কেএম মাসুম বিল্লাহ
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্যাংকিং খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। ব্যাংকিং পেশা অন্যান্য পেশার তুলনায় যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। এই পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতে সবসময় ব্যস্ত ও কর্মমুখর পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। কর্মীদের যেনো দম ফেলানোর সময় থাকে না।
কিন্তু সমান যোগ্যতা এবং সেবার ধরন একই রকম হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মীরা বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় প্রায় অর্ধেক বেতন পেয়ে থাকেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রায় দেড় যুগ আগ থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়াও চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকও তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে অনেক দিন থেকে।
২০১৩-১৪ সালের দিকে কেন্দ্রীয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য অভিন্ন বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবিত কাঠামোতে জাতীয় বেতন স্কেলের তুলনায় এসব ব্যাংকারের বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বেতন কাঠামো দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে সংবাদ প্রচার করা হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত অজানা কারণে তা আটকে যায়। অথচ ২০১৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্র মালিকানাধীন চার ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো হবে। তৎকালীন অর্থসচিব ফজলে কবির এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমও তখন বলেছিলেন, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রজ্ঞাপন হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।’
সর্বশেষ এ বছর ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মীদের জন্য বেতনভাতা বৃদ্ধি করা, প্রারম্ভিক বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হয়, যা এ বছরের মার্চ মাস থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়। বেসরকারি ব্যাংকের একজন পরিছন্নতা কর্মীর বেতন নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার টাকা! অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একজন ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা ১৬ হাজার টাকা বেসিকে সর্বমোট ২৪ হাজার ৭০০ টাকা পেয়ে থাকেন! অন্য দিকে প্রবিশনারি পিরিয়ড শেষে বেসরকারি ব্যাংকের একজন এসিস্ট্যান্ট অফিসারের বেতন ধরা হয় ৩৯ হাজার টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের দক্ষ কর্মীদের কতটুকু ধরে রাখতে সক্ষম হবে কিংবা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কতটুকু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে সেটাই বড় প্রশ্ন! বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক অর্থমন্ত্রী কয়েকবার স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মীদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করতে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি পরলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এসব যৌক্তিক দাবি পূরণ হবে বলে ব্যাংকারদের বিশ্বাস।
[লেখক : ব্যাংকার]
কেএম মাসুম বিল্লাহ
মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্যাংকিং খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। ব্যাংকিং পেশা অন্যান্য পেশার তুলনায় যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। এই পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতে সবসময় ব্যস্ত ও কর্মমুখর পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। কর্মীদের যেনো দম ফেলানোর সময় থাকে না।
কিন্তু সমান যোগ্যতা এবং সেবার ধরন একই রকম হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মীরা বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় প্রায় অর্ধেক বেতন পেয়ে থাকেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রায় দেড় যুগ আগ থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়াও চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকও তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে অনেক দিন থেকে।
২০১৩-১৪ সালের দিকে কেন্দ্রীয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য অভিন্ন বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবিত কাঠামোতে জাতীয় বেতন স্কেলের তুলনায় এসব ব্যাংকারের বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বেতন কাঠামো দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে সংবাদ প্রচার করা হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত অজানা কারণে তা আটকে যায়। অথচ ২০১৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্র মালিকানাধীন চার ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো হবে। তৎকালীন অর্থসচিব ফজলে কবির এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমও তখন বলেছিলেন, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রজ্ঞাপন হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।’
সর্বশেষ এ বছর ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মীদের জন্য বেতনভাতা বৃদ্ধি করা, প্রারম্ভিক বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হয়, যা এ বছরের মার্চ মাস থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়। বেসরকারি ব্যাংকের একজন পরিছন্নতা কর্মীর বেতন নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার টাকা! অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একজন ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা ১৬ হাজার টাকা বেসিকে সর্বমোট ২৪ হাজার ৭০০ টাকা পেয়ে থাকেন! অন্য দিকে প্রবিশনারি পিরিয়ড শেষে বেসরকারি ব্যাংকের একজন এসিস্ট্যান্ট অফিসারের বেতন ধরা হয় ৩৯ হাজার টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের দক্ষ কর্মীদের কতটুকু ধরে রাখতে সক্ষম হবে কিংবা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কতটুকু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে সেটাই বড় প্রশ্ন! বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক অর্থমন্ত্রী কয়েকবার স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মীদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করতে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি পরলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এসব যৌক্তিক দাবি পূরণ হবে বলে ব্যাংকারদের বিশ্বাস।
[লেখক : ব্যাংকার]