alt

উপ-সম্পাদকীয়

জ্বালানি তেলের দাম ও কিছু প্রশ্ন

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ১৩ আগস্ট ২০২২

বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে- ডিজেল এবং কেরোসিন লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং অকটেন ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসির কথা অনুযায়ী শুধু বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে নয়, সীমান্ত পথে ভারতে তেল পাচার রোধ করতেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২২ মে ২০২২ তারিখ থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি বা ১১৪.০৯ টাকা এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ১০৬.০৩ রুপি বা ১৩০.৪২ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। কলকাতার তুলনায় মে মাস থেকে বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেল এবং পেট্রল যথাক্রমে ৩৪.০৯ টাকা ও ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা না হলে চোরাচালানের মাধ্যমে ডিজেল এবং পেট্রল ভারতে পাচার রোধ করা সম্ভব হতো না।

জ্বালানি তেল নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের অভিমত হচ্ছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে বিধায় এ মুহূর্তে দর বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত নয়। দ্বিতীয়ত, মে মাসে পশ্চিম বাংলায় তেলের দর বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে দর বৃদ্ধি করা হয়নি কেন? এতদিন তাহলে জ্বালানি তেল ভারতে পাচারের সুযোগ রাখা হলো কেন? এছাড়াও তেল পাচার গরু পাচারের মতো সহজ নয়, তেল বহনে গাড়ি লাগে। পিচ করা রাস্তা দিয়ে যদি তেলভর্তি গাড়ি পাচার হতে পারে তাহলে বিজিবির পাহারা বা কাস্টম স্টেশন রাখার দরকার নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দর কম থাকায় করোনাকালীন বিপিসি জ্বালানি তেল বিক্রি করে প্রচুর লাভ করেছে এবং এখনো তাদের কাছে ৩১ হাজার কোটি টাকার ডিপোজিট রয়েছে মর্মে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। বিপিসির এত বিপুল পরিমাণ টাকার ডিপোজিট থাকার সংবাদটি সত্য হলে তেলের মূল্য বৃদ্ধি না করে তারা আরও কিছুদিন লোকসান দিতে পারত। মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম স্পষ্ট করে দুটি অভিযোগ উত্থাপন করেছেন- এক. আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে গৃহীতব্য ঋণের শর্ত মোতাবেক তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে সরকার বাধ্য হয়েছে; দুই. মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আইএমএফের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ হলেও এখনো কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে বলে শুনিনি, তাহলে শর্ত দিল কখন? বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকার সুদ হার অনেক কম- এদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া নিয়ে বিরোধী দল এত সোচ্চার কেন তাও স্পষ্ট নয়। সদস্য দেশগুলোর প্রয়োজনে ঋণ দেয়ার জন্যই এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সৃষ্টি হয়েছে।

বিগত ছয় মাস মূল্য সমন্বয় না করে হঠাৎ ৪২-৫১ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি সুবিবেচনা প্রসূত বলে মনে হয় না। ৬ মাস মূল্য সমন্বয় না করার কারণ উল্লেখ করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের প্রত্যাশা করেছিল; স্বল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে গেলে অন্তর্বর্তীকালীন মূল্য বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। এ ভাবনায় তাড়িত হয়ে বিপিসি গত ছয় মাসে আমদানি মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করেনি। কিন্তু এভাবে অনবরত লোকসান দেয়া আর সম্ভব হচ্ছিল না বলেই আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তারা জ্বালানি তেলের দাম বাঙাতে বাধ্য হয়েছে। তবে এখনো ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে প্রায় ৮ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে, কারণ এখনো প্রতি লিটার ডিজেলের আমদানি খরচ পড়ে ১২২ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ, যা প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেননি তা হলো- ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় তেল আমদানির সময় এখন বিপিসিকে অধিক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তবুও এভাবে ৬ মাস অনবরত লোকসান না দিয়ে ভারতের মতো প্রতিনিয়ত অল্প অল্প করে সমন্বয় করলে দেশের অর্থনীতির ওপর হঠাৎ এত অধিক চাপ অনুভূত হতো না।

করোনাকালীন অর্জিত লাভের টাকা খরচের হিসাব নিয়ে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তার ব্যাখ্যাও কয়েক মাস আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম। বিপিসির বক্তব্য অনুযায়ী তারা তাদের প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে এবং তাদের কাজের সম্প্রসারণ করার অপরিহার্যতায় কিছু নতুন মেশিনপত্র সংস্থাপন করা হয়েছে, আমদানি করা গ্যাস সরবরাহের জন্য গভীর সমুদ্র থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা পর্যন্ত গ্যাস-পাইপলাইন বসানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে কেন দাম বাড়ানো হলো- এমন প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ্য যে, বিশ্ব বাজারে দাম কিছুটা কমলেও তা খুব বেশি নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের দাম এখনো আমাদের দেশে সম্প্রতি নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি- হংকংয়ে ডিজেল প্রতি লিটার ২৬১ টাকা, সিঙ্গাপুরে ১৯০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ায় ১৩৮ টাকা, নেপালে ১২৮ টাকা, আরব আমিরাতে ১২৩ টাকা এবং চীনে ১১৯ টাকা। আমেরিকাসহ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে জ্বালানি তেলের দাম এখনো বেশি। আজ ইতালির এক ফেইসবুক বন্ধুর কাছ থেকে জানলাম, ইতালিতে প্রতি লিটার ডিজেল এবং পেট্রলের দাম ১৭১ টাকা। পাকিস্তান এবং ভিয়েতনামে দাম কিছুটা কম। অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত হচ্ছে, তেল আমদানির উপর শুল্ক-ভ্যাট মওকুফ করা হলে দাম বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এই মওকুফের কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় প্রচুর কমে যেত। এছাড়াও এখন এবং আগামী আরও দেড় বা দুই মাসে দেশে যে তেল ব্যবহৃত হবে তা কেনা হয়েছে অনেক আগেই বেশি দামে। এখন কম দামে কেনা হলে তার ব্যবহার দুই মাসের পূর্বে আনা সম্ভব হবে না।

হংকংয়ের মতো ফ্রান্সেও জ্বালানি তেলের মূল্য লিটারপ্রতি দুইশ টাকারও বেশি। এসব দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকায় সরকার কোথাও ভর্তুকি দেয় না, লোকসান দিয়ে জনগণের কাছে বিক্রি করে না। কিন্তু আমাদের দেশে ভর্তুকি বন্ধ করা কঠিন। কারণ প্রকৃত মূল্যে সার বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে কৃষিজ পণ্যের দাম বাড়বে। ঠিক তেমনি বিদ্যুৎ-গ্যাস প্রকৃত দরে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করলে শিল্প-দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসে সরকার লোকসান দেয় বলেই আমাদের গার্মেন্টসের উৎপাদন খরচ কম এবং সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বেশি। অবশ্য এক্ষেত্রে কম মজুরির শ্রমের অবদানও অনেক। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে তেল ব্যবহারে বিভিন্ন দেশের জনগণ সাশ্রয়ী হচ্ছে। একই কারণে সম্ভবত রাশিয়া থেকে কম দামে কেনার পরও ভারত এবং চীনে তেলের দর কমানো হচ্ছে না। সবল অর্থনীতির দেশ জার্মানিও তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েছে। জ্বালানি তেলের সঙ্গে প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিধায় তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খরচ বাড়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে, বাস ভাড়া বাড়ে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ে, কৃষির যান্ত্রিক চাষাবাদ ও সেচ খরচ বাড়ে। দেশের নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের লোকদের পক্ষে এই বাড়তি খরচ সংকুলান করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য নিম্নবিত্তের লোকদের রেশন কার্ডের মাধ্যমে সস্তায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যাদি সরবরাহ করছে। মধ্যবিত্ত পরিবারকেও রেশন কার্ডের আওতায় আনা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। কারণ সরকার জনগণের স্বস্তির জন্য বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু ভর্তুকি দেওয়ার জন্য সরকারের আয়ের উৎস অবারিত নয়; ধনী এবং মধ্যবিত্তের অনেকে ঠিকমতো ট্যাক্সও দেন না। তবুও কৃষিকাজে প্রকৃত সেচপাম্প মালিকদের কার্ডের মাধ্যমে কম দামে ডিজেল দেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।

অফিস-আদালতে এয়ারকুলার ব্যবহার হ্রাস করা জরুরি। আমাদের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান সাধারণত স্যুট পরেন না। তার পোশাকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার আমলা এবং মন্ত্রীদের গরমের দিনে স্যুুট পরিহার করতে অনুরোধ করেছিলেন। আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে স্যুট পরা জরুরি নয়। মহাত্মা গান্ধী স্যুট পরেননি বলে ইংরেজ সরকারের কাছে তার গুরুত্ব কম ছিল না। তাই বলে গান্ধীর মতো জীর্ণশীর্ণ পোশাক পরে অফিস করার দাবি কেউ করছে না। বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্যোগে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, বিলাসী পণ্য ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য। তবে সব ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, একজনের ব্যয় মানেই আরেকজনের আয়। মিতব্যয়ী হতে গিয়ে সবাই হেঁটে হেঁটে চলাফেরা করলে রিকশাচালক বাঁচবে না, অনুষ্ঠানে ফুলের সাজ না থাকলে ফুল-চাষী ও ফুল-বিক্রেতাকে উপবাস করতে হবে, বাজারের বোঝা নিজে বহন করলে মুটে না খেয়ে মরবে, ভিক্ষা না দিয়ে তা সঞ্চয় করা হলে ভিক্ষুকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

জনপ্রিয়তা হারানোর শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। আমাদের ধারণা সরকার ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ জনপ্রিয় সব সিদ্ধান্ত সব সময় দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। জনপ্রিয় হতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার পূর্ববর্তী সরকার ৫০ শতাংশ ভ্যাট হ্রাস করে ফকির হয়ে গিয়েছিল, পরে জনগণই তাদের তাড়িয়েছে, জনপ্রিয়তা কাজে আসেনি। তাই লাগামহীন ভর্তুকি দিয়ে সরকার দেউলিয়া হোক- এটা সচেতন জনগণ প্রত্যাশা করতে পারে না।

বিপিসির দুর্নীতি এবং সততা নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে, এই বিভ্রান্তির জন্য মন্ত্রীর ব্যাখ্যাও জনগণ বিশ্বাস করে না। তাই পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় উত্থাপিত প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ পরিষ্কার উত্তর সরকারের স্বার্থেই জনগণকে জানানো প্রয়োজন

বাংলাদেশ এখন প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল এবং ৪০ লাখ টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করে। শোধনাগারের সক্ষমতা না থাকায় সরকার মাত্র ১৩ লাখ টন ক্রুড অয়েল আমদানি করে। বিপিসির কাছে নগদ অর্থ থাকলে তা দিয়ে জরুরিভিত্তিতে ক্রুড অয়েল রিফাইনারি ক্যাপাসিটি এবং রিজার্ভ সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। আমাদের শোধনাগার রাশিয়ার তেল শোধন করার জন্য উপযোগী না হওয়ায় কম দামে রাশিয়ার তেলও কেনা যাচ্ছে না। বিপিসির লাভ এবং খরচ নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। অনেকের মতে বিপিসির মূল্য সমন্বয় সঠিক হয়নি, আরও কম মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব ছিল। বর্তমান অবস্থায় বিপিসির আর্থিক অবস্থা জানা দরকার, অনেকের ধারণা বিপিসি স্বচ্ছ নয়। বিপিসির সম্ভবত নিরীক্ষিত কোন হিসাব বিবরণী নেই, থাকলে এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য মন্ত্রী বা সচিবের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন হতো না। বিপিসির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বিপিসির দুর্নীতি এবং সততা নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে, এই বিভ্রান্তির জন্য মন্ত্রীর ব্যাখ্যাও জনগণ বিশ্বাস করে না। তাই পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় উত্থাপিত প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ পরিষ্কার উত্তর সরকারের স্বার্থেই জনগণকে জানানো প্রয়োজন।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জ্বালানি তেলের দাম ও কিছু প্রশ্ন

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শনিবার, ১৩ আগস্ট ২০২২

বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে- ডিজেল এবং কেরোসিন লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং অকটেন ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসির কথা অনুযায়ী শুধু বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে নয়, সীমান্ত পথে ভারতে তেল পাচার রোধ করতেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২২ মে ২০২২ তারিখ থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি বা ১১৪.০৯ টাকা এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ১০৬.০৩ রুপি বা ১৩০.৪২ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। কলকাতার তুলনায় মে মাস থেকে বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেল এবং পেট্রল যথাক্রমে ৩৪.০৯ টাকা ও ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা না হলে চোরাচালানের মাধ্যমে ডিজেল এবং পেট্রল ভারতে পাচার রোধ করা সম্ভব হতো না।

জ্বালানি তেল নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের অভিমত হচ্ছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে বিধায় এ মুহূর্তে দর বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত নয়। দ্বিতীয়ত, মে মাসে পশ্চিম বাংলায় তেলের দর বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে দর বৃদ্ধি করা হয়নি কেন? এতদিন তাহলে জ্বালানি তেল ভারতে পাচারের সুযোগ রাখা হলো কেন? এছাড়াও তেল পাচার গরু পাচারের মতো সহজ নয়, তেল বহনে গাড়ি লাগে। পিচ করা রাস্তা দিয়ে যদি তেলভর্তি গাড়ি পাচার হতে পারে তাহলে বিজিবির পাহারা বা কাস্টম স্টেশন রাখার দরকার নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দর কম থাকায় করোনাকালীন বিপিসি জ্বালানি তেল বিক্রি করে প্রচুর লাভ করেছে এবং এখনো তাদের কাছে ৩১ হাজার কোটি টাকার ডিপোজিট রয়েছে মর্মে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। বিপিসির এত বিপুল পরিমাণ টাকার ডিপোজিট থাকার সংবাদটি সত্য হলে তেলের মূল্য বৃদ্ধি না করে তারা আরও কিছুদিন লোকসান দিতে পারত। মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম স্পষ্ট করে দুটি অভিযোগ উত্থাপন করেছেন- এক. আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে গৃহীতব্য ঋণের শর্ত মোতাবেক তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে সরকার বাধ্য হয়েছে; দুই. মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আইএমএফের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ হলেও এখনো কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে বলে শুনিনি, তাহলে শর্ত দিল কখন? বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকার সুদ হার অনেক কম- এদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া নিয়ে বিরোধী দল এত সোচ্চার কেন তাও স্পষ্ট নয়। সদস্য দেশগুলোর প্রয়োজনে ঋণ দেয়ার জন্যই এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সৃষ্টি হয়েছে।

বিগত ছয় মাস মূল্য সমন্বয় না করে হঠাৎ ৪২-৫১ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি সুবিবেচনা প্রসূত বলে মনে হয় না। ৬ মাস মূল্য সমন্বয় না করার কারণ উল্লেখ করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের প্রত্যাশা করেছিল; স্বল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে গেলে অন্তর্বর্তীকালীন মূল্য বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। এ ভাবনায় তাড়িত হয়ে বিপিসি গত ছয় মাসে আমদানি মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করেনি। কিন্তু এভাবে অনবরত লোকসান দেয়া আর সম্ভব হচ্ছিল না বলেই আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তারা জ্বালানি তেলের দাম বাঙাতে বাধ্য হয়েছে। তবে এখনো ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে প্রায় ৮ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে, কারণ এখনো প্রতি লিটার ডিজেলের আমদানি খরচ পড়ে ১২২ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ, যা প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেননি তা হলো- ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় তেল আমদানির সময় এখন বিপিসিকে অধিক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তবুও এভাবে ৬ মাস অনবরত লোকসান না দিয়ে ভারতের মতো প্রতিনিয়ত অল্প অল্প করে সমন্বয় করলে দেশের অর্থনীতির ওপর হঠাৎ এত অধিক চাপ অনুভূত হতো না।

করোনাকালীন অর্জিত লাভের টাকা খরচের হিসাব নিয়ে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তার ব্যাখ্যাও কয়েক মাস আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম। বিপিসির বক্তব্য অনুযায়ী তারা তাদের প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে এবং তাদের কাজের সম্প্রসারণ করার অপরিহার্যতায় কিছু নতুন মেশিনপত্র সংস্থাপন করা হয়েছে, আমদানি করা গ্যাস সরবরাহের জন্য গভীর সমুদ্র থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা পর্যন্ত গ্যাস-পাইপলাইন বসানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে কেন দাম বাড়ানো হলো- এমন প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ্য যে, বিশ্ব বাজারে দাম কিছুটা কমলেও তা খুব বেশি নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের দাম এখনো আমাদের দেশে সম্প্রতি নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি- হংকংয়ে ডিজেল প্রতি লিটার ২৬১ টাকা, সিঙ্গাপুরে ১৯০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ায় ১৩৮ টাকা, নেপালে ১২৮ টাকা, আরব আমিরাতে ১২৩ টাকা এবং চীনে ১১৯ টাকা। আমেরিকাসহ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে জ্বালানি তেলের দাম এখনো বেশি। আজ ইতালির এক ফেইসবুক বন্ধুর কাছ থেকে জানলাম, ইতালিতে প্রতি লিটার ডিজেল এবং পেট্রলের দাম ১৭১ টাকা। পাকিস্তান এবং ভিয়েতনামে দাম কিছুটা কম। অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত হচ্ছে, তেল আমদানির উপর শুল্ক-ভ্যাট মওকুফ করা হলে দাম বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এই মওকুফের কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় প্রচুর কমে যেত। এছাড়াও এখন এবং আগামী আরও দেড় বা দুই মাসে দেশে যে তেল ব্যবহৃত হবে তা কেনা হয়েছে অনেক আগেই বেশি দামে। এখন কম দামে কেনা হলে তার ব্যবহার দুই মাসের পূর্বে আনা সম্ভব হবে না।

হংকংয়ের মতো ফ্রান্সেও জ্বালানি তেলের মূল্য লিটারপ্রতি দুইশ টাকারও বেশি। এসব দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকায় সরকার কোথাও ভর্তুকি দেয় না, লোকসান দিয়ে জনগণের কাছে বিক্রি করে না। কিন্তু আমাদের দেশে ভর্তুকি বন্ধ করা কঠিন। কারণ প্রকৃত মূল্যে সার বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে কৃষিজ পণ্যের দাম বাড়বে। ঠিক তেমনি বিদ্যুৎ-গ্যাস প্রকৃত দরে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করলে শিল্প-দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসে সরকার লোকসান দেয় বলেই আমাদের গার্মেন্টসের উৎপাদন খরচ কম এবং সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বেশি। অবশ্য এক্ষেত্রে কম মজুরির শ্রমের অবদানও অনেক। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে তেল ব্যবহারে বিভিন্ন দেশের জনগণ সাশ্রয়ী হচ্ছে। একই কারণে সম্ভবত রাশিয়া থেকে কম দামে কেনার পরও ভারত এবং চীনে তেলের দর কমানো হচ্ছে না। সবল অর্থনীতির দেশ জার্মানিও তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েছে। জ্বালানি তেলের সঙ্গে প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিধায় তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খরচ বাড়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে, বাস ভাড়া বাড়ে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ে, কৃষির যান্ত্রিক চাষাবাদ ও সেচ খরচ বাড়ে। দেশের নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের লোকদের পক্ষে এই বাড়তি খরচ সংকুলান করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য নিম্নবিত্তের লোকদের রেশন কার্ডের মাধ্যমে সস্তায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যাদি সরবরাহ করছে। মধ্যবিত্ত পরিবারকেও রেশন কার্ডের আওতায় আনা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। কারণ সরকার জনগণের স্বস্তির জন্য বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু ভর্তুকি দেওয়ার জন্য সরকারের আয়ের উৎস অবারিত নয়; ধনী এবং মধ্যবিত্তের অনেকে ঠিকমতো ট্যাক্সও দেন না। তবুও কৃষিকাজে প্রকৃত সেচপাম্প মালিকদের কার্ডের মাধ্যমে কম দামে ডিজেল দেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।

অফিস-আদালতে এয়ারকুলার ব্যবহার হ্রাস করা জরুরি। আমাদের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান সাধারণত স্যুট পরেন না। তার পোশাকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার আমলা এবং মন্ত্রীদের গরমের দিনে স্যুুট পরিহার করতে অনুরোধ করেছিলেন। আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে স্যুট পরা জরুরি নয়। মহাত্মা গান্ধী স্যুট পরেননি বলে ইংরেজ সরকারের কাছে তার গুরুত্ব কম ছিল না। তাই বলে গান্ধীর মতো জীর্ণশীর্ণ পোশাক পরে অফিস করার দাবি কেউ করছে না। বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্যোগে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, বিলাসী পণ্য ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য। তবে সব ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, একজনের ব্যয় মানেই আরেকজনের আয়। মিতব্যয়ী হতে গিয়ে সবাই হেঁটে হেঁটে চলাফেরা করলে রিকশাচালক বাঁচবে না, অনুষ্ঠানে ফুলের সাজ না থাকলে ফুল-চাষী ও ফুল-বিক্রেতাকে উপবাস করতে হবে, বাজারের বোঝা নিজে বহন করলে মুটে না খেয়ে মরবে, ভিক্ষা না দিয়ে তা সঞ্চয় করা হলে ভিক্ষুকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

জনপ্রিয়তা হারানোর শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। আমাদের ধারণা সরকার ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ জনপ্রিয় সব সিদ্ধান্ত সব সময় দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। জনপ্রিয় হতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার পূর্ববর্তী সরকার ৫০ শতাংশ ভ্যাট হ্রাস করে ফকির হয়ে গিয়েছিল, পরে জনগণই তাদের তাড়িয়েছে, জনপ্রিয়তা কাজে আসেনি। তাই লাগামহীন ভর্তুকি দিয়ে সরকার দেউলিয়া হোক- এটা সচেতন জনগণ প্রত্যাশা করতে পারে না।

বিপিসির দুর্নীতি এবং সততা নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে, এই বিভ্রান্তির জন্য মন্ত্রীর ব্যাখ্যাও জনগণ বিশ্বাস করে না। তাই পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় উত্থাপিত প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ পরিষ্কার উত্তর সরকারের স্বার্থেই জনগণকে জানানো প্রয়োজন

বাংলাদেশ এখন প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল এবং ৪০ লাখ টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করে। শোধনাগারের সক্ষমতা না থাকায় সরকার মাত্র ১৩ লাখ টন ক্রুড অয়েল আমদানি করে। বিপিসির কাছে নগদ অর্থ থাকলে তা দিয়ে জরুরিভিত্তিতে ক্রুড অয়েল রিফাইনারি ক্যাপাসিটি এবং রিজার্ভ সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। আমাদের শোধনাগার রাশিয়ার তেল শোধন করার জন্য উপযোগী না হওয়ায় কম দামে রাশিয়ার তেলও কেনা যাচ্ছে না। বিপিসির লাভ এবং খরচ নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। অনেকের মতে বিপিসির মূল্য সমন্বয় সঠিক হয়নি, আরও কম মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব ছিল। বর্তমান অবস্থায় বিপিসির আর্থিক অবস্থা জানা দরকার, অনেকের ধারণা বিপিসি স্বচ্ছ নয়। বিপিসির সম্ভবত নিরীক্ষিত কোন হিসাব বিবরণী নেই, থাকলে এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য মন্ত্রী বা সচিবের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন হতো না। বিপিসির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বিপিসির দুর্নীতি এবং সততা নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে, এই বিভ্রান্তির জন্য মন্ত্রীর ব্যাখ্যাও জনগণ বিশ্বাস করে না। তাই পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় উত্থাপিত প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ পরিষ্কার উত্তর সরকারের স্বার্থেই জনগণকে জানানো প্রয়োজন।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

back to top