alt

উপ-সম্পাদকীয়

গ্যাস অনুসন্ধানে নজর দিতে হবে

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

: বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-এ বলা হয়েছে- বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের প্রায় ৪৬% গ্যাস খাত থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশে এ পর্যন্ত মোট ২৮.৩০ টিসিএফ গ্যাস (২পি) আবিষ্কৃত হয়। এর মধ্যে ১৮.৭০ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে মাত্র ৯.৬০ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। গত বছর প্রায় ০.৮৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে এবং প্রতি বছর গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

অপরদিকে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় দেশীয় গ্যাস উৎপাদন অতি সামান্য পরিমাণ যুক্ত হচ্ছে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রসমূহ থেকে উৎপাদিত গ্যাস চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় বিদেশ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে চাহিদা মেটানোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে। জাতীয় গ্যাস গ্রিডে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ০.২১৬ টিসিএফ আরএলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। গ্যাস রিজার্ভ, চাহিদা ও সরবরাহ গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ হতে প্রাপ্ত ২০২০-২১ থেকে ২০৪০-৪১ পর্যন্ত প্রাক্কলিত গ্যাস রিজার্ভ, চাহিদা, উৎপাদন ও সরবরাহ সম্পর্কিত তথ্য অনুযায়ী, যে হারে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে- নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে বাংলাদেশের গ্যাস রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে ২০৩০ সালে ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে।

গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ অনুসারে ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ছিলো প্রায় ৪৩০০ এমএমসিএফডি; যার বিপরীতে মোট সরবরাহ ছিল দৈনিক ৩০১২ এমএমসিএফডি তার মধ্যে দেশীয়ভাবে প্রায় ২৪২০ এমএমসিএফডি গ্যাস এবং প্রায় ৫৯২ এমএমসিএফডি আরএলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। অর্থাৎ দেশীয় সরবরাহের বিপরীতে দৈনিক প্রায় ১৮৮০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবাহের ঘাটতি ছিল। এই ঘাটতি যথাক্রমে ২০২৫ সালে ৩৯০৩ এমএমসিএফডি ও ২০৩০ সালে ৫৫৮৭ এমএমসিএফডি হবে।

গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরপক্ষে দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি না করা গেলে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি বা পাইপলাইন গ্যাস অথবা বিকল্প জ্বালানি আমদানি করতে হবে। এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা হলে গ্যাসের সরবরাহ মূল্য অনেকগুণে বৃদ্ধি পাবে, যার ফলস্বরূপ জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল চাপ পড়বে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।

এজন্য দেশীয়ভাবে গ্যাসের মজুদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান কমানোর জন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও পাইপলাইন গ্যাস আমদানি অথবা এলএনজি আমদানি অথবা বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। পরিমাণ (এমএমসিএফডি) দেশীয়ভাবে উৎপাদন গ্যাসের চাহিদা ও দেশীয় উৎপাদনের পার্থক্য (গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ ও পেট্রোবাংলার তথ্য সমন্বয়ে) ২০২০-২০২১ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন দেশে বর্তমানে তিনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি এবং উৎপাদন বণ্টন চুক্তির আওতায় দুইটি বিদেশি কোম্পানি মূল ভূখন্ড হতে ২০২০-২১ অর্থবছরে নিম্নোক্তভাবে গ্যাস উৎপাদন করেছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ৫৮৯ (এমএমসিএফডি), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ৮৮ (এমএমসিএফডি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কো¤পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ১২৬ (এমএমসিএফডি), শেভরন বাংলাদেশ ১৫৩৫ (এমএমসিএফডি) এবং ক্রিস এনার্জি বাংলাদেশ লি. ৮২ (এমএমসিএফডি)। মোট ২ হাজার ৪২০ (এমএমসিএফডি)।

এলএনজি আমদানি চাহিদার তুলনায় দেশীয় উৎপাদন কম হওয়ায় তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আরপিজিসিএল ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দৈনিক ৫৯২ এমএমসিএফডি হিসেবে প্রায় ০.২১৬ টিসিএফ আরএলএনজি জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। এলএনজি আমদানির জন্য কাতার এর সঙ্গে ১৫ বছর ও ওমানের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে।

চুক্তি অনুসারে দুই দেশ থেকে বার্ষিক সরবরাহের পরিমাণ ২.৮-৪.০ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিপিএ); যা গড়ে দৈনিক ৩৫০-৫৪০ এমএমসিএফডি। ২০২১ সালে এডিপি অনুসারে কাতার হতে ৪০টি এবং ওমান হতে ২৪টি মোট ৬৪টি কার্গো সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও স্পট মার্কেট হতে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত স্বাক্ষর করা হয়। ২৫/০৯/২০২০ তারিখে স্পট মার্কেট হতে ১ম এলএনজি কার্গো আমদানি করা হয়। স্পট মার্কেট হতে ৩১ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত সর্বমোট ১৩টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করা হয়েছে।

২০২০-২০২১ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০২০-২০২১ ৫৪ গ্যাস ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আপস্ট্রিম গ্যাস সরবরাহ দেশীয় কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) এবং আন্তর্জাতিক তেল অনুসন্ধান কোম্পানি (আইওসি) শেভরণ বাংলাদেশ ও ক্রিস এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড গ্যাস উৎপাদন করে।

এছাড়া দেশের গ্যাসের চাহিদা মিটানোর জন্য আরপিজিসিএল এলএনজি আমদানি করে। উৎপাদিত গ্যাস এবং এলএনজি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির মাধ্যমে সঞ্চালনপূর্বক ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণীর গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এসব কার্যক্রম বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) নিয়ন্ত্রণ করে। ইভিসি মিটার প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিইআরসি ট্যারিফ নির্ধারণ, মান উন্নয়ন ও ভোক্তার সেবা নিশ্চিত করার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

ইতোমধ্যে প্রায় সব সিএনজি স্টেশন এবং কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইভিসি মিটার স্থাপন করা হয়েছে। প্রি-পেইড মিটার পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, মিটারবিহীন গৃহস্থালি গ্রাহকসমূহকে মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের তুলনায় কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০%-৫০% বেশি বিল প্রদান করতে হয়। ২০২০-২০২১ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সিস্টেম লস পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্যাসফিল্ড ও এলএনজি থেকে জাতীয় গ্রীডে গড়ে দৈনিক ৩০১২ এমএমসিএফডি গ্যাস ট্রান্সমিশন করা হয়েছে।

গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরপক্ষে দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি না করা গেলে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি বা পাইপলাইন গ্যাস অথবা বিকল্প জ্বালানি আমদানি করতে হবে

কিন্তু ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ২৭৮৫ এমএমসিএফডি গ্যাস বিতরণ করেছে অর্থাৎ প্রতিদিন ২২৭ এমএমসিএফডি গ্যাসের (৭.৫৪%) হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না; যার বার্ষিক আর্থিক মূল্য প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা (প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য ৯.৮০ টাকা হিসেবে)। এক্ষেত্রে কমিশনের দৃঢ় সুপারিশ হচ্ছে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ থেকে বিতরণ কোম্পানির এলাকাভিত্তিক সকল গ্রাহকের ক্ষেত্রে যথাযথ মিটারিংয়ের ব্যবস্থা ও নিয়মিতভাবে হিসাবরক্ষণ এবং ইনভেন্টরি করতে।

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মনে করে, সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রতি মাসে সিস্টেম লস হিসাব করে তা সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করতে হবে। যথাযথভাবে গ্যাসে গন্ধ যুক্ত করে পাইপের ছিদ্র শনাক্তকরণ, মেরামত ও পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ গ্যাস লাইন ও সরঞ্জাম অপসারণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যাই হোক, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাবে। এর আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, গৃহস্থালিসহ সব কিছুই মুখ থুবড়ে পড়বে।

[লেখক : সাবেক কর কমিশনার; পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লি.]

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গ্যাস অনুসন্ধানে নজর দিতে হবে

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-এ বলা হয়েছে- বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের প্রায় ৪৬% গ্যাস খাত থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশে এ পর্যন্ত মোট ২৮.৩০ টিসিএফ গ্যাস (২পি) আবিষ্কৃত হয়। এর মধ্যে ১৮.৭০ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে মাত্র ৯.৬০ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। গত বছর প্রায় ০.৮৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে এবং প্রতি বছর গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

অপরদিকে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় দেশীয় গ্যাস উৎপাদন অতি সামান্য পরিমাণ যুক্ত হচ্ছে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রসমূহ থেকে উৎপাদিত গ্যাস চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় বিদেশ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে চাহিদা মেটানোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে। জাতীয় গ্যাস গ্রিডে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ০.২১৬ টিসিএফ আরএলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। গ্যাস রিজার্ভ, চাহিদা ও সরবরাহ গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ হতে প্রাপ্ত ২০২০-২১ থেকে ২০৪০-৪১ পর্যন্ত প্রাক্কলিত গ্যাস রিজার্ভ, চাহিদা, উৎপাদন ও সরবরাহ সম্পর্কিত তথ্য অনুযায়ী, যে হারে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে- নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে বাংলাদেশের গ্যাস রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে ২০৩০ সালে ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে।

গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ অনুসারে ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ছিলো প্রায় ৪৩০০ এমএমসিএফডি; যার বিপরীতে মোট সরবরাহ ছিল দৈনিক ৩০১২ এমএমসিএফডি তার মধ্যে দেশীয়ভাবে প্রায় ২৪২০ এমএমসিএফডি গ্যাস এবং প্রায় ৫৯২ এমএমসিএফডি আরএলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। অর্থাৎ দেশীয় সরবরাহের বিপরীতে দৈনিক প্রায় ১৮৮০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবাহের ঘাটতি ছিল। এই ঘাটতি যথাক্রমে ২০২৫ সালে ৩৯০৩ এমএমসিএফডি ও ২০৩০ সালে ৫৫৮৭ এমএমসিএফডি হবে।

গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরপক্ষে দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি না করা গেলে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি বা পাইপলাইন গ্যাস অথবা বিকল্প জ্বালানি আমদানি করতে হবে। এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা হলে গ্যাসের সরবরাহ মূল্য অনেকগুণে বৃদ্ধি পাবে, যার ফলস্বরূপ জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল চাপ পড়বে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।

এজন্য দেশীয়ভাবে গ্যাসের মজুদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান কমানোর জন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও পাইপলাইন গ্যাস আমদানি অথবা এলএনজি আমদানি অথবা বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। পরিমাণ (এমএমসিএফডি) দেশীয়ভাবে উৎপাদন গ্যাসের চাহিদা ও দেশীয় উৎপাদনের পার্থক্য (গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ ও পেট্রোবাংলার তথ্য সমন্বয়ে) ২০২০-২০২১ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন দেশে বর্তমানে তিনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি এবং উৎপাদন বণ্টন চুক্তির আওতায় দুইটি বিদেশি কোম্পানি মূল ভূখন্ড হতে ২০২০-২১ অর্থবছরে নিম্নোক্তভাবে গ্যাস উৎপাদন করেছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ৫৮৯ (এমএমসিএফডি), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ৮৮ (এমএমসিএফডি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কো¤পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ১২৬ (এমএমসিএফডি), শেভরন বাংলাদেশ ১৫৩৫ (এমএমসিএফডি) এবং ক্রিস এনার্জি বাংলাদেশ লি. ৮২ (এমএমসিএফডি)। মোট ২ হাজার ৪২০ (এমএমসিএফডি)।

এলএনজি আমদানি চাহিদার তুলনায় দেশীয় উৎপাদন কম হওয়ায় তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আরপিজিসিএল ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দৈনিক ৫৯২ এমএমসিএফডি হিসেবে প্রায় ০.২১৬ টিসিএফ আরএলএনজি জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। এলএনজি আমদানির জন্য কাতার এর সঙ্গে ১৫ বছর ও ওমানের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে।

চুক্তি অনুসারে দুই দেশ থেকে বার্ষিক সরবরাহের পরিমাণ ২.৮-৪.০ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিপিএ); যা গড়ে দৈনিক ৩৫০-৫৪০ এমএমসিএফডি। ২০২১ সালে এডিপি অনুসারে কাতার হতে ৪০টি এবং ওমান হতে ২৪টি মোট ৬৪টি কার্গো সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও স্পট মার্কেট হতে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত স্বাক্ষর করা হয়। ২৫/০৯/২০২০ তারিখে স্পট মার্কেট হতে ১ম এলএনজি কার্গো আমদানি করা হয়। স্পট মার্কেট হতে ৩১ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত সর্বমোট ১৩টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করা হয়েছে।

২০২০-২০২১ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০২০-২০২১ ৫৪ গ্যাস ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আপস্ট্রিম গ্যাস সরবরাহ দেশীয় কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) এবং আন্তর্জাতিক তেল অনুসন্ধান কোম্পানি (আইওসি) শেভরণ বাংলাদেশ ও ক্রিস এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড গ্যাস উৎপাদন করে।

এছাড়া দেশের গ্যাসের চাহিদা মিটানোর জন্য আরপিজিসিএল এলএনজি আমদানি করে। উৎপাদিত গ্যাস এবং এলএনজি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির মাধ্যমে সঞ্চালনপূর্বক ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণীর গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এসব কার্যক্রম বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) নিয়ন্ত্রণ করে। ইভিসি মিটার প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিইআরসি ট্যারিফ নির্ধারণ, মান উন্নয়ন ও ভোক্তার সেবা নিশ্চিত করার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

ইতোমধ্যে প্রায় সব সিএনজি স্টেশন এবং কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইভিসি মিটার স্থাপন করা হয়েছে। প্রি-পেইড মিটার পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, মিটারবিহীন গৃহস্থালি গ্রাহকসমূহকে মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের তুলনায় কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০%-৫০% বেশি বিল প্রদান করতে হয়। ২০২০-২০২১ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সিস্টেম লস পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্যাসফিল্ড ও এলএনজি থেকে জাতীয় গ্রীডে গড়ে দৈনিক ৩০১২ এমএমসিএফডি গ্যাস ট্রান্সমিশন করা হয়েছে।

গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরপক্ষে দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। দেশীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি না করা গেলে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি বা পাইপলাইন গ্যাস অথবা বিকল্প জ্বালানি আমদানি করতে হবে

কিন্তু ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ২৭৮৫ এমএমসিএফডি গ্যাস বিতরণ করেছে অর্থাৎ প্রতিদিন ২২৭ এমএমসিএফডি গ্যাসের (৭.৫৪%) হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না; যার বার্ষিক আর্থিক মূল্য প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা (প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য ৯.৮০ টাকা হিসেবে)। এক্ষেত্রে কমিশনের দৃঢ় সুপারিশ হচ্ছে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ থেকে বিতরণ কোম্পানির এলাকাভিত্তিক সকল গ্রাহকের ক্ষেত্রে যথাযথ মিটারিংয়ের ব্যবস্থা ও নিয়মিতভাবে হিসাবরক্ষণ এবং ইনভেন্টরি করতে।

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মনে করে, সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রতি মাসে সিস্টেম লস হিসাব করে তা সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করতে হবে। যথাযথভাবে গ্যাসে গন্ধ যুক্ত করে পাইপের ছিদ্র শনাক্তকরণ, মেরামত ও পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ গ্যাস লাইন ও সরঞ্জাম অপসারণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যাই হোক, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাবে। এর আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, গৃহস্থালিসহ সব কিছুই মুখ থুবড়ে পড়বে।

[লেখক : সাবেক কর কমিশনার; পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লি.]

back to top