাশিয়ান ফেডারেশনকে এর উত্তরসূরি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখে।
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল খুব ভালো ছিল না। বসনীয় যুদ্ধ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঘটনাবলিতে এ সময় বাংলাদেশ ও রাশিয়া ভিন্ন পক্ষ অবলম্বন করে। পরবর্তীতে ২০০০-এর দশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। রাশিয়া বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অন্যতম। এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারের একটি সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছে এবং এর আওতায় সেনাবাহিনীর জন্য ট্যাঙ্কবিধ্বংসী মিসাইল ও সাঁজোয়া যান, বিমানবাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ জঙ্গি বিমান, পণ্যবাহী হেলিকপ্টারসহ নানা অস্ত্রসম্ভার সংগ্রহ করছে। এছাড়া, বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা বিটিআর-৮০ সাঁজোয়া যান জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষার কাজে ব্যবহার করছে।
রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন এবং কিছু শুল্ক জটিলতার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাণিজ্য বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে অন্য দেশের মাধ্যমে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করছে। উভয় দেশের ব্যবসায়িক স্বার্থে এসব সমস্যা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধা করা জরুরি।
বাংলার সঙ্গে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক যোগসূত্র স্থাপিত হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। রাশিয়ার অনেক শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক জনমত তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিলেন। অন্যদিকে এক সময়ে সোভিয়েত রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রগতি প্রকাশনীর অনেক বাংলা বই প্রকাশিত হতো। সেগুলো বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। রাশিয়া সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে; ভবিষ্যতে আরও বাড়াবে বলে রাশিয়া সরকার থেকে বলা হয়েছে।
২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এটা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ঐতিহাসিক কারণে এবং বাস্তবতার নিরিখে বন্ধুপ্রতীম দুটি দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ ও দৃঢ় সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।
[লেখক : ব্যাংকার]
জিল্লুর রহমান
সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২
রাশিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছিল। এজন্য বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২৫ জানুয়ারি মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বাংলাদেশ রাশিয়ান ফেডারেশনকে এর উত্তরসূরি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখে।
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল খুব ভালো ছিল না। বসনীয় যুদ্ধ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঘটনাবলিতে এ সময় বাংলাদেশ ও রাশিয়া ভিন্ন পক্ষ অবলম্বন করে। পরবর্তীতে ২০০০-এর দশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। রাশিয়া বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অন্যতম। এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারের একটি সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছে এবং এর আওতায় সেনাবাহিনীর জন্য ট্যাঙ্কবিধ্বংসী মিসাইল ও সাঁজোয়া যান, বিমানবাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ জঙ্গি বিমান, পণ্যবাহী হেলিকপ্টারসহ নানা অস্ত্রসম্ভার সংগ্রহ করছে। এছাড়া, বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা বিটিআর-৮০ সাঁজোয়া যান জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষার কাজে ব্যবহার করছে।
রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন এবং কিছু শুল্ক জটিলতার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাণিজ্য বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে অন্য দেশের মাধ্যমে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করছে। উভয় দেশের ব্যবসায়িক স্বার্থে এসব সমস্যা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধা করা জরুরি।
বাংলার সঙ্গে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক যোগসূত্র স্থাপিত হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। রাশিয়ার অনেক শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক জনমত তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিলেন। অন্যদিকে এক সময়ে সোভিয়েত রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রগতি প্রকাশনীর অনেক বাংলা বই প্রকাশিত হতো। সেগুলো বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। রাশিয়া সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে; ভবিষ্যতে আরও বাড়াবে বলে রাশিয়া সরকার থেকে বলা হয়েছে।
২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এটা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ঐতিহাসিক কারণে এবং বাস্তবতার নিরিখে বন্ধুপ্রতীম দুটি দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ ও দৃঢ় সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।
[লেখক : ব্যাংকার]