alt

উপ-সম্পাদকীয়

পদ্মা সেতু : জাতির গর্বের প্রতীক

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২

দেশের বৃহত্তম সড়ক সেতু ‘পদ্মা সেতু’র শুভ উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা, আগ্রহ, দৃঢ়তা এবং দূরদর্শী পরিকল্পনায় আজ জাতির স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করেছে। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ছিল কঠিন। ২০১১ সনের এপ্রিলে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১১ সনের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে এবং ২০১২ সনের ২৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক অস্বীকৃতি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও এই প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালে জাতির সম্মুখে এই ‘পদ্মা সেতু’র নির্মাণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশ্বব্যাংকের এমন নাটক মঞ্চস্থ না হলে ২০১৩ সনেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারত, ৯ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হতো না এবং এত বিপুল ব্যয়েরও প্রয়োজন হতো না।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি দৃষ্টিগ্রাহ্য বিপ্লব ঘটবে, দেশের সর্বত্র পণ্য পরিবহন সহজতর ও দ্রুততর হবে, দ্রুততর পরিবহন ব্যবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক সমাজ অধিকতর কৃষি উৎপাদনে উৎসাহী হবে, সম্প্রসারিত ব্যবসা-বাণিজ্যের বদৌলতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের জীবনমান সমৃদ্ধ হবে, নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, দেশের জিডিপি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাবে, বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, দেশের দারিদ্র্য হার হ্রাস পাবে। এগুলো হলো প্রত্যাশা- পদ্মা সেতু জনগণের মনে প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা না থাকলে বড় কিছু করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২-৭৩ সনে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে সরকারের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, সেই বাজেট এবার হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বিরাট বিরাট বাজেট করার কৃতিত্ব সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের, তিনি কিছু অর্থনীতিবিদের তীব্র সমালোচনার মুখেও বিপুল অঙ্কের বাজেট তৈরি করে গেছেন। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি নেই উল্লেখ করে বিরোধী দল বাজেটের বিশালতা নিয়ে উপহাস করেছে। কিন্তু বড় বড় বাজেট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেও সক্ষম হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ৫ কোটি ডলারের তদারকি কাজ পাওয়ার জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটির মূল্যায়নে যে শর্টলিস্ট তৈরি করা হয় তাতে কানাডার এসএনসি লাভালিন ছিল। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করে বিশ্ব ব্যাংক সেতু নির্মাণের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল কানাডার এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিল। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধির মাধ্যমে লাভালিনের কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন এবং সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর এর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে, কেউ কেউ পদ্মা সেতুর সঙ্গে ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর ব্যয়ের তুলনা করে দুর্নীতির উল্লেখ করছেন। যারা বেশি ব্যয়ের কথা বলছেন, তারা কেউ কিন্তু দুই সেতুর টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর কথা বলছেন না

দুদক তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট কিছু পায়নি, আমাদের অনেকের ধারণা ছিল, দুদক সঠিকভাবে তদন্ত করেনি। কানাডার পুলিশ তাদের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইম, প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করায় আমাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়; কিন্তু সব সন্দেহের অবসান হয় যখন কানাডার আদালত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পাঁচ বছরের বেশি সময়ের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মামলা খারিজ করে দেয়; আদালত রায়ে উল্লেখ করে যে, মামলায় প্রদত্ত তথ্য অনুমানভিত্তিক, গালগল্প এবং গুজবের বেশি কিছু নয়। এতে হার হয়েছে বিশ্বব্যাংকের, তাদের ভূমিকা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ; অন্যদিকে জয় হয়েছে বাংলাদেশের, উজ্জ্বল হয়েছে আমাদের ভাবমূর্তি। বিশ্বব্যাংক এমন অপরিপক্ব কাজের জন্য লজ্জিত- এই কারণেই সম্ভবত বিশ্বব্যাংক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যান্য প্রকল্পে আগের চেয়ে বেশি সহায়তা দিচ্ছে।

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার পূর্বে দুর্নীতির চিত্র ধরা পড়ে গেলে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ থাকার কথা নয়, এই অবস্থায় দুর্নীতির ছিদ্র বন্ধ করা খুব কঠিন ছিল বলে মনে হয় না। কারণ তখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি, কোন চুক্তি সই হয়নি, কোন অর্থও ছাড় করা হয়নি। দ্বিতীয়ত সর্বনিম্ন দরদাতার নিকট থেকে ঘুষ পাওয়া তত সহজ নয়, এসএনসি লাভালিন ছিল সর্বনিম্ন দরদাতা। হতে পারে বিশ্বব্যাংকের পছন্দের কোন দরদাতা ছিল, কারণ বিশ্বব্যাংক নন-রেসপন্সিভ একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ করার জন্য নাকি পীড়াপীড়ি করছিল। অবশ্য এটাও হতে পারে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন হোক, বিশ্বব্যাংক তা চায়নি। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাস্তবায়িত সব প্রকল্প নিশ্চয়ই দুর্নীতি মুক্ত নয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এমন আচরণের পেছনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকতে দেয়া হয়নি বলে ড. ইউনুস নাকি সরকারের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছেন। কথাটার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সহজ নয়। তবে ৬৫ বছর বয়স পার হওয়ার পরও ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকার আগ্রহ নিয়ে মামলা করেছিলেন, ড. কামাল হোসেনের মতো ঝানু উকিল ড. ইউনুসের পক্ষে লড়ার পরও তিনি হেরে যান। কারণ, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়সের কেউ সরকারি চাকরি করতে পারেন না। তাকে সরকারের তরফ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের এডভাইজার হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তিনি তা গ্রহণ করেননি।

পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর এর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে, কেউ কেউ পদ্মা সেতুর সঙ্গে ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর ব্যয়ের তুলনা করে দুর্নীতির উল্লেখ করছেন। যারা বেশি ব্যয়ের কথা বলছেন, তারা কেউ কিন্তু দুই সেতুর টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর কথা বলছেন না। দ্বিতল বৈশিষ্ট্যের কারণে পদ্মা সেতুর খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ ছাড়াও আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। পদ্মা একটি তীব্র খরস্রোতা নদী; নদীর তীব্র স্রোতের কারণে নদী শাসন ও নির্মাণকাজ অত্যন্ত কঠিন ছিল। দুটি সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় সমান- ভূপেন হাজারিকা সেতুর দৈর্ঘ্য যেখানে ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেখানে ভায়াডাক্টসহ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। ভূপেন হাজারিকা সেতুর প্রস্থ ৪২ ফুট, আর পদ্মা সেতুর প্রস্থ প্রায় ৬০ ফুট, প্রায় দেড় গুণ। ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড নেয়ার ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন, পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮২১০ টন। ভূপেন হাজারিকা সেতুর একটি পিলারের ওজন ১২০ টন, অন্যদিকে পদ্মা সেতুর পিলারের ওজন ৫০ হাজার টন। পৃথিবীর অন্য কোথাও কোন সেতুতে পাইল এত গভীরে প্রবেশ করাতে হয়নি। পদ্মা সেতুর পাইলের গভীরতা একটি ৪০ তলা ভবনের সমান।

পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ে যে হাতুড়ি ব্যবহৃত হয়েছে তেমন শক্তিশালী হাতুড়ি পৃথিবীর আর কোন সেতু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়নি। পদ্মা সেতুতে ১৬ কিলোমিটার জুড়ে নদী শাসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, ভূপেন হাজারিকা সেতুর নদী শাসনে কোন খরচই হয়নি। পদ্মা সেতুতে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত যে মিহি সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে, তা পৃথিবীর আর কোন সেতুতে অদ্যাবধি ব্যবহৃত হয়নি। করোনার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হওয়ায় ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়নে টাকার হিসেবে নির্মাণ খরচ বেশি প্রদর্শিত হচ্ছে। তারপরও বমূল সেতুতে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের খরচ বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। যে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গেল ২০১১ সনে সেই বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন ছিল ৩০০ কোটি ডলার, প্রতি ডলার বর্তমান বিনিময় মূল্য ৯০ টাকা করে ধরা হলে সেতুর নির্মাণ খরচ দাঁড়ায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

পৃথিবীতে পদ্মা সেতুর চেয়েও দীর্ঘতর সেতু রয়েছে, আমি নিজেই এই সেতুর চেয়ে আরও দীর্ঘতর ও দৃষ্টিনন্দন সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেছি; কিন্তু সেই সেতুগুলো পার হওয়ার সময় গৌরব বোধ করিনি, কারণ সেগুলো আমাদের সেতু নয়, পদ্মা সেতু আমাদের। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার পর দেশের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদ বার বার বলছিলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেহায়েতই আবেগ তাড়িত এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। অর্থনীতিবিদদের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন ব্যতীতও যে দেশের দীর্ঘতম এবং ব্যয়বহুল একটি সড়ক সেতু বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে হতে পারে তা প্রমাণ করে দিলেন দৃঢ়চেতা, অকুতোভয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; এই সেতু নির্মাণ করে তিনি জাতির মর্যাদাকে সমুন্নত রাখলেন। তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি আজ গর্ব করে বলতে পারছে, ‘আমরাও পারি’।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পদ্মা সেতু : জাতির গর্বের প্রতীক

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২

দেশের বৃহত্তম সড়ক সেতু ‘পদ্মা সেতু’র শুভ উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা, আগ্রহ, দৃঢ়তা এবং দূরদর্শী পরিকল্পনায় আজ জাতির স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করেছে। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ছিল কঠিন। ২০১১ সনের এপ্রিলে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১১ সনের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে এবং ২০১২ সনের ২৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক অস্বীকৃতি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও এই প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালে জাতির সম্মুখে এই ‘পদ্মা সেতু’র নির্মাণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশ্বব্যাংকের এমন নাটক মঞ্চস্থ না হলে ২০১৩ সনেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারত, ৯ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হতো না এবং এত বিপুল ব্যয়েরও প্রয়োজন হতো না।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি দৃষ্টিগ্রাহ্য বিপ্লব ঘটবে, দেশের সর্বত্র পণ্য পরিবহন সহজতর ও দ্রুততর হবে, দ্রুততর পরিবহন ব্যবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক সমাজ অধিকতর কৃষি উৎপাদনে উৎসাহী হবে, সম্প্রসারিত ব্যবসা-বাণিজ্যের বদৌলতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের জীবনমান সমৃদ্ধ হবে, নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, দেশের জিডিপি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাবে, বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, দেশের দারিদ্র্য হার হ্রাস পাবে। এগুলো হলো প্রত্যাশা- পদ্মা সেতু জনগণের মনে প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা না থাকলে বড় কিছু করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২-৭৩ সনে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে সরকারের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, সেই বাজেট এবার হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বিরাট বিরাট বাজেট করার কৃতিত্ব সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের, তিনি কিছু অর্থনীতিবিদের তীব্র সমালোচনার মুখেও বিপুল অঙ্কের বাজেট তৈরি করে গেছেন। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি নেই উল্লেখ করে বিরোধী দল বাজেটের বিশালতা নিয়ে উপহাস করেছে। কিন্তু বড় বড় বাজেট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেও সক্ষম হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ৫ কোটি ডলারের তদারকি কাজ পাওয়ার জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটির মূল্যায়নে যে শর্টলিস্ট তৈরি করা হয় তাতে কানাডার এসএনসি লাভালিন ছিল। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করে বিশ্ব ব্যাংক সেতু নির্মাণের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল কানাডার এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিল। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধির মাধ্যমে লাভালিনের কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন এবং সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর এর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে, কেউ কেউ পদ্মা সেতুর সঙ্গে ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর ব্যয়ের তুলনা করে দুর্নীতির উল্লেখ করছেন। যারা বেশি ব্যয়ের কথা বলছেন, তারা কেউ কিন্তু দুই সেতুর টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর কথা বলছেন না

দুদক তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট কিছু পায়নি, আমাদের অনেকের ধারণা ছিল, দুদক সঠিকভাবে তদন্ত করেনি। কানাডার পুলিশ তাদের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইম, প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করায় আমাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়; কিন্তু সব সন্দেহের অবসান হয় যখন কানাডার আদালত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পাঁচ বছরের বেশি সময়ের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মামলা খারিজ করে দেয়; আদালত রায়ে উল্লেখ করে যে, মামলায় প্রদত্ত তথ্য অনুমানভিত্তিক, গালগল্প এবং গুজবের বেশি কিছু নয়। এতে হার হয়েছে বিশ্বব্যাংকের, তাদের ভূমিকা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ; অন্যদিকে জয় হয়েছে বাংলাদেশের, উজ্জ্বল হয়েছে আমাদের ভাবমূর্তি। বিশ্বব্যাংক এমন অপরিপক্ব কাজের জন্য লজ্জিত- এই কারণেই সম্ভবত বিশ্বব্যাংক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যান্য প্রকল্পে আগের চেয়ে বেশি সহায়তা দিচ্ছে।

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার পূর্বে দুর্নীতির চিত্র ধরা পড়ে গেলে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ থাকার কথা নয়, এই অবস্থায় দুর্নীতির ছিদ্র বন্ধ করা খুব কঠিন ছিল বলে মনে হয় না। কারণ তখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি, কোন চুক্তি সই হয়নি, কোন অর্থও ছাড় করা হয়নি। দ্বিতীয়ত সর্বনিম্ন দরদাতার নিকট থেকে ঘুষ পাওয়া তত সহজ নয়, এসএনসি লাভালিন ছিল সর্বনিম্ন দরদাতা। হতে পারে বিশ্বব্যাংকের পছন্দের কোন দরদাতা ছিল, কারণ বিশ্বব্যাংক নন-রেসপন্সিভ একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ করার জন্য নাকি পীড়াপীড়ি করছিল। অবশ্য এটাও হতে পারে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন হোক, বিশ্বব্যাংক তা চায়নি। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাস্তবায়িত সব প্রকল্প নিশ্চয়ই দুর্নীতি মুক্ত নয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এমন আচরণের পেছনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকতে দেয়া হয়নি বলে ড. ইউনুস নাকি সরকারের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছেন। কথাটার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সহজ নয়। তবে ৬৫ বছর বয়স পার হওয়ার পরও ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকার আগ্রহ নিয়ে মামলা করেছিলেন, ড. কামাল হোসেনের মতো ঝানু উকিল ড. ইউনুসের পক্ষে লড়ার পরও তিনি হেরে যান। কারণ, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়সের কেউ সরকারি চাকরি করতে পারেন না। তাকে সরকারের তরফ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের এডভাইজার হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তিনি তা গ্রহণ করেননি।

পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর এর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে, কেউ কেউ পদ্মা সেতুর সঙ্গে ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর ব্যয়ের তুলনা করে দুর্নীতির উল্লেখ করছেন। যারা বেশি ব্যয়ের কথা বলছেন, তারা কেউ কিন্তু দুই সেতুর টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর কথা বলছেন না। দ্বিতল বৈশিষ্ট্যের কারণে পদ্মা সেতুর খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ ছাড়াও আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। পদ্মা একটি তীব্র খরস্রোতা নদী; নদীর তীব্র স্রোতের কারণে নদী শাসন ও নির্মাণকাজ অত্যন্ত কঠিন ছিল। দুটি সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় সমান- ভূপেন হাজারিকা সেতুর দৈর্ঘ্য যেখানে ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেখানে ভায়াডাক্টসহ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। ভূপেন হাজারিকা সেতুর প্রস্থ ৪২ ফুট, আর পদ্মা সেতুর প্রস্থ প্রায় ৬০ ফুট, প্রায় দেড় গুণ। ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড নেয়ার ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন, পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮২১০ টন। ভূপেন হাজারিকা সেতুর একটি পিলারের ওজন ১২০ টন, অন্যদিকে পদ্মা সেতুর পিলারের ওজন ৫০ হাজার টন। পৃথিবীর অন্য কোথাও কোন সেতুতে পাইল এত গভীরে প্রবেশ করাতে হয়নি। পদ্মা সেতুর পাইলের গভীরতা একটি ৪০ তলা ভবনের সমান।

পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ে যে হাতুড়ি ব্যবহৃত হয়েছে তেমন শক্তিশালী হাতুড়ি পৃথিবীর আর কোন সেতু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়নি। পদ্মা সেতুতে ১৬ কিলোমিটার জুড়ে নদী শাসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, ভূপেন হাজারিকা সেতুর নদী শাসনে কোন খরচই হয়নি। পদ্মা সেতুতে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত যে মিহি সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে, তা পৃথিবীর আর কোন সেতুতে অদ্যাবধি ব্যবহৃত হয়নি। করোনার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হওয়ায় ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়নে টাকার হিসেবে নির্মাণ খরচ বেশি প্রদর্শিত হচ্ছে। তারপরও বমূল সেতুতে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের খরচ বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। যে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গেল ২০১১ সনে সেই বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন ছিল ৩০০ কোটি ডলার, প্রতি ডলার বর্তমান বিনিময় মূল্য ৯০ টাকা করে ধরা হলে সেতুর নির্মাণ খরচ দাঁড়ায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

পৃথিবীতে পদ্মা সেতুর চেয়েও দীর্ঘতর সেতু রয়েছে, আমি নিজেই এই সেতুর চেয়ে আরও দীর্ঘতর ও দৃষ্টিনন্দন সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেছি; কিন্তু সেই সেতুগুলো পার হওয়ার সময় গৌরব বোধ করিনি, কারণ সেগুলো আমাদের সেতু নয়, পদ্মা সেতু আমাদের। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার পর দেশের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদ বার বার বলছিলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেহায়েতই আবেগ তাড়িত এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। অর্থনীতিবিদদের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন ব্যতীতও যে দেশের দীর্ঘতম এবং ব্যয়বহুল একটি সড়ক সেতু বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে হতে পারে তা প্রমাণ করে দিলেন দৃঢ়চেতা, অকুতোভয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; এই সেতু নির্মাণ করে তিনি জাতির মর্যাদাকে সমুন্নত রাখলেন। তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি আজ গর্ব করে বলতে পারছে, ‘আমরাও পারি’।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

back to top