alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিপণন ব্যবস্থাপনা ও বাজার গবেষণা

এস এম জাহাঙ্গীর আলম

: বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২

আমাদের দেশে বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে সরকার অনেকটাই হাতগুটিয়ে বসে আছে। বাজার চলছে আপনগতিতে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো পণ্যের দাম নির্ধারণ করছেন। পণ্যের দাম, বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো নির্ধরণ করে থাকেন।

ক্রেতারা কোন পণ্য, কখন, কোথা হতে, কী মূল্যে, কিভাবে পেতে চায় তা চাহিদা বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়। অভীষ্ট ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও শক্তিশালী সংযোগ স্থাপন করা বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এটি সম্ভব সর্বোচ্চ গ্রাহক সন্তুষ্টি ও ভ্যালু প্রদানের মাধ্যমে। এজন্য বিপণন ব্যবস্থাপনা অপেক্ষাকৃত সম্ভাবনাময় অভীষ্ট বাজার অংশ নির্বাচন করে এবং তাদের সঙ্গে শক্তিশালী ভ্যালুনির্ভর সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিপণন ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের উপযুক্ত ব্র্যান্ড নাম নির্বাচন করে তা ক্রেতার মনে দীর্ঘদিনের জন্য স্থাপন করা। কারণ ব্র্যান্ড নাম যতবেশি ক্রেতাদের পছন্দ হবে উক্ত ব্র্যান্ডের পণ্য প্রতিযোগী পণ্যের তুলনায়, ততবেশি শক্তিশালী হবে।

পণ্যের মধ্যে নতুন কোন সুবিধা সংযোজন করলে বা নতুন কোনো পণ্য আসলে ক্রেতাদেরকে তা অবশ্যই যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অবহিত করা প্রয়োজন। বিপণন ব্যবস্থাপনা যোগাযোগের হাতিয়ার যেমন-বিজ্ঞাপন, ব্যক্তিক বিক্রয়, বিক্রয় প্রসার, গণসংযোগ ও প্রত্যক্ষ বিপণনের মাধ্যমে এ কাজটি সম্পাদন করে থাকে। বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ভোক্তা সন্তুষ্টি পরিমাপ করা। অর্থাৎ পণ্য ভোগ বা ব্যবহারের মাধ্যমে ভোক্তা কতটুকু সন্তুষ্ট বা অসুন্তুষ্ট তা নির্ধারণ করা।

বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি প্রধান কাজ হচ্ছে পণ্যের চাহিদা কম হলে তা বৃদ্ধি এবং বেশি হলে তা হ্রাস করে চাহিদাকে কাম্য স্তরে ধরে রেখে চাহিদা ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এছাড়াও বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা; বিপণন পরিকল্পনাকে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় এবং বিপণন কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা এবং বিচ্যুতি হলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিপণন ব্যবস্থাপনা হলো ব্যবসায় সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সেই কার্যগত ক্ষেত্র যার মাধ্যমে উৎপাদকের কাছ থেকে দ্রব্য ও সেবা দক্ষতার সঙ্গে সঠিক সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে ও মসৃণ প্রক্রিয়ায় ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। বিপণন ব্যবস্থাপনার মতবাদসমূহ হলো- উৎপাদন মতবাদ, পণ্য মতবাদ, বিক্রয় মতবাদ, বিপণন ধারণা ও হলিস্টিক বিপণন মতবাদ। বিপণন ব্যবস্থাপনার প্রথম কাজ হচ্ছে বিপণন কর্মকান্ডের কৌশল ও পরিকল্পনা উন্নয়ন করা। এছাড়াও এর অন্যতম কাজ হচ্ছে বিপণনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। বিপণন ব্যবস্থাপনা বাজার বিভক্তিকরণের মাধ্যমে অভীষ্ট ক্রেতাদের নির্বাচন করে বিপণন কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।

অভীষ্ট ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও শক্তিশালী সংযোগ স্থাপন করা বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এটি সম্ভব সর্বোচ্চ গ্রাহক সন্তুষ্টি ও ভ্যালু প্রদানের মাধ্যমে। বিপণন ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের উপযুক্ত ব্র্যান্ড নাম নির্বাচন করে তা ক্রেতার মনে দীর্ঘদিনের জন্য স্থাপন করা। পণ্যের মধ্যে নতুন কোন সুবিধা সংযোজন করলে বা নতুন কোনো পণ্য আসলে ক্রেতাদের তা অবশ্যই যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অবহিত করা প্রয়োজন। বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি প্রধান কাজ হচ্ছে পণ্যের চাহিদা কম হলে তা বৃদ্ধি এবং বেশি হলে তা হ্রাস করে চাহিদাকে কাম্য স্তরে ধরে রেখে চাহিদা ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এছাড়াও বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা; বিপণন পরিকল্পনাকে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় এবং বিপণন কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা এবং বিচ্যুতি হলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিপণনকারী পণ্য ও সেবা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও জানানোর জন্য, পণ্য উন্নয়ন, প্রস্তুত, প্রসার, সঠিক মূল্য নির্ধারণ, পণ্য সরবরাহ বা গুদামজাতকরণসহ বিভিন্ন কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। যেমন- ইন্টারনেট, ফেসবুক, ও টুইটার ব্যবহার করে বিপণনকারী খুব সহজে এখন ভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আবার, বিশ^ায়ন ও অবাধ বাণিজ্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে। এতে ব্যবসায় পরিচালনা সহজতর ও পণ্যের সহজলভ্যতা হলেও প্রতিযোগিতা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কারণে আন্তর্জাতিক মানের বহু পণ্য সহজেই ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। বিপণন ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমে বর্তমান সময়ে পরিবেশ ও সমাজের কল্যাণের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে বিপণনকারী পরিবেশবান্ধব পণ্য প্রস্তুত, সামাজিক কল্যাণের জন্য বিভিন্ন বিপণন কার্যক্রম গ্রহণ করছে। যেমন- প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে অনেক বিপণনকারী এখন কাগজ বা পাটের মোড়ক ব্যবহার করছে।

বিপণনকারী ক্রেতার সন্তুষ্টির জন্য এখন প্রত্যেক ক্রেতাকে পৃথকভাবে গুরুত্ব দিয়ে পণ্য প্রস্তুত করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এখন ক্রেতাকেন্দ্রিক পণ্য প্রস্তুত ও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। যেমন- বিপণনকারী অনলাইনে নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্রেতাকে এখন নিজের পছন্দমতো রং, কাপড়, উপকরণ বা নকশা নির্ধারণ করে পোশাক বা জুতা তৈরির অর্ডার করার সুযোগ দিচ্ছে। সর্বশেষে, বিপণনকারী এখন দেশি ও বিদেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করে বাজারে টিকে থাকে। বিপণন প্রসারের বহুমুখী কৌশলের কারণে প্রতিযোগিতার তীব্রতাও বাড়ছে। এইসব প্রভাবকসমূহ ব্যবসায়িক পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। যার কারণে বিপণনকারী ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য তার বিপণন কার্যক্রম ও বিপণন ব্যবস্থাপনার কর্মকান্ড পরিবর্তন করছে।

ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ এবং পণ্য উন্নয়নের জন্য বাজার গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু বিপণনকারীরা পণ্যের মানোন্নয়নের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা না করে, পণ্যের বিক্রয় বাড়ানোর জন্য কেবল বিজ্ঞাপননির্ভর হয়ে পড়েন। এ দেশে খুব কমসংখ্যক বিপণনকারীরা রয়েছেন যারা বাজার গবেষণা করে বিপণন কার্যক্রম শুরু করেন। বিপণনকারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্রেতা অনুসন্ধান ও ক্রেতা নির্বাচন করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন না, যার ফলে বিপণন কার্যক্রমে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে বাজার গবেষণা, পূর্বানুমান, পণ্য পরিকল্পনা, মূল্য নিধারণ, বণ্টন প্রণালি, প্রসার কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়সমূহ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে বাজার গবেষণা করার জন্য একটি বড় অন্তরায় হলো প্রকৃত তথ্য ও তথ্যের উৎসের অভাব। অন্যদিকে এ দেশের বিপণনকারীরা পণ্যের প্রকৃত গুণাগুণ অনেক সময়ই গোপন করে ভুল এবং অতিরঞ্জিত বর্ণনা দিয়ে থাকেন। বিপণনে নৈতিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং পণ্যের মান, গুণ, উৎপাদনের উপকরণ, পরিমাণ মেয়াদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ যথাযথভাবে ভোক্তাকে জানানো প্রয়োজন; যা ভোক্তার সন্তুষ্টি ও আস্থা অর্জনে সহায়তা করে। উন্নত দেশসমূহের ন্যায় এখনও ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আইনকানুন পুরোপুরি অনুসরণ না করার ফলে ভোক্তারা অনেক সময়ই বিপণনকারীদের দ্বারা প্রতারিত হয়।

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে বাংলাদেশে বিপণন কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আপৎকালীন মজুদ গড়ে তোলা। সরকার আপৎকালীন মজুদ গড়ে তোলার মাধ্যমেও পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ব্যবসায়িরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে পণ্যের দাম বাড়ায়। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকে।

সরকার যদি ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি ও বাজারজাত করতো তাহলে ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিতে পারতো না। যেমন- সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ি অর্জিত হয় না। কারণ বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্য নির্ধারণ, ক্রয়কাজে জটিলতাসহ নানাবিধ কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। এছাড়া যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তাও কম। মৌসুমি শাক-সবজি, ফল ইত্যাদি সংরক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশব্যাপী ছোট ছোট হিমাগার গড়ে তুলে এসব সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবে এসবে সরকারের নজর নেই। সরকার বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। স্বার্থ রক্ষা করছে ব্যবসায়ীদের।

[লেখক : সাবেক কর কমিশনার]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিপণন ব্যবস্থাপনা ও বাজার গবেষণা

এস এম জাহাঙ্গীর আলম

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২

আমাদের দেশে বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে সরকার অনেকটাই হাতগুটিয়ে বসে আছে। বাজার চলছে আপনগতিতে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো পণ্যের দাম নির্ধারণ করছেন। পণ্যের দাম, বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো নির্ধরণ করে থাকেন।

ক্রেতারা কোন পণ্য, কখন, কোথা হতে, কী মূল্যে, কিভাবে পেতে চায় তা চাহিদা বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়। অভীষ্ট ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও শক্তিশালী সংযোগ স্থাপন করা বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এটি সম্ভব সর্বোচ্চ গ্রাহক সন্তুষ্টি ও ভ্যালু প্রদানের মাধ্যমে। এজন্য বিপণন ব্যবস্থাপনা অপেক্ষাকৃত সম্ভাবনাময় অভীষ্ট বাজার অংশ নির্বাচন করে এবং তাদের সঙ্গে শক্তিশালী ভ্যালুনির্ভর সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিপণন ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের উপযুক্ত ব্র্যান্ড নাম নির্বাচন করে তা ক্রেতার মনে দীর্ঘদিনের জন্য স্থাপন করা। কারণ ব্র্যান্ড নাম যতবেশি ক্রেতাদের পছন্দ হবে উক্ত ব্র্যান্ডের পণ্য প্রতিযোগী পণ্যের তুলনায়, ততবেশি শক্তিশালী হবে।

পণ্যের মধ্যে নতুন কোন সুবিধা সংযোজন করলে বা নতুন কোনো পণ্য আসলে ক্রেতাদেরকে তা অবশ্যই যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অবহিত করা প্রয়োজন। বিপণন ব্যবস্থাপনা যোগাযোগের হাতিয়ার যেমন-বিজ্ঞাপন, ব্যক্তিক বিক্রয়, বিক্রয় প্রসার, গণসংযোগ ও প্রত্যক্ষ বিপণনের মাধ্যমে এ কাজটি সম্পাদন করে থাকে। বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ভোক্তা সন্তুষ্টি পরিমাপ করা। অর্থাৎ পণ্য ভোগ বা ব্যবহারের মাধ্যমে ভোক্তা কতটুকু সন্তুষ্ট বা অসুন্তুষ্ট তা নির্ধারণ করা।

বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি প্রধান কাজ হচ্ছে পণ্যের চাহিদা কম হলে তা বৃদ্ধি এবং বেশি হলে তা হ্রাস করে চাহিদাকে কাম্য স্তরে ধরে রেখে চাহিদা ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এছাড়াও বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা; বিপণন পরিকল্পনাকে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় এবং বিপণন কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা এবং বিচ্যুতি হলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিপণন ব্যবস্থাপনা হলো ব্যবসায় সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সেই কার্যগত ক্ষেত্র যার মাধ্যমে উৎপাদকের কাছ থেকে দ্রব্য ও সেবা দক্ষতার সঙ্গে সঠিক সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে ও মসৃণ প্রক্রিয়ায় ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। বিপণন ব্যবস্থাপনার মতবাদসমূহ হলো- উৎপাদন মতবাদ, পণ্য মতবাদ, বিক্রয় মতবাদ, বিপণন ধারণা ও হলিস্টিক বিপণন মতবাদ। বিপণন ব্যবস্থাপনার প্রথম কাজ হচ্ছে বিপণন কর্মকান্ডের কৌশল ও পরিকল্পনা উন্নয়ন করা। এছাড়াও এর অন্যতম কাজ হচ্ছে বিপণনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। বিপণন ব্যবস্থাপনা বাজার বিভক্তিকরণের মাধ্যমে অভীষ্ট ক্রেতাদের নির্বাচন করে বিপণন কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।

অভীষ্ট ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও শক্তিশালী সংযোগ স্থাপন করা বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এটি সম্ভব সর্বোচ্চ গ্রাহক সন্তুষ্টি ও ভ্যালু প্রদানের মাধ্যমে। বিপণন ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের উপযুক্ত ব্র্যান্ড নাম নির্বাচন করে তা ক্রেতার মনে দীর্ঘদিনের জন্য স্থাপন করা। পণ্যের মধ্যে নতুন কোন সুবিধা সংযোজন করলে বা নতুন কোনো পণ্য আসলে ক্রেতাদের তা অবশ্যই যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অবহিত করা প্রয়োজন। বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি প্রধান কাজ হচ্ছে পণ্যের চাহিদা কম হলে তা বৃদ্ধি এবং বেশি হলে তা হ্রাস করে চাহিদাকে কাম্য স্তরে ধরে রেখে চাহিদা ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এছাড়াও বিপণন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা; বিপণন পরিকল্পনাকে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় এবং বিপণন কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা এবং বিচ্যুতি হলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিপণনকারী পণ্য ও সেবা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও জানানোর জন্য, পণ্য উন্নয়ন, প্রস্তুত, প্রসার, সঠিক মূল্য নির্ধারণ, পণ্য সরবরাহ বা গুদামজাতকরণসহ বিভিন্ন কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। যেমন- ইন্টারনেট, ফেসবুক, ও টুইটার ব্যবহার করে বিপণনকারী খুব সহজে এখন ভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আবার, বিশ^ায়ন ও অবাধ বাণিজ্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে। এতে ব্যবসায় পরিচালনা সহজতর ও পণ্যের সহজলভ্যতা হলেও প্রতিযোগিতা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কারণে আন্তর্জাতিক মানের বহু পণ্য সহজেই ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। বিপণন ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমে বর্তমান সময়ে পরিবেশ ও সমাজের কল্যাণের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে বিপণনকারী পরিবেশবান্ধব পণ্য প্রস্তুত, সামাজিক কল্যাণের জন্য বিভিন্ন বিপণন কার্যক্রম গ্রহণ করছে। যেমন- প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে অনেক বিপণনকারী এখন কাগজ বা পাটের মোড়ক ব্যবহার করছে।

বিপণনকারী ক্রেতার সন্তুষ্টির জন্য এখন প্রত্যেক ক্রেতাকে পৃথকভাবে গুরুত্ব দিয়ে পণ্য প্রস্তুত করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এখন ক্রেতাকেন্দ্রিক পণ্য প্রস্তুত ও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। যেমন- বিপণনকারী অনলাইনে নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্রেতাকে এখন নিজের পছন্দমতো রং, কাপড়, উপকরণ বা নকশা নির্ধারণ করে পোশাক বা জুতা তৈরির অর্ডার করার সুযোগ দিচ্ছে। সর্বশেষে, বিপণনকারী এখন দেশি ও বিদেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করে বাজারে টিকে থাকে। বিপণন প্রসারের বহুমুখী কৌশলের কারণে প্রতিযোগিতার তীব্রতাও বাড়ছে। এইসব প্রভাবকসমূহ ব্যবসায়িক পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। যার কারণে বিপণনকারী ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য তার বিপণন কার্যক্রম ও বিপণন ব্যবস্থাপনার কর্মকান্ড পরিবর্তন করছে।

ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ এবং পণ্য উন্নয়নের জন্য বাজার গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু বিপণনকারীরা পণ্যের মানোন্নয়নের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা না করে, পণ্যের বিক্রয় বাড়ানোর জন্য কেবল বিজ্ঞাপননির্ভর হয়ে পড়েন। এ দেশে খুব কমসংখ্যক বিপণনকারীরা রয়েছেন যারা বাজার গবেষণা করে বিপণন কার্যক্রম শুরু করেন। বিপণনকারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্রেতা অনুসন্ধান ও ক্রেতা নির্বাচন করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন না, যার ফলে বিপণন কার্যক্রমে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে বাজার গবেষণা, পূর্বানুমান, পণ্য পরিকল্পনা, মূল্য নিধারণ, বণ্টন প্রণালি, প্রসার কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়সমূহ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে বাজার গবেষণা করার জন্য একটি বড় অন্তরায় হলো প্রকৃত তথ্য ও তথ্যের উৎসের অভাব। অন্যদিকে এ দেশের বিপণনকারীরা পণ্যের প্রকৃত গুণাগুণ অনেক সময়ই গোপন করে ভুল এবং অতিরঞ্জিত বর্ণনা দিয়ে থাকেন। বিপণনে নৈতিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং পণ্যের মান, গুণ, উৎপাদনের উপকরণ, পরিমাণ মেয়াদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ যথাযথভাবে ভোক্তাকে জানানো প্রয়োজন; যা ভোক্তার সন্তুষ্টি ও আস্থা অর্জনে সহায়তা করে। উন্নত দেশসমূহের ন্যায় এখনও ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আইনকানুন পুরোপুরি অনুসরণ না করার ফলে ভোক্তারা অনেক সময়ই বিপণনকারীদের দ্বারা প্রতারিত হয়।

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে বাংলাদেশে বিপণন কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আপৎকালীন মজুদ গড়ে তোলা। সরকার আপৎকালীন মজুদ গড়ে তোলার মাধ্যমেও পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ব্যবসায়িরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে পণ্যের দাম বাড়ায়। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকে।

সরকার যদি ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি ও বাজারজাত করতো তাহলে ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিতে পারতো না। যেমন- সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ি অর্জিত হয় না। কারণ বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্য নির্ধারণ, ক্রয়কাজে জটিলতাসহ নানাবিধ কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। এছাড়া যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তাও কম। মৌসুমি শাক-সবজি, ফল ইত্যাদি সংরক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশব্যাপী ছোট ছোট হিমাগার গড়ে তুলে এসব সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবে এসবে সরকারের নজর নেই। সরকার বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। স্বার্থ রক্ষা করছে ব্যবসায়ীদের।

[লেখক : সাবেক কর কমিশনার]

back to top