তানজিবুল হাসান
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে কৃষিই ছিল এ দেশের অর্থনীতির প্রধান খাত। এ দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই কৃষিকে দেখে দেখেই বেড়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু। কৃষি পরিবারে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও কৃষকদের জন্য সংগ্রামের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখিয়ে একটি স্বাধীন দেশ এনেছিলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি ছিল কৃষি ও কৃষক। কৃষি ও কৃষককে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সর্বোপরি বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলে সোনার বাংলাদেশ সফল করার জন্য বঙ্গবন্ধু নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। খাদ্য ঘাটতি সংকুলানে বঙ্গবন্ধু সরকার স্বাধীনতার পর ২ বছর খাদ্যে ভর্তুকি প্রদান করেছে। ১ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি সেচ সুবিধায় বেশি বিনিয়োগ ধরা হয়েছিল। বিজ্ঞানভিত্তিক চাষের গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তাই তো কৃষিবিদদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু প্রথম বাজেটে কৃষি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। ২১ দফার প্রতিটা দফাই ছিল কোন না কোনভাবে কৃষি ও কৃষকের মঙ্গলকামি। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তন্মধ্যে, কৃষির উন্নতির জন্য সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, বন্যা ও খরার হাত থেকে কৃষককে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন ও সরকারি ইজারাদারি প্রথা বিলুপ্ত করেন, বঙ্গবন্ধু কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন এ কারণে কৃষি কাজে জড়িতরা উপকৃত হয়েছেন। খাজনা দেওয়ার অক্ষমতা ও জটিলতা হতে মুক্ত হয়ে কৃষকরা আনন্দে কাজ করে গেছেন।
সবুজ বিপ্লব কর্মসূচির আওতায় খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শ্মশান হওয়া বাংলাকে তিনি সোনার বাংলায় গড়ে তুলতে চান। তিনি বলেছিলেন ‘কৃষি খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বোঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকে বুঝায়।’
সুতরাং কৃষির উন্নতি করতে হলে এসব খাদ্যশস্যের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষির প্রতি, কৃষি সম্প্রসারণের প্রতি, কৃষি উন্নয়নের প্রতি তার আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। বঙ্গবন্ধু ভাবতেন সবার আগে দরকার খাদ্যের। খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিতে পারলে সব উন্নয়ন কার্যক্রম বিফলে যাবে। সুতরাং নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি উন্নয়ন তথা কৃষি এবং কৃষকের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনগণের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্তির লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়নের বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এ কারণেই তিনি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পুনঃসংস্করণ, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, ইক্ষু গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনসহ অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন। কৃষিবিষয়ক বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো ও কার্যক্রমের আমূল পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে এবং প্রযুক্তি চর্চায় মেধা আকর্ষণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল-এ দেশের শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো, তাই তিনি কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার প্রদানের পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নের সৈনিক কৃষিবিদদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন।
[লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন (বাহা), ঢাকা মহানগর ও বিভাগ]
তানজিবুল হাসান
রোববার, ১৪ আগস্ট ২০২২
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে কৃষিই ছিল এ দেশের অর্থনীতির প্রধান খাত। এ দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই কৃষিকে দেখে দেখেই বেড়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু। কৃষি পরিবারে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও কৃষকদের জন্য সংগ্রামের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখিয়ে একটি স্বাধীন দেশ এনেছিলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি ছিল কৃষি ও কৃষক। কৃষি ও কৃষককে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সর্বোপরি বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলে সোনার বাংলাদেশ সফল করার জন্য বঙ্গবন্ধু নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। খাদ্য ঘাটতি সংকুলানে বঙ্গবন্ধু সরকার স্বাধীনতার পর ২ বছর খাদ্যে ভর্তুকি প্রদান করেছে। ১ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি সেচ সুবিধায় বেশি বিনিয়োগ ধরা হয়েছিল। বিজ্ঞানভিত্তিক চাষের গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তাই তো কৃষিবিদদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু প্রথম বাজেটে কৃষি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। ২১ দফার প্রতিটা দফাই ছিল কোন না কোনভাবে কৃষি ও কৃষকের মঙ্গলকামি। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তন্মধ্যে, কৃষির উন্নতির জন্য সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, বন্যা ও খরার হাত থেকে কৃষককে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন ও সরকারি ইজারাদারি প্রথা বিলুপ্ত করেন, বঙ্গবন্ধু কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন এ কারণে কৃষি কাজে জড়িতরা উপকৃত হয়েছেন। খাজনা দেওয়ার অক্ষমতা ও জটিলতা হতে মুক্ত হয়ে কৃষকরা আনন্দে কাজ করে গেছেন।
সবুজ বিপ্লব কর্মসূচির আওতায় খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শ্মশান হওয়া বাংলাকে তিনি সোনার বাংলায় গড়ে তুলতে চান। তিনি বলেছিলেন ‘কৃষি খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বোঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকে বুঝায়।’
সুতরাং কৃষির উন্নতি করতে হলে এসব খাদ্যশস্যের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষির প্রতি, কৃষি সম্প্রসারণের প্রতি, কৃষি উন্নয়নের প্রতি তার আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। বঙ্গবন্ধু ভাবতেন সবার আগে দরকার খাদ্যের। খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিতে পারলে সব উন্নয়ন কার্যক্রম বিফলে যাবে। সুতরাং নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি উন্নয়ন তথা কৃষি এবং কৃষকের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনগণের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্তির লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়নের বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এ কারণেই তিনি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পুনঃসংস্করণ, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, ইক্ষু গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনসহ অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন। কৃষিবিষয়ক বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো ও কার্যক্রমের আমূল পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে এবং প্রযুক্তি চর্চায় মেধা আকর্ষণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল-এ দেশের শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো, তাই তিনি কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার প্রদানের পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নের সৈনিক কৃষিবিদদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন।
[লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন (বাহা), ঢাকা মহানগর ও বিভাগ]